জগত বিখ্যাত আলেমে দ্বীন, রইসুল ওলামা, শামছুল মাশায়েখ, মোজাদ্দেদে দ্বীন ও মিল্লাত, মোনাজারে আজম, সুন্নী আন্দোলনের অগ্রনায়ক, বাতিলের আতংক, আপোষহীন বক্তা ও কলম সম্রাট, রাইহান উল্লাহ্, রাইহানুর রাসুল, নিশানে গাউসুল আজম, শমশীরে বাংলা, আক্বাঈদে ইমামে আহলে সুন্নাহ, পীরে তরিকত, রাহনুমায়ে শরীয়ত, ওস্তাজুল ওলামা, খলিফা-এ-বাগদাদ, আমার পরদাদা হযরত ভোলা গাজী মিয়াজী রাহিমাহুমুল্লাহ-এর সুযোগ্য নাতি অধ্যক্ষ্য আলহাজ্ব মাওলানা হাফেজ আব্দুল জলিল আমিয়াপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কিতাবগুলো সহজলভ্য নয়।
তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো জানবেই না এই সিংহসম মহাপুরুষ কে ছিলেন আর সুন্নিয়তের খেদমতে উনার অবদানই বা কী ছিল। যেই সিংহের সামনে বাতিলেরা ভীত হয়ে যেত, যার ইলম, ব্যক্তিত্ব আর উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার সামনে সবাই নত হয়ে যেত, সেই সিংহপুরুষের জীবনী কেউ জানবে না তা কি করে হয়! আমি প্রবাসে অবস্থান করেও বেশ করে আল্লামা হাফেজ আব্দুল জলিল রহঃ লিখিত কিছু কিতাব যোগাড় করেছি। জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি নিজ হাতে আমাকে কিছু কিতাব উপহার দিয়ে ছিলেন। সেগুলো পর্যায়ক্রমে স্ক্যান করে এখানে পোষ্ট করছি যাতে জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তিবর্গ এখান থেকে সরাসরি ডাউনলোড করে পড়ার সুযোগ পান। জাযাকাল্লাহ!
[সহজে ডাউনলোড করতে right click করে Save link as সিলেক্ট করুন।]
আল্লামা হাফেজ আব্দুল জলিল রহঃ লিখিত কিতাবসমূহ!
নং | কিতাবের নাম | ফাইল সাইজ in MB | মন্তব্য/লিংক |
1 | বোখারী শরীফ | (বাংলাঃ এখনো হাতে পাইনি) | |
2 | নূরনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) | 12.8 | Download Android app |
3 | মিলাদ ও কিয়ামের বিধান | 2.99 | Download link |
4 | বালাকোট আন্দোলনের হাকিক্বত | 10.5 | Download link |
5 | গেয়ারভী শরীফের ইতিহাস | 4.63 | Download link |
6 | কারামতে গাউসুল আ’জম (রাঃ) | 1.71 | Download link |
7 | ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) ও নাত লহরী | 0.7 | Download link |
8 | ইরফানে শরীয়ত | (এখনো হাতে পাইনি) | |
9 | হায়াত মউত কবর হাশর | Android App Download link | |
10 | আহকামুল মাযার | 8.22 | Download link |
11 | প্রশ্নোত্তরে আকায়েদ ও মাসায়েল শিক্ষা | (শিগ্রই আসছে, আমি স্ক্যান করছি। ) | |
12 | ফতোয়ায়ে ছালাছীন বা ত্রিশ ফতোয়া | 8.71 | Download link |
13 | কালেমার হাকীকত | 4.25 | Android app Download link |
14 | ইসলাহে বেহেস্তী জেওর | Download | |
15 | সফরনামা আজমীর | 1.17 | Download link |
16 | আ’লা হযরত স্মরণিকা | (এখনো হাতে পাইনি) | |
17 | শিয়া পরিচিতি | Download link Android app | |
18 | রাহমাতুল্লিল আলামীন | (এখনো হাতে পাইনি) |
অন্যান্য কিতাবের সংবাদ এবং ডিজিটাল ভার্সন কারো কাছে থাকলে জানাবেন প্লীজ। আজ আমি মাত্র ৮টি কিতাব পোষ্ট করেছি। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে আসবে ইন শা আল্লাহ্!
হুজুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী
শাইখুল মুদাররিসীন আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (رحمة الله عليه) এই বঙ্গ ভূখন্ডে দ্বীন ইসলামের এক অকুতোভয় সিপাহসালারের নাম। তিনি আক্বিদা বিশ্বাসে সুন্নী, মাযহাবে হানাফী এবং তরিকায় ক্বাদেরী ছিলেন। তাঁর সন্মানিত পিতার নাম মুন্সী আদম আলী মোল্লা (رحمة الله عليه) এবং মাতার নাম মালেকা খাতুন (رحمة الله عليها)। তিনি ছিলেন চার বোন ও ছয় ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।
জন্মঃ ২৬ শে ভাদ্র, শনিবার, ১৩৪০ বাংলা।
বংশ পরিচয় ও জন্মস্থানঃ চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর-এর অধিনস্ত আমিয়াপুর গ্রামে তিনি জন্ম লাভ করেন। দিল্লীর বুযুর্গ ফেকাহবিদ, মুফাচ্ছির এবং বাদশাহ আলমগীরের ছেলের ওস্তাদ হযরত মোল্লা আহমদ জিয়ুন (رحمة الله عليه) ছিলেন আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (رحمة الله عليه)-এঁর বংশের পূর্ব পুরুষ। হযরত মোল্লা আহমদ জিয়ুন (رحمة الله عليه) রচিত ফেকাহ নীতি শাস্ত্র ’নূরুল আনওয়ার’ গ্রন্থখানি দুনিয়াব্যাপী সমাদৃত এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ফাযিল জামাআতের পাঠ্যভুক্ত কিতাব। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের কারণে ইংরেজ কর্তৃক মুঘল সালতানাতের পতনের পর হযরত মোল্লা জিয়ুন (رحمة الله عليه)-এঁর বংশধরগণের একটি শাখা প্রাণভয়ে তৎকালীন ত্রিপুরা, বর্তমান কুমিল্লার ময়নামতিতে হিজরত করে চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কালক্রমে ঐ বংশই বর্তমান মতলব (উত্তর), চাঁদপুরস্থ আমিয়াপুর গ্রামে বসবাস করতে থাকে।
মাতার দিক দিয়েও তিনি ছিলেন সৌভাগ্যবান। তাঁর সম্মানিত নানাজান হযরত ভোলা গাজী মিয়াজী (رحمة الله عليه) ছিলেন একজন কামেল অলি-আল্লাহ্ এবং বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন যিনি নিজ হাতে কুরআন কপি করে এবং মসজিদের খতীবের দায়িত্ব পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মৃত্যুর পর জ্বীনেরা এসে রাতের আঁধারে তাঁর কবরের পাশে আলো জ্বালিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতো, যা সর্বজন বিদিত। মতলব উত্তরের একই গ্রামের মিয়াজী বাড়িতে তাঁর সম্মানিত নানাজানের কবর অবস্থিত।
(শাইখুল মুদাররিসীন আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (رحمة الله عليه)-এঁর পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য)
শিক্ষাদীক্ষা ও কর্মজীবনঃ আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (رحمة الله عليه) প্রথমে মক্তবে কুরআন মজিদ ও কিছু কিতাব শিক্ষা করেন। ৪র্থ শ্রেণী পাস করার পর হিফজ্ আরম্ভ করেন এবং ১৯৫২ সালে দু’বছর তিন মাসে হিফজ শেষ করেন। তারপর ১৯৫৫ সালে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল (হাদীস) ১ম বিভাগে বৃত্তিসহ (১৯৫৬-১৯৬৪ ইং সালে) উত্তীর্ণ হন। তারপর ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি এবং এম এ (জেনারেল ইতিহাস) উচ্চতর দ্বিতীয় বিভাগে স্টাইপেন্ডসহ (১৯৬৪-১৯৭০) পাস করেন। ১৯৭০ সালে জেনারেল শিক্ষা সমাপ্তির পর ১৯৭২ সালে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ছাগলনাইয়া কলেজ ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা কলেজে ১৯৭৫ ইং সাল পর্যন্ত ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপনা করেন। উচ্চতর শিক্ষালাভের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে তিনি চট্টগ্রাম শহরে ১৯৬৪-৭৮ ইং পর্যন্ত হযরত তারেক শাহ্ (رحمة الله عليه) দরগাহ মসজিদে ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপনার ফাঁকে ১৯৭৩ ইং সালে এক বছর অগ্রণী ব্যাংকে প্রবেশনারী অফিসার হিসাবে কাজ করে ইস্তফা দেন। ১৯৭৩ ইং সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে ১৯৭৫ সালে ছয় মাস ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করে ইস্তফা দিয়ে পুনরায় চট্টগ্রাম চলে যান। চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে ১৯৭৭ সালে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকা মুহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়বিয়া আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে স্থায়ীভাবে ঢাকা চলে আসেন। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষ পদে ছিলেন। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ ইং সাল পর্যন্ত মধ্যখানে ৪ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর ইমাম ট্রেনিং প্রজেক্ট ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে ডাইরেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করে ১৯৯০-এর ডিসেম্বরে কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে পুনরায় যোগদান করেন এবং এখান থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (رحمة الله عليه) অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শরিয়ত ও তরিকত প্রচারের কেন্দ্র শাহজাহানপুর গাউছুল আযম জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা খতীব এবং আহলে সুন্নাতের নির্বাচিত মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন। বাংলাদেশে সুন্নিয়ত প্রতিষ্ঠার জন্যে বাতিল ফের্কার বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি বে-নজীর ভূমিকা রাখেন। ওলী-আল্লাহ বিদ্বেষী, জঙ্গীবাদী গোষ্ঠির বিরুদ্ধে তাঁর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা আজ তাঁকে এক কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে। যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ছিল স্পষ্ট। বিভিন্ন ইসলামী সেমিনার, ওয়াজ-মাহফিল, মসজিদের মিম্বরে জুমুআয় প্রদত্ত তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শ্রোতাদের ইসলামের সঠিক রূপরেখার নির্দেশনা প্রদান করতো।
বিদেশভ্রমণঃ শাইখুল মুদাররিসীন আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (رحمة الله عليه) ১৯৮০ ইং সালে প্রথম বিদেশ ভ্রমণ করেন। ভারতের আজমীর শরীফে হযরত খাজা গরীব নওয়াজ (رحمة الله عليه) ও বেরেলী শরীফে আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত হযরত শাহ্ আহমদ রেজা খান বেরলভী (رحمة الله عليه)-এঁর মাযার শরীফ যিয়ারত করে ফয়েয ও বরকত লাভ করেন। ১৯৮২ইং সালে ইরাক সরকারের আমন্ত্রণে বাগদাদে অনুষ্ঠিত মোতামারে ইসলামী সম্মেলনে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীন প্রতিনিধি দলের সাথে গমন করেন। সেই সাথে পবিত্র হজ্ব ও যিয়ারত করার সৌভাগ্য লাভ করেন। কারবালা ও বাগদাদ শরীফের গাউসুল আযম (رضي الله عنه)-এঁর মাযারসহ অসংখ্য ওলী ও নবীর মাযার শরীফ যিয়ারত করেন। ১৯৮৪ ইং ও ১৯৮৫ ইং সালে দু’বার ইরাক সরকারের আহ্বানে পুনরায় জমিয়াতুল মোদাররেছীনের প্রতিনিধি হিসাবে ইসলামী সম্মেলনে যোগ দান করেন এবং সেই সাথে যথাক্রমে হজ্ব ও ওমরাহ পালন করেন। ১৯৯৭ ইং ২৪শে নভেন্বর বাগদাদ শরীফের মোতাওয়াল্লী সাইয়্যেদ আবদুর রহমান জিলানী সাহেব তাঁকে কাদেরিয়া তরিকার খেদমত করার জন্য হস্ত লিখিত খেলাফতনামা প্রদানকরেন।
শাইখুল মুদাররিসীন আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (رحمة الله عليه) নিজ গ্রাম আমিয়াপুরে হযরত বিবি ফাতেমা (رضي الله عنها) মহিলা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।
প্রকাশনা: বুখারী শরীফসহ তাঁর লিখিত, অনুদিত ও সম্পাদিত ২০ খানা গ্রন্থের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৯ খানা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর অসমাপ্ত তাফসিরগ্রন্থ জলিলুল বয়ান ফী তাফসিরীল কোরআন অতি শীঘ্রই প্রকাশিত হবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে মাসিক সুন্নীবার্তা প্রকাশ শুরু করেন, যা আজও চলমান আছে।
ওফাত: ২০০৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার শাইখুল মুদাররিসীন আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (رحمة الله عليه) এদেশের হকপন্থী মুসলিম জনতাকে শোকাবিভূত করে মাওলায়ে হাকিকীর দরবারে গমন করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন। তাঁর নিজ গ্রাম মতলব (উত্তর), চাঁদপুরস্থ আমিয়াপুরে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বিবি ফাতেমা (رضي الله عنها) মহিলা দাখিল মাদ্রাসা কাছেই মা-বাবার কবরের পাশে তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ অবস্থিত।