সালাফি/ওহাবী/আহলে হাদিস/লা-মাজহাবী হলো ইসলামের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন করার ফের্কা
=======================================================
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী (https://www.facebook.com/DrMiaji)
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم
সালাফি/ওহাবী/আহলে হাদিস/লা-মাজহাবী বাতিল ফের্কার লোকেরা শিরক বিদাতের দোহাই দিয়ে সৌদি আরবে অবস্থিত ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সব স্মৃতি বিশেষ করে সাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনসহ জগৎবিখ্যাত ওলিদের কবর (মাজার ফার্সী শব্দ), নবী (দঃ) এর স্মৃতিধন্য মা খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাড়ি, সিদ্দিকে আকবর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর দোকানসহ অসংখ্য স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে। এখনো সৌদি আরবের বাইরে যেমন লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, আফগানিস্থানে বিদ্যমান অবশিষ্ট মাজার, মাজার সংলগ্ন মসজিদ, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ভেঙে চলেছে। বিগত কয়েক বছরে তেমনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বিলীন করা হয়েছে। সিরিয়ায় অবস্থিত মুসলিম জাহানের সিপাহসালার বিশিষ্ট সাহাবী হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাজার গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দামেস্কে উমাইয়্যা মসজিদকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। লিবিয়াতে হযরত জোহায়ের ইবনে কায়েস রাঃএর মাজার ধ্বংস করে তাঁর অক্ষত দেহ বের করে নবী (দঃ) এর এই বিশিষ্ট সাহাবীকে অপমানিত করা হয়েছে। সিরিয়াতে আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু, হাজার ইবনে আদী রাদিয়াল্লাহু আনহু, শ্রেষ্ঠতম তাবেঈ হযরত ওয়ায়েস কারানী রাঃ, ইমাম হুসেইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রাণপ্রিয় তনয়া সাকিনা রাঃ এর মাজারসহ এবং এর সংলগ্ন মসজিদ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়। ইরাকেও তারা এভাবে বেশ কিছু মাজার ধ্বংস করেছে। আর হুমকি দিচ্ছে গাউসুল আজম বড় পীর রাঃ এর মাজার উড়িয়ে দেবার।
কবর ভাঙার হাদিস এবং প্রাসঙ্গিক কথা
—————————————–
যে হাদিসের উপর আমল করতে গিয়ে ওই অজ্ঞ নাদান ওহাবীরা এভাবে ইসলামের ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে চলেছে দেখা যাক হাদিসটি পর্যালোচনা করলে কি দাঁড়ায়। হাদিসটি নিম্নরূপঃ
আবুল হাইয়াজ হাইয়ান ইবনে হুসাইন হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আলী ইবনে আবি তালিব (রা) আমাকে বললেন, “তোমাকে সে কাজের জন্য পাঠাবো না কি, যে কাজের জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? (তা হচ্ছে এই যে) কোন (প্রাণীর) ছবি বা মুর্তি দেখলেই তা নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দেবে।” [মুসলিমঃ ২১১৫]
অন্যান্য হাদিসের মত এমন গুরুত্বপূর্ণ এই হাদিসটি দ্বিতীয় কোন রাবি থেকে বর্ণিত হয়নি। সে জন্য এই হাদিসটি সঠিকভাবে বোঝা জরুরী। হযরত আলী (রা) সম্ভবত তাঁর শাসনামলে, ৩৫ থেকে ৪০ হিজরির মধ্যে তাঁর সেনাপতি আবুল হাইয়াজকে ওই আদেশ দিয়েছিলেন। কয়েকটি সহীহ হাদিস গ্রন্থে হাদিসটি এসেছে তবে এর বেশি আর কিছু জানা যায়না। হাদিসটির প্রেক্ষাপট, এর আনুষঙ্গিক ঘটনাবলী বা কার্যকারিতা, কিছুই না। হযরত আলী (রা) নবীজির (দঃ) পাক জবান থেকে তা শুনে ছিলেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। অন্য কেউ কি শুনেছিলেন? নাকি নবী (দঃ) হযরত আলী (রা) কে এককভাবে গোপনে বলেছিলেন? এমন একটি কথা একাকি বা গোপনে বলার কথা নয়। অন্য কোন রাবি বা সনদ থেকে এ ব্যাপারে কিছুই জানা যায় না। হযরত আলী (রা) কে ইয়েমেনের শাসনকর্তা নিয়োগের সময় কিংবা তায়েফের কাজী নিয়োগের সময় নবী (দঃ) এ আদেশ দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু এর কোন প্রমাণ নেই।
সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার হযরত ইবনে হাজার আস্কালানি রহঃ তার ভাষ্যে লিখেছেন “নবীগণ এবং তাঁদের অনুসারীদের কবর সমূহ বাদ দিয়ে মুশরিকদের কবর গুলো ধ্বংস করা হয়েছিলো । কেননা ওগুলো উপড়ে ফেলার কারণ ছিল তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মানহানী করত.” [ তথ্যসূত্র : ফতহুল বারি – ২খন্ড – ২৬ পৃষ্ঠা ]
হযরত আলী রাঃ এর উক্ত আদেশের পরে কি ঘটলো এ কথা উপরে উল্লেখিত হাদিসে নেই। উঁচু কবর মাটির সাথে মিশিয়ে দেবার নির্দেশের পর সেনাপতি কি গিয়ে সব কবর ভেঙে সমান করে দিয়েছিলেন? কোন হাদিসে বা ইতিহাসের কোন গ্রন্থে এমন কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়না। উপরোক্ত হাদিস মুশরিকদের কবর ভাঙার ব্যাপারে না হয়ে সব কবর ভাঙার ব্যাপারে হলে ওহাবীদের ভাঙার জন্য কবর থাকলো কি করে? [অন্য একটি পোস্টে আমি দলীল উপস্থাপন করব ইনশাল্লাহ যে কবর পাকা করা, কবরের উপর গম্বুজ এবং ছাদ নির্মাণ সাহাবাদের সুন্নাত।]
কবর ভাঙার পরিপূর্ণ হাদিসটি নিম্নরূপ
————————————–
বুখারি ও মুসলিমের যে হাদিসটি আমি নিচে উল্লেখ করবো সেই হাদিসের আদেশই কি এই আদেশ যা হযরত আলী (রা) তাঁর সেনাপতিকে বলেছিলেন? এর সম্ভাবনার কথা মুফাসসিরিনে কেরাম উল্লেখ করেছেন। তাহলে হাদিসটি উল্লেখ করি।
মূসাদ্দাদ (রহঃ) আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -মদিনায় আগমন করলেন এবং মদিনার উাচ্চ এলাকার এক মহল্লায় অবতরণ করলেন। যাকে আমর ইবনুূু আওফ গোত্রের মহল্লা বলা হয়। সেখানে তিনি চৌদ্দ রাত্রি অবস্হান করলেন। তারপর তিনি নাজ্জার গোত্রের নেতাদের খবর পাঠালেন। তারা তরবারি ঝূলিয়ে এলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন এখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পাচ্ছি। তিনি তাঁর সাওহারীর ওপর এবং আবূ বকর (রাঃ) তাঁর পিছনে আর নাজ্জার গোত্রের নেতারা তাঁর চতুর্দিকে ছিলেন। অবশেষে তিনি আবূ আইউবের গৃহ প্রাঙ্গণে অবতরণ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হতো, সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিতেন। বকরীর বাথানেও তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তারপর তাঁকে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন নাজ্জার গোত্রের প্রধানদের খবর দিলেন। তারা এলো। তিনি তাদের বললেন, হে বানূ নাজ্জার! তোমাদের এই বাগান খানি আমার নিকট বিক্রি কর। তারা বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা তার মূল্য একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাই। আনাস (রাঃ) বলেন, ঐ বাগনটিতে কি ছিল তা আমি বলছি- খেজুর গাছ, মুশরিকদের কবর ও পূরাতন ঘর দুয়ারের ভগ্নাবশেষ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদেশে খেজুর গাছ কেটে দেয়া হলো, কবর গুলো খুড়ে ফেলা হলো এবং ধ্বংসাবশেষ সমান করে দেয়া হল। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর কিবলার দিকে খেজুর গাছের সারিবদ্ধ থাম দেওয়া হল এবং দুই পাশে পাথর স্হাপন করা হল। নির্মাণ কাজের সময় সাহাবা-ই- কিরাম রাজায’ (উৎসাহোদ্দীপক শ্লোক) আবৃতি করছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে আবৃতি করছিলেন। তারা বলছিলেন হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণই প্রকৃত কল্যান। সূতরাং আনসার ও মুহাজিরদেরকে তুমি সাহায্য কর।
[সহীহ বুখারী ৪১৬ (তৌহিদ ফাঃ ৪২৮) এবং সহীহ মুসলিম ১০৬৩]
কবর ভেঙে সমান করার হাদিস মুসলমানের কবরের ক্ষেত্রে নয়, মুশরিকদের কবরের ক্ষেত্রে
—————————————————————————————
এবার দেখুন এই হাদিসের আদেশের সাথে হযরত আলী (রা) এর শ্রবণকৃত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশের কথা মিলে যাচ্ছে। এই আদেশের কথাই হযরত আলী (রা) তাঁর সেনাপতিকে অবহিত করেছিলেন। অন্য কোন সময়ের এরকম কোন আদেশের কথা কোথাও নেই। ফলে ইমামগণ, মুফাসসিরিনে কেরাম এবং মুজতাহিদগণ একমত ছিলেন যে হযরত আলী (রা) এর হাদিসটি সব উঁচু কবর দেখলেই তা সমান করার ব্যাপারে ছিল না। বরং তা ছিল কেবল আরবের মুশরিকদের কবর ভেঙে সমান করে আরবকে পবিত্র করার ক্ষেত্রে।
আর এজন্যই সাহাবাদের আমল থেকেই বিশিষ্ট জনদের কবর পাকা, উঁচু এবং কবরের উপর গম্বুজ তৈরি হয়েছিল। সৌদি ওহাবীরা সব কবর ও তাঁর উপর গম্বুজ ভেঙ্গে ফেললেও মসজিদে নববীতে অবস্থিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দুই সাথীর রওজা মুবারক এবং গম্বুজ এখনো ভাংতে পারেনি। যদিও তারা অনেক চেষ্টা করেছিল। তবে সালাফী মাজহাবের প্রধান আলবানি এবং বিলাল ফিলিপস বারবার মসজিদে নববী থেকে রাসুল (দঃ) এবং তাঁর দুই সাথীর রওজা মুবারক অন্যত্র সরিয়ে নেবার প্রস্তাব দিয়েছে। আল্লাহর লানত তাদের প্রতি। কারণ তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা এবং আল্লাহর ওলিদের দুশমন। আশা করি ব্যাপারটি এখন পরিষ্কার হয়েছে।
প্রায় ২ শ বছর পর বিভিন্ন সনদ হতে হতে ইমাম তিরমিজি, ইমাম মুসলিম এবং অন্যান্য ইমামদের নিকট হযরত আলী (রা) এর হাদিসটি পৌঁছে। অনেক হাদিসের ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন বর্ণনা দেখতে পাই। কোথাও উল্লেখ থাকে “এ ব্যাপারে অমুক রাবি অমুক শব্দটি অতিরিক্ত বলেছেন।” হতে পারে এ হাদিসটির বেলায় ও কোন রাবি কিছু শব্দ ভুলে গেছেন বা বলেন নি। সালাফি নামধারী ভণ্ডরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভুল হয় বলে বিশ্বাস করে (নাউজুবিল্লাহ!) আর হাদিস বর্ননাকারী যারা তাবেঈ, তাবে তাবেঈন কিংবা আরো নিচের পর্যায়ের ছিলেন তাঁদের ভুল হতে পারে না? আর না হলে এ হাদিসটি আরও বিস্তারিত প্রেক্ষাপট, আনুষঙ্গিক ঘটনা সহ বর্ণিত হত। উক্ত খণ্ডিত হাদিসকে আমলে নিয়ে ইসলামকে ঐতিহ্য বিহীন করতে উঠে পড়ে লেগেছে অজ্ঞ নাদান ওহাবী সালাফী গোষ্ঠী।
কবরপাকাকরাএবংকবরেরউপরগম্বুজসুন্নাতেসাহাবারাঃ
=========================================
আহলে হাদিস, ওহাবী, লা-মাজহাবী, সালাফী নামধারী ঈমানহরণকারী এবং ইসলামী ঐতিহ্য ধ্বংসকারীরা কথায় কথায় শিরক বিদাত শিরক বিয়াদত করে। আর মুখে মুখে বলে তারা সলফে সালহীন তথা সাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনদের পথ অনুস্মরণ করে। অথচ বিশিষ্ট জনদের কবর পাকা, কবরের উপর গম্বুজ কিংবা ছাদ নির্মান সাহাবাদের সুন্নাত। তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত ও সুন্নাত। কিন্তু তারা ৮ রাকাতের বেশী পড়ে না। আর বেশী পড়লে তাঁকে বিদাত বলে আখ্যায়িত করে থাকে।
তারা এখন দেশে দেশে মাজার ভাঙার প্রজেক্ট হাতে নিয়ে নামে বেনামে অনেক সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়োগ দিয়েছে। যাদের কাজ হলো মাজার দেখলেই ভেঙে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া। ফেসবুকেও তারা খুব সোচ্চার। প্রায়ই শুনি তাদের মাজার ভাঙার হুমকি। তাঁদের নাপাক হাত থেকে সাহাবা, ওলি বা ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কবর বা মাজার কিছুই রক্ষা পায় না। বোমা মেরে তা উড়িয়ে দেয়। তারা নাকি ইসলামকে বিদাতমুক্ত করছে। সৌদি ওহাবীদের দেখাদেখি আমাদের দেশের কিছু আমপারা পড়া হামবড়া লাফিয়ে উঠে আর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশে অবস্থিত আল্লাহর ওলিদের মাজার ধ্বংস করবে। নিচে প্রমাণ দেখুন কবর পাকা করা, কবুরের উপর গম্বুজ তৈরি করা এবং কবরের উপরে ছাদ নির্মান করা সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের সুন্নাত।
সৌদি আরবে ওহাবীরা দুই পর্যায়ে, ১৮০৬ ও ১৯২৫ সালে তিনটি কবর ব্যতীত (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আর তার দুই সাহাবী হযরত আবু বকর ও হযরত উমর (রাঃ) এর পবিত্র রওজা) অন্য সব সাহাবী ও ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের রওযা সমুহ বোল্ডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। এভাবে ইসলামের ইতিহাসের অনেক মূল্যবান নিদর্শন বিনষ্টের মাধ্যমে অপূরণীয় ক্ষতি সাধণ করা হয়েছে। তাদের এভাবে মাজার ভাঙার পিছনে যুক্তি ছিল হযরত আলীর (রা) একটি হাদিস যা ইবনে মাজাহ, তিরমিজি সহ কিছু হাদিস গ্রন্থে স্হান পেয়েছে। তা নিয়ে গত পোস্টে আলোচনা করেছি।
কবর পাকা ও এর উপরে গম্বুজের প্রমাণ
—————————————–
ইসলামিক ফউন্ডেশন বুখারী হাদিস নং ১৩০৮ আর তৌহিদ ফউন্ডেশন হাদিস নং ১৩৯০>
“হযরত সুফিয়ান তাম্মার (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওযা উটের কুজের ন্যায় উঁচু দেখেছেন।”
হযরত আলীর (রা) হাদিস যদি কাফের-মুশরিক-মুসলমান সবার উঁচু কবর মাটির সাথে মিশিয়ে দেবার কথা বলা হতো তাহলে নবীজি (সা) এর কবর উঁচু হতো না। মক্কা বিজয়ের পর নবীজি ল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা থেকে সব মুর্তি ভেঙ্গে কাবাকে পবিত্র করেছিলেন। মুর্তি ভাঙা আর মাজার ভাঙা এক জিনিস নয়। আরও কিছু সহীহ হাদিস থেকে আমরা দেখি কবর পাকা করা না জায়েজ কিনা।
উক্ত কিতাবদ্বয়ের পরবর্তী হাদিস> “হযরত উরওয়া (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে (৮৬ হিজরীতে) একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা মুবারকের এক দিকের দেয়াল ধসে গেলে সাহাবায়ে কেরাম তা মেরামত শুরু করেন। মেরামতের সময় হঠাত এক খানা পা দৃষ্টি গোচর হল। উপস্থিত লোকজন মনে করলেন হয়তোবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পা মুবারক হতে পারে। কিন্তু তথায় উপস্থিত হযরত উরওয়া রা (হযরত আয়েশা রা এর ভাগিনা) সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, না আল্লাহর কসম, এটা নবী করীম (সা) এর পা মুবারক নয়। এটা তো হযরত উমর (রা) এর পা।” এটা বুঝা গেল সাহাবা কেরামই সর্ব প্রথম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হযরত আবু বক্কর (রা) ও হযরত ঊমর (রা) এর রওযা পাকা করেছিলেন।
উল্লেখ্য যে, হযরত উমর (রা) উম্মুল মুমেনিন হযরত জয়নাব বিনতে জাহাশ (রা) এর মাজারের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন। উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) মক্কায়্য অবস্থিত তাঁর ভাই হযরত আব্দুর রাহমান (রা) এর কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেন। তায়েফে অবস্থিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর কবরের উপর বিশিষ্ট তাবীঈ মুহাম্মাদ বিন হানফিয়া (র) গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন। (দেখুন মুন্তাকা সরহে মুয়াত্তা ও বাদায়ে সানায়ে।
কবরকে নামাজের স্থান বানাতে নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু কবর জিয়ারত বা কবর ধ্বংস করতে বলা হয়নি। বরং কবর জিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে সে কথাও হাদিসে এসেছে। কবর বা মাজার ভাঙা এসব ওহাবী আকিদা আর তারাই সন্ত্রাসির মাধ্যমে ইসলামকে কলুসিত করে যাচ্ছে। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের কুমন্ত্রনা থেকে রক্ষা করুণ।