মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ’র ভবিষ্যৎবাণী [দুই]

– ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

শাহ নি’মাতুল্লাহ অলি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির (১৩৩০-১৪৩১) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং হুঁশিয়ারিমূলক ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুসলিম রেনেসাঁর কবি আল্লামা ইকবাল রহঃও মুসলমানদের প্রতি বারবার জোর দিয়েছেন তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে সামনে এগিয়ে যেতে। “জাভেদ নামায় তিনি একটি লাইন লিখেন এভাবেঃ در نظر رو در نظر رو در نظر.

শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ’র কবিতাটি বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত “কাসিদায়ে সাওগাত” বইতে। এই ছাড়াও মদিনা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ”মুসলিম পুনঃজাগরণ প্রসঙ্গ ইমাম মাহদি” বইতেও এটি ছাপা হয়। যারা উর্দু বুঝেন তারা এই কাসীদা নিয়ে ৮ পর্বের সিরিজ আলোচনা শুনতে পারেন, পাকিস্তানী বিশেষজ্ঞ জায়েদ হামিদের পর্যালোচনায়। তিনি খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা সহকারে শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ’র সকল ভবিষ্যৎবাণী (ইলহাম) তুলে ধরেছেন। ইউটিউবে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে। আমি লিংকটি এ লেখার নিচে দিয়েছি। কাসীদাটি পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ https://goo.gl/fJbhws

কাসীদাটিতে ৫৪টি প্যারা রয়েছে। বিভিন্ন অধ্যায় এবং ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমি সেগুলো থেকে কিছু কিছু অংশ নিয়ে একেকটি পর্ব সাজাবো ইনশাআল্লাহ! প্রতিটি পর্বে প্রাসঙ্গিক কিছু পংতি উল্লেখ করবো এবং এর উপর ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ তুলে ধরবো। তবে আমার আলোচনা হবে ইতিহাসের আলোকে প্রায় ৮শ বছর পূর্বে বলে যাওয়া ইলহামের বাস্তব প্রতিফলনের ভিত্তিতে। যারা আল্লাহর অলিগণের কারামত বা ক্ষমতা মানতে পারেন না, তাদের জন্য অবশ্য এগুলো খুব কষ্টদায়ক হবে যে, উনি যা যা বলে গেছেন, তার সবগুলোই সত্যে পরিণত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌!

আল্লাহর নামে, যিনি দয়াময় ও রহমান।
(১) পশ্চাতে রেখে এই ভারতের অতীত কাহিনী যত
আগামী দিনের সংবাদ কিছু বলে যাই অবিরত

(২) দ্বিতীয় দাওরে হুকুমত হবে তুর্কী মুঘলদের
কিন্তু শাসন হইবে তাদের অবিচার যুলুমের

(৩) ভোগে ও বিলাসে আমোদে-প্রমোদে মত্ত থাকিবে তারা
হারিয়ে ফেলিবে স্বকীয় মহিমা তুর্কী স্বভাব ধারা

(৪) তাদের হারায়ে ভিন দেশী হবে শাসন দণ্ডধারী
জাকিয়া বসিবে, নিজ নামে তারা মুদ্রা করিবে জারি

আল্লাহু আকবার! শাহ নি’মাতুল্লাহ অলি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন এ কথাগুলো লিখেন, তখন ভারত বর্ষে মুসলমানদের আগমন হয়েছে এবং দিল্লী সালতানাতের বয়স প্রায় ২০০ বছর চলছে। উল্লেখ্য, সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওাজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (১১৪২-১২৩৬) আজমীরে ইসলামের আবাদ করেন এবং তৎকালীন ঘোরি শাসক সুলতান শাহাবুদ্দীন মুহাম্মদ ঘোরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে ভারতবর্ষ আক্রমণের আহ্বান জানান। মুহাম্মদ ঘোরি ১১৯২ সালে রাজা পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করে দিল্লীতে সুলতানী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন যা টিকে থাকে ১৫২৬ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে সুলতানী শাসনের হাতবদল হয়, ঘোরি, মামলুক বা দাস বংশ, খিলজি বংশ, তুঘলকী বংশ, লোদী বংশ এর মধ্যে অন্যতম। ভারতে বিশেষ করে দিল্লীতে এসব বংশের বিভিন প্রতীক এবং স্মৃতিচিহ্ন এখনো টিকে আছে। ভারত সফরে গেলে এসব দেখে আসতে পারেন। মধ্যখানে তৈমুরলেন ১৩৯৭ সালে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন এবং ১৩৯৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। আর মুঘলদের আগমন এবং মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা হয় ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে। অর্থাৎ মুঘলদের আগমন হয় আলোচ্য অলি শাহ নি’মাতুল্লাহ রাহঃ এর ইন্তিকালের প্রায় একশ বছর পর। 

উল্লেখ্য উনি দ্বিতীয় পংতিতে ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনের দ্বিতীয় দাওর বা অধ্যায়ের কথা জোর দিয়ে বলেছেন। ভারতে মুসলিম শাসনের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই, শাহবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরি রহমতুল্লাহি আলাইহির শাসনামল (১১৭৫ সাল) থেকে সুলতান ইব্রাহীম লোদীর শাসনকাল (১৫২৬ সাল) পর্যন্ত প্রথম দাওর। এবং সম্রাট বাবরের শাসনকাল (১৫২৬ সাল) থেকে ভারতে মুসলিম দ্বিতীয় দাওর বা অধ্যায় শুরু হয়। যা চালু থাকে সিপাহী বিপ্লবের সময় পর্যন্ত (১৮৫৭)।

মুঘল শাসকদের অত্যাচার এবং নিষ্ঠুরতার কাহিনী যেমন রয়েছে তেমনি তাঁদের অনেকের মাধ্যমে ইসলামের সেবারও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে মুঘলদের ৬ জন শ্রেষ্ঠ শাসকের মধ্যে শেষ শাসক আওরঙ্গজেব আলমগীর ছিলেন আল্লাহ ওয়ালা এবং যাকে জিন্দা পীর হিসেবেও অভিহিত করা হয়। তাঁর আমলেই ফতোয়ায়ে আলমগীরি সংকলন করা হয় সাম্রাজ্যের নামিধামি আলেমগণের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে। যা হানাফী মাজহাবের একটি অমূল্য সম্পদ। তবে মুঘলদের কেউ কেউ প্রকৃত ইসলামী আইনকানুন ও শরীয়তি আমল থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে সম্রাট আকবর এবং তার ছেলে জাহাঙ্গীর অন্যতম। তাদের দুজনের আমলের মুজাদ্দিদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির আগমন এবং দীনে এলাহির থাবা থেকে ইসলামকে পুনর্জীবন দান করেন। মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহঃকে নিয়ে অন্য একটি পোষ্টে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ!

আর হাদীস শরীফেই আছে: যখন মুসলমানরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে, তখন তাদের উপর গজব স্বরূপ বহিশত্রুকে চাপিয়ে দেয়া হবে। ফলে আমরা দেখতে পাই মুঘলদের শাসনের শেষের দিকে তারা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকেন এবং শেষ পর্যায়ে ইংরেজ কর্তৃক মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ব্রিটিশরা ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলেও মুসলিম শাসন পুরোপুরি ধ্বংস করে নি। সিফাহী বিপ্লবের পর ভারতকে ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধিনে নেয়া হয়। শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে বার্মায় নির্বাসন দেয়া হয় এবং এরপর থেকে তারা তাদের রানীর নামে এদেশে মুদ্রা চালু করে। যে কথা শাহ নি’মাতুল্লাহ রাহঃ প্রায় ৪শ বছর পূর্বেই লিখে গিয়েছিলেন। আল্লাহু আকবার! আল্লাহর অলিগণের অকল্পনীয় ক্ষমতা ছিল আল্লাহ্‌ প্রদত্ত এবং তাদের ইলমে লাদুন্নী ছিল কাশফের মাধ্যমে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, মু’মিন বা আল্লাহর অলিগণের স্বপ্ন নবুয়তের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। কাজেই যারা আল্লাহ্‌র অলিগণের এই জ্ঞান এবং কারামতকে অস্বীকার করবে তারা মূলত সহীহ হাদিসকেই অস্বীকার করে।

[পাকিস্তানী টিভিতে এ নিয়ে ৮ পর্বের আলোচনাটি দেখতে নিচের লিংকে যান প্লীজ। অথবা Zaid Hamid লিখে ইউটিউবে সার্চ দিন। https://goo.gl/PmPsGf ]

[ভালো লেগে থাকলে লেখাটি কপি করে আপনাদের টাইমলাইনে পোষ্ট করতে পারেন। আর দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।]

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *