শাহাদাতে ইমাম হোসাইন রা. শিক্ষা ও দর্শন – বইটির এক ঝলকঃ
৬১ হিজরীতে ঘটে যাওয়া কারবালার নির্মম ঘটনার ইতিবৃত্ত এবং ইতিহাসের আলোকে সঠিক পর্যালোচনা জানতে এই বইটি পড়ুন। হুজুর শাইখুল ইসলামের বই মানেই সত্য নির্ভর বস্তুনিষ্ঠ এবং দলিল ভিত্তিক আলোচনা।
“তুমি আমার, আমি তোমার” – সম্পর্ক কতোটা গভীর হলে এমন কথা বলা সম্ভব? রাসূল আরাবী ﷺ হুসাইনকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “হুসাইন আমার থেকে, আমি হুসাইন থেকে”, ” হুসাইন আমার, আমি হুসাইনের”। কেবলমাত্র রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামই তাঁর আহলে বাইতকে ভালবাসতেন তা নয়, স্বয়ং আল্লাহ্ পাকও আহলে বাইতকে ভালোবাসতেন। আল্লাহ্ পাক পবিত্র কুরআনের সুরা আস-শুরার ২৩ নং আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামকে ঘোষণা করতে বলেন, “হে হাবীব, আপনি বলুন, আমি তোমাদের কাছে আমার দাওয়াতের জন্য (দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে) আমার আহলে বাইতের মহব্বত ব্যতীত কোন কিছুই চাই না।” (সূরা শুরা : ২৩)
অন্যত্র আল্লাহ্ পাক এই আহলে বাইতকে পবিত্র রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আল্লাহ্ তো কেবল এই চান হে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহী ওয়াসাল্লামের) আহলে বাইত! যে, তিনি তোমাদের থেকে সব ধরণের গুনাহের অপবিত্রতা (এবং সন্দেহ ও ত্রুটিচিহ্ন পর্যন্ত) দূর করে দেন এবং তোমাদেরকে (পরিপূর্ণ) পবিত্রতা দান করে সম্পূর্ণরূপে পাক-পবিত্র করে দেন।” (সূরা আহযাব : ৩৩ – শায়খুল ইসলাম ডঃ তাহিরুল কাদরী মা জি আ কৃত ইরফানুল কুরআন থেকে)। ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল রহঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী কাররামুল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা, সাইয়্যেদুনা হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আলাইহিমাস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা প্রসঙ্গে।

পবিত্র কুরআনের আরো অনেক স্থানে আহলে বাইতের মর্যাদা, শান ও মানকে সমুজ্জ্বল করে বিভিন্ন আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। আর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামও বিদায়ী হজ্বের ঘোষণার পরপর তাঁর আহলে বাইতের গুরুত্ব তুলে ধরেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি উভয়কে ভালবাসে, নিশ্চয়ই সে আমাকে ভালবাসে এবং যে উভয়ের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করে সে বস্তুত আমার সাথেই ঈর্ষা করে (অর্থাৎ হাসান ও হোসাইন আলাইহিমাস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)। (মিশকাত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪৪; আহমাদ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৮; তিরমিযি, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪১)
আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম হাসান (রাঃ) সম্পর্কে বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি! তুমিও তাকে ভালবাসো, আর যে তাকে ভালবাসে, তুমি তাকেও ভালবাসো। [সহীহ মুসলিমঃ ৬০৩৮]
সৈয়দুশ্ শোহদা সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের ৩ অথবা ৫ তারিখে মদিনা শরীফে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পর সরকারে মদিনা (ﷺ) তাঁর কানে আযান দিয়ে দুআ করেছিলেন। সাত দিন পর আকিকা করে ‘হুসাইন’ নাম রেখেছিলেন। হাদিস শরীফে বর্নিত আছে, “হাসান ও হুসাইন জান্নাতী নাম সমূহের মধ্যকার দুটি নাম”।
সাইয়্যেদুনা হাসান ও হুসাইন (রাঃ) হুযুর আকরাম (ﷺ) এর খুবই প্রিয় ছিলেন। তাঁদের ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্নিত আছে। হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- ইন্নাল হাসানা ওয়াল হুসাইনা হুমা রাইহানি মিনাদ্দুনিয়া। – অর্থাৎ “হাসান-হুসাইন তো দুনিয়াতে আমার দুটি ফুল”।
সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জন্মের সাথে সাথে হুজুর (ﷺ) -এঁর বদৌলতে তার শাহাদাতের কথা সবার কাছে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। হযরত আলী, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা, অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইতের সংশ্লিষ্ট সকলেই (আলাইহিমুস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) হুসাইন- এঁর শৈশবাবস্থায় জানতে পেরেছিলেন যে, এ ছেলেকে একান্ত নির্মমভাবে শহীদ করা হবে এবং কারবালার ময়দান তার রক্তে রঞ্জিত হবে। এ ব্যাপারে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে।
হযরত উম্মুল ফজল বিনতে হারিছ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা, হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী) বলেন, আমি একদিন নবী করিম (ﷺ) -এঁর খিদমতে উপস্থিত হয়ে সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে তার কোলে দিলাম। এরপর আমি দেখলাম, হুযূর (ﷺ)-এঁর চোখ মুবারক থেকে টপটপ করে অশ্রু পড়ছে। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! (ﷺ) ব্যাপার কি ? তিনি ফরমালেন, আমার কাছে হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে খবর দিয়ে গেলেন, “নিশ্চয়ই আপনার উম্মত আপনার এ শিশুকে শহীদ করবে।” হযরত উম্মুল ফজল (রাঃ) বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে আরয করলাম, “ইয়া রসূলাল্লাহ, এ শিশুকে শহীদ করবে! হুযূর (ﷺ) ফরমালেন, “হ্যাঁ! জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) তাঁর শাহাদাত স্থলের লাল মাটিও এনেছেন।” [বায়হাক্বী থেকে হাফিয নিশাপুরি, মুসতাদরাকে সাহীহাঈন, ৩ খণ্ড, পৃঃ ৭৬]
হযরত ইবনে সা’দ (রাঃ), হযরত শা’বী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, মওলা আলী (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) জঙ্গে সিফফীনের সময় কারবালার পথ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই জায়গার নাম জানতে চাইলেন। লোকেরা বললো, এ জায়গার নাম কারবালা। কারবালার নাম শুনামাত্র তিনি এত কান্নাকাটি করলেন যে, মাটি চোখের পানিতে ভিজে গিয়েছিল। অতঃপর ফরমালেন, আমি একদিন হুযূর (ﷺ) -এঁর খিদমতে হাজির হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! (ﷺ) আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি ফরমালেন, এইমাত্র হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম এসে আমাকে খবর দিয়ে গেলেন- আমার ছেলে (দৌহিত্র) হুসাইনকে ফোরাত নদীর তীরে যে জায়গায় শহীদ করা হবে, সে জায়গার নাম কারবালা।
বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যে, সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন (রাঃ) -এঁর শাহাদাত সম্পর্কে হুজুর (ﷺ) অনেকবার ভবিষ্যদ্বানী করেছেন। হুযুর (ﷺ) আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করেন। জলেস্থলে যার হুকুম চলে, পাথর বৃক্ষ পশু-পাখি যাকে সালাম করে, যার ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়, যার হুকুমে ডুবন্ত সূর্য ফিরে আসে এবং খোদা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সৃষ্টিকুলের প্রতিটি কোণায় কোণায় যার রাজত্ব চলে, সেই নবী (ﷺ) তাঁর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্রের শাহাদত হওয়ার খবর পেয়ে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন বটে কিন্তু রক্ষা করার জন্য আল্লাহ্ পাকের দরবারে দুআ করেননি। এমনকি মওলা আলী ও হযরত ফাতিমা (রাঃ) ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামকে ইমাম হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের রক্ষার জন্য দুয়া করতে বলেন নি। মোটকথা কেউ তাঁকে রক্ষার জন্য দুআ করেননি। আল্লাহ্র সন্তুষ্টিই সবাই মেনে নিয়েছিলেন। সবাই চেয়েছেন হযরত হুসাইন (আঃ ওয়া রাঃ) যেন এ মহা পরীক্ষায় কামিয়াব হয়ে আল্লাহ্ (আযযা ওয়াজাল্লা) -এঁর দরবারে উচ্চস্থান লাভ করেন ।
উপরে উল্লেখিত বইটির ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড করুন নিচের ডাইরেক্ট লিঙ্ক থেকে। যদি কোনো সমস্যা হয়, কমেন্ট করে জানাবেন।
Download link: শাহাদাতে ইমাম হোসাইন রা
লিঙ্কে ক্লিক করার পর ডাইরেক্ট ডাউনলোড হবে ইনশাআল্লাহ! ধন্যবাদ।