মওলা আলী [কা.] ও ফাতেমা [রা.]: যেভাবে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থাপিত হলো

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।
  • ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

হযরত ফাতেমা যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা)-এঁর পানিপ্রার্থীদের মধ্যে হযরত আলী-এঁর পূর্বে হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমও ছিলেন। উভয়েই মহানবী (ﷺ) থেকে জবাব পেয়েছিলেন যে , যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা)-এঁর বিবাহের বিষয় তিনি মহান আল্লাহর ওহীর অপেক্ষায় আছেন। ঐ দুজন যখন নবীকন্যাকে বিবাহ করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে গেলেন তখন তারা আওস গোত্রের প্রধান সাদ ইবনে মুআযের সাথে আলোচনা করলেন। অতঃপর তারা বুঝতে পারলেন যে , আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ব্যতীত অন্য কেউই হযরত যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা)-এঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না এবং নবীজী (ﷺ)-এঁর মতও এর বাইরে নয় ।

May be an image of ‎text that says '‎দুলহা আল্লাহর ঘর থেকে আর দুলহান নবী ﷺ এর ঘর থেকে সুবহানআল্লাহ!‎'‎

ফলে তারা একত্রিত হয়ে হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)-এঁর খোঁজে বের হলেন ।

অবশেষে তারা আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)-কে একজন আনসারের সাথে খেজুর বাগানে পানি সেচরত অবস্থায় পেলেন। তারা আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, ”কুরাইশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নবীকন্যার পানিপ্রার্থনা করেছিলেন। মহানবী (ﷺ) তাদেরকে বলেছেন, যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা)-এঁর বিবাহের বিষয়টি মহান আল্লাহর অনুমতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফলে আমরা আশা করি যে , তুমি যদি নবীকন্যার পানিপ্রার্থনা করো তাহলে তুমি ইতিবাচক ফল পাবে। এক্ষেত্রে যদি তোমার সম্পদ কম থাকে, আমরা তোমাকে সাহায্য করতে প্রস্তত।

এ কথাগুলো শুনে হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)-এঁর দুচোখ আনন্দাশ্রুতে ভরে গেল. তিনি বললেন, ”আমি রাসুল (ﷺ) এর কন্যাকে পছন্দ করি এবং তাঁকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক”। তিনি একথা বলে হাতের কাজ বন্ধ করে নবীগৃহের দিকে রওয়ানা হলেন ।

মহানবী (ﷺ) তখন উম্মে সালমার গৃহে অবস্থান করছিলেন। আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) নবীগৃহের দরজাতে টোকা দিতেই মহানবী (ﷺ) উম্মে সালমাকে বললেন, ”উঠো দরজা খোল। এ হল সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে নিজের প্রানের চেয়েও অত্যাধিক ভালবাসে”।

উম্মে সালমা বলেন, মহানবী (ﷺ) যাঁর এত প্রশংসা করলেন, সে ব্যক্তিকে চেনার আগ্রহ আমাকে এতটাই আছন্ন করেছিল যে, দ্রুত হাটার জন্য আমি পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। দরজা খুলে দিলাম, আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) সালাম দিয়ে নবীগৃহে প্রবেশ করলেন এবং নবীজী (ﷺ) এর সামনে গিয়ে বসলেন। কিন্ত লজ্জা ও নবীজী (ﷺ)-এঁর মহত্বের কারণে মাথা অবনত করে চুপচাপ বসে ছিলেন।

নীরবতা ভঙ্গ করে নবীজী (ﷺ) বললেন, ”মনে হয় কোন কাজে এসেছ”।

আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) জবাবে বললেন, ”রিসালতের পরিবারের সাথে আমার আত্মীয়তার বন্ধন এবং দ্বীনের পথে আমার দৃঢ়তা, জিহাদ ও ইসলামের অগ্রগতিতে আমার প্রচেষ্টা সম্বন্ধে আপনি অবগত আছেন”।

মহানবী (ﷺ) বললেন, ”হে আলী, তুমি যা বলছ, তোমার অবস্থান তার চেয়েও বহুগুন উপরে”।

আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বললেন, ”ফাতেমার সাথে আমার বিবাহ হওয়ার বিষয়টিকে আপনি কি মঙ্গলজনক মনে করেন”? মহানবী (ﷺ) এক্ষেত্রে নিজ জীবনসঙ্গী নির্বাচনে নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মূলনীতিকে অনুসরন করলেন।

আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)-এঁর প্রস্তাবের জবাবে বললেন, ”তোমার পূর্বে আরও কয়েকজন আমার কন্যার পানিপ্রার্থনা করেছিল। আমি তাদের আবেদনের কথা আমার কন্যাকে জানিয়েছি। কিন্ত তাদের সম্পর্কে তাঁর চেহারায় গভীর অনাগ্রহের ছাপ ফুটে উঠেছিল। এখন তোমার প্রস্তাবও তাঁকে অবগত করবো। অতঃপর তার ফলাফল তোমাকে জানাব”।

মহানবী (ﷺ) হযরত যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা)-এঁর গৃহে প্রবেশ করলেন। নবীকন্যা উঠে দাঁড়ালেন এবং পিতার কাঁধ থেকে রেদা (পোষাক বিশেষ) নামিয়ে রাখলেন, তাঁর পায়ের জুতা খুলে দিলেন ও তাঁর পবিত্র পদদ্বয় মোবারক নিজ হাতে পানি দিয়ে ধুয়ে দিলেন। অতঃপর ওযু করে পিতার পাশে বসলেন।

নবীজী তাঁর কন্যার সাথে এভাবে কথা শুরু করলেন, ”আবু তালেবের পুত্র আলী হচ্ছে এমন ব্যক্তিদের অন্যতম, ইসলামে ফযিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত আছি। আর আমি আল্লাহর কাছে এই কামনা করেছি যে, তিনি যেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বরের সাথে তোমার বিবাহের ব্যবস্থা করে দেন। এখন আলী তোমার নিকট পানিপ্রার্থনা করতে এসেছে। এই বিষয় তোমার মত কি”?

এ সময় হযরত যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) এক গভীর নীরবতায় নিমগ্ন হলেন, কিন্ত নিজের চেহারা পিতার কাছ থেকে ঘুরিয়ে নেন নি এবং তাঁর চেহারায় নূন্যতম অস্বস্তিও দেখা যায় নি।

মহানবী (ﷺ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ”আল্লাহ মহান, তাঁর নীরবতাই তাঁর সম্মতি”।

এরপর একদিন রাসূল ﷺ মসজিদে নববীর মিম্বরে বসা ছিলেন, এমন সময় জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে আল্লাহ্‌ পাকের সালাম পৌঁছে দিলেন আর সুসংবাদ দিলেন যে, রাসূল ﷺ-এঁর প্রাণপ্রিয় কন্যা ফাতিমাতুজ জাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার বিয়ে আল্লাহ্‌ পাক চতুর্থ এবং কোন কোন বর্ণনা মতে সপ্তম আকাশে ফেরেশতাদের উপস্থিতিতে দিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি যেন দুনিয়াতে তাঁদের বিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন। রাসূল ﷺ যখন তাঁদের বিয়ের কথা ঘোষণা দিলেন আর জানালেন, সমস্ত মদিনাবাসিকে তিনি এই বিয়েতে দাওয়াত দিবেন, তখন মুনাফিকেরা কানাঘুষা করতে লাগলো যাঁর ঘরে ঠিকমতো চুলো জ্বলে না এবং যাঁর দশজন লোক খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই তিনি সমস্ত মদিনাবাসিকে খাওয়াবেন! এমন তাচ্ছিল্যের কথা শুনে নবীজি ঘোষণা দিলেন যাতে হযরত আমীর হামজা ও আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব নেবেন এবং এক সাথে ১০ দশ জন করে খাবার খেতে প্রবেশ করবেন। এভাবে তিনদিন তিন রাত পর্যন্ত মওলা আলী এবং মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনুহুমার বিয়ের খানাপিনা খেয়ে সমস্ত মদিনাবাসি তৃপ্ত হলেন। যারা আসতে পারেন নি, পরবর্তীতে তাঁদের প্রত্যেকের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। সুবহানআল্লাহ!  

[ভালো লেগে থাকলে লেখাটি কপি করে নিজ নিজ টাইমলাইনে পোষ্ট করতে পারেন। আর দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই আপনার মতামত জানাবেন।]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment