আল্লামা শহীদ ফারুকীর হত্যাকারী সন্ত্রাসীরা রাসুল (ﷺ) এর যুগ থেকেই ছিল
ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী
বর্তমান যুগে একদল লোক নিজেদেরকে সহীহ হাদিসের অনুসারী বলে দাবী করে এবং কথায় কথায় প্রশ্ন করে, এটা কি রাসূল ﷺ-এঁর আমলে ছিল? সাহাবারা কি তা করেছেন? তাবেঈন বা তাবে তাবেঈনগণ কি তা করেছেন? ইত্যাদি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম রাসূল ﷺ-এঁর যুগ থেকে শুরু করে অদ্যাবদি চলমান রয়েছেন। অর্থাৎ তাদের সন্ত্রাসী এবং মুনাফিকী রাসূল ﷺ-এঁর যুগ থেকেই শুরু। তাদের খবিসী আর বদ আক্বীদার কারণে রাসুল ﷺ পর্যন্ত তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। রাসূল ﷺ-এঁর সাথে তারা যেমন বেয়াদবি করতো, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনগণসহ যুগে যুগে তারা আল্লাহর ওলিদের শানে বেয়াদবী ও নাফরমানি করতো। তাদের কর্মকা- ছিল সত্যের বিপক্ষে আর ফেতনা ফ্যাসাদ লাগিয়ে রাখাই ছিল তাদের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য। যেমন আল্লাহ পাক তাদের উদ্দেশ্যে সূরা বাকারার ১১ ও ১২ নং আয়াতে বলেনঃ “আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি। মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।”
ইতিহাস এদেরকে চিনে খারেজী হিসেবে। এদের বৈশিষ্ট্য হলো কবীরা গোনাহকে শিরক মনে করা এবং কাফির ও মুশরিকদের জন্য নাজিলকৃত আয়াতসমূহকে মুসলমানদের জন্য প্রয়োগ করা। রাসুল ﷺ-কে আমাদের মতই মানুষ এবং তাঁরও ভুল হতে পারে মনে করা। সাহাবাদেরকে পথভ্রষ্ট মনে করা ইত্যাদি। বর্তমানে এ দলগুলো একমাত্র নিজেদেরকে সঠিক মনে করে এবং বাকি সবাইকে বিদ‘আতি ও মুশরিক মনে করে। ইসলামের নামে জিহাদের অপব্যাখ্যা করে সন্ত্রাসবাদ এবং জংগীবাদ প্রচার করে। সাহাবা, আউলিয়াদের শানে ও মানে আপত্তিকর কথা বলে এবং বেয়াদবি করে থাকে। সূরা কাহফের ১১০ নং আয়াত না বুঝে তারা কথায় কথায় দলীল দেয় যে রাসুল ﷺ আমাদের মতই মানুষ। নাউজুবিল্লাহ! কথায় কথায় মুসলমানদেরকে মুশরিক বলে অভিহিত করাও তাদের একটি বৈশিষ্ট্য। তারা আল্লাহর ফয়সালা ব্যতীত অন্য কারো ফায়সালা যেমন রাসুল ﷺ বা সাহাবাদের ফায়সালা মানতে অস্বীকৃতি জানাতো। আলোচনার পরিবর্তে গুপ্ত হত্যা তাদের কাছে বেশী প্রিয়। যেমন খারেজীদের গোপন সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করে।
রাসূল ﷺ-এঁর সাথে বেয়াদবীঃ যুল-খুওয়ায়সিরা
নাম আবদুল্লাহ্ ইবনু যুল-খুওয়ায়সিরা। খুব সুন্দর নাম। মুখ ভর্তি ঘন দাড়ি, ফোলা ও পুরো গাল, চোখ দুটো গর্তে ঢোকা। উচু কপাল, তবে নেড়া মাথা। তার নামায দেখে সাহাবাদেরও হিংসে হতো। তার কুরআন তেলাওয়াত শুনলে অবাক হতো না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল। এতো সুন্দর মানুষ। অথচ বেয়াদবিতে সেরা। তাও স্বয়ং রাসূল ﷺ-এঁর সাথে। গোত্রের দিক থেকে তামিমী। মানে রাসূল ﷺ-এঁর মতো বংশ পরম্পরায় তার বংশও হযরত ইসমাইল (আ) এর সাথে গিয়ে মিলেছে। নিচের দিকে তার বংশেই জন্ম নিয়েছে সহীহ বুখারি এবং সহীহ মুসলিমে উল্লেখিত শয়তানের শিং নামে খ্যাত একজন শায়খ। বিন আব্দুল ওহাব। তারই মেয়ের দিকের সন্তানাদিই এখন আলে সৌদ, মানে বর্তমানে সৌদি রাজবংশ।
আব্দুল্লাহ বিন যুল-খুওয়ায়সিরা তামিমী ছিল রাসূলের একজন সাহাবী। ঠিক কখন ইসলাম গ্রহণ করেছে তা সঠিক জানা যায় না। তবে খুব সম্ভবত মক্কা বিজয়ের কিছু পূর্বে। মক্কা বিজয়ের পরপর মুসলমানগণ তায়েফ অভিযানে বের হন। এ সময় হুনায়নের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যে যুদ্ধের কথা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল হুনায়ন এবং আহযাব এ দুটি যুদ্ধের কথা কুরআনে নামসহ উল্লেখ রয়েছে। এ যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে জিরানাহ্ নামক স্থানে মুসলমানগণ অবস্থান করেন। ঠিক একই সময়ে মওলা আলী কারামুল্লাহু ওয়াজহুর নেত্রৃত্বে ৩০০ লোককে পাঠানো হয়েছিল ইয়েমেনে। সেখান থেকে উদ্ধার করা কিছু যুদ্ধলব্ধ সম্পদ রাসূল ﷺ-এর কাছে পাঠানো হয়েছিল হযরত বিলাল (রা) এর মাধ্যমে। এ সম্পদের মধ্যে ছিল কিছু সোনা এবং রৌপ্য। রাসূল ﷺ এ সম্পদ লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিচ্ছিলেন। বন্টনের সময় তিনি মক্কাও আশেপাশের লোকদের কিছু বেশি দিলেন। তা দেখে মদিনার আনসার সাহাবাগণ একটু মনঃক্ষুন্ন হলেন। তাদের উদ্দশ্যে রাসূল ﷺ এক ভাষণ দেন এবং খুব আবেগাপ্লুত কণ্ঠে এর যুক্তিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “হিজরতের কারণে আমি তোমাদের কাছে অবস্থান নিয়েছি। আল্লাহ পাক জানেন তোমরা কি অবস্থায় ছিলে। আল্লাহ পাকের দয়ায় এবং আমার কারণে তোমরা সত্য পথের সন্ধান পেয়েছো। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কারণেই সম্পদ এবং হেদায়েত লাভ করেছো। এ লোকগুলো একটু সম্পদ বেশিই পেয়েছে। কিন্তু তোমরা পেয়েছো আল্লাহর রাসূলকে। তিনি তোমাদের সাথেই মদিনা ফিরে যাবেন। কিন্তু এরা এখানেই থেকে যাবে।” এ কথা বলার পর উপস্থিত আনসারগণের ভুল ভাঙে। কিন্তু একজন লোক দাঁড়িয়ে বলে উঠেঃ “মুহাম্মদ ইনসাফ করুন!” নাউজুবিল্লাহ! এ লোকটিই ছিল যুল-খুওয়ায়সিরা তামিমী। নিচের হাদিসটিতে এই তামিমীর কথা ফুটে উঠেছে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ কোন কিছু বন্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে আব্দুল্লাহ বিন যুল-খুওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, ’হে আল্লাহর রাসূল! ইনসাফ করুন!’ তিনি বললেন, ’আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তাহলে আর কে ইনসাফ করবে?’ ওমর বিন খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ’আমাকে অনুমতি দিন, তার গর্দান উড়িয়ে দেই’। তিনি ﷺ বললেন, ’তাকে ছেড়ে দাও! তার সাথীবৃন্দ রয়েছে। যাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের রোযার তুলনায় তোমরা তোমাদের রোযাকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এমন ভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরে লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে তাকালেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন্য হবে মহিলাদের স্তনের মত। অথবা বলেছেন, বাড়তি গোস্তের টুকরার মত। এরা লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় আবির্ভাব হবে।’ আবূ সাঈদ রাঃ বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবীজী দঃ থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাদের হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, তাদের সম্পর্কেই নাজিল হয়েছে – “ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সাদকা সম্পর্কে আপনাকে দোষারোপ করে।” [৯:৫৮] {সহীহ বুখারী – হাদীস নং-২৩২৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৬। সহীহ মুসলিম – (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৩২৪, ইসলামীক সেন্টার ২৩২৫)}
বলা বাহুল্য, ৬১ হিজরিতে কারবালায় ঈমান হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং আহলে বায়েতসহ ৭২ জন মুসলমানকে যারা নির্মমভাবে শহীদ করেছিল তাদের মধ্যে এই তামিমী গোত্রও ছিল। আরবের নজদ অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী ওহাবী মতবাদের প্রবর্তক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবও সেই তামিম গোত্রের অন্তর্গত। যাকে বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে শয়তানের শিং হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যুল-খুওয়ায়সিরা তামিমী এবং তার অধিনস্তদের ব্যাপারে বুখারি এবং মুসলিমসহ অন্যান্য হাদিসগ্রন্থে অসংখ্য হাদিস এসেছে। বুখারি শরীফের “আল্লাহদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীদেরকে তাওবাহর প্রতি আহবান ও তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা” অধ্যায়ে এবং মুসলিম শরীফে “যাকাত” অধ্যায়ে বেশ কিছু হাদিস পাবেন। সুনানে আবু দাউদেও কয়েকটি হাদিস রয়েছে। হযরত উমর (রা) তাকে হত্যা করতে চাইলে রাসূল অনুমতি না দিয়ে বলেন, এরূপ করলে মানুষ বলবে মুহাম্মদ ﷺ তাঁর সাথীদের হত্যা করেছে। বলা বাহুল্য, এ কারণেই সৌদিপন্থী ওহাবীরা কারবালার যুদ্ধের জন্য ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দোষী মনে করে এবং এজিদকে নির্দোষ মনে করে।
উপরোক্ত হাদিসের আগের ও পরের সবগুলো হাদিস পর্যালোচনা করলে খারেজীদের যেসব চিহ্ন বা নমুনা বের হয় আসে তা হলোঃ এরা মাথা নেড়া করবে, এদের মুখ ভর্তি দাড়ি থাকবে, এদের শরীর বেশ স্থূল, গায়ে পশম, গাল ফোলা। এদের আবির্ভাব হবে মদিনা শরীফের ঠিক পূর্ব দিক থেকে। এরা হবে অল্প বয়সী এবং অল্প শিক্ষিত বা মূর্খ। তবে এদের কথা হবে খুব মিষ্ট, নামাজ ও রোজা হবে খুব চমৎকার যা দেখে অনেক পরহেজগারও এদেরকে বুজুর্গ বলে মনে করবে। এদের কুরআন তেলাওয়াত হবে খুব মধুর। তবে এসব কিছুই এদেরকে সত্যিকারের মুসলমান বানাবে বা। কেননা, অন্য একটি হাদিসে এসেছে এরা মূর্তিপূজারিদের ছেড়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করবে। এরা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে যে, কোনও কালেই এরা আর ইসলামে ফিরে আসবে না। এরা মুশরিক ও কাফেরদের জন্য অবতীর্ণ আয়াত মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে মুসলমানদের হত্যা করবে। কোনও কোনও হাদিসে তার বংশধর এবং কোনও কোনও হাদিসে তার সাথী উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা বর্তমান বিশ্বে যাদেরকে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ ছড়াতে দেখি তাদের সাথে হাদিসে বর্ণিত নমুনাসমূহ মিলে যায়।
খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে এদের সন্ত্রাসী কর্মকা-
হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সময় থেকেই এ দলটি বিভিন্ন উছিলায় জাকাত দানে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। কোথাও আবার তারা ভ- নবুয়তের দাবি করে বসে। হযরত আবু বকর রাঃ খুব শক্ত হাতে এদের দমন করেন। হযরত উমর রাঃ এর সময় এ দলটি তেমন কোন সুযোগ করে উঠতে পারেনি তাঁর কঠোরতার কারণে। কিন্তু হযরত উসমান রাঃ এর কোমলতার সুযোগ নিয়ে এই দলটি তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- এতই বাড়াতে থাকে যে শেষ পর্যন্ত তারা খলিফাকে শহীদ করে ছাড়ে। আর মুসলমানদের মধ্যে এমন ফেতনা সৃষ্টি করে যার ফলে মুসলিম সমাজ চিরতরে দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যায়। শিয়া ও সুন্নী।
বর্তমান যুগের খারেজী
উপরে যেমন উল্লেখ করেছি, অসংখ্য হাদিসে খারিজের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তাদের স্বভাব এবং কর্মকা-ের কথা আলোচিত হয়েছে। তারা কোন স্থান থেকে কীভাবে আবির্ভূত হবে তাও কিছু কিছু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তাদের জ্ঞান, তাদের বাহ্যিক তাক্বওয়া এবং মিষ্টি স্বভাব সবিস্তারে হাদিসে আলোচিত হয়েছে। তাদের মূল কারা হবে এবং তারা কোন স্থান থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে তাও বিস্তারিত এবং সুস্পষ্ট ভাবে অনেক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। সমস্ত হাদিস আমি এখানে উল্লেখ করে আমার লেখা দীর্ঘায়িত করতে চাই না। ওইসব হাদিসের কিছু উপরে উল্লেখ করেছি। হাদিসে বর্ণিত খারেজীদের স্বভাব এবং পরিচয়ের সাথে হুবহু মিলে যায় এমন দলগুলোই হলো বর্তমান বিশ্বের ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাসে লিপ্ত রয়েছে তারা। আরবে এরা নব্য সালাফী, ওহাবী, লা-মাজহাবী। ভারতবর্ষে এরা আহলে হাদিস, জামাতী। কোথাও এরা আল-কায়েদা, আল-শাবাব, বোকো হারাম, তালিবান, তাকফিরি গোষ্ঠী। আর এখন এদের নতুন নাম হল ইসলামী খেলাফত তথা আইএস। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর শিকড় এক জায়গায়। বাংলাদেশে তাদের বিভিন্ন অংগসংগঠন রয়েছে যেমন জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাহিনী ইত্যাদি।
তাদের ব্যাপারে নবীজি ﷺ এর ভবিষ্যৎবাণী/তাদের চেনার উপায়ঃ তারা অল্প বয়স্ক এবং নির্বোধ হবে
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে যারা হবে অল্পবয়স্ক যুবক এবং নির্বোধ। তারা সৃষ্টির সবচাইতে শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে। অথচ ঈমান তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তাদেরকে যেখানেই তোমরা পাবে হত্যা করবে। কেননা তাদেরকে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে প্রতিদান রয়েছে। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-২৩২৮}
হযরত আবূ সালামা ও আতা বিন ইয়াসার থেকে বর্ণিত। তারা আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ এর কাছে এলেন। তারা তাকে “হারুরিয়্যাহ” সম্প্রদায় সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন যে, আপনি কি নবীজী ﷺ থেকে এদের সম্পর্কে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হারূরিয়্যাহ কি তা আমি জানি না। তবে নবীজী ﷺ কে বলতে শুনেছি তারা এ উম্মতের মধ্যে বের হবে। তার থেকে সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে কথাটি বলেননি। যাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পড়বে বটে কিন্তু তা তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তীর নিক্ষেপকারী তীরের প্রতি, তার অগ্রভাগের প্রতি, তীরের মুখে বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করে, তীরের ছিলার বেলায়ও সন্দেহ হয় যে, তাতে কিছু রক্ত লেগে রইল কি না? {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩২২}
পূর্বাঞ্চল এবং মাথা মুণ্ডন
আরও পরিষ্কার করে নবীজি ﷺ তাদের উৎপত্তির স্থল মদিনার মসজিদে নববীর মিম্বর থেকে পূর্ব দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। মদিনা থেকে সোজা পূর্ব দিকে সৌদি আরবের রিয়াদ যার পূর্ব নাম নজদ। এখান থেকেই শয়তানের শিং বের হবে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। আর অনেক ইসলামিক স্কলার সেই শয়তানের শিং হিসেবে বিন আব্দুল ওহাবকে চিহ্নিত করেছেন। মদিনা থেকে পূর্ব দিক ভারতবর্ষও রয়েছে। এখান থেকেও তাদের কিছু উপদল বের হবে বলে ইংগিত রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন এরা মাথা মু-ন করবে। আমরা নব্য খারেজীদের মাঝে এ মাথা মু-ন করার রীতিও দেখতে পাই।
অন্য একটি হাদিস আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। নবীজী ﷺ বলেছেন, পূর্বাঞ্চল থেকে একদল লোকের অভ্যুদয় ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, তবে তাদের এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত ধনুকের ছিলায় না আসে। বলা হল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেন, তাদের আলামত হল মাথা মু-ন। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৭১২৩}
