নবীজী ﷺ আপাদমস্তক নুরঃ

দেওবন্দি মউলভি জুবায়ের আহমেদের বয়ানে তার প্রমাণ! অথচ তারা তা মানেন না!
==============
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
بسم الله الرحمن الرحيم
 اللهم صلى على سيدنا محمد وعلى آل سيدنا محمد وبارك وسلم
দেওবন্দি আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব নবীজী কে আপাদমস্তক নূর মানলেও বর্তমান দেওবন্দি আলেমগণ তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। শুধু তাই নয়, তাদের দৃষ্টিতে আমাদের নবী মাটির তৈরি এবং তাদের মতই একজন মানুষ। নাউজুবিল্লাহ! অথচ এই দেওবন্দি কউমি আলেমগণ বয়ানের সময় ঠিকই সুর করে আমাদের নবী এর গুণাবলী এবং এমন সব মুজিযার কথা বলেন যার দ্বারা প্রমান হয় নবী নূরের তৈরি, তিনি ইলমে গায়েব প্রাপ্ত এবং তিনি হাজির ও নাযির। তাই আজকে তাদের আলেমের উদ্ধৃতি থেকেই প্রমাণ দেব নবীজী আপাদমস্তক নূরের, মাটির নন। ইনশা আল্লাহ
গতকাল ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ইসলামী কোন অনুষ্ঠান খুঁজছিলাম। বাংলাদেশে তখনও রমজান শুরু হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেলেই রোজা সংক্রান্ত বা ইসলামী কোন অনুষ্ঠান ছিল না। ইউটিউবে একটি বাংলা ওয়াজে চোখ আটকে গেল। দেওবন্দি আলেম মউলভি জুবায়ের আহমাদ আনসারীর “ঈদে মাআলাদুন্নাবী” এবং “সীরাতুন্নাবী” বিষয়ক একটি বয়ান। মনে কৌতূহল জাগল, দেখি উনি মীলাদুন্নাবী সম্পর্কে কি বলেন! ১ ঘণ্টা ১৩ মিনিটের বয়ানের পুরোটা মনোযোগ দিয়ে শুনে বুঝতে পারলাম তিনিও মীলাদুন্নাবী মানেন তবে তা পালন করতে আপত্তি দেখালেন। তার দৃষ্টিতে মীলাদুন্নাবী আলোচনার বিষয়, পালনের বিষয় নয়। বরং সীরাতুন্নাবী আলোচনা এবং পালনের বিষয়। নবীজী এর বেলাদাতের দিবসে সীরাতুন্নাবী পালন করার কথা যতই যুক্তি দিয়ে বলেন না কেন, তিনি নিজেও বিশ্বাস করেন কিনা সন্দেহ জাগে।
 সীরাতুন্নাবী অর্থাৎ নবীজী এর জীবন চরিত আলোচনা করতে গিয়ে তিনি নবীজী এর বেশ কিছু মু’জিজার কথা উল্লেখ করলেন। যেগুলো আসলে নবীজী এর দেহ মুবারক “নূর” হবার প্রমাণ বহন করে। নিচে একে একে তা তুলে ধরা হল। নিচে ভিডিওটির লিংক দেয়া হল। কারো সন্দেহ হলে নিচের লিংকে গিয়ে দেখে নিতে পারেন। https://www.youtube.com/watch?v=x9tfHKsC_eE
নবীজী মাতৃগর্ভেই নূর হিসেবে আগমন করেন (৪৯:২০)
—————-
উক্ত ভিডিওর ৪৯:২০ মি থেকে তিনি বলছেন, নবীজী মাতৃগর্ভে আসার পর মা আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা কোন ওজন অনুভব করেন নি। অন্যান্য মহিলারদের যেরকম সন্তান পেটে আসার পর বমি বমি ভাব হয়, শরীরের আকৃতি এবং ওজন বাড়তে থাকে, মহানবী তাঁর মায়ের গর্ভে আসার পর মা আমেনা রাঃ এর কোন কিছুই অনুভব করেন নি। মউলভি জুবায়ের আনসারী একে নবীজী এর বিশেষত্ব হিসেবে বর্ণনা করেন। কিন্তু নূর হিসেবে মানতে নারাজ। অথচ “দালায়েলুন নাবুয়্যাত”, “মুজিজাতুন নাবী”, আল্লামা ইবনে কাসীর কর্তৃক রচিত “আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া” কিতাবসহ অসংখ্য তাফসীর গ্রন্থে এর কারণ স্বরূপ নবীজী এর দেহ মুবারক নূর হওয়াকে সাব্যস্ত করেছেন। কারণ নূরের কোন ওজন হয়না। আর মহানবী ছিলেন আপাদমস্তক নূর। সে কারণে তাঁর মাতা গর্ভকালীন সময়ে কোন ওজন অনুভব করেন নি।
নবীজী এর দেহ মুবারকের আলোতে ঘর আলোকিত (৫৬:১৫)
————–
রাত এবং দিনের আর্জি অনুযায়ী মহানবী কে এমন এক সময়ে এই দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল, তখন না রাত, না দিন। অর্থাৎ সোবহে সাদেক। তখন বাইরে সামান্য ফর্সা হয়ে এলেও ঘরের ভেতরে অন্ধকার ছিল। নবীজী   এর ভূমিষ্ঠ হবার পর তাঁর ছোট্ট দেহ মুবারকের জ্যোতিতে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। (ভিডিওতে দেখুন ৫৬:১৫ মি) বেলাদাত লাভের পরপরই বিশ্বনবী কে সমগ্র বিশ্বে ভ্রমণ করিয়ে বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের রহমতকে এক নজর দেখার সমস্ত মাখলুকাতের আকাংখা পূরণ করা হয়েছিল। আর এ কারণে ওই সময়ে ঘরের ভেতর আবার অন্ধকার নেমে আসে। সোবহানাল্লাহ! মা আমেনার দাসী উম্মে আয়মানের কোল থেকে মহানবী কে ফেরেশতাদের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হলে, ঘর পুনরায় অন্ধকার হয়ে যায়। তিনি উল্লেখ করলেন, এটি রাসুল এর মু’জিজা। মু’জিজা তো অবশ্যই। তবে তাঁর শরীর মুবারক আপাদমস্তক নূর হবার কারণে অন্ধকার ঘর আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। এ কথা তিনি বয়ান করলেও মানতে পারছেন না।
নবীজী এর চেহারা মুবারকের আলোতে ক্বাবার দেয়াল আলোকিত (২২:৪০)
———–
বয়ানের একস্থানে তিনি উল্লেখ করেন, মহানবী এর চেহারা মুবারকের আলোতে পবিত্র ক্বাবার দেয়াল আলোকিত হয়ে উঠত। মানুষ তা দেখে বিশ্বাস করতে পারতো না যে এরকম চেহেরার লোক পাগল হতে পারে। মক্কার কুরাইশ কাফেরেরা বিশেষ করে আবু জাহেল নবীজী কে পাগল বলে প্রচার করত। কিন্তু তাঁর পবিত্র চেহেরা মুবারকের নূর এতই উজ্জ্বল ছিল যে তাঁর চেহারা মুবারকের আলো ছিটকে পবিত্র ক্বাবার দেয়ালে পরে ক্বাবার দেয়াল জ্বলজ্বল করে উঠত। মানুষের চেহারা যতই উজ্জ্বল আর ফর্সা হোক না কেন, কারো চেহারার উজ্জ্বলতায় চারপাশ আলোকিত হবার কোন নজীর কোথাও নেই। এই উজ্জ্বলতাই হল নূরে মুহাম্মাদী । অভাগা মানুষজন মানুক আর নাই মানুক।
নবীজী এর দেহ মুবারকের ছায়া ছিল না (২২:০০)
————-
তিনি তার বয়ানে স্বীকার করলেন যে নবীজী এর দেহ মুবারকের কোন ছায়া ছিল না। তবে মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আবার প্রমাণের চেষ্টা করলেন যে সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) নবীজী এর ছায়া মুবারক না দেখলেও মা আয়েশা নাকি তা দেখতে পেয়েছেন। অর্থাৎ নবীজী ইশার নামাজ শেষে ঘরে প্রবেশ করলে মা আয়েশা ছায়া দেখে টের পেতেন যে নবী   ঘরে আসছেন। এটি উনার বোঝার ভুল। একজন মানুষ ঘরে প্রবেশ করলে একজন অন্ধ মানুষও টের পায় কেউ একজন ঘরে প্রবেশ করছে। এর জন্য ছায়া দেখার প্রয়োজন হয় না। তবে উনি এর পরপরই আবার মা আয়েশার (রাঃ) কথা উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেন, ইশার নামাজের পর আলোহীন ঘরে নবীজী এর পবিত্র দেহ মুবারকের আলোতে তিনি সূচের ভেতর সুতা ঢোকাতে পারতেন। সোবহান আল্লাহ! তার দুটি বক্তব্য পরস্পর বিরোধী। যার দেহ মুবারকের আলোতে অন্ধকার ঘর আলোকিত হয়ে উঠে, তাঁর ছায়া পরে কিভাবে? এটিও নাকি কেবল মু’জিজা। সাহাবা (রাঃ) নবীজী এর ছায়া মুবারক দেখেন নি। এর কারণ তিনি ব্যাখ্যা করলেন এভাবেঃ নবী হিসেবে তাঁর ছায়া মুবারকে সাহাবাগণ যাতে পা দিয়ে অসম্মান করতে না পারেন সেজন্য আল্লাহ পাক এ কুদরতের অবতারণা করেছেন। অথচ মা আয়েশা (রাঃ) বলেন,
“আকাশের একটা সূর্য আছে, আর আমারও একটা সূর্য আছে। আকাশের সূর্যের চেয়ে আমার সূর্যের দাম কোটি কোটি গুণ বেশি। আকাশের সূর্য উদিত হয় ফজরের নামাজের পরে, আর আমি আয়েশার সূর্য উদয় হয় এশার নামাজের পরে।” আল্লাহু আকবর!
আল্লাহ পাক কোটি কোটি নক্ষত্র তৈরি করে রেখেছেন। সাথে সাথে আবার অসংখ্য গ্রহও তৈরি করেছেন। যেগুলোর নিজস্ব কোন আলো নেই। নক্ষত্রের আলোতে এগুলো আলোকিত হয়। যার নিজস্ব আলো নেই, অন্যের আলো না পেলে সে নিজে নিজে আলোকিত হতে পারে না। অথচ মউলভি জুবায়ের আনসারীর নিজের বর্ণনা মতে মহানবী রাতে অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করলে ঘর এতই আলোকিত হয়ে যেত যে সে আলোতে মা আয়েশা (রাঃ) সূচের মাথায় সুতা ঢুকাতে পারতেন। অন্য একটি হাদিসে এসেছে তিনি মহানবী এর দেহের আলোতে অন্ধকার রাতে তাঁর হারানো সুঁই খুজে পেয়েছিলেন। হাদিসটি নিম্ন্রুপঃ
হযরত আয়েশারা বলেন, “আমি রাত্রে বাতির আলোতে বসে নবী করিম এর কাপড় সেলাই করছিলাম এমন সময় বাতিটি (কোন কারণে) নিভে গেল এবং সুচটি হারিয়ে ফেললাম এরপর নবী করীম অন্ধকারে আমার ঘরে প্রবেশ করলেন তাঁর চেহারা মোবারকের নূরের জ্যোতিতে আমার অন্ধকার ঘর আলোময় হয়ে গেল এবং আমি ( আলোতেই) আমার হারানো সুইটি খুজে পেলাম (ইমাম ইবনে হায়তামী (রাঃ) এর আন-নে’মাতুল কোবরা আলার আলম গ্রন্থে ৪১ পৃষ্ঠা)। হাদিসটি সহীহ।

দেওবন্দি আলেমদের কাছে প্রশ্ন, আপনারা যে নবীজী এর নূর মানেন না, তাহলে এই আলো কিসের, যার দ্বারা অন্ধকার ঘর আলোকিত হয়ে উঠে? আল্লাহ পাক আমাদের ঈমান, আক্বীদা ও আমল বাতিলদের ওয়াসওয়াসা থেকে হেফাজতে রাখুক। আমীন! 

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *