মার্কিন জায়নিজমকে ফিরে দেখা: ‘পাঁচ বছরে সাত দেশ ধ্বংস’ পরিকল্পনার কতটুকু কী হল? – গোলাম দস্তগীর লিসানী

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রথম পর্ব: মূল ঘটনা

৯/১১ এর ১০ দিন পর।
জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্ক।
অবসর নেয়ার পর জয়েন্ট চিফ কমিটির সাথে শুভেচ্ছা দেখা করতে গেলেন পেন্টাগনে। সেখানে মার্কিন সেক্রেটারি ডোনাল্ড রামসফেল্ড ছিল, ডেপুটি সেক্রেটারি উলফউইৎজ ছিল।

জেনারেল ক্লার্ককে একজন জেনারেল বলল, স্যার, আমরা ডিসিশান নিয়ে ফেলেছি, আমরা ইরাক আক্রমণ করতে যাচ্ছি।

ক্লার্ক আকাশ থেকে পড়লেন, আমরা ইরাক আক্রমণ করতে যাচ্ছি! কেন?

সেই জেনারেল বলল, আমি জানি না…

… ওয়েসলি বললেন, ওরা কি আল কায়েদার সাথে ইরাকের কোন কানেকশন খুঁজে পেয়েছে?

না-না। এমন কিছুই নাই। বিষয়টা হল, আমরা টেরোরিস্টদের কিছু করতে পারি না পারি, আমাদের ভাল সেনাবাহিনী আছে, এবং আমরা একের পর এক সরকার পতন করাতে পারি।

এর কয়েক সপ্তাহ পর জেনারেল ক্লার্ক আবার পেন্টাগনে গিয়েছিলেন। ততদিনে আফগানিস্তানে বোম্বিং শুরু হয়ে গেছে। বললেন, এখনো কি আমাদের ইরাক যুদ্ধ ফাইনাল আছে?

সেই জেনারেল তখন একটা কাগজ তুলে দেখিয়ে বলল, এই ডকুমেন্টটা উপরতলা (সেক্রেটারির অফিস) থেকে এসেছে। এখানে লেখা আছে আমরা আগামী ৫ বছরের মধ্যে কীভাবে ৭ টা দেশ নামাবো (টেক ডাউন)।

শুরু করব ইরাক দিয়ে, তারপর সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া এবং সুদান।

শেষ করব ইরান দিয়ে।

পর্ব-২: ইরাক ও সিরিয়া

১. ইরাক:
পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। অসংখ্য নারীকে রেইপ করা হয়েছে। অসংখ্য শিশু মারা গেছে। অসংখ্য সাধারণ ভালমানুষ জঙ্গী হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ আমেরিকানদের বোমায়, আমেরিকানদের গুলিতে, আমেরিকানদের তেজষ্ক্রিয় পদার্থে (ইয়েস, তারা পারমাণবিক বোমার এলিমেন্ট ব্যবহার করেছে ইরাকে, তারাই তা স্বীকার করেছে এবং ডকুমেন্টেশন আছে) হত্যা ধ্বংস পঙ্গু করেছে।
ইজরায়েলের গুপ্তহত্যা বাহিনী ৫ হাজার বিজ্ঞানীকে এক ধাক্কায় খুন করেছে ইরাকে।
তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন ফ্যাকশন এবং জঙ্গী সংগঠন অসংখ্য বোমা হামলায় অসংখ্য সাধারণ ও অসাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে।
জায়নো-আমেরিকার সৌজন্যে শুরু সংঘাতের পর থেকে ইরাকে মৃতের সংখ্যা কত?
কেউ জানে না। কেউ জানে না। কেউ জানে না।
২০০৭ সালে ওআরবি সার্ভে বলেছিল, ১০ লাখের বেশি। ২০০৭ সালের পর ১৩ বছরে ইরাকে সবার হাতে সবার মৃত্যুর টোটাল সংখ্যা কত?

২. সিরিয়া:
আসাদের সরকার পতন হয়নাই তাই বলে কি সিরিয়া ধ্বংস হয়নাই?
অবশ্যই হয়েছে। ভালভাবে হয়েছে। মারহাবা।
‘টেক ডাউন’ বা ধ্বংস করা বলতে যা বোঝায় সিরিয়াকে তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ বানানো হয়েছে। মানুষকে পশুরও নিচে নামানো হয়েছে, ছোট্ট জনসংখ্যার একটা দেশে চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে এটা কি কম কথা? মাত্র ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশে চার লাখ নিহত, ৫০ লাখ দেশছাড়া, ৬০ লাখ ঘরহারা। খারাপ কী। অনেক ভাল।

পর্ব-৩: লেবানন ও সুদানে কেন তারা আক্রমণ করেনি?

ছোট্ট দেশ লুবনান বা লেবাননের ৪০% খ্রিস্টান এবং ৫-৬% দ্রুজ যারা ঐতিহ্যগতভাবে জায়নবাদিদের পা চাটা।

সুদানের রাষ্ট্রীয় মটোতে লেখা আছে:
নাহনু যুনদ্ আল্লাহ্, যুনদ্ আল ওয়াতান। আমরা আল্লাহ্’র সৈনিক, দেশের সৈনিক।

দক্ষিণ সুদানের ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৬ লাখ মুসলিম। উত্তর সুদানের ৪ কোটি মানুষের মধ্যে ৯৭% মুসলিম।

সম্মিলিত সুদান তখন ছিল, যখন সুদান আক্রমণ হবে ঠিক হয়েছিল আমেরিকার হাতে। ৫ কোটি মানুষের ২০% মুসলিম।

আমেরিকা সুদান আক্রমণ করার বদলে সুদানকে ভাগ করে দিল। দক্ষিণ সুদানকে খ্রিস্টানদের জন্য আলাদা করে দিল এবং উত্তর সুদানকে ক্যাওসের জন্য আলাদা করে রাখল।

তো, সুদান ও লেবানন আক্রমণ না করার একমাত্র কারণ সেখানকার খ্রিষ্টান পপুলেশন।

এবং লেবানন ছোট্ট দেশ হওয়ায় ভাগ থেকে বেঁচে গেলেও সুদান আক্রান্ত না হলেও ঠিকই আসল জায়গায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। তাদের তেলসম্পদের একটা বিশাল অংশ দক্ষিণ সুদানের সাথে আলাদা হয়ে গেল।

অর্থাৎ সাত দেশ প্রকল্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা ধ্বংস হওয়া তিন দেশের দেখা পেলাম।

সেইসাথে এটাও দেখতে পেলাম, যদিও কালো, যদিও আফ্রিকান, যদিও লেভান্টাইন- শেষ পর্যন্ত মার্কিন যন্ত্রের কাছে ক্রিশ্চান ম্যাটার্স। মুসলিম শুধু হলে কবেই কাৎ হয়ে যেতো।
এটাও দেখতে পেলাম, পুরো ব্যাপারটাই মুসলিম নিধনের।

পর্ব-৪: লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইরান

লিবিয়ায় কী হচ্ছে। গাদ্দাফির সময় লিবিয়া কেমন ছিল আর এখন কেমন আছে? এক দেশে দুই সেনাবাহিনী। এক রাজধানীতে দুই বিমান বাহিনী।
নিজের দেশে নিজের বিমান বাহিনী নিজ রাজধানীতে আক্রমণ করে…

লিবিয়া সার্থকভাবে ধ্বংস হয়েছে। যদিও আমেরিকা চাইলে মৃত্যুর সংখ্যায় সন্তুষ্ট নাও হতে পারে। কারণ লিবিয়ায় মৃতের সংখ্যা মাত্র ২৫ হাজার প্লাস।
পিশাচের আরো লাশের দরকার হলে সে ব্যবস্থা সামনে হবে।

কিন্তু যদি ধ্বংসের কথা ধরি, যদি বর্বর বানানোর কথা ধরি, সেটা তো সফলভাবে শেষ হয়েই গেছে।

