ডঃ বিলাল ফিলিপসঃ ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদের একজন একনিষ্ঠ প্রচারক
========================
নীচের দুটি লিংক এ দুটি ভিডিওর মাধ্যমে ডঃ বিলাল ফিলিপসের ভ্রান্ত আক্বীদার জবাব দেয়া হয়েছে। সেগুলো আমাদের বন্ধুদের জন্য বাংলায় ভাবানুবাদ করছি। দেখুন তারা কীভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান ও মানকে ধুলায় লুণ্ঠিত করে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান ও আক্বীদা ধ্বংস করছে। যে আক্বীদা ও বিশ্বাস রাসুল… (দঃ) এর যুগ থেকে চলে আসছে সে আক্বীদা ও বিশ্বাসে ওহাবী নবী দুশমনরা পরিবর্তন সাধন করতে বদ্ধ পরিকর। লিংক গুলো হলঃ
https://www.facebook.com/photo.php?v=821719454504832&set=vb.334016743275108&type=2&theater
https://www.facebook.com/photo.php?v=824827617527349
উপরোক্ত ভিডিওগুলোতে মূলত ডঃ বিলাল ফিলিপসের মাত্র কয়েকটি আক্বীদার জবাব দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলঃ
• “ইয়া নাবী সালামু আলাইকা” বলা শিরক
• নামাজে তাশাহুদে “আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবী” বাদ দিয়ে “আসসালামু আলান্নাবী” বলা উচিত বলে তিনি মনে করেন। কারণ নবী (দঃ) এখন আর বর্তমান নন।
• উছিলা ধরা শিরক, এমন কি তা যদি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানা হয় তবুও
• তার মতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত এবং আমাদের ডাকে সাড়া দেবার ক্ষমতা রাখেন না। অর্থাৎ তিনি হায়াতুন্নাবী নন, নাউজুবিল্লাহ
• কাজেই নবী (দঃ) কে “হে নবী” বলে ডাক দেয়া শিরক কারণ তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিতে পারেন না।
• কবর জিয়ারত কবর পুজার সমান
ভ্রান্ত ওহাবী আক্বীদার জবাবে হকপন্থী আক্বীদা
———————
বিলাল ফিলিপসের দাবিঃ (তাশাহুদ)
==============
ইয়া নাবী সালামু আলাইকা বলা শিরক। তার মতে আপনার ডাকে সাড়া দিতে পারেনা এমন কাউকে “হে” বলে ডাকা শিরক। কেউ আপনার প্রার্থনার জবাব দিতে পারছেনা, আপনি তাঁকে ডাকছেন, এর অর্থ আপনি তাঁর ইবাদাত করছেন। নাউজুবিল্লাহ! (দেখুন ভিডিও) শিরকের এই সংজ্ঞা সালাফী নামধারী ওহাবীদের মনগড়া তৈরি করা। কুরআনে আল্লাহ পাক আরবের মুর্তি পুজারীদেরকে তাদের মুর্তির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তারা তোমাদের ডাকে সাড়া দিতে অক্ষম। অথচ তথা কথিত সালাফীরা সেই মুর্তির সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক পাল্লায় মেপে থাকে। নাউজুবিল্লাহ!
সালাফীরা আরেকধাপ এগিয়ে গিয়ে নামাজে তাশাহুদে “আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবী” এর স্থলে কেবল “আসসালামু আলান্নাবী” বলার পক্ষে জোর দাবি করছে। কারণ তাদের মতে নবী (দঃ) মরে গেছেন। তিনি আমাদের সালাম শুনতে পান না এবং আমাদের ডাকে সাড়াও দিতে পারেন না। কাজেই তাঁকে “হে” বলে ডাকা শিরক। নাউজুবিল্লাহ!
জবাবঃ
======
কেবল আমাদের নবী মুহাম্মাদ (দঃ) ই আলমে বারজাখে জীবিত নন, বরঞ্চ সকল নবী রাসুলগণই নিজ নিজ কবরে জীবিত। দেখুন সহীহ হাদিসঃ
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-নবীরা কবরে জীবিত। আর তারা সেখানে নামায পড়েন। {মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৮৮৮, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫, সহীহ কুনুযুস সুন্নাতির নববিয়্যাহ, হাদীস নং-২২}
নবীগণ কবরে জীবিত এবং মুসা আঃ ৬ষ্ট আকাশে থেকে উম্মতে মুহাম্মাদী (দঃ) কে মিরাজের রাতে উপকারও করেছিলেন। দেখুন বুখারী ৭৫১৭, ই ফাঃ ৭০০৯, মুসলিমঃ ১৬২, আহমাদঃ ১২৫০৭।
কাজেই তথাকথিত সালাফীদের আক্বীদা ভ্রান্ত এবং নবী (দঃ) এর শান ও মানে চরম অপমান। নবী (দঃ) ইন্তেকাল করে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি নিজ রওযা পাকে জীবিত এবং আমাদের ছালাম গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ রাঃ এর হাদিসটি নিম্নরূপ।
রাসুল (দঃ) বলেন, আমার জীবন তোমাদের জন্য অতি উত্তম। তোমরা আমার সাথে সম্পর্কিত এবং আমার জীবন তোমাদের সাথে সম্পর্কিত। তদ্রূপ আমার মৃত্যুও তোমাদের জন্য অতি উত্তম। তোমাদের আমল আমার কাছে উপস্থাপন করা হবে। তোমাদের ভাল আমল দেখলে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো। আর খারাপ আমল দেখলে তোমাদের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করবো।
[কাজী আয়াজ রহঃ এই হাদিসটি তাঁর আস-শিফায় (১/৫৬, আম্মান থেকে মুদ্রিত।) এবং ইমাম সুয়ুতি রহঃ তাঁর মানাহিল আস-শাফা ফি তাখরি আহাদিস আস-শিফায় উধৃত করেন (পৃঃ ৩১, বৈরুত)। তাছাড়া আরও অনেক মুফাসসীরে কেরাম এই হাদিসটি তাদের কিতাবে উদ্ধৃত করেছেন এবং সহীহ বলে মত দিয়েছেন।
নবী (দ) আমাদের সালাম নিজ কানে শুনেন এবং এর জবাব দেন। যদিও সালাফীরা মনে করে নবী (দঃ) মরে মাটির সাথে মিশে গেছেন এবং আমাদের ডাকে সাড়া দিতে পারেন না। নাউজুবিল্লাহ! হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল (দঃ) বলেন, “তোমাদের যে কেউ আমার রওযা মুবারকে এসে আমাকে সালাম দিবে আল্লাহ আমার আত্মা ফিরিয়ে দেবেন যাতে আমি তোমাদের সালামের জবাব দিতে পারি। (আবু দাউদঃ ৬/২১৪, হাদিসটি সহীহ।) এই হাদিসটি অসংখ্য ইসলামী মনিষী রওজা মুবারক জিয়ারতের পক্ষে শক্ত দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
বিলাল ফিলিপসের দাবিঃ (উছিলা)
==============
উছিলা ধরা শিরক। তার মতে একমাত্র জীবিত ব্যক্তির উছিলা ধরা যায়। মৃত ব্যক্তির উছিলা ধরা বা তাঁকে উছিলা মানা শিরক। (দেখুন ভিডিও)
জবাবঃ
=====
হযরত উসমান রাঃ এর শাসনামলে এক ব্যক্তি তার সমস্যা নিয়ে খলিফার সাথে দেখা করতে গেলেন। কিন্তু বারবার চেষ্টার পরও খলিফা তাকে সাক্ষাৎ দিলেন না। অবশেষে লোকটি হযরত উসমান বিন হানিফ রাঃ এর দেখা পেলেন যিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী। তিনি লোকটিকে পরামর্শ দিলেন ভাল করে অজু করে দু’রাকাত নামাজ পড়ে এভাবে দুয়া করতে, “হে আল্লাহ! আমি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে, তোমার মুখাপেক্ষী হচ্ছি এবং তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হে রহমতের নবী! আমি আমার প্রভুর কাছে আপনার মাধ্যমে প্রার্থনা করছি যাতে তিনি আমার প্রয়োজন পূর্ণ করে দেন।”
এভাবে প্রার্থনা করে লোকটি খলিফার দরবারে গেলেন। এবার খলিফার প্রহরী লোকটিকে দেখা মাত্রই ভেতরে যাবার জন্য বলল। খলিফা উসমান বিন আফফান লোকটিকে তাঁর পাশে বসতে বলে কোমল সুরে জানতে চাইলেন তার কী সমস্যা। তার চাহিদা পূর্ণ করে দিলেন এবং উপরন্তু বললেন, “আমি এইমাত্রই তোমার ব্যাপারে জানতে পারলাম। এরপর তোমার যখনই কিছু প্রয়োজন হবে, আমাকে কেবল জানাবে।”
লোকটি উসমান বিন হানীফ রাঃ কে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, “আল্লাহ আপনাকে এর উত্তম প্রতিদান দিবেন। আপনি খলিফার সাথে কথা বলার আগ পর্যন্ত তিনি আমার দিকে কোন মনোযোগই দিচ্ছিলেন না এমনকি কর্ণপাতও করছিলেন না।”
এ কথা শুনে উসমান বিন হানিফ রাঃ বললেন, “আল্লাহর কসম, আমি খলিফার কাছে তোমার ব্যাপারে কিছুই বলিনি। কিন্তু আমি এক অন্ধ ব্যক্তিকে নবীজি (দঃ) এর দরবারে এসে তার দৃষ্টি হারানোর অভিযোগ করতে দেখেছিলাম। নবী (দঃ) তাঁকে বললেন, তুমি যদি চাও আমি তোমার জন্য দুয়া করবো। আর যদি অপেক্ষা কর তা তোমার জন্য মঙ্গল হবে। অন্ধ লোকটি উত্তরে বলল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে নিত্য প্রয়োজনে সহযোগিতা করে এমন কেউ নেই। আর এটা আমার জন্যে খুব কষ্টের। আপনি আমার জন্য দুয়া করুণ। নবীজি (দঃ) লোকটিকে ভাল করে অজু করে দু’রাকাত নামাজ পড়ে এভাবে দুয়া করতে বললেন,
‘হে আল্লাহ! আমি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে, তোমার মুখাপেক্ষী হচ্ছি এবং তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হে রহমতের নবী! আমি আমার প্রভুর কাছে আপনার মাধ্যমে প্রার্থনা করছি যাতে তিনি আমার প্রয়োজন পূর্ণ করে দেন। হে আল্লাহ, আমার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উছিলা কবুল কর।’ লোকটি তাই করলেন এবং সে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল।” (সুবহানাল্লাহ!)
[হাদিসটি ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনামে সহীহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ৪/১৩৮, তিরমিজিঃ ৪/২৮১-২৮২, ইবনে মাজাহ ১/৪১৮, ইমাম তাবরানী রহঃ এর সাহীহ আল-জামি আস-সাগীরঃ ১২৭৯।]
সালাফী নামধারী আহলে খবিসের শাইখরা আপনাদেরকে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলবে, না না এটা ছিল নবী (দঃ) এর জীবিত অবস্থায়। আর নবী (দঃ) নিজে আল্লাহর কাছে সরাসরি দুয়া না করে লোকটিকে নামাজ পড়ে সরাসরি আল্লাহর কাছে দুয়া করতে বলেছেন। এখানে লোকটির নামাজ এবং তাকওয়াই হল মূল উছিলা। তাদের ভ্রান্ত কথা বিভ্রান্ত হবেন না। এমন আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে সহীহ হাদিসে।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, রাসুল (দঃ) সে অন্ধ সাহাবীকে কি শিরক শিক্ষা দিয়েছিলেন। কারণ নবীজি (দঃ) তাঁকে অজু করে দু’রাকাত নামাজ পড়ে দুয়া করতে বললেন, “হে মুহাম্মাদ (দঃ)! আমি আমার প্রভুর কাছে আপনার মাধ্যমে আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবার জন্য প্রার্থনা করছি।” অন্ধ সাহাবীর নামাজ এবং দুয়ার সময় নবীজি (দঃ) সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন এমন দাবি কেউ করেন নি। এটা তো অনুপস্থিত কাউকে ডাকার শামিল যা মৃত বা জীবিত উভয় ক্ষেত্রেই সমান। তাহলে তথাকথিত সালাফীদের শিরকের সংজ্ঞায় মারাত্মক গলদ রয়েছে আর তারা সব সময় বলে বেড়ায় যে তারা সলফে সালেহীনদের পথ অনুস্মরণ করে। এখানে তারা সলফে সালেহীনকে মুশরিক সাব্যস্ত করে ফেলেছে। নাউজুবিল্লাহ!
Dr Abdul Baten Miaji https://www.facebook.com/DrMiaji
test