হিন্দুরা কেন দেশত্যাগ করেন?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

লিখেছেন দিল্লী নিবাসী Miraj Gazi

লেখাটি শুরু করা যাক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাসের একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী ও দলিত অধিকার আন্দোলনের একজন এক্টিভিস্ট। তিনি উদ্বাস্তু সংগঠন ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বাঙালি রিফিউজিস’ এর আমি সর্বভারতীয় সভাপতি এবং দেশান্তরিত উদ্বাস্তু মানুষের জন্য দীর্ঘ সময়কাল ধরে লড়াই করছেন।

তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে এসে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার Fact Finding Report অনুযায়ী লেখেন “দেশ ত্যাগ করে এসে সহানুভূতি কুড়োতে বা দেশত্যাগ করার কাজটি জাস্টিফাই করতে অধিকাংশ মানুষ মুসলিম অত্যাচারের গল্প ফাঁদেন।

সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস লেখেনঃ

ভবিষ্যতের কথা ভেবে বা আশঙ্কায় হিন্দুরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে আসেন — এটাই সত্য। ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায়, কোপ খেয়ে বা ধর্ষিত হয়ে হিন্দুরা বাংলাদেশ ত্যাগ করেন, এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়, হলে ব্যতিক্রম। তবে হিন্দুদের এই ভয়টা অনেকটাই ভূতের ভয়ের মতো, অবাস্তব। তবে দেশ ত্যাগ করে এসে সহানুভূতি কুড়োতে বা দেশত্যাগ করার কাজটি জাস্টিফাই করতে অধিকাংশ মানুষ মুসলিম অত্যাচারের গল্প ফাঁদেন। ওদেশে প্রিন্সিপাল হিসাবে কাজ করে, অধ্যাপক, শিক্ষক বা চাকুরী জীবন শেষে মোটা অংকের টাকা গ্যাটে বেঁধে ভারতে পাচার করে, ভারতে বসে মুসলিম অত্যাচারের গল্প করেন, এটাই স্বাভাবিক চিত্র। ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যা চলছে, তা এই।

বাংলাদেশের মানুষ ও সরকার সে দেশের হিন্দুদের এই চরিত্র জানে ও সহ্য করে। হিন্দুরা সংখ্যার অনুপাতে সে দেশে বেশি চাকরি করেন, অধিকাংশ শিক্ষিত ও বর্ণহিন্দুরা দেশ ছাড়ার পরও এই অবস্থা, তাই প্রশাসনের তেমন কোনো পক্ষপাত বলা যায় না। কাগজে দেখলাম বার্মায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গার সাথে ৮৬ জন হিন্দুকেও খুন করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ১৬ জন হিন্দুকে খুন করার তথ্য কেউ দিতে পারবেন? ভারতে কিন্তু এই সময়কালে ১৬০০০ মুসলমানকে এবং আরো বেশি দলিতকে খুন করার তথ্য আছে।

[ফেসবুক পোস্ট লিঙ্কঃ http://bit.ly/sukriti1 এবং আর্কাইভ লিঙ্কঃ https://archive.is/9nDCc]

এখানে তিনি ১৬ জন হিন্দু খুন হয়নি বলতে বুঝিয়েছেন ধর্মীয় কারণে বা ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে খুন হয়নি।এবার আসা যাক, সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস মহাশয়ের আরেকটি ফেসবুকে পোস্ট সম্পর্কে। এখানে তিনি স্পষ্ট করে লিখেছেন যে “বাংলাদেশের অধিকাংশ হিন্দু হল মুসলিম বিদ্বেষী।“


মাদ্রাসায় সন্ত্রাসবাদী শিক্ষা দেওয়া হয় না | সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস মহাশয় | Kolkata | lecture | Part-2। শুনুন রবি ঠাকুর কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন।

সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস লেখেনঃ

“আমি মাস খানেক আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। দেড় মাস ছিলাম ওখানে। ঢাকা, যশোর, খুলনা — নানা জায়গা এবং বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে মিশেছি, কথা বলেছি।

হিন্দু- মুসলমান প্রশ্নে দেশটি ভারত থেকে অনেকটা প্রগতিশীল অবস্থানে এখন। সামাজিক ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্র — উভয় দিকে তাঁরা এগিয়ে আছে ও আরও দ্রুত এগোচ্ছে। অধিকাংশ মুসলমানের মধ্যে হিন্দু বিদ্বেষ কম, নেই বললেই চলে । আবার উলটো দিকে — অধিকাংশ হিন্দু, বিশেষ করে নিম্নবর্ণীও নমদের মধ্যকার বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান বিদ্বেষী । আরও সঠিকভাবে বললে বলতে হয় নমদের মধ্যকার শিক্ষিত অংশ — যাদের পরিবারের একাংশ ইতিমধ্যে ভারতে চলে এসেছেন। তাদের দ্বারা বাকি অংশ প্রভাবিত হছেন।

রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে — চাকরি ও প্রশাসনে তাঁরা উল্লেখ যোগ্য সংখ্যায় আছেননিশ্চিতভাবে জনসংখ্যার হারের থেকে বেশি এবং যথেষ্ট সংখ্যায় উচ্চ পদেও আছেন। রাষ্ট্র বিরূপ হলে এটা সম্ভব হতো না। গণ্ডগোল ও নির্যাতন হয় না, এমন নয়, কিন্তু মুসলমান দুষ্কৃতির তুলনায় সেখানে হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানো মুসলমানের সংখ্যা অনেক বেশি । আশানুরূপ না হলেও প্রশাসন অনেকটাই নিরপেক্ষ।

ব্যবসা -বানিজ্য হিন্দুরা ভালই করে। তবে রাজনীতিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব কম। একটা রক্ষাকবজ দরকার, সে দাবিও সেখানে উঠেছে। মনে হয় সেখানে হিন্দুদের রাজনৈতিক কৌশলেও ভুল আছে। একটা দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য তাদের গুরুত্বহীন করেছে

আমার বলার এই যে, সমস্যা থাকলেও তা মোটেই দেশ ত্যাগ করার মত নয় । ভারত সরকার কূটনৈতিক পদ ক্ষেপ নিয়ে এই সমস্যা টুকু মেটাতে পারে।
আমি যখন বাংলাদেশে ছিলাম, তখন বি জে পি-র বর্তমান সভাপতি মিঃ ঘোষ ওখানে গিয়েছিলেন। আমি কিছু ওখানকার হিন্দু নেতাদের তাঁর সাথে যোগাযোগের তোড়জোড় দেখেছি এবং শুনেছি। অনেক কথা তাদের বলতে শুনেছি, একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে বলে জানি। তাদের কথা এবং ক্রিয়াকাণ্ড আমার কাছে ভাল লাগেনি। এখন আবার রাহুল বাবু গেলেন। কলকাতায় বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতন নিয়ে সেমিনার হচ্ছে বিশেষ বিশেষ বক্তাদের নিয়ে। ফেসবুকেও আর এস এস-এর বাংলাদেশের লোকজনের প্রতিক্রিয়া দেখছি।

সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস
সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস, একজন আদর্শবান অসাম্প্রদায়িক মানুষ

শুনছি পশিমবঙ্গ নাকি বি জে পি-র পরবর্তী টার্গেট। সেটার জন্য বাংলাদেশে একটা সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোল এখানে তাদের জন্য সুশীতল হাওয়া এনে দিতে পারে। তাই সবাইকে একটু সাবধান থাকলে ভাল হয়।

[ফেসবুক পোস্ট লিঙ্কঃ http://bit.ly/sukriti2 এবং আর্কাইভ লিঙ্কঃ https://archive.is/1B2cg]

এবার দেখা যাক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস মহাশয়ের ব্লগ “Sukriti Ranjan Biswas’ diary” থেকে “ঢাকায় হিন্দুরা” শীর্ষক একটি পোস্ট, তিনি লেখেনঃ

“ঢাকায় এসে উত্তরায় ছিলাম।এক জামাই-মেয়ে থাকে। জামাই উকিল, ভাইঝি ল’ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর। বিচারকের চাকরির জন্য লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো — চাকরি পেয়ে যাবে। তাদের কর্মজীবন, সামাজিক জীবন — এসবের মধ্যে হিন্দু বলে সমস্যা হয় কিনা জানতে চাই। তারা বললো — কোনো সমস্যা নেই, নিজের দেশে আছে, ভালো আছে। বিল্ডিংয়ে ১০টা ফ্লাট, ৩ টি হিন্দু পরিবার থাকে। ভাইঝি সারাদিন একা থাকে, কোনো দুশ্চিন্তা হয় না বলে জানালো। কলকাতায় একই বিল্ডিংয়ে বাস করা অনেক দূরের ব্যাপার, হিন্দু পাড়া/এলাকায় কোনো মুসলমানকে কেউ বাড়ি ভাড়া দেবে না।

আরেক মেয়ে- জামাই থাকে যাত্রাবাড়ী, এখন সেখানেই আছি। জামাই কলেজে পড়ায়, ভাইঝি হাইস্কুলে। নাতি পড়ে ইঞ্জিনীয়ারিং। বললাম, পাড়ায় আর কতঘর হিন্দু আছে? বললো, নেই, কাউকে তেমন জানে না। নাতিটা প্রাথমিক থেকে এই অঞ্চলে, আছে, পড়েছে। ওর দুই যমজ বোনও ১১/১২ ক্লাসে পড়ে। ওরা ৫ জন হিন্দু হিসাবে কোনো সমস্যা জানে না। ভালো থাকে, ভালো আছে।“

[ব্লগ পোস্ট লিঙ্কঃ http://bit.ly/sukriti3 এবং আর্কাইভ লিঙ্কঃ http://archive.is/zeM18 ]

সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস মহাশয়ের লেখা থেকে স্পষ্ট যে হিন্দুরা সেখানে ভালো আছে এবং সেখানে তাদের ধর্মীয় কারণে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না ।

এবার দেখা যাক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস মহাশয়ের ব্লগ “Sukriti Ranjan Biswas’ diary” থেকে আরেকটি ব্লগ পোস্ট পূর্ব বঙ্গের হিন্দুরা কেন দেশত্যাগ করেন (শেষ কিস্তি)” শীর্ষক একটি পোস্ট এর খানিকটা চুম্বক অংশ, তিনি লেখেনঃ

Image result for আবুল মনসুর আহমদে

“আবুল মনসুর আহমদের (সচেতন রাজনীতিক বলে তথাগতবাবু তার বইয়ে পরিচয় উনার পরিচয় দিয়েছেন) কিছু লেখা তথাগতবাবু উদ্ধৃত করেছেন, ” এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, পূর্ববাংলায় অন্যান্য স্থানের তুলনায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা খুবই কম হইয়াছিল — একরূপ হয় নাই বলিলেও চলে। কিন্তু একটু তলাইয়া দেখিলেই বোঝা যাইবে যে, পূর্ব বাংলার হিন্দুদের মধ্যে বাস্তুত্যাগের হিড়িক পড়িয়াছিল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়ে নয়, অন্য কারণে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়ক ও মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের অন্তঃসারশূন্য ‘ ইসলামী রাষ্ট্র ‘ ও শরিয়তি শাসনের ভয়ে হিন্দুরা সত্যিই ঘাবড়ে গিয়েছিলো। জানের ভয়ে নয়, মানের ভয়ে। ধর্ম ও কালচার হারাইবার ভয়ে। অর্ধ শতাব্দী ধরিয়া যে হিন্দুরা দেশের আজাদীর জন্য জান-মাল কোরবাণী করিয়াছে স্বাধীন হবার পরে তারাই নিজেদের ধর্ম ও কৃষ্টি-সংস্কৃতি লইয়া সসম্মানে দেশে বাস করিতে পারিবে না, এটা মনের দিক হইতে তাদের জন্য দুঃসহ।……… পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়কেরা শুধুমাত্র দাঙ্গা হাঙ্গামাহীন শান্তি স্থাপন করিয়াই মনে করিয়াছিলেন তাহাদের কর্তব্য শেষ হইলো”।

অর্থাৎ তথাগতবাবু বাংলাদেশের হিন্দুদের চরিত্রের দুর্বলতা এবং দেশত্যাগের মূল কারণ জানেন। তা তিনি প্রকাশ করেছেন এবং তাদের ভয় দেখিয়েছেন, আতংকিত ও সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ ঘুরিয়ে দেশত্যাগে উৎসাহ দিয়েছেন। তারা এই ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন নিয়ে। এজন্য তারা যে মরীয়া, সে কথা ঘোষণা করে চলেছেন। তারা হয়তো ভাবছেন বাংলাদেশে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হলে এবং উদ্বাস্তু স্রোত এপার বাংলায় তাদের পক্ষে সমর্থনের ঢেউ বয়ে আনতে পারে।“

[ব্লগ পোস্ট লিঙ্কঃ http://bit.ly/sukriti4 এবং আর্কাইভ লিঙ্কঃ http://archive.is/5QfYT ]

এখানে তথাগতবাবু হলেন তথাগত রায়, একজন উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও বিজেপি নেতা। এখানে তিনি তথাগত রায় এর লেখা “যা ছিল আমার দেশ” নামে নানা অসত্য ও অর্ধসত্য মুলক বই এর কথা বলছেন। অবশ্য তথাগত রায় তার বইয়ে স্বীকার করেছেন যে, বর্তমানকালে সে দেশের হিন্দুদের দেশত্যাগের কারন ‘মনস্তাত্তিক’। এ বই-য়ের বিকৃত তথ্য ও ব্যাখ্যার বিরোধীতা করে সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস মহাশয় একটি পুস্তিকা লিখেছেন- ‘বঙ্গভঙ্গ- দেশত্যাগ-দাঙ্গা’।

লেখাটি পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায় যে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের জন্য একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের হিন্দুদের ভয় দেখায়, আতংকিত ও সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করে এবং দেশত্যাগে উৎসাহ দেয়।

এবার আসা যাক শ্রী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী ধাঁচের একটি বই থেকে নেয়া চুম্বক অংশ সম্পর্কে, যিনি ১৯৪৭ সালের পর পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে শরণার্থীদের পূনর্বাসনে কাজ করেছেন এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ‘উদ্বাস্তু’ শিরোনামে বিশাল এক বই লিখে ফেলেছেন।

শ্রী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেনঃ

”পুর্ব অঞ্চলে কিন্তু স্বাধীনতার পর, যখন দেশ বিভাগ হয়ে গেল, অবস্থা ভিন্ন রূপ নিল। এখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধল না। বরং পুর্ব হতে যেখানে দাঙ্গার জের চলছিল তা স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল। কলিকাতার অবস্থা এই প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে দীর্ঘ এক বৎসরব্যাপী দাঙ্গার ওপর উভয় সম্প্রদায় যবনিকা টেনে দিয়েছিল। তাই একসময়ে মনে হয়েছিল পুর্বাঞ্চলে দেশবিভাগ হওয়া সত্ত্বেও হয়ত শান্তি অক্ষুন্ন থাকবে। অন্তত প্ৰথম দিকে আপাতদৃষ্টিতে শান্তি অক্ষুন্নই ছিল। তাই যদি হয় তবে এত মানুষ পুর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে চলে আসে। কেন? এই প্রশ্ন সেদিন আমার মনে উদয় হয়েছিল। নিজের দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছায় এত কষ্ট বরণ করবার কোন সঙ্গত কারণ আছে কি ?