দেড় কোটি মানুষের দেশ সোমালিয়ায় প্রায় সবাই মুসলিম।
এই দেশটা আজ ত্রিশ বছর ধরে না খেয়ে মারা যাওয়া নারী-শিশু-বৃদ্ধের দেশ।
এই দেশটায় প্রায় সবাই তো অমানুষের মত কোনক্রমে বেঁচে আছে। তবু এটাকে কেন ধ্বংস অবস্থা থেকে আরো ধ্বংস করা জরুরী? ওইযে, ৯৯% মুসলিমটা হল ফ্যাক্ট। এবং জায়নবাদি ইজ্রায়েল গ্রেটার রূপ নেয়ার সময় সোমালিয়ার প্রান্ত দিয়ে জাহাজ আসা যাওয়া করবে, এটা একটা বড় কারণ।

সোমালিয়ায় তারা তেমন কিছু করেনি।
করার দরকার হয়নি। এরা এত হতদরিদ্র এবং খাবারহীন যে এদের পার্লামেন্ট পাইরেটদেরকে (জাহাজ ডাকাত) জাতীয় হিরো বলে। এবং বলার কারণ হল, সারা পৃথিবী ভাল থাকবে আমরা না খেয়ে থাকব তা কেন হবে। সুতরাং জাহাজ ডাকাতি করো।
যে দেশের এ অবস্থা, সে দেশের প্রতি বেশি নজর না দিলেও চলে।

ইরানের কথায় আসি।
ইরান খুব ভাল আছে এমনটা মনে করেন?
দেশটা ইতোমধ্যে অনেকটাই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
টাকার এত বেশি অবমূল্যায়ন হয়েছে যে তারা টাকার নোটের পর শূণ্য গুণতেও পারে না। মানুষজন ফুঁসে উঠছে। খাবার যদি ঠিকমত না থাকে, কেনার সামর্থ্য যদি ঠিকমত না থাকে, মানুষ তো টিঁকবে না।

একবার দেখুন টাকার অবমূল্যায়নের অবস্থা-
ইরানে তিন ধরনের নোট প্রচলিত। এবং তিনটা তিন হিসাবের। সবই শূণ্যের খেলা। হাজার হাজার টাকার নোট, কেনা যায় না রুটিও।

যারা মধ্যবিত্ত, সারা জীবন ধরে সঞ্চয় করেছে, তারা লক্ষ্য করছে তাদের সারা জীবন ধরে জমানো টাকার মান ১০ ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে। বিষয়টা এরকম, আপনি সারা জীবন ধরে জমালেন ১০ লাখ টাকা, আর মারকিন অবরোধে সেটা হয়ে গেল ১ লাখ টাকা। আপনার মাথায় হাত। কোথায় যাবেন, কী করবেন? সারা জীবনের কষ্ট মুহূর্তে পথের ফকির করে দিল আপনাকে।

তো,
সাত দেশের মধ্যে মানুষের বসবাসের দিক থেকে ধ্বংস হয়েছে চারটা:
ইরাক, সিরিয়া, সুদান ও লিবিয়া।

বাকীটাও ধ্বংস করা বাকি আছে ইরান।
সোমালিয়া নিজেই ধ্বংস হয়ে আছে, তার দিকে মুখ ফিরিয়ে না তাকালেও হবে।
আর লেবাননে যেহেতু ৪০% খ্রিস্টান, লেবাননকে ছাড় দেয়া হয়েছে।

শেষ পর্ব: কেন সাত দেশ ধ্বংস করা দরকার? অন্য দেশগুলো এখনি ধ্বংস করা কেন জরুরী নয়?

গ্রেটার ইজরায়েলের জন্য।

মানচিত্রটা খুব ভাল করে লক্ষ্য করুন।
যে সাতটা দেশ ধ্বংসের তালিকা ছিল, সবগুলো ইজরায়েলি জায়নবাদকে প্রভাবিত করতে পারতো।

কারা গ্রেটার ইজরায়েলের মিত্র?
সৌদ গোত্রবাদ। মুহাহা, এখানে বলার কিছুই নেই।
মিসরের সামরিকতন্ত্র। এরা আমেরিকার কাছ থেকে নিয়মিত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পায় স্রেফ ইজরায়েলের সাথে ইয়ার দোস্তি রক্ষা করার জন্য।
তুরষ্ক নীতিগতভাবে সেকুলার দেশ এবং ন্যাটোর সদস্য তাই আমেরিকা ইউরোপের জিগিরি দোস্ত। আমেরিকার ঘাঁটি।
তুর্কি সাইপ্রাস তুরষ্কের হাতেই।
বাকী রইল বাদশা আবদুল্লাহ্’র বিখ্যাত দেশ জর্ডান। ইজরায়েলের সাথে যার সবচে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বর্ডার। সবচে বেশি জায়গা জুড়ে যে বর্ডার এবং সবচে বড় কথা হল, জেরুজালেম যে বর্ডারের লাগোয়া।

জর্ডানকে হয় দ্রুত দখল করতে হতো ইজরায়েলের, নয়তো জর্ডানের সাথে দোস্তি করতে হতো। ঠিক এটাই করেছে রবিন। ১৯৯৪ সাল থেকে জর্ডানের সাথে ইজরায়েলের দোস্তি চলছে গাড়ি চলবে। এই গাড়ির আরেকটা কারণ, সৌদরা জর্ডানের সাথে শত্রুভাবাপণ্ণ নয়।

একটু দূরের দেশ তিউনিশিয়া কখনো যদি উঠে দাঁড়ায় সমস্যা করতে পারতো? সরকার পতন করে সেখানে অগ্রগতি ভজঘট করে দেয়া হয়েছে।

সাত দেশের মধ্যে পড়ে না ইয়েমেনও। কারণ ইয়েমেনে সৌদ গোত্রবাদের পাপেট সরকার ছিল। এমনকি ইয়েমেনের প্রধানের সৌদি পাসপোর্টও ছিল। বাদ সাধল হুতিরা। প্যাচ বাড়িয়ে দিল।

এবার আসুন সৌদ তাবেদারির দেশগুলোতে।
বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার এবং সাত আমিরাতের দেশ আরব আমিরাত।
এরা কেউ কেন আম্রিকার লিস্টে নাই?
কারণ, এরা সবাই জায়নবাদের অকৃত্রিম বন্ধু। পা চাটা কুত্তা। এদের ভয় পাবার কিছু নেই। বরং এদের অগ্রগতিকে আরো বাড়ানো দরকার।

No photo description available.

এবার আসুন বলকান অঞ্চলে। ইউরোপিয়ান মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলোয়।
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা দেখুন। দেশটা মুসলিম প্রধান। শুধু এইজন্য এই দেশ ভূমধ্য সাগরে প্রায় কোনই এনট্রান্স পায়নি। পুরো দেশ ভূমধ্যসাগরের পাড়ে, কিন্তু দুটা দেশ দুদিক থেকে ল্যাজ বের করে পুরো ভূমধ্যসাগরে বসনিয়ার এন্ট্রান্স বন্ধ করে দিয়েছে, সামান্য একটু বাকি। শত শত কিলোমিটার সমুদ্র পাবার কথা বসনিয়ার, পেলো মাত্র ২০ কিলোমিটার। ইজরায়েল কতটুকু সতর্ক তার যাতায়ত পথে মুসলিমদের অবস্থানের বিষয়ে!

সেখানে আরো কয়েকটি মুসলিম জনপ্রধান অঞ্চল আছে, সেসবও চাপে রাখা হয়েছে।

এবার আবার দেখুন পুরো ম্যাপটা।
সাত দেশ ধ্বংস করা দরকার এবং যারা বৃহত্তর ইজরায়েলের জন্য হুমকি নয় তাদের ধ্বংস করার প্রয়োজন নেই।

দাজ্জালের সেই জান্নাত ও জাহান্নাম দাজ্জাল আসার আগেই তৈরি হয়েছে।
দাজ্জালের জান্নাতে বসবাস করছে সৌদ-বাহরাইন-কুয়েত-ওমান-কাতার এবং সাত আমিরাত। তাদের ভেতরে বাইরে কোন সমস্যাই নেই। বাস করছে জর্ডানও। উনিশ বিশ সমস্যা নিয়ে বাস করছে তুর্কি এবং মিসরও।
বাকি দেশগুলো?

এই মৃত্যু স্রেফ ইউরোপিয়-আমেরিকান মুসলিম-ঘৃণা থেকে আসেনি। এই মৃত্যু এই ধ্বংস এসেছে আসছে এবং আসবে গ্রেটার ইজরায়েলের পথ সহজ করার জন্য।

ফিরে দেখে বড় আনন্দ হল।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment