নামকরণ :
প্রথম আয়াতে উপস্থাপিত আ’লা শব্দটিকে এর নাম গণ্য করা হয়েছে ।
নাযিলে রসময় – কাল :
এর আলোচ্য বিষয় থেকে জানা যায়, এটি একেবারে প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্যতম। ষষ্ঠ আয়াতে “(হে মহিমান্বিত হাবীব!) আমরা আপনাকে (এমন পদ্ধতিতে) শিখিয়ে দেবো যা আপনি (কখনো) বিস্মৃত হবেন না” এ বাক্যটিও সেকথা জানিয়ে দিচ্ছে। তিনটি সূরার সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর বর্ণনাভংগী ও পরিবেশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে এখানে উল্লেখিত ঘটনাবলীকে নিম্নোক্তভাবে সাজানো যায়: সর্বপ্রথম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী সাল্লামকে নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে যে, আপনি চিন্তা করবেন না , আমি এ বাণী আপনাকে পড়িয়ে দেবো এবং আপনি আর ভুলে যাবেন না। তারপর বেশ কিছুকাল পরে যখন সূরা কিয়ামহ নাযিল হতে থাকে তখন তিনি অবচেতনভাবে অহীর শব্দগুলো পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন। তখন ১৬ ও ১৭ নং আয়াতে বলা হয় “(হে হাবীব! ওহী অবতীর্ণ হবার সাথে সাথে তা মুখস্থ করার জন্যে) তাড়াহুড়া করে স্বীয় জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। নিশ্চয়ই তা (আপনার বক্ষে) একত্রকরণ ও সংরক্ষণ এবং (আপনার জিহ্বায়) পাঠ করানো আমাদেরই দায়িত্ব।” শেষবার সূরা ত্বা- হার ২ নং আয়াতে নাযিল হয় এবং তাঁকে বলা হয় : “(হে সম্মানিত মাহবুব!) আমরা আপনার প্রতি কুরআন এ জন্যে অবতীর্ণ করিনি যে, আপনি কষ্টে পতিত হবেন।” এরপর আর কখনো এমনটি ঘটেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী সাল্লাম) আর কখনো এ ধরনের আশংকা করেননি। কারণ এ তিনটি জায়গা ছাড়া কুরআনের আর কোথাও এ ব্যাপারে কোন ইংগিত নেই ।
বিষয়বস্তুওমূলবক্তব্য :
এই ছোট্ট সূরাটিতে তিনটি বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছে ।
এক. তাওহীদ। দুই. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী সাল্লামকে উপদেশ দান এবং তিন. আখেরাত ।
তাওহীদের শিক্ষাকে প্রথম আয়াতের একটি বাক্যের মধ্যেই সীমিত করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে : আপনার প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন, যিনি সর্বোচ্চ মহিমাময়। কারণ আল্লাহ্ পাকের সাথে সৃষ্টির অন্য কিছুর কোনও সামঞ্জস্যতা নেই। যেমনটি সূরা ইখলাসে বলা হয়েছে, তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
এরপর চারটি আয়াতে বলা হয়েছে, ২. তিনিই (বিশ্বজগতের সকল কিছু) সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর (সকল প্রয়োজনানুসারে) এর সঠিক আনুপাতিক ভারসাম্য সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন। ৩. আর যিনি (প্রত্যেক সৃষ্টির জন্যে) নীতি নির্ধারণ করেছেন, তারপর (তাদেরকে নিজ নিজ বিধান অনুযায়ী থাকার এবং পরিচালিত হবার) পথ দেখিয়েছেন, ৪. আর যিনি (ভূমি থেকে) সবুজ কিশলয় উদগত করেছেন, ৫. তারপর একে শুষ্ক কালো খড়ে পরিণত করেছেন।
তারপর দু’টি আয়াতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপদেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে: এই যে কুরআন আপনার প্রতি নাযিল হচ্ছে এর প্রতিটি শব্দ কিভাবে আপনার মুখস্ত থাকবে, এ ব্যাপারে আপনি কোন চিন্তা করবেন না। একে আপনার স্মৃতিপটে সংরক্ষিত করে দেয়া আমার কাজ।
এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী সাল্লামকে বলা হয়েছে: প্রত্যেক ব্যক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব আপনাকে দেয়া হয়নি। বরং আপনার কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র সত্যের প্রচার। আর এই প্রচারে সরল পদ্ধতি হচ্ছে, যে ব্যক্তি উপদেশ শুনতে ও তা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে তাকে উপদেশ দেয়া। আর যে ব্যক্তি তাতে প্রস্তুত নয় তার পেছনে লেগে থাকার প্রয়োজন নেই। যার মনে ভুল পথে চলার অশুভ পরিণামের ভয় থাকবে সে সত্য কথা শুনে তা মেনে নেবে এবং যে দুর্ভাগা তা শুনতে ও মেনে নিতে চাইবে না সে নিজের চোখেই নিজের অশুভ পরিণাম দেখে নেবে।
সূরাটির তেলাওয়াত করেছেন কারী আব্দুল বাসেত রহঃ। অনবদ্য বাংলা অনুবাদসহ শুনতে নিচের প্লে বাটনে ক্লিক করুন। আর ডাউনলোড করতে ডানদিকের তিনটি ডটে ক্লিক করে সেভ করুন।
উচ্চারণসহ বাংলা অনুবাদ দেখতে ইউটিউবে আমাদের চ্যানেলে ভিজিট করতে পারেন।