আমি গিয়েছিলাম প্রশাসনিক কাজে আলিপুরদুয়ারে। সেটি জেলার পুর্বপ্রাস্তে অবস্থিত। যে ভদ্রলোক সঙ্গে এসেছিলেন তাকে জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না- এরা দেশত্যাগ করে এমনভাবে চলে আসছেন কেন তার খবর নিয়েছেন কি ?
তিনি বললেন,- নিয়েছি বৈকি? তবে তার উত্তরটা আমি আর দিই কেন? এঁদের মুখেই শুনুন না। এই বলে নিকটে উপবিষ্ট একটি ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি নিজের যে পরিচয় দিলেন, তা হতে জানা গেল, তিনি ছিলেন বগুড়া জেলার গ্রামাঞ্চলের এক ডাক্তার। বর্ধিষ্ণু পরিবার, প্ৰজাবিলি জমি আর খাস জমি কিছু ছিল। সব ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি চলে এসেছেন।

আমার সঙ্গী তাকে উদ্দেশ করে বললেন,-দেখুন, এই ভদ্রলোক জানতে চান, দেশে তো কোন গোলমাল নেই, তবু কেন আপনারা দেশ ছেড়ে চলে এলেন?… তিনি যে কাহিনী বললেন তা সংক্ষেপে এই দাঁড়ায়। বাড়ীতে মোটা চালের অভাব না হলেও এরা সরু চাল বাজার হতে বরাবর কিনে খেতেন। এই সূত্রেই স্বাধীনতার পরের একদিনের তিক্ত ঘটনার কথা বললেন।

সেদিন পুরাতন পরিচিত মুদির দোকানে গিয়ে এক বস্তা চাল কিনলেন। পাওনা মিটিয়ে দিয়ে উঠতে যাবেন, এমন সময় প্রতিবেশী কালু মিঞা এসে হাজির। তিনি একজন স্থানীয় মোক্তার। তিনিও মুন্দির দোকানে এসেছেন সরু চালের খোজে। দুৰ্ভাগ্যক্ৰমে দোকানে তখন এক বস্তা মাত্ৰ মিহি চাল ছিল এবং তা ইতিমধ্যেই বিলি হয়ে গেছে। তিনি নাকি তখন তাই শুনে মুদিকে বললেনঃ
– তাই নাকি ? তাহলে ওই বস্তাটাই আমাকে দাও।
– ভদ্রলোক তখন প্ৰতিবাদ করে বললেন, তিনি যে ও বস্তাটা আগেই কিনে ফেলেছেন, এমন কি দামও মিটিয়ে দিয়েছেন, কাজেই সেটা কি করে হয় ? কিন্তু তাতে কোন ফল হল না। হুঙ্কার দিয়ে কালু মিঞা নাকি বললেনঃ
আলবৎ হয়। একি হিন্দুস্থান পেয়েছ? বলে জোর করেই বস্তাটা কেড়ে নিয়ে চলে গেলেন।

এই কাহিনী বলতে বলতে, মনে হল, ভদ্রলোকের উত্তেজনা যেন আরও বেড়ে চলেছে। তার মনের দুঃখের আবেগে তিনি আরও কিছু কথা বলে চললেন যা আমাদের বর্তমান আলোচনায় খুব প্রাসঙ্গিক হবে, তাই যতদূর স্মরণ হয় তাঁর নিজের মুখেই সেটা বলতে চেষ্টা করব। তিনি বলতে শুরু করলেনঃ

–এমনকি আর করেছে বলুন, মারধোর তো করে নি। তবে কি জানেন, আমার চামড়া একটু পাতলা তাই সেদিন মনে ভারি আঘাত লেগেছিল। তবু দেশের ভিটেমাটি ত্যাগ করতে মায়া হল। তাই তখনও রয়ে গেলাম! ভদ্রলোক থামলেন না, আরও বলে চললেনঃ–কিছুদিন পরে এক সন্ধ্যাবেল বাড়ীর বার হতে জোর গলায় ডাক শুনলাম।
– কর্তা, বাড়ী আছ। হে ?

ভাবলাম কে বুঝি চেনাজানা মাতব্বর মুসলমান প্রতিবেশী এসেছে। বাইরে গিয়ে দেখি, আমারই বহু কালের এক পুরাতন প্ৰজা এসে হাজির। এক গাল হেসে বললঃ
– কর্তা, ইংরেজ চলে গেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমাদের পাকিস্তান হয়েছে। তাই দোস্তানি করতে এলাম।

তার এই উঁচু সুরে কথা আর গায়ে-পড়া ভাব দেখে আমার মনে মনে বেশ রাগ হল। আগে দেখা হলে এরাই দশ হাত দূর থেকে “অন্তত দশবার সেলাম ঠুকত। কিন্তু এখন যে পাকিস্তান। কাজেই মুখে খুশির ভান করে বললাম,
-তা বেশ।

সে তখন বলল,-তা বাইরে দাঁড়িয়ে কেন কর্তা, ভিতরে চল। এই বলে বাড়ীখানা যেন তারই সম্পত্তি এমন ভাব দেখিয়ে একরকম আমাকে টেনে নিয়ে ভিতরে চলল। বৈঠকখানায় নয়, একেবারে অন্দরে শোবার ঘরে। দিব্যি আরাম করে বিছানায় বসে আমাকে একরকম জোর করে পাশে বসিয়ে বললঃ

-কর্তা, এখন পাকিস্তান হয়ে গেছে। মনে রেখ, আমরা আর ছোট নই। ভুলে যেও না, এখন থেকে সমানে সমানে আমাদের সঙ্গে মিতালি করতে হবে।
কাহিনী বলা এখানে শেষ হয়ে গেল। এর পর ভদ্রলোক একটু থেমে রীতিমত উত্তেজিত হয়ে, আমাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললেনঃ
– কি মশাই, এর পরেও কি পাকিস্তানে থাকতে বলেন?”

[শ্রী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধাস্তু, সাহিত্য সংসদ, ১৯৬০, পৃ. ১১-১৫]

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে পরিষ্কার যে যারা পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে আসছিল তারা পাকিস্তান হবার পর সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হেতু এখন তাদের সেখানে মান-সম্ভ্রম ইজ্জৎ নিয়ে বাস করা সম্ভব নয়, এই তাদের ধারণা হয়েছে। পূর্বের পরিবেশে সমাজে যে সম্মান পেতে তারা অভ্যন্ত, সেটা তারা এখন পায় না ।

পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশ থেকে আসা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের উত্তরাধিকারদের অনেকেই হয়ত ভুলে গেছেন যে প্রায় ২০০ বছরের পরাধীনতার সময়ে তাদের সমাজের একটা বিরাট প্রভাবশালী একটা অংশ শাসক ইংরেজের সহযোগী ছিলেন শুরু থেকে। পূর্ববঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর জমিদারির মাধ্যমে যে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, নিপীড়ন ও বেইজ্জতি তারা চালিয়েছেন সেটার সম্মিলিত ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে জমা হয়ে ছিল তখন। সেই সব অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া যে বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে সেটা যারা উপলব্ধি করেছেন, তারা যে নিজ দায়িত্বে দেশান্তরী হয়েছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এবার আসা যাক আরেকটি লেখাতে, এই লেখাটি পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক সচিব পি এ নাজির এর স্মৃতিচারণ মূলক বই থেকে নেয়া। তিনি পাকিস্তান আমলে এসডিও হিসেবে সরকারী চাকুরীতে জয়েন করে নাটোরে পোস্টিং পান। তাঁর অভিজ্ঞতায় উঠে আসে শিক্ষিত হিন্দুদের দেশত্যাগের চিত্র। ঘটনা ১৯৫৬ সালের শেষ ভাগ।

পি এ নাজির সাহেব লেখেনঃ ”মহকুমার কার্যভার গ্রহণ করার পর সরকারী কাজের বাইরে প্রথম যে কাজ করব ঠিক করলাম তা হলো মহকুমা শহরের সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন। আছেই মাত্র তিনটি হাইস্কুল। একটি অতি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- জিন্নাহ স্কুল। দ্বিতীয়টি মহারাজা স্কুল এবং তৃতীয়টি বালিকা স্কুল। জিন্নাহ স্কুল কাছারির কাছেই। একদিন গেলাম সেখানে। প্রধান শিক্ষক বেশ মার্জিত শিক্ষাবিদ। স্কুলের পরিবেশ দেখে মনে হলো শিক্ষকমন্ডলী দায়িত্ব-সচেতন।
পরদিন গেলাম মহারাজা স্কুলে। প্রধান শিক্ষক বেশ ভারিক্কি কিসিমের লোক, একটু যেন লা-পরওয়া গোছেরও। ক্লাস রুমগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ছেলেদের দু’একটা প্রশ্নও করলাম। খুব মামুলি ধরনের যেমন- নাম কি, বাড়ী কোথায়, বাপ কী করেন? ইত্যাদি। দেখলাম শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র আরবী শিক্ষকই মুসলমান, বাকী সবাই হিন্দু।

সবিস্ময়ে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, সামনে বেঞ্চ খালি থাকা সত্ত্বেও সেখানে মুসলমান ছাত্রদের বসতে দেয়া হয়নি। যে গুটিকয়েক মুসলমান ছাত্র স্কুলে আছে তাদের স্থান চতুর্থ ও পঞ্চম সারিতে। প্রতিটি ক্লাসে একই অবস্থা।

বৃথা সময় নষ্ট করতে চাইলাম না। ক্লাস রুম থেকে সরাসরি চলে এলাম শিক্ষকদের কমন রুমে। কয়েকটি বইয়ের আলমারী। আলমারীগুলোর মাথার উপর দেওয়ালে টাঙ্গান রয়েছে বেশ কতগুলো লাইফ-সাইজ রঙিন ছবি। এতে ছিলো রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, গান্ধী, সুভাস এবং মহারাজা। হেড মাস্টার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কায়েদে আজমের ছবি কোথায়? জবাব পেলাম, ‘ওটা আমাদের স্কুলে নেই।’ শুধু মাথাটায় নয়, সত্যি বলতে কি, সারা শরীরে উষ্ণ রক্ত বহু আগে থেকেই সঞ্চালিত হচ্ছিল অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। কিন্তু সর্বশেষ প্রশ্নের জবাব শুনে রক্তের সে গতি আরো বহু গুণ বেড়ে গেল। বুঝতে পারলাম আর এখানে থাকা নিরাপদ হবে না। কি থেকে কি ঘটে যায় কে জানে! চলে এলাম।

কিন্তু আসার সময় হেড মাস্টার সাহেবকে সংযত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে আমলাতান্ত্রিক কায়দায় বললাম, ‘আমি পরশু আবার আপনার স্কুলে আসব। বাবায়ে কওমের অর্থাৎ আমাদের সবার বাবার ছবিটা এই রুমে দেখতে চাই এবং কাল থেকে কওমী ঝান্ডা সমবেত জাতীয় সঙ্গীতের সাথে উত্তোলন করতে হবে।পরদিন আমাকে একটু অবাক করে দিয়েই মহারাজা স্কুলের হেড মাস্টার সাহেব আমার বাংলোয় এলেন। কাল তাকে বলে এসেছিলাম যে, পরশু আমি তার স্কুলে যাবো। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে সেই দাওয়াত দিতে এসেছেন। তার এই আচরণ আমার খুব ভালো লাগলো।

পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে গেলাম। স্কুল মাঠে ১৯৪৭ সালের পর এই প্রথমবারের মতো জাতীয় পতাকা উড়ছে। আমাকে ছেলেরা অভ্যর্থনা করল ‘ব্রতচারী’ গান শুনিয়ে। শিক্ষক কমন রুমে এলাম। দেখলাম, কায়েদে আজমের ছোট্ট মানের ছবির ফ্রেমটা খুব উচুতে স্থাপন করে একটা রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে এবং একটা রশি লাগিয়ে রুমালটা টানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাকে পর্দা উন্মোচন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। আমি রুশি টানলাম। সবাই করতালিতে কামরাটা মুখর করে তুললো। ফ্রেমের মধ্যে ছবিটা পোস্ট কার্ড সাইজের।

এবার বক্তৃতার পালা। কিছু বলতে হবে। বললাম, ‘যে গতিতে আপনারা অগ্রযাত্রা শুরু করেছেন। তাতে আমি খুব খুশী হয়েছি। মনে হলো তারাও খুব বেশী খুশি হয়েছে এসডিওকে খুশী দেখে। কিন্তু তারা এটা মোটেও আঁচ করতে পারেনি যে, এই ব্যাটা এসডিও কাল আবার স্কুল বসার সময় সশরীরে এসে হাজির হবেন।

পরদিন সকাল ঠিক দশটায় গিয়ে মহারাজা স্কুলে উপস্থিত হলাম। স্কুলের ত্রি-সীমানার কোথাও জাতীয় পতাকার নাম নিশানা পাওয়া গেল না। এতে অবশ্য আমি অবাক হলাম না। শিক্ষকদের কমন রুমে গিয়ে ঢুকলাম। ‘কায়েদে আজম’ উধাও। এটাও অপ্রত্যাশিত ছিল না আমার কাছে। জিজ্ঞেস করলাম হেড মাস্টার সাহেবকে, ‘ছবিটা কোথায় গেল? কোন উত্তর পেলাম না। কারো মুখে রা নেই। সবাই হতচকিত ও বিহবল হয়ে পড়েছে। এরকম একটা ঘটনা বাস্তবে ঘটতে পারে এটা যেন তারা কল্পনাও করতে পারেননি।

এই নীরবতা ভঙ্গ করে আমার এক নতুন আর্দালী এক পানের দোকানদারের হাত ধরে প্রায় টেনে হেঁচড়ে আমার সামনে হাজির করল। ব্যাপার কি? জানতে চাইলাম। সে যা বলল তা হলো কাল যে ছবিটা এখানে টাঙ্গানো হয়েছিল সে ছবিটা এই ব্যাটা দোকানদার ওর দোকানে টাঙ্গিয়ে রেখেছে আজ। কত বড় সাহস! পান দোকানদার কাচুমাচু হয়ে যা বলল তা হলো, এতে ওর কোন অপরাধ নেই। এই ছবিটার প্রকৃত মালিক সেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ কাল কিছুক্ষণের জন্য এই ছবিটা তার কাছ থেকে ভাড়া করেছিলো। কাজ শেষে কালই আবার তারা ছবিটা তাকে ফেরত দিয়েছে। এমনভাবে এদের হাটে হাঁড়ি ভাংবে এরা ভাবতেও পারেননি।

একজন শিক্ষক (হেডমাস্টার নন) বিনীত কণ্ঠে বললেন, ‘স্যার’ যদি অভয় দেন তো একটা কথা বলবো। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, নির্ভয়ে বলুন। তিনি বললেন, স্যার আপনি যা চাচ্ছেন তার সাথে যদি আমরা একমত না হই তবে কি আমরা বিনা ঝামেলায় পদত্যাগ করতে পারবো?

জবাবে শান্ত কণ্ঠে বললাম, নিশ্চয়ই পারবেন, খুশী মনে পারবেন। কোন ঝামেলাও হবে না। এবার হেড মাস্টার মরিয়া হয়ে মুখ খুললেন, স্যার, এই স্কুলের গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট কলকাতাবাসী মহারাজা, এসডিও নন।

বললাম, সে আমি খুব ভাল করেই জানি। এসডিও হিসেবে আমি জানি আমাকে কি করতে হবে এবং আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে খুবই সচেতন।

হেড মাস্টার সাহেব আর কিছু বললো না। আমি পায়চারি করতে করতে হেড মাস্টার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ স্কুলটির এ্যাফিলিয়েশন কি কলকাতার সঙ্গে না ঢাকার সঙ্গে?’ উত্তর পেলাম না। হেড মাস্টার সাহেবের চেহারা আরো গম্ভীর হলো।হঠাৎ কাচের আলমারীর ভিতর একটা বইয়ের উপর নজর পড়ল। The Calcutta University Calender 1956 বইটা দেখতে চাইলাম।

একজন শিক্ষক নীরবে বইটা আমার হাতে তুলে দিলেন। পাতা উল্টাতে উল্টাতে কাঙ্খিত জায়গা পেয়ে গেলাম। নাটোর মহারাজা হাইস্কুল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাফিলিয়েশন প্রাপ্ত। আগের বছর এই স্কুলের কত জন ছাত্র পাস করেছে তারো একটা হিসাব এতে আছে।

আমার মনে নানা ধরনের সন্দেহ উঁকি ঝুঁকি দিলেও সত্য বলতে কি, আমি এতোটা ভাবতে পারিনি। ইট ইজ টু মাচ! এই স্কুল সম্পর্কে যা সিদ্ধান্ত নেবার তা নিয়ে ফেলেছি তৎক্ষণাৎ, নিজের অজান্তেই। চুপচাপ চলে এলাম নিজের বাংলোয়। সরকারী স্কুলের একজন অবসরপ্রাপ্ত হেড মাস্টার নাটোরের কানাইখালিতে থাকতেন। তাকে রেক্টর নিয়োগ করে মহারাজা স্কুলে পাঠালাম পরদিন।

এদিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজশাহী থেকে আমার কাছে এক বার্তা পাঠালেন। তাতে তিনি জানালেন যে, কলকাতায় বসবাসকারী মহারাজা প্রাদেশিক গভর্নর এ কে ফজলুল হক সাহেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহারাজা অভিযোগ করেছেন, এক ছোকরা এসডিও তার স্কুলটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সুতরাং হক সাহেব যেন ত্বরিত ব্যবস্থা নেন।

ওই দিন বিকেলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বয়ং নাটোরে তাশরিফ আনলেন। সোজা নিয়ে গেলাম তাকে মহারাজা স্কুলে।… জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব তার সদর দফতরে ফিরে গিয়ে মহারাজা স্কুল সম্পর্কে কি রিপোর্ট দিয়েছিলেন জানি না। তবে সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তিনি আমাকে সবিস্ময়ে বলেছিলেন, ‘এটা কি করে সম্ভব হলো- যে স্কুলটি এই দেশে অবস্থিত, স্কুলের পাঠ্য বইগুলো এখানকার টেক্সট বুক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত অথচ ছেলেরা পরীক্ষা দেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাস অনুসারে। তাকে এ তথ্যও দিয়েছিলাম যে, কটি মুসলমান ছেলে দশম শ্রেণীর পর্যন্ত পড়ে তারা হয় প্রাইভেটে পরীক্ষা দেয় নতুবা পাশের দিঘাপতিয়া স্কুলের ছাত্র হিসেবে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ স্কুল থেকে যারা মেট্রিক পরীক্ষা দেয় তারা সবাই হিন্দু ছাত্র এবং পরীক্ষা দেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাস অনুসারে।

যা হোক, মহারাজা স্কুলের কীর্তিমান হেড মাস্টার এবং তার চার জন সহকর্মী শিক্ষক হঠাৎ এক দিন লাপাত্তা হয়ে গেলেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল, তারা সীমান্তের ওপারে চলে গেছেন।”

(উৎসঃ পি এ নাজির,স্মৃতির পাতা থেকে, নতুন সফর প্রকাশনী, ১৯৯৩ পৃষ্ঠা ১০-১৫) উপরোক্ত বর্ণনা থেকে স্পষ্ট যে কোন অত্যাচার নয় বরং নিজেদের মুসলিম বিদ্বেষ ও একপেশে হিন্দুয়ানী বজায় রাখতে ওই পাঁচজন হিন্দু শিক্ষক দেশ ত্যাগ করে ভারতে আসেন।

লেখাটা শেষ করা যাক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস মহাশয়ের আরেকটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে, তিনি লেখেনঃ “ বাংলাদেশে Amar বাড়ি যেখানে, দুটি গ্রাম পরের গ্রামের আমার পরিচিত একজন বাংলাদেশ থেকে দেশত্যাগের কারণ নিয়ে আমার লেখায় মন্তব্য লিখলেন, ” বাস্তবে কি তাই?”
আমি তাঁকে লিখি “সমীরণ, তোমার বংশের কেউ মুসলমানের হাতে খুন হয়েছে, চড় খেয়েছে, চোখ রাঙানি? উত্তর না। তোমার বংশের কতজন দেশ ছেড়েছেন। আগে লেখাপড়া জানা সবাই। তোমার পরিবারের অর্ধেক এপারে। মুসলমানের গুঁতোয় দেশত্যাগ হলে আধাআধি এমন হয় না। আসলে তোমরাও আসতে চাও শুধু সুযোগ ও সুবিধা হলে তবে আসবে, না হলে থাকবে। ওদেশের প্রায় সবাই এমনি।”

এবার সে জবাবে লিখলেন, ” দাদা, আমরা বা আমার বংশের কেউই মুসলমানের নিকট অপমানিত হয়ে ভারতে আসে নাই বা যায় নাই। আমাদের নিজ সুবিধার জন্য ভারতবর্ষে নিজ ইচ্ছায় আগমন ও প্রস্থান করি”।

সাবেক যশোর জেলার মাগুরা মহকুমা থেকে নড়াইল, অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর হয়ে খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল ডুমুরিয়া, বৈঠঘাটা, তালা, দাকোপ, রামপাল থানা বা উপজেলা হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল। একটা অর্ধচন্দ্রের মতো এলাকা যার বিস্তৃতি ১০০ কিলোমিটারের বেশি হবে। এই অঞ্চলে কোনোদিন বা কোনোকালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলতে যা বোঝায়, তা হয় নি। কিন্তু এখানকার বহু মানুষ দেশত্যাগ করেছেন।

এই অঞ্চল জুড়ে এখন এম পি রা হলেন– বীরেন শিকদার (মন্ত্রী), রণজিৎ বাবু, স্বপন ভট্টাচায্য, Narayan চন্দ (মন্ত্রী), poncha non biswas প্রমুখ।
কেউ কেউ তত্ত্ব হাজির করছেন যে, দুই পক্ষ সবল নয়, তাই দাঙ্গা নেই। তবে কেন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় দাঙ্গা হলো না? আমি বলি– এসব ব্যাখ্যা ওতো সরল নয়।

যারা দেশত্যাগের কারণ সম্পর্কে এখনো আমার মতামতের ব্যাপারে সংশয়ে আছেন, তাদের জন্য ২০০/৫০০ পরিবার সম্পর্কে নাম ঠিকানা উল্লেখ করে ও তাদের দেশত্যাগের কারণ উল্লেখ করে আমি লিখতে পারি। সেটা উচি

“আবুল মনসুর আহমদের (সচেতন রাজনীতিক বলে তথাগতবাবু তার বইয়ে পরিচয় উনার পরিচয় দিয়েছেন) কিছু লেখা তথাগতবাবু উদ্ধৃত করেছেন, ” টা ঐতিহাসিক সত্য যেপূর্ববাংলায় অন্যান্য স্থানের তুলনায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা খুবই কম হইয়াছিল — একরূপ হয় নাই বলিলেও চলে। কিন্তু একটু তলাইয়া দেখিলেই বোঝা যাইবে যেপূর্ব বাংলার হিন্দুদের মধ্যে বাস্তুত্যাগের হিড়িক পড়িয়াছিল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়ে নয়অন্য কারণে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়ক ও মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের অন্তঃসারশূন্য ‘ ইসলামী রাষ্ট্র ‘ ও শরিয়তি শাসনের ভয়ে হিন্দুরা সত্যিই ঘাবড়ে গিয়েছিলো। জানের ভয়ে নয়মানের ভয়ে। ধর্ম ও কালচার হারাইবার ভয়ে। অর্ধ শতাব্দী ধরিয়া যে হিন্দুরা দেশের আজাদীর জন্য জান-মাল কোরবাণী করিয়াছে স্বাধীন হবার পরে তারাই নিজেদের ধর্ম ও কৃষ্টি-সংস্কৃতি লইয়া সসম্মানে দেশে বাস করিতে পারিবে নাএটা মনের দিক হইতে তাদের জন্য দুঃসহ।……… পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়কেরা শুধুমাত্র দাঙ্গা হাঙ্গামাহীন শান্তি স্থাপন করিয়াই মনে করিয়াছিলেন তাহাদের কর্তব্য শেষ হইলো “।

অর্থাৎ তথাগতবাবু বাংলাদেশের হিন্দুদের চরিত্রের দুর্বলতা এবং দেশত্যাগের মূল কারণ জানেন। তা তিনি প্রকাশ করেছেন এবং তাদের ভয় দেখিয়েছেনআতংকিত ও সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ ঘুরিয়ে দেশত্যাগে উৎসাহ দিয়েছেন। তারা এই ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন নিয়ে। এজন্য তারা যে মরীয়াসে কথা ঘোষণা করে চলেছেন। তারা  হয়তো ভাবছেন বাংলাদেশে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হলে এবং উদ্বাস্তু স্রোত এপার বাংলায় তাদের পক্ষে সমর্থনের ঢেউ বয়ে আনতে পারে।“

[ব্লগ পোস্ট লিঙ্কঃ http://bit.ly/sukriti4 এবং আর্কাইভ লিঙ্কঃ http://archive.is/5QfYT ]

এখানে তথাগতবাবু হলেন তথাগত রায়, একজন উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও বিজেপি নেতা। এখানে তিনি  তথাগত রায় এর লেখা “যা ছিল আমার দেশ” নামে  নানা অসত্য ও অর্ধসত্য মুলক বই এর কথা বলছেন।  অবশ্য তথাগত রায় তার বইয়ে স্বীকার করেছেন যে, বর্তমানকালে সে দেশের হিন্দুদের দেশত্যাগের কারন ‘মনস্তাত্তিক’। এ বই-য়ের বিকৃত তথ্য ও ব্যাখ্যার বিরোধীতা করে সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস মহাশয় একটি পুস্তিকা লিখেছেন- ‘বঙ্গভঙ্গ- দেশত্যাগ-দাঙ্গা’।

