নজদীপন্থীদের এজিদ বন্দনার আসল রহস্য! – ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী
[এটি দলিল ভিত্তিক গবেষণালব্ধ একটি রচনা। নিজে পড়ুন এবং আপনার টাইমলাইনে কপি পেস্ট করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ!]
প্রথমেই বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং তথ্য ভিত্তিক রচনার আলোকে দেখি ১০ই মহররম কারবালার সেই অমোঘ দিবসে ইমাম হুসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, আহলে বাইত, নবী-পরিবার আর সত্যিকারের মুসলমানদের বিরুদ্ধে কারা অস্ত্র তুলে নিয়ে ইতিহাসের নির্মমতম অধ্যায়ের রচনা করলো। এজিদের বাহিনীতে সেদিন কুফা এবং এর আশেপাশের গোত্রগুলো থেকে অর্থলোভী যেসব পাপিষ্ঠ যোগ দিয়ে নবী-দৌহিত্র, আহলে বায়ত এবং হাশেমী বংশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে নির্দয়ভাবে শহীদ করে, এদের মধ্যে বনু তামীম গোত্র অন্যতম। [বিখ্যাত সব ঐতিহাসিক গ্রন্থেই এই বনু তামীমের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ রয়েছে। ইবনে আসীর থেকে “শামে কারবালা” গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশের ৩০ পৃষ্ঠায় এর বর্ণনা রয়েছে।]
কারা বনু তামীম?
এই বনু তামীম সম্পর্কে সিহাহ সিত্তায় অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আরব ভূখণ্ডে এদের বিচরণ প্রায় সবখানে। এদের মধ্যে গুটি কয়েক সাহাবা যেমন ছিলেন, তেমনি মুর্খ বর্বরও ছিল। এদের সম্পর্কে যেমন কিছু প্রশংসাসূচক হাদিস রয়েছে, তেমনি রাসুল ﷺ কে নাম ধরে ডাকার কারণে আল্লাহ্ পাক সাথে সাথে আয়াত নাজিল করে এদের মতো বেয়াদবে রাসুল-দের হুশিয়ার করে দিয়েছেন।
বনু তামীম সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু ঘটনা এবং কয়েকটি হাদিস তুলে ধরছি।
— বনু তামীম গোত্রের এক ব্যক্তি সর্ব প্রথম ﷺ রাসুল এর সাথে বেয়াদবি করে। [নিচে হাদিস দেখুন।]
— বনু তামীম গোত্রের কিছু ব্যক্তি মদিনাতে এসে রাসুল ﷺ এর ঘরের বাইরে থেকে তাঁকে নাম ধরে ডাকাডাকি করেছিল। আল্লাহ্ পাক সাথে সাথে আয়াত নাজিল করে এদেরকে নির্বোধ বলে আখ্যায়িত করেন। [নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।]
— ৬১ হিজরীতে কারবালাতে বনু তামীম গোত্রের লোকজন ইমাম হুসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং নবী পরিবারের বিরুদ্ধে এজিদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়। গণিমতের মাল হিসেবে এরা আহলে বায়তের ১৭টি মহিমান্বিত মস্তক বণ্টন করে নেয়। [দেখুন শামে কারবালা ২য় খণ্ড, ৩০ পৃঃ]
— ওহাবী মতবাদের প্রবক্তা বিন আব্দুল ওহাব এই বনু তামীম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন।
— বিন আব্দুল ওহাবের মেয়ের জামাতা মুহাম্মাদ ইবনে সাউদের বংশধরই হলো বর্তমান সৌদি রাজবংশ। আর এ কারণেই এজিদের জন্য এদের এতো মায়াকান্না। কেননা এদের পূর্বপুরুষেরাই কারবালার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এজিদের সমালোচনা করলে কিংবা ইমাম হুসেইন রাঃ কে সত্যের দিশারী মনে করলে নিজেদের বাপদাদাকে অভিশাপ দিতে হয়। আর এটাই হলো মূল কারণ। ওহাবীদের নিজস্ব শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আর-রাহমান বিন সালিহ আল বাসসাম তার “উলামা নাজদ খিলাল সামানিয়্যাহ কুরনুন” (Ulamaa Najd Khilaal Thamaaniyyah Quroon (Dar al-Aasimah, 1st edition, 1419H) গ্রন্থের ১২৫-১২৬ পৃষ্ঠায় সউদ পরিবারের বংশ তালিকা করে দেখিয়েছেন যে এরা বনু তামীমের উত্তরসূরি।
১। তাফসীরে ইবনে কাসীরে সুরা হুজরাতের ৪ ও ৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত একদা তামীম গোত্রের কিছু লোক বাইরে থেকে “হে মুহাম্মাদ! হে মুহাম্মাদ!” বলে ডাকাডাকি করছিল। আল্লাহ্ পাক সাথে সাথে আয়াত নাজিল করে এদেরকে নির্বোধ আখ্যা দেন এবং এরূপনা করার জন্য হুশিয়ার করে দেন।
“যারা প্রাচীরের আড়াল থেকে আপনাকে উচুস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ।” (৪৯:৪)
২। হুনায়নের যুদ্ধের পর গণিমতের মাল বণ্টনের সময় যে ব্যক্তি রাসুল ﷺ কে ন্যায়পরায়ণতার সাথে তা বণ্টন করার কথা বলার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছিল, সে ছিল বনু তামীম গোত্রের। হাদিসটি নিম্নরূপঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ কোন কিছু বন্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে আব্দুল্লাহ বিন যুলখওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইনসাফ করুন! তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তাহলে আর কে ইনসাফ করবে? ওমর বিন খাত্তাব রাঃ বললেন, আমাকে অনুমতি দিন, তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও! তার জন্য সাথীবৃন্দ রয়েছে। যাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের রোযার তুলনায় তোমরা তোমাদের রোযাকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এরূপ বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের পরে লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে তাকালেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার কালে তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন্য হবে মহিলাদের স্তনের মত। অথবা বলেছেন, বাড়তি গোস্তের টুকরার মত। লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় আবির্ভাব হবে। আবূ সাঈদ রাঃ বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবীজী দঃ থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী রাঃ তাদের হত্যা করেছেন । তিনি বলেন, ওর সম্পর্কেই নাজিল হয়েছে-“ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সাদকা সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে।”
{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩২৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৬}
এবার পরিষ্কার হয়ে গেল কেন সউদ পরিবার আর এদের ছাপোষা রুটি-দুম্বা আর পেট্রো-ডলারের বেতন ভুক্ত ঘোমটা মৌ-লোভীরা এজিদের বন্দনায় পঞ্চমুখ। এজিদের সমালোচনা করা এদের ফতোয়া মোতাবেক হারাম। কেননা এজিদের সমালোচনা করলে, কারবালার ঘটনার জন্য দায়ীদের অভিশাপ দিলে এদের বাপদাদাদের উপর অভিশাপ লাগবে। কাজেই কৌশলে আশুরাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে ইতিহাসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে এই নফস-পূজারীরা। এদেরকে চিনে রাখুন। এরা ইসলামের সেবক সেজে ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে নিয়োজিত। ইহুদী চক্রের ক্রীড়নক হয়ে এরা ইসলামকে ইতিহাসশূন্য করে ফেলেছে। ইজরাইল নিরীহ, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি মহিলা ও শিশুদের বোমা মেরে হত্যা করলে এদের অন্তর কাঁদে না। বরং ইজরাইলের বিরুদ্ধে মিছিল করলে কিংবা ইজরাইলকে অভিশাপ দিলে এদের অন্তর কেঁদে উঠে। ইসলামী খেলাফত নামের তথা কথিত সালাফী সন্ত্রাসীরা মুসলমানদের হত্যা করলে এদের আনন্দ হয়। ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদের বাহক এই আইএসকে কেউ প্রতিহত করলে এদের অন্তরে ব্যথা লাগে। কেননা, পর্দার অন্তরালে ইজরাইল আর পশ্চিমাদের সহায়তায় এরাই যে আইএস প্রতিষ্ঠা করে মুসমানদের গায়ে কলংক লেপন করছে!
কারবালার মতো প্রতিটি ঘটনার পর ইসলাম নতুন শক্তিতে বলিয়ান হয়। কাজেই কারবালার চেতনাকেই এরা চিরতরে বিলুপ্ত করতে বদ্ধপরিকর! এদের মুখোশ আল্লাহ্ পাক খুলে দিচ্ছেন! কারবালার চেতনায় ইসলাম জিন্দা হোক আর ইসলামের শত্রুরা চিরতরে বিলুপ্ত হোক। আমীন!