ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজীকে নিয়ে অপপ্রচারকারীদের জবাব: Muhammad Tanvir

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু মানুষ ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী সাহেবের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি করছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মাদ্রাসা কাদেরিয়া তৈয়বিয়া থেকে আলিম সম্পন্ন করে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে কৃতিত্বের সাথে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপ নিয়ে তিনি সুইডেনের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান Lund ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হন এবং টিচিং এসিস্টেন্ট হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন।

এখানে কিছু কথা বলে রাখতে চাই। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী র‍্যাংকিং করা হয়। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন সেটি হচ্ছে সুনামের দিক থেকে সুইডেনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়।

টাইমস হায়ার এডুকেশন কর্তৃক ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের সেরা ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে Lund ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৯৬ তম। আর কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃক বিশ্বের সেরা ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে Lund ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৯২ তম।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের মাত্র দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই এক হাজারের মধ্যে স্থান পেলেও অবস্থানের দিক থেকে সেগুলো ৮০০-র পরে। এখানে আর একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই তা হচ্ছে, সারা পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত দুই ধরনের হয় – রিসার্চ ইউনিভার্সিটি ও টিচিং ইউনিভার্সিটি।

আপনারা কি জানেন বাংলাদেশে এখনও কোন রিসার্চ ইউনিভার্সিটি নেই? এই lund ইউনিভার্সিটি হচ্ছে সারা পৃথিবীতে প্রথম সারির একটি রিসার্চ ইউনিভার্সিটি। এই জায়গা থেকেই আমাদের প্রিয় আব্দুল বাতেন মিয়াজী সাহেব উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেছেন!

তার পিএইচডির সুপারভাইজার ছিলেন বিশ্বের দুইজন বিখ্যাত গবেষক ও রিলিজিয়াস স্কলার। একজন হলেন Jan Hjärpe আর অন্যজন হলেন Leif Stenberg. এনাদের সম্পর্কে দুই এক লাইনে লিখে বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়, সেজন্য একটি সুদীর্ঘ লেখা প্রয়োজন। নাম দুটো নিয়ে একটু কষ্ট করে গুগল করলেই বিস্তারিত পাবেন।

পিএইচডি সম্পন্ন করার পরে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ধরে ফুলটাইম অ্যাকাডেমিক রিসার্চার হিসেবে ছিলেন। আপনারা কি জানেন এই ধরনের মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলটাইম রিসার্চার কাকে বলে, তার কিরকম যোগ্যতা থাকতে হয়?

বিভিন্ন একাডেমিক পিয়ার রিভিউ জার্নালে তার পাঁচটি রিসার্চ পেপার ও একটি একাডেমিক বই প্রকাশিত হয়েছে।

এখন সেই সমস্ত কুপমন্ডুকরা কি জানে রিসার্চ ইউনিভার্সিটি বলতে কী বোঝায়, টপ ইউনিভার্সিটিগুলোতে স্কলারশিপ পাওয়া কতটা যোগ্যতার ব্যাপার, একাডেমিক জার্নাল কি, একাডেমিক বই পাবলিশ করা কতটা যোগ্যতার ব্যাপার ইত্যাদি।

এনার সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে বলছি- আপনারা কি আদৌ জানেন গবেষণা কি, গবেষণা কিভাবে করতে হয়, গবেষণার মেথডলজি, অ্যাকাডেমিক রিসার্চ, হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ, ক্রিটিক্যাল এনালাইসিস ইত্যাদি সম্পর্কে? আপনাদের জীবনে এখন পর্যন্ত কয়টি রিসার্চ আর্টিকেল পিয়ার রিভিউ জার্নালে প্রকাশ করতে পেরেছেন? জীবনে এই টার্মিনোলজিগুলো সম্পর্কে কখনো শুনেছেন? কয়টি পিওর একাডেমিক বই প্রকাশ করতে পেরেছেন?

ছোটবেলায় গল্পে পড়েছিলাম যে রাজা তার সহচর বীরবলকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমার রাজ্যে কাদের সংখ্যা বেশি? বীরবল উত্তর দিলেন যে, রাজ্যে ডাক্তারদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রাজা বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করলেন, এটা কিভাবে সম্ভব? বীরবল উত্তর দিলেন যে, একবার অসুস্থ হয়েই দেখুন না! কত জায়গা থেকে কত লোক এসে কত ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা যায় যে আমজনতা থেকে শুরু করে সবাই একেজন ধর্মীয় স্কলার ও পন্ডিত হয়ে গিয়েছে। গুগোল করে, টুকটাক বাজারি বই পড়ে, অনলাইনে আলোচনা ও ওয়াজ শুনে এরা নিজেদেরকে মহাপণ্ডিত ভাবে। এরা কিছু পারুক বা না পারুক, না জেনে-বুঝেই চট করে আরেকজনের উপর ফতোয়া দিতে পারে!

মাদ্রাসা শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে ইনি একজন যোগ্যতাসম্পন্ন স্কলার ও জ্ঞানী মানুষ। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী এই মানুষটিকে নিয়ে কিছু সার্টিফিকেটধারী মূর্খ মানুষ বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলি এনার মতো একজন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ আপনাদের মধ্য থেকে কাউকে খুঁজে বের করতে পারবেন?

সাম্প্রতিক সময়ে তিনি যে সকল লেখা-লিখি করেছেন, সেগুলোর কোনো সঠিক জবাব দিতে পেরেছেন? তবে একটি কাজ ঠিকই পেরেছেন, তা হল চাপাবাজি আর আক্রমণাত্মক গালাগালি।

মুসলমান হিসেবে আরেক মুসলমানকে এভাবে আক্রমণাত্মক, উস্কানিমূলক ও অভদ্র ভাষা যে ব্যবহার করতে পারে তাই এই সকল ভন্ড আলেমদের না দেখলে বুঝতে পারতাম না। ন্যূনতম পারিবারিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা থাকলে তারা এই ধরনের অ্যাপ্রোচে কথা বলতে পারতো না।

একজন স্কলার হিসেবে একটি বিষয়কে বিভিন্ন পার্সপেক্টিভ থেকে দেখে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দাঁড় করাবেন, একাডেমিক ক্রিটিসিজম করবেন – এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ শিক্ষিত মানুষদের থেকে স্কলার, গবেষকদের পার্থক্যটা এখানেই। একজন গবেষকের লেখার ক্রিটিসিজম করতে হলে অন্ততপক্ষে তার মত সমান যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।

অন্ধ আর হাতির গল্পটি আমরা সবাই জানি। অন্ধরা হাতির শরীরের এক একটি অংশ হাত দিয়ে ধরে আর মনে করে হাতিটি এরকমই। তাদের মধ্য থেকে কেউ-ই হাতিটি সম্পর্কে সঠিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে না।

বাংলাদেশের তথাকথিত বেশিরভাগ আলেম এই গোছের। নিজে যতটুকু বুঝে, ঠিক ততটুকু দিয়েই সবকিছুকে পরিমাপ করে বেড়ায়। এদের না আছে যথোপযুক্ত একাডেমিক শিক্ষা, না আছে একাডেমিক দক্ষতা। নিজের কতটুকু যোগ্যতা আছে সেটা ভালোভাবে যাচাই না করে আরেকজনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে!

অন্যকে সমালোচনা করার আগে নিজের যোগ্যতা তৈরী করুন। নবীপ্রেমিক, আহলে বায়াত প্রেমিক একজন জ্ঞানী মানুষ কে সম্মান করতে শিখুন। আর সম্মান করতে না পারলে অনুগ্রহপূর্বক চুপ থাকুন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার সাথে কথা বলেন বিধায় বিনয়কে কারো দুর্বলতা হিসেবে ভাববেন না। তাকে যথাযথ সম্মোধন দিয়ে কথা বলতে শিখুন।

পরিশেষে বলি- আক্রমনাত্মক, উস্কানিমূলক ও অশালীন আচার-আচরণ কোন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তথাকথিত আবেগ দিয়ে নিজেদেরকে সুন্নী হিসাবে পরিচয় দেয়া এসকল মানুষ কখনো সুন্নী হতে পারে না। এরা মূলত বকধার্মিক! বিভিন্ন দরবারের পীর-মুরিদ হলেও সুফিজমের মূল শিক্ষা এদের ভিতরে এখনো প্রবেশ করেনি। বহুত্ববাদ, উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা না থাকার ফলে এদের মধ্যে উগ্র স্বভাব তৈরি হয়।

আল্লাহ তাআলা

Abdul-Baten Miaji

সাহেবকে ইসলামের খেদমতে কবুল করুন- আমীন।

ধন্যবাদ৷

[লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Department of World Religions-এর একজন শিক্ষার্থী এবং গবেষক]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment