নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি ‘আলা রাসূলিহিল কারীম, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আল্লাহ্ পাক ﷻ তাঁর বিশেষ বান্দাগণের কিছু কিছু কাজকে এতই পছন্দ করেছেন যে তা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। বলা যায় ইসলামের বেশির ভাগ এবাদত এবং উৎসবই পূর্ববর্তী কোন না কোন নবী-রাসূল (আলাইহিমুস সালাম) গণের এবং আল্লাহর প্রিয় এবং বিশেষ বান্দাগণের (আল্লাহ্ তাঁদের উপর সন্তুষ্ট থাকুন) কর্ম কিংবা এবাদত। আমরা যেসব আমল, এবাদত, উৎসব ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পালন করে থাকি, তা আসলে সেইসব বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গের কৃত কর্ম কিংবা স্মৃতি। নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত এর অন্যতম। মীলাদুন্নাবী উদযাপনও এরই ধারাবাহিকতার অংশ বিশেষ। অজ্ঞতার কারণে কেউ কেউ ঈদে মীলাদুন্নাবীর মতো এমন মর্যাদাপূর্ণ উৎসবকে বিদ’আত কিংবা শিরক পর্যন্ত বলে ফেলে। নিচের আলোচনায় প্রমাণিত হবে, পূর্ববর্তীদের স্মৃতি আল্লাহ্ পাক আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন এবং তা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ করা ছাড়াও অনেক অনেক ফযিলত ও মর্যাদাপূর্ণ করে দিয়েছেন। সুবহানআল্লাহ!
পবিত্র জুমার দিন
প্রথমেই আসি জুমার আলোচনায়। মুসলমানদের জন্য জুমা একটি বিশেষ দিন। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সমস্ত উম্মতের জন্য এ দিনটি ঈদের দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুমিনের জন্য জুম’আর দিন হল সাপ্তাহিক ঈদের দিন।”-[ইবনে মাজাহ;১০৯৮] এদিনে জোহরের চার রাকাত ফরজের পরিবর্তে আমরা মাত্র দু’রাকাত জুমার নামায আদায় করে থাকি। নামায বেশি পড়লে বেশি সাওয়াব, কিন্তু আল্লাহ্ পাক তাঁর এক বিশেষ বন্ধুর স্মৃতির কারণে এ দিনে চার রাকাতের পরিবর্তে মাত্র দু’রাকাত নামায আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যান্য দিনের চার রাকাতের চেয়ে জুমার দু’রাকাত নামায অনেক বেশি মর্যাদার। তিনি আমাদের পূর্বে ইহুদী এবং খৃষ্টানদেরকে এ বিশেষ দিনটি পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা অবজ্ঞা করে প্রত্যাহার করে এর পরিবর্তে শনি ও রবিবারকে বেছে নিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ্ পাক বিশেষ করুণাবশত এই বিশেষ দিনটি উম্মতে মুহাম্মদীকে দান করেছেন। এ দিনটি নিয়ে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। এ দিনে এবং এ দিনের উছীলায় এর পূর্ববর্তী রাতে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মৃত্যুবরণকারীকে পর্যন্ত আল্লাহ্ পাক কবরের আজাব থেকে রেহাই দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন।
কিন্তু আমরা কি জানি কেন এ দিনের এমন বিশেষ ফযিলত? এ দিনে আল্লাহ্ পাক প্রথম মানব হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তৈরি করেছেন। আল্লাহ্ পাকের সুন্দরতম সৃষ্টির একটি সৃষ্টি হলো মানব সৃষ্টি। এর পূর্বে আল্লাহ্ পাক অন্যান্য প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। সেসব সৃষ্টির মধ্যে জীন জাতি অন্যতম। কিন্তু পূর্বের কোন সৃষ্টিই মানবসৃষ্টির মতো এতো সুন্দরতম অবয়বে নয়। আল্লাহ্ পাক সেকথা সূরা ত্বীনে ঘোষণাও করেছেন। সেই প্রিয় সৃষ্টিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আল্লাহ্ পাক উম্মতে মুহাম্মদীকে সপ্তাহে একবার এ দিনটি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
পবিত্র জুমআর দিন অন্য দিনগুলো থেকে স্পেশাল। হাদিস শরীফে এই দিনটিকে ঈদের দিন বলা হয়েছে। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إن هذا يومُ عيدٍ ، جعله الله للمسلمين ، فمن جاء إلى الجمعة فليغتسل ، وإن كان طيبٌ فليَمَسَّ منه ، وعليكم بالسواك
জুমআর দিনকে আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানদের জন্য (সাপ্তাহিক) ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। তোমরা এদিন মিসওয়াক কর, গোসল কর ও সুগন্ধি লাগাও।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১০৯৮)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন শুক্রবার। এদিনেই আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এদিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, এদিনেই সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, এদিনেই কিয়ামত হবে। কাজেই এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে দরূদ পাঠ করবে, কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হবে”। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, “আপনি তো (কবরের মাটিতে) বিলুপ্ত হয়ে যাবেন, কিভাবে তখন আমাদের দরূদ আপনার নিকট পেশ করা হবে?” তিনি বললেনঃ “মহান আল্লাহ মাটির জন্য নবীদের দেহ ভক্ষন করা নিষিদ্ধ করেছেন”। (সুনানুন নাসাঈ ৩/৯১, নং ১৩৭৪)
এ হাদিসটি থেকে অনেকগুলো ব্যাপার রয়েছে লক্ষ্য করার মতো। প্রথমতঃ জুমার দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, অথচ এ দিনে বেশি বেশি দরূদ পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে রাহমাতুল্লিল আলামীনের উপরে। এর রহস্য কি? দ্বিতীয়তঃ কোন নবীই মৃত্যুর পর মাটির সাথে মিশে যান না। তাঁরা আল্লাহর কুদরতে কবরে নামায আদায় করেন এবং তাঁদেরকে শহীদদের মতো রিযিক দেয়া হয়। আর তৃতীয়তঃ আমাদের নবী ইমামুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরীরে মসজিদে নববীর পাশে আপন রওজা মুবারকে জীবিত আছেন এবং উম্মতের দরূদ ও সালামের জবাব দেন।
জুমার দিনের আরো অসংখ্য মর্যাদা রয়েছে। এদিনে অনেক নবী-রাসূল বিভিন্ন মুসীবত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ঘটনাক্রমে এ দিনেই কারবালার প্রান্তরে নামাযী কিছু মুসলমানের হাতে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুসহ আহলে বায়েতের অনেক সদস্য নির্মমভাবে শহীদ হন। আর উপরোক্ত হাদিস অনুসারে এ দিনেই কিয়ামত সংগঠিত হবে। কাজেই এ দিনে আমাদের বেশি বেশি দরূদ পাঠ করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস দিয়ে এই পর্ব শেষ করবো ইনশাআল্লাহ!
আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র নিকট কিছু চায়, তা হলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করে থাকেন এবং তিনি (রাসূল) হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। [বুখারীঃ ৯৩৫, ইফা ৮৮৮, আধুনিক ৮৮২; মুসলিমঃ ৮৫২]
জুমার দিনের সেই বিশেষ মুহূর্তটি আবু দাউদের একটি হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে।
জাবের ইবন আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জুমুআর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোন মুসলমান আল্লাহর নিকট যাই দু’আ করে আল্লাহ তাই কবুল করেন। তোমরা এই মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান কর । [(আবু দাউদঃ ১০৪৮, নাসাঈ) পরিচ্ছদঃ ২১৪. জুমুআর দিনে কোন মুহূর্তে দুয়া কবুল হয়।]
*************************
পর্বঃ দুই
পূর্বে যেমন উল্লেখ করেছি, আমাদের এবাদত এবং উৎসবের বেশির ভাগই পূর্ববর্তী নবী এবং রাসূলগণের (আলাইহিমুস সালাম) কোন না কোন আমল, এবাদত কিংবা স্মৃতি। কাজেই ঈদে মীলাদুন্নাবীও ঠিক তেমনি একটি উৎসব যার সাথে দু’জাহানের সর্দার রাহমাতুল্লিল আলামীনের পৃথিবীতে আগমনের স্মৃতি জড়িত রয়েছে। যা তিনি নিজেই প্রতি সপ্তাহে পালন করতেন। কাজেই সেই মহিমান্বিত উৎসবকে বিদ’আত কিংবা শিরক বলা একেবারে নিরেট মূর্খতা। সর্বশেষ পর্বে এ নিয়ে আলোচনা করে ধারাবাহিক লেখার সমাপ্তি করবো ইনশাআল্লাহ! এই পর্বে থাকছে নামাযের আলোচনা।
নামায
নামায মুমিন এবং কাফেরের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। এটি এমন একটি এবাদত যা প্রতিদিন করতে হয়। রোজা বছরে একবার এবং একমাস পালন করতে হয়, হজ্ব জীবনে একবার করা ফরজ, যাকাত বছরে একবার দিতে হয়। কিন্তু নামায প্রতিদিন আদায় করতে হয়, দিনে পাঁচবার। অনেকের মতো আমার মনেও প্রশ্ন জাগতো বিভিন্ন ফরজ নামাযে রাকাতের সংখ্যায় তারতম্য দেখে। বিভিন্ন কিতাবাদি ঘাঁটাঘাঁটি করে এবং আলেমগণের বয়ান শুনে এর আসল রহস্য জানতে পারলাম। কিছুদিন পূর্বে এ নিয়ে শায়খুল ইসলাম আল্লামা ডঃ তাহিরুল কাদরী মাঃ জিঃ আঃ র একটি বয়ান দেখে বিস্তারিত জানলাম।
আল্লাহ্ পাক নিজে যেমন খুব রহস্যময়, তিনি তেমনি রহস্য পছন্দও করেন। তাঁর চারপাশে তিনি রহস্য দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। ঘর থেকে বের হলেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে বিশ্বের বিস্ময়। মানব জীবনের উন্নতির ফলে সেগুলো একেক করে আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তবে আজ থেকে ১৪শ বছর পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের অনেক অজানা বিষয় আমাদের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও প্রকাশ করেছেন। আর আল্লাহ্ পাক তো পবিত্র কুরআনে পূর্ববর্তী জাতির অনেক ঘটনা নিজেই বর্ণনা করেছেন। এসবই আমাদের জন্য জ্ঞানের উৎস। ঠিক তেমনিভাবে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পেছনে রয়েছে একেক জন নবীর এবাদত এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনের স্মৃতি।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম বেহেশত থেকে পৃথিবীতে আগমনের পর, দীর্ঘ সাড়ে তিনশ কিংবা চারশ বছর অতিবাহিত করেন। এ সময়ে আমাদের আদি মাতা হাওয়া আলাইহিস সালাম এবং আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম, দুজন দু স্থানে ছিলেন। বাবা আদম শ্রীলংকায় আর মা হাওয়া আরবের জেদ্দায় অবস্থান করতেন। দীর্ঘ সময় পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উছীলায় তাঁদের পুনরায় মিলন হয়, আজকের আরাফা নামক স্থানে। জাবালে রহমতের চূড়ায় তাঁদের দোয়া আল্লাহ্ পাক কবুল করলে আল্লাহ্ পাকের শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে আদম আলাইহিস সালাম দু’রাকাত নামায আদায় করেন [আত-তাহাবী, শরহে মা’আনী আল আছার, ভল্যুম ১, পৃষ্ঠা ১৭৫]। আল্লাহ্ পাকের কাছে এ দু’রাকাত নামায এতই পছন্দনীয় হলো যে, তিনি বলেন, তোমার এ দু’রাকাত নামায আমার কাছে এতই ভালো লেগেছে যে আমি তা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বাধ্যতামূলক করে দেবো। তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত এ দু’রাকাত নামায পড়বে।
জোহরের চার রাকাত ফরজ হযরত নূহ আলাইহিস সালামের এবাদত। আল্লাহ্ পাকের দেয়া ঝড়-তুফান এবং বন্যা থেকে সহীহ সালামতে জুদ পাহাড়ে অবতরণের পর তিনি আল্লাহ্ পাকের শুকরিয়া আদায় করার জন্য চার রাকাত নামায আদায় করেন। আর সে সময়টি ছিল জোহরের সময় [আত-তাহাবী, শরহে মা’আনী আল আছার, ভল্যুম ১, পৃষ্ঠা ১৭৫]। আল্লাহ্ পাকের কাছে সে চার রাকাত নামাযও খুব পছন্দনীয় হয়। যাতে মানুষ কিয়ামত পর্যন্ত নূহ আলাইহিস সালামের সেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন উৎযাপন করতে পারে সেজন্য তিনি তা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ফরয করে দেন।
আছরের চার রাকাত হযরত ইব্রাহীম এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিমাস সালামের সুন্নত। আল্লাহ্ পাকের নির্দেশে বাবা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম যখন ছেলে ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানি করার জন্য মীনায় নিয়ে যান, প্রফুল্ল চিত্তে ছেলেও তাতে রাজি হয়ে যাওয়ায় আল্লাহ্ পাক বেহেশত থেকে একটি দুম্বা পাঠিয়ে দেন। দুম্বা কুরবানি হয়ে গেলে পিতা এবং পুত্র এ দৃশ্য দেখে আল্লাহ্ পাকের কাছে শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে চার রাকাত নামায আদায় করেন [আত-তাহাবী, শরহে মা’আনী আল আছার, ভল্যুম ১, পৃষ্ঠা ১৭৫]। তখন ছিল আসরের সময়। আল্লাহ্ পাকের কাছে পিতা ও পুত্রের সে আত্মত্যাগ এতই পছন্দ হয়েছে যে তিনি তাঁদের স্মরণে কুরবানিকে কিয়ামত পর্যন্ত উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ওয়াজিব করে দেন এবং তাঁদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের এবাদতকেও ফরজ করে দেন।
মাগরেব তিন রাকাত। এই বেজোড় সংখ্যার রাকাত কোত্থেকে এলো? দু’রাকাতও নয়, চার রাকাতও নয়। তিন রাকাতের এ রহস্য হলো হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের সুন্নত এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনের এবাদত। তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর কিংবা ২৪ বছর অসুস্থ ছিলেন। আল্লাহ্ পাকের কাছে আর্জি পেশ করার পর আল্লাহ্ পাক তাঁর এই আর্জি মনজুর করেন। পাশেই একটি কূপ সৃষ্টি হয় এবং হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম তাতে গোসল করলে তিনি পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন। তখন ছিল মাগরেবের সময়। স্ত্রী রাহীমা তখন খাদ্য সংগ্রহের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন।ফলে ফিরে এসে সুস্থ স্বামীকে দেখে তিনি চিনতে পারেন নি। আইয়ুব আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ পাকের কাছে শুকরিয়া আদায়ের জন্য চার রাকাত নামায আদায়ের নিয়ত করেন। তিনি আকৃতিতে ছিলেন অনেক বিশাল। তিন রাকাত পড়ার পর খুব দুর্বল বোধ করেন। তিন রাকাতের আদায় করেই সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করেন [আত-তাহাবী, শরহে মা’আনী আল আছার, ভল্যুম ১, পৃষ্ঠা ১৭৫]। আল্লাহ্ পাকের কাছে এ তিন রাকাতের বেজোড় সংখ্যা এতই পছন্দনীয় হল যে তিনি তা উম্মতে মুহাম্মদীর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত স্মরণীয় করে রাখলেন।
সর্বশেষ এশার চার রাকাত হলো আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। এভাবে আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে পাঁচ জন নবী (আলাইহিমুস সালাম) এর সুন্নত এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উৎসব পালন করে থাকি। ইসলামের প্রতিটি এবাদত ও উৎসবই আসলে কোন না কোন নবী-রাসূলের সুন্নত এবং রীতি। [পরের পর্বে আসছে হজ্বের আলোচনা!]
*****************************************
পর্বঃ তিন
দিনে দিনে ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ উৎযাপনের পরিসর বেড়েই চলেছে। তা দেখে কপাল পোড়া কিছু লোক সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে মানুষকে নতুন কৌশলে ধোঁকা দিতে চাচ্ছে। তা হলো, মীলাদুন্নাবী উৎযাপনের বিষয় নয়, তা হলো পালনের বিষয়। অর্থাৎ তাদের মতে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ুতের ২৩ বছরের জীবনের আদর্শ নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করাই যথেষ্ট। এটি উৎসব আকারে পালন করা, এ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা কিংবা উৎযাপনের বিষয় নয়। অথচ নবীজী ﷺ এর জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি কাজ এবং কথাই উম্মতের জন্য উত্তম আদর্শ। তারা আরো দাবী করে যে, নবীজি, সাহাবা কিংবা সলফে সালেহীনগণের কেউই ঈদে মীলাদুন্নাবী পালন করেননি কিংবা উৎযাপন করেননি। তাই এরূপ করা বিদ’আত আর তাদের বিদ’আতের সংজ্ঞা অনুযায়ী বিদ’আতকারী জাহান্নামী। নাউজুবিল্লাহ! পূর্বের পর্বে দেখিয়েছি ইসলামের আরকান-আহকামের বেশিরভাগই পূর্ববর্তী কোন না কোন নবী-রাসূলের স্মৃতি এবং এবাদত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সাথে পাঁচ জন নবীর স্মৃতি এবং উৎসব মিশে আছে। আর জুমার দিনের মর্যাদা যা আমাদের জন্যে ঈদ, তা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার কারণে। এবারের পর্বে আলোচনা করছি হজ্ব নিয়ে, যার প্রায় প্রতিটি আহকাম ও আরকানই আল্লাহ পাকের কিছু প্রিয় বন্ধুর কিছু কার্যক্রম। তা তিনি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।
হজ্ব
হজ্ব ইসলামের এমন একটি স্তম্ভ যার প্রায় সবগুলো রীতি, নিয়ম, ফরজ, ওয়াজিব, আহকাম-আরকান পূর্ববর্তী নবী, রাসূল কিংবা আল্লাহ্ পাকের প্রিয় বিশেষ বান্দাগণের কর্ম এবং বিশেষ মুহূর্তের কিছু স্মৃতি মাত্র। পবিত্র কা’বাঘর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এবং ইসমাইল আলাইহিস সালাম কর্তৃক তৈরি একটি ঘর। এর পূর্বে আদম আলাইহিস সালাম তা তৈরি করেছিলেন। এই ঘরটি আল্লাহ্ পাকের পছন্দ হওয়ায় একে নিজের ঘর হিসেবে কবুল করেছেন। এ ঘরের চারপাশে সাতবার তাওয়াফ করা উক্ত দু’জন সম্মানিত নবীর সুন্নত। কিন্তু হজ্ব এবং ওমরাহ্র রোকন হিসেবে তা করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। এ সময় দোয়া পাঠ করা উত্তম, তবে বাধ্যতামূলক নয়। কোন দোয়া না পড়লেও তাওয়াফ হয়ে যাবে।
৯ই জিলহজ্ব আরাফার দিনে মহিমান্বিত কা’বাঘরের পাশে থাকার চেয়ে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক। সেখানে কোন দোয়া না পড়লেও হজ্বের ফরজ আদায় হয়ে যাবে। তবে উক্ত পবিত্র স্থানকে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড় বলে অভিহিত করেছেন, কাজেই সেখানে দোয়া পাঠ অতি উত্তম এবং সে স্থানটি দোয়া কবুল হবার একটি স্থান। উক্ত স্থানটি আরাফার ময়দান এবং রহমতের পাহাড় হবার কারণ হলো আমাদের আদি পিতা এবং আদি মাতা দীর্ঘ সাড়ে তিনশত কিংবা চারশত বছর একে অপরকে খুঁজে খুঁজে আল্লাহ্ পাকের কাছে কায়মোনাবাক্যে ফরিয়াদ করেছেন। অবশেষে এই স্থানে এই দিনে তাঁদের পুনরায় সাক্ষাৎ হয়। এই সাক্ষাৎটি আল্লাহ্ পাকের কাছে এতই প্রিয় মনে হয়েছে যে, তিনি তার স্মৃতি চিরিদিন অম্লান করে রাখার জন্যে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্যে তা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই উতযাপিত হতেই থাকবে।
আরাফা থেকে ফেরার পথে মুজদালিফায় এসে রাত্রি যাপন করতে হয়। কারণ এখানেই আমাদের আদি মাতাপিতা পুনরায় সাক্ষাতের পর প্রথম বাসর যাপন করেছিলেন। খোলা আকাশের নিচে তাই উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য রাত্রি যাপন করা কিয়ামত পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে। এটি হজ্বের ওয়াজিব। এই স্থানে রাত্রি যাপন কেবল ওয়াজিবই নয়, এখানে রাত্রি যাপনের ফযিলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, মুজদালিফায় রাত্রি যাপনকারীকে আল্লাহ রহমতের চাদরে ঢেকে নেন। বান্দা হাত তুলে আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ তার পিছনের সব গুনা মাফ করে দেন। সুবহানআল্লাহ!
আরাফা দিবসের পরদিন মীনায় কুরবানি করা ওয়াজিব। ওইদিন এবং এর পরের তিনদিন কুরবানি না করে এর আগের দিন কিংবা বছরের অন্যদিনে কুরবানি দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয় খলিল আলাইহিস সালামকে স্বপ্নে তাঁর প্রিয় জিনিস কুরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর খলিল তা বাস্তবায়ন করে আল্লাহ্র ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামও নিজেকে ধৈর্য্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আল্লাহ্ পাকের কাছে কেবল গ্রহণীয়ই হয়নি, তাঁর নৈকট্যের একটি মাধ্যম হিসেবে তাকে কবুল করেছেন। এবং উম্মতে মুহাম্মদীর উপর তা ওয়াজিব করে দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত তা প্রচলিত করে দিয়ছেন। এরপর জামারায় শয়তানকে পাথর মারার মাধ্যমে সেসব পুণ্যময় স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন।
হজ্ব ও ওমরাহ্র রোকনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কা’বাঘরের সামান্য পূর্বপাশে অবস্থিত সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করা বা দৌড়ানো। আল্লাহু আকবার! এই আমল এতই মর্যাদাবান যে আল্লাহ্ পাক তা করার তাগিদ দিয়ে আয়াত নাজিল করেছেন। শিশুপুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালাম পানির পিপাসায় ছটফট করছেন। অসহায় মা হাজেরা আলাইহিস সালাম শিশুপুত্রের জন্য পানির সন্ধানে এখানে সেখানে দৌড়াচ্ছেন। একবার সাফা পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করে এদিক সেদিক তাকিয়ে পানি কিংবা কোন জনমানবের সন্ধান করছেন। পরক্ষণেই আবার অস্থির হয়ে মারওয়া পাহাড়ের দিকে ছুটে গিয়েছেন। বর্তমানে মাঝখানের সবুজ পিলারের কাছে গিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দ্রুত দৌড়ে পাহাড়ের চূড়ায় গিয়েছেন। সন্তানের জন্য মায়ের এমন আকুতি এবং করুণা মিশ্রিত অস্থিরতা এবং দৌড়াদৌড়ি আল্লাহ্ পাকের কাছে খুবই ভালো লেগেছে। প্রতিদান স্বরূপ তিনি এমন পানি দান করলেন যা কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র আদমসন্তানের জন্য অতুলনীয় এক নিয়ামত হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছে। দুনিয়ার অন্য কোন পানি এমন সুস্বাদু, পুষ্টিকর, ক্ষুধা নিবারণকারী, বরকতময় নয়। যে সন্তানের জন্য পানি আনতে মা হাজেরা এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করেছেন, ফিরে এসে দেখেন সে সন্তানের পায়ের নিচ থেকেই সুমিষ্ট পানি বয়ে চলেছে। তিনি পানিকে আটকে রাখার জন্য চারপাশে বাঁধ দিতে লাগলেন, আর মুখে বললেন, জাম জাম মানে থামো থামো। সে পানির নাম হয়ে গেল জমজম। পৃথিবীর অন্য কোন পানিতে পেট ভরে না, কিন্তু জমজমে ক্ষুধা নিবারণ হয়। অন্য পানি বেশি পান করলে পেশাবের বেগ হয়, কিন্তু জমজম যতই পান করা হোক না কেন, পেশাব কিংবা পায়খানার বেগ হয় না। আল্লাহ্ পাকের প্রিয় বান্দাদের উছীলায় প্রাপ্ত বস্তুতে এমনই নিয়ামত নিহিত রয়েছে!
এরূপ ভাবে পূর্বেকার নবী-রাসূল এবং আল্লাহর বিশেষ বান্দাগণের স্মৃতি, এবাদত এবং দৌড়ের মতো বিষয়ও আমাদের জন্য বরকতময় এবং এবাদত হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। কাজেই যারা ইমামুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, শাফিউল মুজনেবীন, জীন ও মানব জাতির সর্দার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বেলাদত শরীফের মুহূর্তকে উৎযাপন করতে অনীহা প্রকাশ করে এবং একে অন্য সাধারণ বিষয়ের মতো মনে করে বিদ’আত ও শিরক মনে করে তারা অজ্ঞতার শিখরে রয়েছে।
ইনশাআল্লাহ, আগামী পর্বে ঈদে মীলাদুন্নাবী উৎযাপনের দলীল উপস্থাপন করবো। এই উৎসব মহান রাব্বুল আলামীনের সুন্নত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তা পালন করেছেন এবং সাহাবাগণও নিজেরা তা উৎযাপন করেছেন। কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে দলীল পেশ করা হবে। সাথেই থাকুন।
*******************************
পর্বঃ চার [শেষ পর্ব]
কিছু লোক বলে বেড়ায় ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ পালন করা বিদাত। কেউ কেউ আরেকটু অগ্রসর হয়ে ফতোয়াই দিয়ে বসে ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ পালন শিরক। যেমন সৌদি দরবারী মুফতি এবং তাদের অনুসরণকারী ঘোমটা মৌ-লোভীরা। কেউ কেউ আবার ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ উপলক্ষ্যে জশনে জুলুসকে হিন্দুদের জন্মাষ্টমী কিংবা খৃষ্টানদের বড়দিন পালনের সাথে তুলনা করে থাকে। নাউজুবিল্লাহ! কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ নিয়ে আলোচনা করলে বুঝতে সহজ হবে ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে নেয়ামত, নাকি শিরক আর বিদাত।
‘ঈদ’ মানে আনন্দ তা আমরা সবাই জানি। আর ‘মীলাদ’ মানে হচ্ছে জন্ম। অর্থাৎ নবী করীম ﷺ এর বেলাদাত শরীফ বা জন্মে আনন্দ প্রকাশ করাই হলো ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ। এই মহিমান্বিত দিবসটি উপলক্ষে তাঁর (ﷺ) বেলাদাত শরীফ, তাঁর জীবন, তাঁর কর্ম এক কথায় মহান আল্লাহ্ পাক কর্তৃক প্রদত্ত তাঁর শান ও মান বর্ণনার মাধ্যমে তিনি কীভাবে আমাদের সবার জন্য রহমত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তা অনুধাবন করাই হলো ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ এর মূল বিষয়।
আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যেমন বলেছেন, পুরো ত্রিশ পারা কুরআনে আল্লাহ্ পাক রাসূল ﷺ এর প্রশংসা করেছেন, কাজেই আমরা তাঁর কি প্রশংস করতে পারি? প্রথমেই আমরা দেখব মহান রাব্বুল ‘আলামীন রাসুলে পাক ﷺ এর বেলাদত শরীফ নিয়ে পবিত্র কুরআনে আলোচনা করেছেন কিনা! রাসুল ﷺ নিজে কি তাঁর নিজের বেলাদত শরীফ নিয়ে আলোচনা করেছেন? সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম কি এ নিয়ে আলোচনা করেছেন? তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আয়িম্যায়ে মুজতাহেদীন, মুফাসসেরীনে কেরাম, মুহাদ্দেসীনে কেরাম সহ সকল ওলী-গাউস-কুতুব এবং নাল্লাহ পাকের নেক বান্দাগণ কি এ নিয়ে আলোচনা করেছেন? এই নিয়ে তাঁরা কি খুশি প্রকাশ করেছেন?
আল্লাহ্ পাক কি রাসুল ﷺ এর জন্ম নিয়ে আলোচনা করেছেন?
সর্ব প্রথমেই দেখা যাক আল্লাহ্ পাক এ নিয়ে কি বলেছেন। পবিত্র কুরআনের বেশ কিছু আয়াতে আমাদের নবী ﷺ এর বেলাদত শরীফের কথা উল্লেখ তো রয়েছেই, সাথে সাথে আরো কিছু নবী-রাসুলের জন্ম নিয়েও আলোচনা রয়েছে। যেমন মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইয়াহইয়া (আঃ) এবং ঈসা (আঃ) সহ কয়েকজন নবী-রাসুলের জন্ম বৃত্তান্ত, মৃত্যু দিবস এবং পুনরুত্থান সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। নিচে এর কয়েকটি পেশ করা হলোঃ
{হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) সম্পর্কে} “তার প্রতি শান্তি যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।” (সূরা মরিয়ম : ১৫)
{হযরত ঈসা (আঃ)} “আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।” (সূরা মরিয়ম : ৩৩)
{নূরে মুজাসসাম ﷺ সম্পর্কে} “এই শহর (মক্কার) শপথ করছি হে আমার প্রিয় হাবীব! এবং এই নগরীতে আপনার উপর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। আপনার পিতা (ইব্রাহিম আঃ) এবং তাঁর বংশধর (অর্থাৎ আপনার) কসম।” (সূরা বালাদ : ১-৩)
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো এই আয়াতটি যেখানে আল্লাহ্ পাক সমস্ত নবী-রাসুলগণকে রূহানী জগতে বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে ইমামুল মুরসালীন এবং রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন ﷺ এর পৃথিবীতে শুভাগমন সম্পর্কে আলোচনা করে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তাঁকে স্বীকৃতি এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন।
“স্মরণ করুন যখন আল্লাহ নবীগণের নিকট থেকে এমর্মে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত প্রদান করব, তারপর তোমাদের নিকট তাশরীফ আনবেন রাসূল। যিনি তোমাদের কিতাবগুলো সত্যায়ন করবেন। তখন তোমরা নিশ্চয়ই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং নিশ্ছয়ই তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করলেন, তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ সম্পর্কে আমার গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করলে? সবাই আরজ করল, আমরা স্বীকার করলাম। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করলেন, তোমরা একে অপরের উপরের সাক্ষী হয়ে যাও। আমি নিজেও তোমাদের সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম। সুতরাং যে কেউ এরপর ফিরে যাবে, তবে সে ফাসিক হবে”। [সূরা আল ইমরান ৮১-৮২]
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ সুন্নতে এলাহী! অর্থাৎ নবী ﷺ এর আগমন সম্পর্কে আলোচনা করা এবং তাঁর শান ও মান বর্ণনা করা স্বয়ং রাব্বুল আলামীনের রীতি।
রাসুল ﷺ নিজে কি তাঁর বেলাদত শরীফ আলোচনা করেছেন?
রাসুল (ﷺ) নিজে তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন এভাবেঃ
রাসুলে করীম (ﷺ)-এর চাচা হযরত আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী (ﷺ) -এর নিকট ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আসলাম। কারণ আমি হুযুর করীম (ﷺ)-এর বংশ বুনিয়াদ সম্পর্কে বিরুপ কিছু মন্তব্য শুনেছি। [তা নবী (ﷺ) কে অবহিত করি] তখন হুযুর (ﷺ) মিম্বরে আরোহণ করেন (বরকতময় ভাষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে)। অতঃপর তিনি সাহাবা কেরামগণের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি কে?” উত্তরে তাঁরা বলেন, “আপনি আল্লাহর রাসুল”। তখন হুযুর আকরাম (ﷺ) এরশাদ করেন, “আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র মুহাম্মদ (দরুদ)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মানব-দানব সবই সৃষ্টি করেন। এতে আমাকে উত্তম পক্ষের (অর্থাৎ মানবজাতির) মধ্যে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তাদের (মানবজাতি)-কে দু’সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেন (অর্থাৎ আরবীয় ও অনারবীয়) এতেও আমাকে উত্তম সম্প্রদয়ে (আরবীয়) সৃষ্টি করেন। অতঃপর আরব জাতিকে অনেক গোত্রে বিভক্ত করেন আর আমাকে গোত্রের দিক দিয়ে উত্তম গোত্রে (কোরাইশে) সৃষ্টি করেন। তারপর তাদেরকে (কোরাইশ) বিভিন্ন উপগোত্রে ভাগ করেন। আর আমাকে উপগোত্রের দিক দিয়ে উত্তম উপগোত্রে (বনী হাশেমে) সৃষ্টি করেন। সুতরাং আমি তাদের মধ্যে সত্তাগত, বংশগত ও গোত্রগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ।”
[তিরমিযী, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা নং-২০১; মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং-৫১৩]
[অন্য সূত্রে বর্ণীত এই সম্পর্কিত আরও হাদীসের জন্য দেখুন জামে তীরমিযী ২য় খন্ড ২০১ পৃঃ, মুসনাদে ইমাম আহমদ ১ম খন্ড ৯ পৃঃ, দালায়েলুল নবুওত বায়হাকী ১ম খন্ড ১৬৯ পৃ, কানযুল উম্মাল ২য় খন্ড ১৭৫ পৃঃ]
হযরত যাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন- আমি নবী করীম ﷺ কে লক্ষ্য করে বললাম- হে আল্লাহর রাসুল (দরুদ)! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কোরবান হোক। আমাকে কি আপনি অবহিত করবেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন বস্তু সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে রাসুল করীম ﷺ এরশাদ করেন- হে জাবির! সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে তার আপন নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় ঐ নূর কুদরতে যেথায় সেথায় ভ্রমণ করছিল। ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোজখ, ফেরেশতা, আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, জিন-ইনসান কিছুই ছিল না।
[বিস্তারিত একটি হাদিসের অংশ বিশেষ যা ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহঃ তাঁর মুসান্নাফে ১৮ নং হাদিসে বর্ণনা করেন। আরো দেখুন মাওয়াহেবুল লাদুন্নিইয়া, শরহে জুরকানি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৮৯]
উপরের দুটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ সুন্নতে রাসুল! এ ধরণের আরো অনেকগুলো হাদিস রয়েছে। সবগুলো উল্লেখ করতে গেলে লিখা অনেক বড় হয়ে যাবে বিধায় তা করা হলো না।
সাহাব কেরামগণ কি ঈদে মীলাদুন্নাবী পালন করেছেন?
আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি রসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে আমির আনছারী (রা) এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তাঁর সন্তানাদি, আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ও পাড়া-প্রতিবেশীকে নিয়ে নবী (ﷺ) এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, “এই দিবস; এই দিবস” (অর্থাৎ এই দিবসে রাসুল (ﷺ) যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। নবী (ﷺ) তা শ্রবণ করে অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রহমতের দরজা তোমার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন আর যে কেউ তোমার মতো এরূপ করবে সেও তোমার মতো নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।
(মীলাদের উপর প্রথম গ্রন্থ রচনাকারী আল্লামা আবুল খাত্তাব ইবনে দেহিয়া (৬৩৩ হি:) ঈদে মীলাদুন্নবীর উপর লিখিত ‘‘আত-তানবীর ফী মাওলিদিল বাশির আন নাযীর’’ গ্রন্থে এই মতটিকেই গ্রহণ করেছেন। কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি একদা বিলাদত শরীফউ পলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তাঁর নিজগৃহে সাহাবীগণকে সমবেত করে নবী (ﷺ) এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাকের প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং রাসুল (ﷺ) এর উপর দুরূদ (সালাত-সালাম) পাঠ করছিলেন। এমন সময় রাসূল (ﷺ) তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন: “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেলো।” {আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী (রাহ) এর বিখ্যাত কিতাব “সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা (ﷺ)“ এ শেষের হাদিস দুটি উল্লেখিত হয়েছে। # দুররুল মুনাযযাম – সপ্তম অধ্যায় – প্রথম পরিচ্ছেদ # ইশবাউল কালাম # হাক্বীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী ৩৫৫ পৃষ্ঠা}
হযরত হাসান বিন সাবিত (রাঃ) রাসুল (ﷺ) এর নির্দেশে মিম্বারে দাঁড়িয়ে কবিতার মাধ্যমে মীলাদুন্নাবী ﷺ পাঠ করেছেন। দীর্ঘ কবিতার একাংশ নিচে উদ্ধৃত করা হলঃ
ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি সমস্ত দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই জন্মগ্রহণ করেছেন। আপনার এই বর্তমান সুরত মনে হয় আপনার ইচ্ছানুযায়ীই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন, যখন মুয়াজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাযের জন্য “আসহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে আযান দেয়। আল্লাহ তা’আলা আপন নামের অংশ দিয়ে আপনার নাম রেখেছেন- আপনাকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে। আরশের অধিপতির নাম হল ‘মাহমুদ’ এবং আপনার নাম হল ‘মুহাম্মদ’ (ﷺ)। [দিওয়ানে হাসান]
হযরত হাসান (রাঃ) এর এই কাসীদা শুনে নবী করীম (ﷺ) বলতেন ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে জিবরাইল মারফত সাহায্য কর’। তাফসীরে কাজাইনুল ইরফানে উল্লেখ আছে, যারা নবী করিম (ﷺ) এর প্রশংসাগীতি করে তাদের পিছনে জিবরাইল (আঃ) এর গায়েবী মদদ থাকে (সূরা মুজাদালাহ এবং সহীহ মুসলিম শরীফের কিতাব ৩১ এবং অধ্যায় ৩৪ এ অনেকগুলো হাদীসে এর উল্লেখ রয়েছে); মিলাদ কিয়ামের জন্য এটি একটি শক্ত ও উতকৃষ্ট দলীল।
এর থেকে প্রমাণিত হলো ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ সুন্নতে সাহাবা!
জশনে জুলুস করা কি বিদাত?
মহানবী ﷺ এর এ ধরাধামে আগমনে ফেরেশতাকুল, বৃক্ষরাজি, পশুপাখি সহ এ সৃষ্টি জগতের সকল বস্তু আনন্দে আন্দোলিত হয়েছিল। আকাশে উল্কারাজি নিক্ষিপ্ত করে শয়তান আর জীনদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। পারস্যে অগ্নিপূজকদের অগ্নি নির্বাপিত হয়েছিল আর পারস্যের রাজপ্রাসাদের ১৪টি স্তম্ভ সেদিন চূর্ণবিচূর্ণ হয়েগিয়েছিল। বিভিন্ন হাদিস থেকে এর প্রমাণ মেলে। দলিলের জন্য ইবনে কাসীরই যথেষ্ট। সে রাতে মক্কার লোকজন বিশেষ এমন কিছু অনুভব করেছিলেন যা এর পূর্বে কখনো অনুভত হয়নি। তাছাড়া নবীজি ﷺ যখন মক্কা থেকে মদীনাতে হিজরত করে চলে আসেন, মদীনার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা আর ছোট ছোট মেয়েরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ‘তালা’আল বাদরু আলাইনা’ বলে দফ বাজিয়ে নেচে নেচে গান গেয়েছিল। কাকতালীয় ভাবে সেদিনটি ছিল ১২ ই রবিউল আউয়াল। মানুষজন সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে দিকবেদিক ছোটাছুটি করছিল। হিজরতের চেয়ে রাসুলে পাক্ক ﷺ এর জন্ম নিঃসন্দেহে আরো বেশি আনন্দের এবং খুশির। এজন্যে আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীবের আগমনে খুশী প্রকাশ করার জন্য তাঁর বান্দাদের নির্দেশ দিচ্ছেন এভাবেঃ-
“হে আমার হাবীব (ﷺ)! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক অনুগ্রহ ও রহমত (হুজুর পাক ﷺ) প্রেরণ করেছেন, সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এ খুশি প্রকাশ করাটা সবচাইতে উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করে রাখে! (সূরা ইউনূছ ৫৮) রঈছুল মুফাসসেরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রহমত’ দ্বারা এই আয়াতে নবী করীম ﷺ কে বোঝানো হয়েছে।
কাজেই ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ উপলক্ষ্যে জশনে জুলুসের মাধ্যমে আনন্দ করায় কোন নিষেধাজ্ঞা কুরআন কিংবা হাদিসে নেই। আর এই জশনে জুলুস দ্বারা যেহেতু ইসলামী শরীয়তের কোন বিধি নিষেধের অবমাননা হয় না, নিঃসন্দেহে এটি একটি উত্তম কাজ। রাস্তাঘাট আলোকসজ্জা করা, ঝাড়বাতি লাগানো, সুন্দর জামাকাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মানুষকে ভালো খাওয়ানো – এ সবই ইসলামী শরিয়তে জায়েজ এবং উত্তম কাজ। আর বিভিন্ন যুগের প্রসিদ্ধ ইমামগণ এই মতোই পোষণ করে গেছেন।
বর্তমান ধারার জশনে জুলুস প্রথম চালু হয় ৬ষ্ঠ হিজরিতে ইরাকে। কাজেই হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর সাথে এর তুলনা করা মূর্খতার নামান্তর। আর যারা খৃষ্টানদের বড়দিনের সাথে এর তুলনা করে, তারাও মুর্খের স্বর্গে বাস করছে। কেননা, খৃষ্টানরাই বরং মুসলমানদের এই ঝাকঝমক পূর্ণ জশনে জুলুস থেকে আলোকসজ্জা সহকারে বড়দিন পালন শুরু করে। কেননা খৃষ্টান জগতে এই বড়দিন পালন ৩০০ খ্রিঃ সম্রাট কনস্টান্টাইনের যুগ থেকে শুরু। আর তখন বর্তমান কালের মতো করে পালিত হতো না। স্পেইনে মুসলমান সভ্যতা আর তুরুস্কের উসমানীদের কাছ থেকে মূলত খৃষ্টানরা এ ধারণা লাভ করে এবং আলোকসজ্জা সহকারে অতি ঝাকঝমক সহকারে তা পালন করতে থাকে।
এ বিশাল আলোচনা থেকে পরিষ্কার হলো যে ঈদে মীলাদুন্নাবী ﷺ সুন্নতে এলাহী, সুন্নতে রাসুল, সুন্নতে সাহাবা এবং সুন্নতে সালেহীন। আর বর্তমান কালের জশনে জুলুস যদিও ৬ষ্ঠ হিজরিতে প্রচলিত এবং বিদাতে হাসানা, তবে এতে হিজরতের আনন্দ প্রকাশের কারণে সুন্নতে সাহাবার মর্যাদা অর্জিত হয়েছে। যারা ইতিহাস আর কুরআন হাদিস না বুঝে একে শিরক-বিদাত আর অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের সাথে তুলনা করে তারা এমন একটি নেয়ামত থেকে চরমভাবে বঞ্চিত এবং আল্লাহ্ পাকের রহমতের ছায়া থেকে বিতাড়িত। যেমন অভশপ্ত শয়তান! জাযাকাল্লাহ!
*******************************************