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী ও আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে আরো একটি হাদিস বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, অচিরেই আমার উম্মতের মাঝে মতভেদ হবে। যাদের মাঝে একদলের ভাষা হবে মিষ্ট। কিন্তু কাজ হবে জঘন্য। তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত ধনুকের ছিলায় না আসে। যারা তাদের হত্যা করবে তাদের সাধুবাদ। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করবে, কিন্তু আল্লাহর কিতাবের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। যারা তাদের হত্যা করবে তারা তাদের থেকে উত্তম হবে। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাদের নিদর্শন কী? তিনি বললেন, ন্যাড়া মাথা। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৭}
তারা নিজেরাই হবে প্রকৃত শিরককারী
ইবনে ইয়ালা (রা) হযরত হুজাইফা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুল ﷺ বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্য থেকে এমন মানুষের আশংকা করি, যে এত বেশি বেশি কুরআন পড়বে যে তার চেহারা উজ্জ্বল হবে আর ইসলামকে সে নিজের করে নিবে। আল্লাহ যতক্ষন চান এরকম থাকবে। তারপর আল্লাহ তার থেকে তা উঠিয়ে নেবেন যখন সে কুরআনকে পাশে রেখে দেবে আর তলোয়ার নিয়ে তার প্রতিবেশীকে শিরকের অভিযোগে আক্রমণ করতে যাবে।’ নবী ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হল তাদের দুজনের মধ্যে কে শিরকের দোষে দুষ্ট? তিনি বললেন, ‘অভিযোগকারী’।
আলবানি এই হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, তাহকিক নাসির আলবানি, ভলিউম ০০১, হাদিস নং ৮১ [সিলসিলাত আল-আহাদিস আল-সাহিহাহ আলবানি ভলিউম ০০৭ এ, পৃষ্ঠা ৬০৫ হাদিস নং ৩২০১] সহীহ ইবনে হিব্বান, ১ খ-, ২৮২ পৃষ্ঠা। উপরের সহীহ হাদিসটির আলোকে জামাতি, লা-মাজহাবী, আহলে হাদিস, ওহাবীরা নিজেরাই শিরক আর বিদাতে পতিত। তারা তাদের মতে বাংলাদেশে যারাই পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে ’আমার সোনার বাংলা গাইবে’, তারাই মুশরিক, যারাই শহীদ মিনারে ফুল দেবে, তারাই মুশরিক। যারা একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর উৎযাপন করবে তারাই শিরক করবে। বাংলাদেশে এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা নিজ দেশের ঐতিহ্য আর সম্মানে উপরের কাজগুলো করে না। অন্য আরেকটি হাদিস অনুসারে কেউ অন্য একজনকে কাফের বা মুশরিক বললে, সে ব্যক্তি কাফের বা মুশরিক না হলে সে নিজেই কাফের বা মুশরিক হয়ে যাবে।
হাদিসে বর্ণিত খারেজী সম্প্রদায়ের সাথে বর্তমান কালের ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ ও জংগীবাদে লিপ্তদের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তারা তুলনামূলক অল্পবয়স্ক এবং নির্বোধ। তাদের ধর্মীয় জ্ঞান কিছু বাংলা কিতাবেই সীমাবদ্ধ। কাজেই তাদের সুন্দর আর মিষ্টি কথা থেকে সাবধান। মিষ্টি কথার আড়ালে রয়েছে ঈমানহরণের উপকরণ। সাধারণ মুসলমানগণ না বুঝে খুব সহজেই তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসে তারা জড়িয়ে পড়ছে। তারা মনে করছে তারা ইসলামের মহান সেবা করছে। তাদের মগজ এমনভাবেই ধোলাই করা হয় যে তারা সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারেনা। নিজেকে সঁপে দেয় নিকৃষ্টতম গহ্বরে। চেয়ে দেখুন এই তাকফিরি গোষ্ঠী পবিত্র কালেমাকে পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারা কেবল তাউহিদে বিশ্বাস করে। রেসালাত তাদের কাছে কিছুই না।
আসুন তাদেরকে প্রতিহত করি এবং তাদের মিথ্যা প্রবঞ্চনা থেকে নিজেদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল রক্ষা করি।