লেখাটি পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায় যে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের জন্য একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের হিন্দুদের ভয় দেখায়, আতংকিত ও সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করে এবং দেশত্যাগে উৎসাহ দেয়।

এবার আসা যাক শ্রী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী ধাঁচের একটি বইথেকে নেয়া চুম্বক অংশ সম্পর্কে, যিনি ১৯৪৭ সালের পর পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে শরণার্থীদের পূনর্বাসনে কাজ করেছেন এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ‘উদ্বাস্তু’ শিরোনামে বিশাল এক বই লিখে ফেলেছেন। শ্রী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেনঃ

”পুর্ব অঞ্চলে কিন্তু স্বাধীনতার পর, যখন দেশ বিভাগ হয়ে গেল, অবস্থা ভিন্ন রূপ নিল। এখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধল না। বরং পুর্ব হতে যেখানে দাঙ্গার জের চলছিল তা স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল। কলিকাতার অবস্থা এই প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে দীর্ঘ এক বৎসরব্যাপী দাঙ্গার ওপর উভয় সম্প্রদায় যবনিকা টেনে দিয়েছিল। তাই একসময়ে মনে হয়েছিল পুর্বাঞ্চলে দেশবিভাগ হওয়া সত্ত্বেও হয়ত শান্তি অক্ষুন্ন থাকবে। অন্তত প্ৰথম দিকে আপাতদৃষ্টিতে শান্তি অক্ষুন্নই ছিল। তাই যদি হয় তবে এত মানুষ পুর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে চলে আসে। কেন? এই প্রশ্ন সেদিন আমার মনে উদয় হয়েছিল। নিজের দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছায় এত কষ্ট বরণ করবার কোন সঙ্গত কারণ আছে কি ? .

আমি গিয়েছিলাম প্রশাসনিক কাজে আলিপুরদুয়ারে। সেটি জেলার পুর্বপ্রাস্তে অবস্থিত। যে ভদ্রলোক সঙ্গে এসেছিলেন তাকে জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না- এরা দেশত্যাগ করে এমনভাবে চলে আসছেন কেন তার খবর নিয়েছেন কি ?

তিনি বললেন,- নিয়েছি বৈকি? তবে তার উত্তরটা আমি আর দিই কেন? এঁদের মুখেই শুনুন না। এই বলে নিকটে উপবিষ্ট একটি ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি নিজের যে পরিচয় দিলেন, তা হতে জানা গেল, তিনি ছিলেন বগুড়া জেলার গ্রামাঞ্চলের এক ডাক্তার। বর্ধিষ্ণু পরিবার, প্ৰজাবিলি জমি আর খাস জমি কিছু ছিল। সব ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি চলে এসেছেন।

আমার সঙ্গী তাকে উদ্দেশ করে বললেন,-দেখুন, এই ভদ্রলোক জানতে চান, দেশে তো কোন গোলমাল নেই, তবু কেন আপনারা দেশ ছেড়ে চলে এলেন?… তিনি যে কাহিনী বললেন তা সংক্ষেপে এই দাঁড়ায়। বাড়ীতে মোটা চালের অভাব না হলেও এরা সরু চাল বাজার হতে বরাবর কিনে খেতেন। এই সূত্রেই স্বাধীনতার পরের একদিনের তিক্ত ঘটনার কথা বললেন।

সেদিন পুরাতন পরিচিত মুদির দোকানে গিয়ে এক বস্তা চাল কিনলেন। পাওনা মিটিয়ে দিয়ে উঠতে যাবেন, এমন সময় প্রতিবেশী কালু মিঞা এসে হাজির। তিনি একজন স্থানীয় মোক্তার। তিনিও মুন্দির দোকানে এসেছেন সরু চালের খোজে। দুৰ্ভাগ্যক্ৰমে দোকানে তখন এক বস্তা মাত্ৰ মিহি চাল ছিল এবং তা ইতিমধ্যেই বিলি হয়ে গেছে। তিনি নাকি তখন তাই শুনে মুদিকে বললেনঃ

–তাই নাকি ? তাহলে ওই বস্তাটাই আমাকে দাও।

ভদ্রলোক তখন প্ৰতিবাদ করে বললেন, তিনি যে ও বস্তাটা আগেই কিনে ফেলেছেন, এমন কি দামও মিটিয়ে দিয়েছেন, কাজেই সেটা কি করে হয় ? কিন্তু তাতে কোন ফল হল না। হুঙ্কার দিয়ে কালু মিঞা নাকি বললেনঃ

আলবৎ হয়। একি হিন্দুস্থান পেয়েছ? বলে জোর করেই বস্তাটা কেড়ে নিয়ে চলে গেলেন।

এই কাহিনী বলতে বলতে, মনে হল, ভদ্রলোকের উত্তেজনা যেন আরও বেড়ে চলেছে। তার মনের দুঃখের আবেগে তিনি আরও কিছু কথা বলে চললেন যা আমাদের বর্তমান আলোচনায় খুব প্রাসঙ্গিক হবে, তাই যতদূর স্মরণ হয় তাঁর নিজের মুখেই সেটা বলতে চেষ্টা করব। তিনি বলতে শুরু করলেনঃ

–এমনকি আর করেছে বলুন, মারধোর তো করে নি। তবে কি জানেন, আমার চামড়া একটু পাতলা তাই সেদিন মনে ভারি আঘাত লেগেছিল। তবু দেশের ভিটেমাটি ত্যাগ করতে মায়া হল। তাই তখনও রয়ে গেলাম! ভদ্রলোক থামলেন না, আরও বলে চললেনঃ

–কিছুদিন পরে এক সন্ধ্যাবেল বাড়ীর বার হতে জোর গলায় ডাক শুনলাম। –কর্তা, বাড়ী আছ। হে ?

ভাবলাম কে বুঝি চেনাজানা মাতব্বর মুসলমান প্রতিবেশী এসেছে। বাইরে গিয়ে দেখি, আমারই বহু কালের এক পুরাতন প্ৰজা এসে হাজির। এক গাল হেসে বললঃ

–কর্তা, ইংরেজ চলে গেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমাদের পাকিস্তান হয়েছে। তাই দোস্তানি করতে এলাম।

তার এই উঁচু সুরে কথা আর গায়ে-পড়া ভাব দেখে আমার মনে মনে বেশ রাগ হল। আগে দেখা হলে এরাই দশ হাত দূর থেকে “অন্তত দশবার সেলাম ঠুকত। কিন্তু এখন যে পাকিস্তান। কাজেই মুখে খুশির ভান করে বললাম,

-তা বেশ।

সে তখন বলল,-তা বাইরে দাঁড়িয়ে কেন কর্তা, ভিতরে চল। এই বলে বাড়ীখানা যেন তারই সম্পত্তি এমন ভাব দেখিয়ে একরকম আমাকে টেনে নিয়ে ভিতরে চলল। বৈঠকখানায় নয়, একেবারে অন্দরে শোবার ঘরে। দিব্যি আরাম করে বিছানায় বসে আমাকে একরকম জোর করে পাশে বসিয়ে বললঃ

-কর্তা, এখন পাকিস্তান হয়ে গেছে। মনে রেখ, আমরা আর ছোট নই। ভুলে যেও না, এখন থেকে সমানে সমানে আমাদের সঙ্গে মিতালি করতে হবে।

কাহিনী বলা এখানে শেষ হয়ে গেল। এর পর ভদ্রলোক একটু থেমে রীতিমত উত্তেজিত হয়ে, আমাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললেনঃ

–কি মশাই, এর পরেও কি পাকিস্তানে থাকতে বলেন?”

[শ্রী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধাস্তু, সাহিত্য সংসদ, ১৯৬০, পৃ. ১১-১৫]

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে পরিষ্কার যে যারা পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে আসছিল তারা পাকিস্তান হবার পর সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হেতু এখন তাদের সেখানে আগের মত  মান-ইজ্জৎ নিয়ে বাস করা সম্ভব নয়, এই তাদের ধারণা হয়েছে। পূর্বের পরিবেশে সমাজে যে সম্মান পেতে তারা অভ্যন্ত, সেটা তারা এখন পায় না ।

পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশ থেকে আসা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের উত্তরাধিকারদের অনেকেই হয়ত ভুলে গেছেন যে প্রায় ২০০ বছরের পরাধীনতার সময়ে তাদের সমাজের একটা বিরাট প্রভাবশালী একটা অংশ শাসক ইংরেজের সহযোগী ছিলেন শুরু থেকে। পূর্ববঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর জমিদারির মাধ্যমে যে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, নিপীড়ন ও বেইজ্জতি তারা চালিয়েছেন সেটার সম্মিলিত ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে জমা হয়ে ছিল তখন। সেই সব অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া যে বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে সেটা যারা উপলব্ধি করেছেন, তারা যে নিজ দায়িত্বে দেশান্তরী হয়েছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এবার আসা যাক আরেকটি লেখাতে, এই লেখাটি পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক সচিব পি এ নাজির এর স্মৃতিচারণ মূলক বই থেকে নেয়া। তিনি পাকিস্তান আমলে এসডিও হিসেবে সরকারী চাকুরীতে জয়েন করে নাটোরে পোস্টিং পান। তাঁর অভিজ্ঞতায় উঠে আসে শিক্ষিত হিন্দুদের দেশত্যাগের চিত্র। ঘটনা ১৯৫৬ সালের শেষ ভাগ।

পি এ নাজির সাহেব লেখেনঃ

”মহকুমার কার্যভার গ্রহণ করার পর সরকারী কাজের বাইরে প্রথম যে কাজ করব ঠিক করলাম তা হলো মহকুমা শহরের সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন। আছেই মাত্র তিনটি হাইস্কুল। একটি অতি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- জিন্নাহ স্কুল। দ্বিতীয়টি মহারাজা স্কুল এবং তৃতীয়টি বালিকা স্কুল। জিন্নাহ স্কুল কাছারির কাছেই। একদিন গেলাম সেখানে। প্রধান শিক্ষক বেশ মার্জিত শিক্ষাবিদ। স্কুলের পরিবেশ দেখে মনে হলো শিক্ষকমন্ডলী দায়িত্ব-সচেতন।

পরদিন গেলাম মহারাজা স্কুলে। প্রধান শিক্ষক বেশ ভারিক্কি কিসিমের লোক, একটু যেন লা-পরওয়া গোছেরও। ক্লাস রুমগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ছেলেদের দু’একটা প্রশ্নও করলাম। খুব মামুলি ধরনের যেমন- নাম কি, বাড়ী কোথায়, বাপ কী করেন? ইত্যাদি। দেখলাম শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র আরবী শিক্ষকই মুসলমান, বাকী সবাই হিন্দু।

সবিস্ময়ে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, সামনে বেঞ্চ খালি থাকা সত্ত্বেও সেখানে মুসলমান ছাত্রদের বসতে দেয়া হয়নি। যে গুটিকয়েক মুসলমান ছাত্র স্কুলে আছে তাদের স্থান চতুর্থ ও পঞ্চম সারিতে। প্রতিটি ক্লাসে একই অবস্থা।

বৃথা সময় নষ্ট করতে চাইলাম না। ক্লাস রুম থেকে সরাসরি চলে এলাম শিক্ষকদের কমন রুমে। কয়েকটি বইয়ের আলমারী। আলমারীগুলোর মাথার উপর দেওয়ালে টাঙ্গান রয়েছে বেশ কতগুলো লাইফ-সাইজ রঙিন ছবি। এতে ছিলো রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, গান্ধী, সুভাস এবং মহারাজা। হেড মাস্টার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কায়েদে আজমের ছবি কোথায়? জবাব পেলাম, ‘ওটা আমাদের স্কুলে নেই।’ শুধু মাথাটায় নয়, সত্যি বলতে কি, সারা শরীরে উষ্ণ রক্ত বহু আগে থেকেই সঞ্চালিত হচ্ছিল অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। কিন্তু সর্বশেষ প্রশ্নের জবাব শুনে রক্তের সে গতি আরো বহু গুণ বেড়ে গেল। বুঝতে পারলাম আর এখানে থাকা নিরাপদ হবে না। কি থেকে কি ঘটে যায় কে জানে! চলে এলাম।

কিন্তু আসার সময় হেড মাস্টার সাহেবকে সংযত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে আমলাতান্ত্রিক কায়দায় বললাম, ‘আমি পরশু আবার আপনার স্কুলে আসব। বাবায়ে কওমের অর্থাৎ আমাদের সবার বাবার ছবিটা এই রুমে দেখতে চাই এবং কাল থেকে কওমী ঝান্ডা সমবেত জাতীয় সঙ্গীতের সাথে উত্তোলন করতে হবে।পরদিন আমাকে একটু অবাক করে দিয়েই মহারাজা স্কুলের হেড মাস্টার সাহেব আমার বাংলোয় এলেন। কাল তাকে বলে এসেছিলাম যে, পরশু আমি তার স্কুলে যাবো। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে সেই দাওয়াত দিতে এসেছেন। তার এই আচরণ আমার খুব ভালো লাগলো।

পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে গেলাম। স্কুল মাঠে ১৯৪৭ সালের পর এই প্রথমবারের মতো জাতীয় পতাকা উড়ছে। আমাকে ছেলেরা অভ্যর্থনা করল ‘ব্রতচারী’ গান শুনিয়ে। শিক্ষক কমন রুমে এলাম। দেখলাম, কায়েদে আজমের ছোট্ট মানের ছবির ফ্রেমটা খুব উচুতে স্থাপন করে একটা রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে এবং একটা রশি লাগিয়ে রুমালটা টানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাকে পর্দা উন্মোচন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। আমি রশি টানলাম। সবাই করতালিতে কামরাটা মুখর করে তুললো। ফ্রেমের মধ্যে ছবিটা পোস্ট কার্ড সাইজের।

এবার বক্তৃতার পালা। কিছু বলতে হবে। বললাম, ‘যে গতিতে আপনারা অগ্রযাত্রা শুরু করেছেন। তাতে আমি খুব খুশী হয়েছি। মনে হলো তারাও খুব বেশী খুশি হয়েছে এসডিওকে খুশী দেখে। কিন্তু তারা এটা মোটেও আঁচ করতে পারেনি যে, এই ব্যাটা এসডিও কাল আবার স্কুল বসার সময় সশরীরে এসে হাজির হবেন।

পরদিন সকাল ঠিক দশটায় গিয়ে মহারাজা স্কুলে উপস্থিত হলাম। স্কুলের ত্রি-সীমানার কোথাও জাতীয় পতাকার নাম নিশানা পাওয়া গেল না। এতে অবশ্য আমি অবাক হলাম না। শিক্ষকদের কমন রুমে গিয়ে ঢুকলাম। ‘কায়েদে আজম’ উধাও। এটাও অপ্রত্যাশিত ছিল না আমার কাছে। জিজ্ঞেস করলাম হেড মাস্টার সাহেবকে, ‘ছবিটা কোথায় গেল? কোন উত্তর পেলাম না। কারো মুখে রা নেই। সবাই হতচকিত ও বিহবল হয়ে পড়েছে। এরকম একটা ঘটনা বাস্তবে ঘটতে পারে এটা যেন তারা কল্পনাও করতে পারেননি।

এই নীরবতা ভঙ্গ করে আমার এক নতুন আর্দালী এক পানের দোকানদারের হাত ধরে প্রায় টেনে হেঁচড়ে আমার সামনে হাজির করল। ব্যাপার কি? জানতে চাইলাম। সে যা বলল তা হলো কাল যে ছবিটা এখানে টাঙ্গানো হয়েছিল সে ছবিটা এই ব্যাটা দোকানদার ওর দোকানে টাঙ্গিয়ে রেখেছে আজ। কত বড় সাহস! পান দোকানদার কাচুমাচু হয়ে যা বলল তা হলো, এতে ওর কোন অপরাধ নেই। এই ছবিটার প্রকৃত মালিক সেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ কাল কিছুক্ষণের জন্য এই ছবিটা তার কাছ থেকে ভাড়া করেছিলো। কাজ শেষে কালই আবার তারা ছবিটা তাকে ফেরত দিয়েছে। এমনভাবে এদের হাটে হাঁড়ি ভাংবে এরা ভাবতেও পারেননি।

একজন শিক্ষক (হেডমাস্টার নন) বিনীত কণ্ঠে বললেন, ‘স্যার’ যদি অভয় দেন তো একটা কথা বলবো। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, নির্ভয়ে বলুন। তিনি বললেন, স্যার আপনি যা চাচ্ছেন তার সাথে যদি আমরা একমত না হই তবে কি আমরা বিনা ঝামেলায় পদত্যাগ করতে পারবো?

জবাবে শান্ত কণ্ঠে বললাম, নিশ্চয়ই পারবেন, খুশী মনে পারবেন। কোন ঝামেলাও হবে না। এবার হেড মাস্টার মরিয়া হয়ে মুখ খুললেন, স্যার, এই স্কুলের গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট কলকাতাবাসী মহারাজা, এসডিও নন। বললাম, সে আমি খুব ভাল করেই জানি। এসডিও হিসেবে আমি জানি আমাকে কি করতে হবে এবং আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে খুবই সচেতন।

হেড মাস্টার সাহেব আর কিছু বললো না। আমি পায়চারি করতে করতে হেড মাস্টার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ স্কুলটির এ্যাফিলিয়েশন কি কলকাতার সঙ্গে না ঢাকার সঙ্গে?’ উত্তর পেলাম না। হেড মাস্টার সাহেবের চেহারা আরো গম্ভীর হলো।হঠাৎ কাচের আলমারীর ভিতর একটা বইয়ের উপর নজর পড়ল। The Calcutta University Calender 1956 বইটা দেখতে চাইলাম। একজন শিক্ষক নীরবে বইটা আমার হাতে তুলে দিলেন। পাতা উল্টাতে উল্টাতে কাঙ্খিত জায়গা পেয়ে গেলাম। নাটোর মহারাজা হাইস্কুল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাফিলিয়েশন প্রাপ্ত। আগের বছর এই স্কুলের কত জন ছাত্র পাস করেছে তারো একটা হিসাব এতে আছে।

আমার মনে নানা ধরনের সন্দেহ উঁকি ঝুঁকি দিলেও সত্য বলতে কি, আমি এতোটা ভাবতে পারিনি। ইট ইজ টু মাচ! এই স্কুল সম্পর্কে যা সিদ্ধান্ত নেবার তা নিয়ে ফেলেছি তৎক্ষণাৎ, নিজের অজান্তেই। চুপচাপ চলে এলাম নিজের বাংলোয়। সরকারী স্কুলের একজন অবসরপ্রাপ্ত হেড মাস্টার নাটোরের কানাইখালিতে থাকতেন। তাকে রেক্টর নিয়োগ করে মহারাজা স্কুলে পাঠালাম পরদিন।

এদিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজশাহী থেকে আমার কাছে এক বার্তা পাঠালেন। তাতে তিনি জানালেন যে, কলকাতায় বসবাসকারী মহারাজা প্রাদেশিক গভর্নর এ কে ফজলুল হক সাহেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহারাজা অভিযোগ করেছেন, এক ছোকরা এসডিও তার স্কুলটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সুতরাং হক সাহেব যেন ত্বরিত ব্যবস্থা নেন।

ওই দিন বিকেলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বয়ং নাটোরে তাশরিফ আনলেন। সোজা নিয়ে গেলাম তাকে মহারাজা স্কুলে।… জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব তার সদর দফতরে ফিরে গিয়ে মহারাজা স্কুল সম্পর্কে কি রিপোর্ট দিয়েছিলেন জানি না। তবে সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তিনি আমাকে সবিস্ময়ে বলেছিলেন, ‘এটা কি করে সম্ভব হলো- যে স্কুলটি এই দেশে অবস্থিত, স্কুলের পাঠ্য বইগুলো এখানকার টেক্সট বুক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত অথচ ছেলেরা পরীক্ষা দেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাস অনুসারে। তাকে এ তথ্যও দিয়েছিলাম যে, কটি মুসলমান ছেলে দশম শ্রেণীর পর্যন্ত পড়ে তারা হয় প্রাইভেটে পরীক্ষা দেয় নতুবা পাশের দিঘাপতিয়া স্কুলের ছাত্র হিসেবে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ স্কুল থেকে যারা মেট্রিক পরীক্ষা দেয় তারা সবাই হিন্দু ছাত্র এবং পরীক্ষা দেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাস অনুসারে।

যা হোক, মহারাজা স্কুলের কীর্তিমান হেড মাস্টার এবং তার চার জন সহকর্মী শিক্ষক হঠাৎ এক দিন লাপাত্তা হয়ে গেলেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল, তারা সীমান্তের ওপারে চলে গেছেন।”

(উৎসঃ পি এ নাজির,স্মৃতির পাতা থেকে, নতুন সফর প্রকাশনী, ১৯৯৩ পৃষ্ঠা ১০-১৫)

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে স্পষ্ট যে কোন অত্যাচার নয় বরং নিজেদের মুসলিম বিদ্বেষ ও একপেশে হিন্দুয়ানী বজায় রাখতে ওই পাঁচজন হিন্দু শিক্ষক দেশ ত্যাগ করে ভারতে আসেন।

লেখাটা শেষ করা যাক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস মহাশয়ের আরেকটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে, তিনি লেখেনঃ

 বাংলাদেশে Amar বাড়ি যেখানে, দুটি গ্রাম পরের গ্রামের আমার পরিচিত একজন বাংলাদেশ থেকে দেশত্যাগের কারণ নিয়ে আমার লেখায় মন্তব্য লিখলেন, ” বাস্তবে কি তাই?”

আমি তাঁকে লিখি “সমীরণ, তোমার বংশের কেউ মুসলমানের হাতে খুন হয়েছে, চড় খেয়েছে, চোখ রাঙানি? উত্তর না। তোমার বংশের কতজন দেশ ছেড়েছেন। আগে লেখাপড়া জানা সবাই। তোমার পরিবারের অর্ধেক এপারে। মুসলমানের গুঁতোয় দেশত্যাগ হলে আধাআধি এমন হয় না। আসলে তোমরাও আসতে চাও শুধু সুযোগ ও সুবিধা হলে তবে আসবে, না হলে থাকবে। ওদেশের প্রায় সবাই এমনি।”

এবার সে জবাবে লিখলেন, ” দাদা, আমরা বা আমার বংশের কেউই মুসলমানের নিকট অপমানিত হয়ে ভারতে আসে নাই বা যায় নাই। আমাদের নিজ সুবিধার জন্য ভারতবর্ষে নিজ ইচ্ছায় আগমন ও প্রস্থান করি”।

সাবেক যশোর জেলার মাগুরা মহকুমা থেকে নড়াইল, অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর হয়ে খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল ডুমুরিয়া, বৈঠঘাটা, তালা, দাকোপ, রামপাল থানা বা উপজেলা হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল। একটা অর্ধচন্দ্রের মতো এলাকা যার বিস্তৃতি ১০০ কিলোমিটারের বেশি হবে। এই অঞ্চলে কোনোদিন বা কোনোকালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলতে যা বোঝায়, তা হয় নি। কিন্তু এখানকার বহু মানুষ দেশত্যাগ করেছেন।

এই অঞ্চল জুড়ে এখন এম পি রা হলেন– বীরেন শিকদার (মন্ত্রী), রণজিৎ বাবু, স্বপন ভট্টাচায্য, Narayan চন্দ (মন্ত্রী), poncha non biswas প্রমুখ।

কেউ কেউ তত্ত্ব হাজির করছেন যে, দুই পক্ষ সবল নয়, তাই দাঙ্গা নেই। তবে কেন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় দাঙ্গা হলো না? আমি বলি– এসব ব্যাখ্যা ওতো সরল নয়।

যারা দেশত্যাগের কারণ সম্পর্কে এখনো আমার মতামতের ব্যাপারে সংশয়ে আছেন, তাদের জন্য ২০০/৫০০ পরিবার সম্পর্কে নাম ঠিকানা উল্লেখ করে ও তাদের দেশত্যাগের কারণ উল্লেখ করে আমি লিখতে পারি। সেটা উচিত হবে না বলে লিখছি না।

[ফেসবুক পোস্ট লিঙ্কঃ  http://bit.ly/sukriti5  এবং আর্কাইভ লিঙ্কঃ  https://archive.is/afHOj  ]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment