রওজা মুবারক সরিয়ে ফেলা উড়ো খবর?


=======
মজসিদে নববী (দঃ) এর প্রশস্তিকরণের উছিলায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর দুই সাথীর পবিত্র রওজা মুবারক সবুজ গম্বুজের নীচ থেকে সরিয়ে জান্নাতুল বাকীতে কোন এক অজ্ঞাতস্থানে স্থানান্তরের খবর নাকি গুজব। এই নিয়ে কিছু সালাফী পন্থী মতামত জানিয়ে আমাকে সালাফী অনুসারী এবং সৌদি নজদি সরকারের একান্ত অনুগত ইয়াসির কাজীর ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়তে অনুরোধ করে। আমি নীচের লিংক এ গিয়ে তাঁর স্ট্যাটাস দেখলাম আর বুঝলাম আমরা জা শুনেছি তা পুরোপুরি সত্যি। দেখুন তার স্ট্যাটাস এর লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/yasir.qadhi/posts/10152454578288300

নিচে তার বক্তব্যের জবাবে কিছু কথা
————————–—————–
১। খবরটি একেবারে উড়ো গুজব নয়। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন যে এটি কেবলমাত্র একটি একাডেমিক পেপার যেখানে ওরকম প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এবং এই প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এটি কোন সিদ্ধান্ত নয় (আওয়ামীলীগ সরকারের তথ্য নীতিমালার মত!)। অর্থাৎ এই প্রস্তাবের অস্তিত্ব তিনি নিজেও মেনে নিলেন।

২। অনেকের মত সে নিজেও মসজিদের ভেতরে মহানবী (দঃ) এর পবিত্র রওজা মুবারককে মানতে নারাজ। তার দাবি (অনেক সালাফির মত), ৮৮ হিজরিতে ঊমাইয়া শাসনামলে রওজা মুবারকগুলো মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমি নিজেও ওখানে গিয়ে মসজিদ এবং রওজা মুবারকের অবস্থান দেখেছি। রওজা মুবারকের চারপাশে মসজিদ। এরকম না করে কোন উপায় ছিলোনা। কারণ ওখানে ৫ থেকে ৬ লক্ষ নামাজি জামাতে নামাজ আদায় করেন। কাজেই তাদের সমালোচনা কেবল মাত্র নবী বিদ্বেষ থেকেই। আর মসজিদ এক পাশে সরিয়ে নেবার কোন উপায়ও নেই। তাহলে আর তা মসজিদে নববই (দঃ) হবে না।

৩। সালাফীদের গুরু আলবানি ও একই দাবি করে তাঁর লিখিত প্রস্তাবে। যা ইয়াসির সাহেবের মতে বৃহত্তর সালাফীদের মতামত নয়। অর্থাৎ অল্পকিছু গোঁড়া এই মতয়ামতকে সমর্থন করে।

কাজেই না জেনে আমাদেরকে উড়ো খবরে কান দেবার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওহাবী নজদি সালাফীদের মতে কবরকে সামনে নিয়ে নামাজ আদায় করলেই শিরক হয়। অথচ তারা নবীজি (দঃ) এর একটি সহীহ হাদিস জেনেও না জানার ভান করে। সেটি হল মিনার কাছে মসজিদে খাওফের নিচে ৭০ জন নবী (আঃ) এর কবর রয়েছে। সে মসজিদে নামাজ পড়লে কি শিরক হবে? এসব মতবাদ মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। মুসলমান জিকির করে আল্লাহ আল্লাহ আর ওহাবীরা জিকির করে শিরক বিদাত শিরক বিদাত।

হযরত ইবনে উমর (রা:) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর হাদীস, যিনি বলেন: “মসজিদে আল-খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা (এক সাথে) বিদ্যমান।” ইমাম আল-হায়তামী (রহ:) বলেন যে এটি আল-বাযযার বর্ণনা করেন এবং ”এর সমস্ত রাবী (বর্ণনাকারী)-ই আস্থাভাজন”। মানে এই হাদীস সহীহ। ইমাম আল-হায়তামী (রহ:) নিজ ‘মজমাউয্ যাওয়াইদ’ পুস্তকের ৩য় খণ্ডে ‘বাবু ফী মসজিদিল্ খায়ফ’ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ #৫৭৬৯ নং হাদীসটি উদ্ধৃত করেন, যা’তে বিবৃত হয়: “মসজিদে খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান।”

হুকুম: শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এ প্রসঙ্গে বলেন, “এই হাদীসের সনদ সহীহ।” [মোখতাসারুল বাযযার, ১:৪৭৬]

আমাদের করণীয়ঃ
===========
* মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীবের সম্মান রক্ষা করবেন, সে আস্থা আমাদের রয়েছে। আর আমরা তাঁর কাছে ফরিয়াদ করি যেন তিনি ওই নজদি ওহাবীদের নিশ্চিহ্ন করে দেন। আমীন! এখন থেকে প্রতি নামাজের পর এই হবে আমাদের দুয়া।

* প্রতিটি মুসলিম দেশের সরকারকে অনুরোধ করা যাতে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে সৌদি এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কথা বলে এবং কূটনীতিক চাপ প্রয়োগ করে।

* দেশে দেশে ইসলামী এবং বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের মাধ্যমে সৌদি দূতাবাসের সামনে অবস্থান কর্মসূচী এবং বিক্ষোভ পালন করা।

* অনলাইনে এ আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে হবে।

ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী, সুইডেন।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *