সোলায়মান শাহ রহঃ-এর একটি কারামত

– ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

জানের বদলে জান। জীবনের বদলে জীবন। মানত করার সময় আমাদের অনেকেই এভাবে করে থাকি। একবার মা আমার আমার জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলেন। আমার জীবনের বদলে একটি খাসি দেবার মানত করেছিলেন। মানত পূর্ণ করতে গিয়ে রুগ্ন এবং কোনও রকমে বেঁচে যাওয়া একটি খাসিকে বেছে নিয়েছিলাম। আমরা সুযোগ পেলেই মানুষকে ঠকাতে চাই। এমন কি আল্লাহ্‌র অলিগণকেও। কিন্তু আল্লাহ্‌র অলিগণ কখনোই ঠকেন না। আমাদের না ঠকিয়েও তাঁরা জিতে যান। মা মানত করেছিলেন, তার হারানো ছেলে ফিরে এলে তিনি বদরপুরের সোলায়মান শাহ [রাহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মাজারে আমার জীবনের বদলা আরেকটি জীবন দিবেন। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। সঠিক ভাবে বললে বলতে হয়, আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। কাউকে না বলে নিরুদ্দেশ।

কি ভেবে শেষমেশ লঞ্চে উঠেই পড়লাম। আমার বয়স তখন মাত্র ৬ বছর। বর্ষাকাল। চারদিকে অথৈ পানি। প্রায় পুরো বাংলাদেশ পানির নিচে। আমাদের মতলবের বেড়ীবাঁধ তখনো তৈরি শুরু হয়নি। ফলে ভরা বর্ষায় গ্রামের বাড়িঘর ছাড়া সব পানির নিচে। ধানের জমিতে পানি। পানি বেয়ে বেয়ে ধানের গাছগুলোও নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টায় দিন দিন বেড়ে উঠছিল। পাট কেটে ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও ধনচে পানির উপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। ইরিধানের জমির উপরে পানি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, উত্তরে-দক্ষিণে প্রসারিত বিলগুলো যেন বিশাল একেকটি নদী। মতলবের এ এক বিশেষত্ব। সবগুলো গ্রাম উত্তরে আর দক্ষিণে আড়াআড়ি। এখন অবশ্য গ্রামের কোনও দিক নেই। বেড়ীবাঁধের ভেতরে ফসলী জমিতে যেখানে সেখানে ঘরবাড়ি। সেই কালে দক্ষিণ দিক থেকে তাই কোনও ঢেউ শুরু হলে, সে ঢেউ উত্তরে গিয়ে মেঘনা নদীর শাখার গিয়ে মিশতো। এ নদীর অপরদিকে আবার গোমতীর শাখা। যে গোমতী গৌরীপুরের পাশ দিয়ে বয়ে এসে দাউদকান্দি হয়ে মতলবে মিশেছে।

বর্ষা এলে বেলতলি বাজারের উত্তরপাশে ছোট্ট নদীর মধ্যখানেই লঞ্চ থামত। যাত্রীরা ছোট্ট নৌকায় করে মাঝনদীতে দাঁড়ানো লঞ্চে উঠত। আমি বাচ্চা মানুষ। আমাকে কেউ একা লঞ্চে উঠতে দেবে না। লক্ষ্য করলাম আমার জ্যাঠা লঞ্চে উঠতে যাচ্ছেন। আমিও তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম। তার দেখাদেখি আমিও লঞ্চে উঠে পড়লাম। তিনি দেখেও আমাকে কিছু বললেন না। মনে মনে ভাবলাম ভালোই হলো। জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দেবো? কোথায় যাচ্ছিলাম আমি? আমি নিজেও জানতাম না। কাজেই জিজ্ঞেস না করায় আপাতত তখন চিন্তামুক্ত হলাম।

একসময় লঞ্চ ছেড়ে দিলো। ধীরে ধীরে বেলতলি বাজার আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। আমি তাকিয়ে দেখছিলাম। এখন মনে নেই, তখন এ অবস্থায় আমার খারাপ লেগেছিল কিনা। তবে মনে আছে, আমি এক রোমাঞ্চকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। পানিতে ডোবা গ্রাম ছেড়ে, বন্দর পেরিয়ে শহরে যাচ্ছি। শুকনো শহর। গ্রাম পানিতে ডোবা। মনের পর্দায় তাই শহরের সে এক বিচিত্র ছবি ভেসে বেড়াচ্ছিল। বাবা তখন ডেমরা চাকরি করতেন। লতিফ বাওয়ানিতে। দুই ভাই ব্যবসা করতেন। বেলতলি ছিল সেদিন হাটবার। সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। ডিজিটাল যুগে আজো সেখানে হাত বসে। তবে আগের মতো আর জমে না। সোম আর বৃহস্পতি। আমার ঠিক মনে নেই সেদিন সোমবার ছিল নাকি বৃহস্পতি। সেটা কোনও ব্যাপারও নয়। বার একটা হলেই হলো। বারে কি এমন যায় আসে। আমার তখন বারের চিন্তা নেই। আমার চিন্তা তখন কল্পনার শহরকে ঘিরে। যে শহরে বাবা আছেন, সেই বাবাকে ঘিরে। বাবা ডেমরা থাকেন। আমি সেখানেই যাচ্ছি।

লঞ্চে যেতে যেতে হরেক রকম চিন্তা আমার মাথায় ঘোরাফেরা করছিল। আমি কেন কাউকে কিছু না বলে গ্রাম ছেড়ে শহরে যাচ্ছি? মা-ভাই-বোন সবাই তখন গ্রামে। একমাত্র বাবা থাকেন ডেমরা। আমি কাউকে কিছু না বলে চুপিচুপি তাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম। রাগ করেই চলে যাচ্ছিলাম। কেন, কিসের রাগ? কার উপর রাগ করে চলে যাচ্ছিলাম তাও জানি না। কেবল মনে জেদ চাপছিল সবাইকে ছেড়ে চলে যাবো। কেউ যাতে আমার কোনও খোঁজ না পায়। মাঝেমধ্যেই আমার মনে এমন অদ্ভুত আইডিয়া ঘোরাফেরা করতো।

খুব সম্ভবত এই অসাধারণ আইডিয়াটা বংশগত। জেনেটিক ডিজিজের মতো আমার এই আইডিয়াটাও জেনেটিক ছিল। আমার বাবাও একবার রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর বড় ভাই এবং মায়ের উপর রাগ করে একেবারে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। হাযির হয়েছিলেন কোলকাতায় গিয়ে। এখন কোলকাতা ভিন্ন দেশ। তখন পুরোটা ছিল এক বাংলাদেশ। রবীন্দ্রনাথ তখন এই সম্মিলিত বাংলাদেশকে নিয়েই লিখেছিলেন, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

বাবার আগেও আমাদের বংশের অনেকেই এভাবে বাড়িঘর ছেড়ে রাগ করে চলে গিয়েছিলেন।

আমার দাদারা ছিলেন তিন ভাই। আশ্রাব আলী, আছমত আলী এবং উসমান আলী। [উল্লেখ্য, আমার দাদাদের আপন ফুফুই হলেন অধ্যক্ষ আল্লামা হাফেয আব্দুল জলিল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির জান্নাতী মাতা মালেকা খাতুন।] আমার দাদা আছমত আলী মিয়াজী ছিলেন মেঝো। তিনি খুব অল্প বয়সেই মহামারী কলেরায় মারা যান। [তাঁকে আল্লাহ্‌ পাক শহীদী মর্যাদা দান করুন, আমীন]। আমার বাবার বয়স তখন মাত্র ৪ কি ৫। দাদার বড় ভাই আশ্রাব আলী ছিলেন সমাজের নেতা। মিয়াজী থেকে হয়ে গেলেন সরকার। আশ্রাব আলী সরকার। পুরো মতলব উপজেলার প্রায় তিন ভাগের একভাগ মিলিয়ে তখন ছিল এক ইউনিয়ন। দুর্গাপুর থেকে ষাটনল। এখন এক ইউনিয়ন ভেঙে করা হয়েছে ৪টি কি ৫টি। তিনি ছিলেন সেই ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মানে চেয়ারম্যান। তখন এই পদের নাম ছিল ভাইস-প্রেসিডেন্ট। একাধারে দীর্ঘ ২২ বছর তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। আইয়ুব খানের শাসনের মতো তার শাসন ছিল কঠিন। তাঁর ঘরের সামনে দিয়ে কেউ জুতা পায়ে হাঁটতে সাহস করতো না। জুমার নামাজ ফরজ। আর সেই জুমায় সবার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছিলেন তিনি। গ্রামের একলোক এক জুমা বাদ দেয়ায় তিনি রাগে ঘাড় চেপে ধরে ছিলেন। সে লোক ভয়ে ওখানে মসজিদেই মারা গিয়েছিল। সে অন্য কাহিনী।

সেই শাসক জনপ্রতিনিধির ছোট ভাই উসমান আলী এবং আমাদের বংশের অন্য এক দাদা মজিদ মিয়াজী শাসক আশ্রাব আলী সরকারের সাথে রাগ করে বাড়িঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সেই রাজশাহীর নাটোরে। জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনের কাছে। সে মুল্লুকে তখন ছিল বাঘের বাসা। সন্ধ্যা হলেই শোনা যেতো বাঘের গর্জন। ভয়ে আছরের পর থেকেই সবাই ঘরের দরোজা বন্ধ করে রাখতেন। অসুখে, জরায়, একাকীত্বে কিছুদিন পরই মারা যান উসমান দাদা। তার দেখাদেখি দাদিও মারা যান। তাদের একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে ছিল। মজিদ মিয়াজী দাদা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার ছিল পাঁচ ছেলে এবং এক মেয়ে। অন্য যারা বেঁচে ছিলেন তাদের চিঠি পেয়ে আমার শাসক দাদা আশ্রাব আলী সরকার নিজে গিয়ে বাকিদের ফিরিয়ে আনেন। তাদের অভিমান ভাঙানো হয়।

আমাদের বংশের অন্য এক জ্যাঠা ইসহাক মিয়াজী। পরিবারের অন্যদের সাথে রাগ করে তিনিও বাড়ি ছেড়েছিলেন। বেশ অনেক বছর জাহাজে চাকরি করেছিলেন। দেশ থেকে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। অনেক বছর পর বাড়িতে ফিরে আসেন।

আশ্রাব আলী সরকার দাদার ছোট ছেলে অলি আহম্মদ সরকার জ্যাঠা। তিনিও একবার রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ইসহাক জ্যাঠার ছোট ভাই মালেক মিয়াজী কাকা। রাগ করে তিনিও নাটোর চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক মেয়েকে বিয়ে করে চিরস্থায়ী ভাবে হিজরত করেন। আর ফিরে আসেন নি। মজিদ মিয়াজী দাদার ছোটো ছেলে তবদিল হোসেন কাকা। রাগ করে তিনিও ঘর ছাড়েন। গিয়ে হাযির হন দর্শনায়। দর্শনার উথলিতে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের একাবারে কাছেই তিনি থাকেন। মজিদ মিয়াজী দাদার মেঝো ছেলে হযরত আলী মিয়াজী কাকা। তার বড় ছেলে আব্দুর রব ভাই, তিনিও একবার রাগ করে চাচা তবদিল হোসেন মিয়াজীর কাছে গিয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন সেখানে এক দোকানে চাকরি করে ফিরে আসেন বাড়িতে। কাজেই হিজরতের এই আইডিয়া আমাদের বংশগত।

লঞ্চ থেকে নামার পর জ্যাঠার সাথে সাথে হাঁটতে লাগলাম। জ্যাঠা তখন দুই নং ঢাকেশ্বরী মিলে চাকরি করতেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে হেঁটেই যেতেন দুই নং ঢাকেশ্বরী। চাষারা থেকে ডেমরার বাস ছাড়ত। এর আগে একবার আমি গিয়েছিলাম ডেমরা। অভিজ্ঞতা বলতে সেটুকুই সম্বল। জ্যাঠা আমাকে বাসে তুলে দিয়ে নিজে হেঁটে চললেন দুই নং ঢাকেশ্বরীর দিকে। ৬ বছরের বাচ্চা আমি। সাথে কোনও টাকাপয়সা ছিল না। সম্বল বলতে পকেটে একটি টুপী। লঞ্চে এতো ছোটো বাচ্চাদের ভাড়া লাগে না। কিন্তু বাসে লাগে। কন্ডাক্টার ভাড়া চাইলে টাকা নেই বলেছিলাম। আমার পকেট হাতিয়ে কিছু পেলো না সে। পেল মাত্র একটি টুপী। এরপর কিছু না বলে আমাকে ছেড়ে দিল। সারুলিয়া নেমে হেঁটে গন্তব্যে গেলাম। মেঝো মামার বাড়ি ছিল ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের অপর পাড়ে। কয়েক একর জমির উপর বিশাল বাড়ি। সে বাড়িতে এখন কারখানা হয়েছে।

এর আগে মায়ের সাথে একবার সেখানে গিয়েছিলাম। তখন সেখানে ছিল ফাঁকা জমি। মাঝে মধ্যে দু’একটি বাড়িঘর ছিল। তাই খুঁজে পেতে তেমন সমস্যা হলো না। মামা-মামি আমাকে দেখে অবাকই হয়েছিলেন। বাবাকে খবর দিলে বাবা এসে আমাকে নিয়ে যান। বাবা তখন থাকতেন স্টাফ কোয়ার্টারে। ৩০২ নম্বর রুমে।

এদিকে বাড়িতে কি হয়েছিল তখনো আমার জানা ছিল না। পরে বাড়ি ফিরে জেনেছি, আমাকে না পেয়ে দুই ভাই বেলতলি বাজারের এখানে সেখানে খোঁজাখুঁজি করেছিলেন। একে ওকে জিজ্ঞেস করে যখন কোনও কূলকিনারা পেলেন না, উপায়ান্তর না দেখে তারা বাড়ি ফিরে যান। ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা যেমন সন্ধ্যাবেলা তাঁকে ছাড়াই বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন, আমার ভাইয়েরাও আমাকে ছাড়া সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। আমাকে না পেয়ে মায়ের কষ্টের কথা আর নাই বললাম। মা আমার পাগলপ্রায়। পুরো মতলবে নৌকা দিয়ে মাইকিং করা হয়েছিল। একদিন দুইদিন তিনদিন এভাবে সময় যেতে লাগলো। মা আমার পাগলপারা।

মা নাকি তখন সারাক্ষণ কাঁদতেন। বোনেরাও কাঁদতেন। গ্রামের আশেপাশের বাড়ি থেকে যারা শান্তনা দিতে আসতো, তারাও কাঁদতো। কেউ একজন বলল জানের বদলে জান দেবার নিয়ত করেন। বাচ্চা ফিরে পাবেন। মানত করলে নাকি আমার জান রক্ষা হবে। অসহায় মা তখন নিয়ত করলেন, ছেলেকে ফিরে পেলে তিনি সোলেমান শাহর [লেংটা বাবার] মাজারে খাসি দান করবেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে কেউ একজন জানালো, সেদিন জ্যাঠার সাথে আমাকেও তিনি লঞ্চে উঠতে দেখেছেন। একটা ক্লু পেয়ে বড় ভাই ডেমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। কয়েকদিন পর আমাকে নিয়ে বাড়িতে হাযির হলেন। বাড়িতে এসে দেখলাম চারিদিকে খুশির জোয়ার, সাথে কান্নার রোল। হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের সেকি কান্না। বোনদের কান্না। সবার কান্না দেখে একা একা ডেমরা-জয়ী আমিও কেঁদে দিয়েছিলাম। মা সেদিন ওয়াদা নিয়েছিলেন, আমি যেন আর কখনো কাউকে না বলে কোথাও না যাই। মায়ের কথা রাখতে পারিনি। তবে না বলে চুপিচুপি নয়, সবাইকে বলেই বাংলাদেশ থেকে সুইডেনে চলে এসেছিলাম। আর ফিরে যাওয়া হয়নি।

আমার মা আমাকে ফিরে পেতে মানত করেছিলেন। আল্লাহ্‌ পাকের করুণায় আমি সুস্থ ভাবেই বাড়িতে এসেছিলাম। এবার মানত পূরণের পালা। আমাদের একটি ছাগী ছিল। একেকবার তিনটি করে বাচ্চা দিতো সেই ছাগী। ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং অপুষ্ট থাকে। আমরাও আমাদের ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাটিকে লেংটা বাবার মাজারে দেবার নিয়ত করলাম। কিন্তু ওই যে শুরুতে বললাম, আল্লাহ্‌র অলিগণ ঠকেন না। অন্যকে না ঠকিয়েও তাঁরা জিতে যান। এটা তাঁদের কারামত। লেংটা বাবার কারামত হলো, আমাদের সেই দুর্বল, রুগ্ন, মরে কি বাঁচে ছাগল ছানাটি অতি দ্রুত, অন্য দুটোকে টপকিয়ে বাড়তে লাগলো। ছাগল দেখাশুনার দায়িত্ব ছিল আমার উপর। আমিই স্কুলের পর ছাগলকে ঘাস খাওয়াতাম কিংবা বিলে গিয়ে ঘাস কেটে নিয়ে আসতাম। দুটোকে ঠকিয়ে তৃতীয়টিকে বেশি খাবার দেই নি। কিন্তু এরপরও তৃতীয়টি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠেছিল।

চৈত্রমাসে লেংটা বাবার মেলা বসে। আমাদের পাশের গ্রাম। ১৭ চৈত্র থেকে ২৩ চৈত্র। চলে সাতদিন। লক্ষ লক্ষ মানুষ আসে এই মেলায়। এই সাতদিনে একাধারে বিরতিহীন ভাবে চলে ঢোলের বারি, তালে তালে গান আর নারীপুরুষের সম্মিলিত নাচ। ভাবতে পারেন, বাংলাদেশের একটি অজোপাড়াগাঁয়ে দিনরাত অবিরত নাচ আর গান? পশ্চিমাদের ডিস্কোর কথা শুনলে আমাদের চোখ চড়কগাছে উঠে। অথচ বাংলাদেশের একটি গ্রামে ঠিক একই ভাবে নারীপুরুষ মিলে একসাথে গান গায় ও নাচে। এটা আল্লাহ্‌র অলির দোষ নয়। এটা আমাদের দোষ। যারা মাজার পরিচালনা করেন তাদের দোষ। লাভের আশায় আজকাল মাজার নিয়ে ব্যবসা হয়। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, প্রশাসন, পুলিশ, সাধু-বাটপার সবার আয়ের একটা বড় অংশ আসে এই মেলা থেকে। কাজেই এসব ব্যবসা জিইয়ে রাখার পক্ষে সবাই। বদনাম হয় আল্লাহ্‌র অলির। তালাশ টিম এই মাজারের উপর একটি ডকুমেন্টারি করেছিল। সেখানে অনেক দুর্নীতি, অনাচার আর অনৈসলামিক কাজের কথা তুলে ধরেছিল। দোষ দিয়েছিল আল্লাহ্‌র অলির। কা’বা ঘরেও তো ৩৬০টি মূর্তি ছিল। মুশরিকরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানের পূজা করতো সেখানে। তাই বলে কি এটা কা’বার দোষ ছিল? বাংলাদেশের মাজার ব্যবসার বিষয়টিও অনেকটা একই রকম। সুযোগ পেলেই মুসলমান নামধারী কিছু লোক আওয়াজ তুলে, লাত্থি দিয়ে মাজার ভেঙে ফেলবো। ফলে নিজেদের পাই হারায় সেসব লোক।

এখন চৈত্রমাস। ১৫ই চৈত্র আমার জন্ম। এর ঠিক দুই দিন পর লেংটা বাবার মেলা শুরু হয়েছিল। মা এবং অন্যদের কাছ থেকে প্রায়ই একথা শুনতাম। এ কারণে আমার জন্মের দিন ও তারিখ মনে আছে। না হলে তা বের করার অন্য কোনও উপায় থাকতো না। আল্লামা হাফেয আব্দুল জলিল রহঃ এর মাজার জিয়ারতে গেলে পাশের গ্রামে বদরপুরে লেংটার মাজারও জিয়ারত আসবেন। আল্লাহ্‌র অলিগণের উছীলায় আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে ক্ষমা করুন আর সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আমীন।

সোলায়মান শাহ রহঃ কেন লেংটা বাবা?

তিনি ছিলেন মজ্জুব। মানে পাগল। দুনিয়ার পাগল নয়, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পাগল। জজবা থেকে মজ্জুব শব্দের উৎপত্তি। আল্লাহ্‌র ভালোবাসায় নিমজ্জিত এবং দুনিয়া হতে বিবর্জিত ব্যক্তিই হলেন মজ্জুব। তাসাউফের জগতে আল্লাহ্‌র অলিগণের মধ্যে দু’ধরণের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। সালিক আর মজ্জুব। সালিক অলিগণ সমাজে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করলেও মজ্জুব অলিগণ দুনিয়া বিমুখ হয়ে চলাফেরা করেন। লোকে তাঁদেরকে পাগল হিসেবে ঘৃণাভরে দূরে সরিয়ে দেয়। তাঁরা নিজেদেরকে সমাজ ও লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই সহীহ হাদিসের লোকেরা আমার উপর ক্ষেপে উঠতে শুরু করেছেন। তাহলে শুনুন, সহীহ হাদিসে এধরণের অলিগণের ইঙ্গিত রয়েছে। একটি হাদিস আছে খোদ মুসলিম শরীফে। “হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, এমন অনেক উষ্কু-খুষ্ক লম্বা চুলধারী ধূলামলিন বিশিষ্ট লোক আছে, যাদেরকে মানুষের দরজা থেকে বিতারিত করা হয়, অথচ তারা যদি আল্লাহর কাছে কিছু দাবী করে, তাহলে আল্লাহ তাদের সে দাবী পূরণ করেন।” [মুসলিম শরীফ, কিতাবুল বিররি ওয়াসসিলা ওয়াল আদব। হাদিস নং-২৬২২ (মূল মুসলিম শরীফ -মিশরীয় ছাপা) ইঃ ফাঃ অনুবাদ হাদিস নং-৬৪৯৪]

এছাড়া এ ধরণের আরও একটি হাদিস তিরমিজী শরীফ সহ আরও কয়েকটি হাদিসের গ্রন্থে রয়েছে। “হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহর অনেক বান্দা এমন হন যে, তাদের চুল থাকে আলুথালু। দেহ থাকে ধুলি মলিন। দুটি ছেড়াফাটা পুরোনো চাদর পরিধান করেন তাঁরা। কেউ তাঁদেরকে খুব একটা গোনায় না ধরলেও তাঁরা যদি আল্লাহর নাম নিয়ে কোনও একটা কসম খেয়ে বসেন যে, এটি এমন হবে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর কসম পূরণ করেন।” [তিরমিজী, কিতাবুল মানাকিব, বাব মানাকিবি বারা ইবন মালিক, হাদিস নং-৩৮৫৪, মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মিসকাতুল মাসাবীহ, হাদিস নং-৬২৪৮, এছাড়া ইমাম বায়হাকি দালায়েলুন নবুয়াত কিতাবেও হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।]

মজ্জুব অলিগণের জন্য শরীয়তের বিধিবিধান প্রযোজ্য নয়। তাঁরা নিজেদের মতো চলাফেরা করেন। খেয়াল খুশি মতো এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান। কেউ কিছু দিলে গ্রহণ করেন, না দিলে চলে যান। দেখলে মনে হবে দুনিয়ার ভিক্ষুক। আসলে তাঁরা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকেন। ফলে দুনিয়ার কোনও কিছুই তাদের আকর্ষণ করতে পারে না।

ছোটবেলা বাবা-মা মারা যাবার পর একমাত্র বোনের বাড়িতে থাকতেন সোলায়মান শাহ। বোনের বাড়ি ছিল চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর গ্রামে। গতকাল যে বেলতলি বাজারের কথা লিখেছিলাম, সে বাজার থেকে সামান্য দক্ষিণে। বোন একমাত্র ভাইকে আদরযত্ন করলেও, বোনের স্বামী তাকে দিয়ে সংসারে কাজ করাতেন। একবার ভগ্নীপতির কথায় অভিমান করে বোনের বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যান তিনি। তার বোন ভাইয়ের বিরহে মর্মাহত হন এবং অনেক খুঁজাখুঁজির পরও ভাইয়ের আর কোনও সন্ধান পান নি। লোকমুখে জানা যায় যে, কিছু লোক সোনার গাঁয় এক পীরের দরবারে যাবার জন্য তাকে নৌকার মাঝি হিসেবে সাথে নেয়। অমাবশ্যা রাতে বৃষ্টিতে ভিজে তিনি নৌকা বেয়ে তাদেরকে পীরের বাড়িতে নিয়ে যান। পীর সোলায়মান শাহকে এমন অবস্থায় দেখে খুব কষ্ট পান এবং সে কষ্টের বিনিময়ে তাকে হা করতে বলেন এবং তার মুখে ফু দেন। এরপর থেকেই তিনি মজ্জুব অবস্থায় চলে যান। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বোনের বাড়িতে এসে উপস্থিত হন তিনি। প্রথমে কেউ তাকে চিনতে না পারলেও পরে চিনতে পারেন। এরপর থেকে সেখানেই থাকতেন তিনি।

পরনে কাপড় বলতে থাকতো কোমরে একটি লাল গামছা। যা তাঁর অনুসারীরা আজো পরিধান করে থাকেন। এ কারণে লোকমুখে তাঁর নাম লেংটা ফকির হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। ভক্তদের কাছে তিনি লেংটা বাবা। বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু কারামাত দেখান তিনি। ফলে তাঁর অলিত্ব এবং গাউসিয়ত প্রকাশ হয়ে পড়ে। সেসব কারামাতগুলো লোকমুখে ঘুরতে থাকলেও বেশ কিছু কারামাতের সত্যতা পাওয়া যায়। বদরপুর গ্রামের পেশকার বাড়ির প্রতিটি মানুষই কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভোগে। তাদের পূর্বপুরুষের একজন লেংটা ফকিরের সাথে থাকতেন। লেংটা বাবার একটা অদ্ভুত স্বভাব ছিল মিষ্টি ও দই বানিয়ে ঘরের ছাদে/কারে লুকিয়ে রাখা। তাঁর ভক্তদের নিষেধ করতেন সে মিষ্টি ও দই চুরি করে খেতে। তিনি বলতেন, ‘এগুলো বিশেষ কাজের জন্য রেখেছি। যে এখান থেকে মিষ্টি বা দই চুরি করে খাবে তাঁর বংশে কিয়ামত পর্যন্ত সবাই পাগল হবে।’ ভক্তদের একজন মনে করলেন, এটা লেংটা ফকিরের কথার কথা। আমাদের ভয় দেখানোর জন্য একথা বলা। আসলে কি আর এরকম হবে। এরকম ভেবে তিনি কিছু দই নামিয়ে খেয়ে ফেলেন। এরপর থেকে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাঁর বংশে যত সন্তান জন্ম হয়, সবাই ছোটবেলা থেকে পুরো সুস্থ থাকলেও বয়সের একটা পর্যায়ে গিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। খাঁটি বাংলায় যাকে আমরা বলি মাথার ছিট। মানে অর্ধ পাগল। তার বংশধরদের এমন অনেককে আমি দেখেছি উচ্চ শিক্ষিত এবং প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকুরীজীবী। কিন্তু একটা পর্যায়ে ঠিকই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথে ঘুরেন।

সোলায়মান শাহ মজ্জুব অবস্থায় এ বাড়ি ও বাড়ি হাঁটতেন। গ্রামের মহিলারা ধান শুকানোর জন্য গোবর দিয়ে উঠোন লেপেন। একবার তাঁর পা লেগে এক মহিলার পানির কলস কাত হয়ে পানি পড়ে যায়। মহিলা বলে উঠলেন, ‘আরে লেংটা, এতো কষ্ট করে পুকুর থেকে পানি আনলাম, আর তুই পানিটা ফেলে দিলি?’ একথা শুনে তিনি মহিলাকে বললেন চোখ বন্ধ করতে। মহিলা চোখ বন্ধ করলে তিনি পেশাব করে পুরো উঠোন ভাসিয়ে দেন। এবং বলেন, ‘নে তোর পানি, কত লাগবে?’ মজ্জুব অবস্থায় কারো ফসলী জমি মাড়িয়ে গেলে সে জমিতে অধিক ফসল ফলত। এ কারণে পাগল হলেও সোলায়মান শাহকে সবাই খুব পছন্দ করতো। এমন অনেক অলৌকিক ঘটনায় ভরপুর  তাঁর জীবন। সোলায়মান শাহ রহঃ মজ্জুব অবস্থায় মানুষের অনেক উপকার করতেন। ফলে তিনি অত্র অঞ্চলের মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেন। তিনি ছিলেন পাকপাঞ্জাতনের একনিষ্ঠ আশেক। তাঁর ভক্তকূলের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম পাকপাঞ্জাতনের নাম শুনি। এখন হাদিস ঘেঁটে দেখি, এটাই অধিক সত্য, অন্য হাদিসের তুলনায়। অথচ আমাদেরকে খুব সুকৌশলে আহলে বাইতের ভালোবাসা থেকে দূরে রাখতেই এসব হাদিসগুলো লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল। 

তাঁর লেংটা থাকা নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছেঃ আগেকার দিনে ভারতের জৌনপুর থেকে পীর সাহেবেরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আসতেন। শুকনো মৌসুমে আসতেন তাঁরা। নদী বা খালে পানশি রেখে পালকি দিয়ে এ-গ্রাম থেকে ও-গ্রামে যেতেন, মানুষকে মুরিদ করাতেন আর হাদিয়া নিতেন। একবার মাওলানা আব্দুর রব জৌনপুরী সিদ্দিকী রহঃ এসেছিলেন বেলতলি আমাদের এলাকায়। বেলতলির কাছে নদীতে পানশি রেখে তিনি বিভিন্ন গ্রামে যেতেন। গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একবার মাওলানা আব্দুর রব সাহেবের কাছে নালিশ করলেন সোলায়মান শাহের ব্যাপারে। বললেন, ‘হুজুর আমাদের অঞ্চলে এক লোক আছে, সে কাপড় পরে না। আপনি একটু তাকে দেখুন।’ তিনি বললেন, ‘তাকে আমার কাছে নিয়ে আসুন’। লোকে এসে তাকে মাওলানা আব্দুর রব সাহেবের সাথে দেখা করতে বললে তিনি খুব সুন্দর করে পায়জামা আর পাঞ্জাবী পরিধান করে সুগন্ধি লাগিয়ে পানশিতে দেখা করতে গেলেন। অন্য সবাইকে বের করে দিয়ে দু’জনে সেদিন অনেকক্ষণ আলাপ করেছিলেন। লোকজন পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘তোমরা তো কেউ মানুষ না। তোমাদের সামনে কিসের কাপড় পরবো? উনি মানুষ, তাই উনার সামনে কাপড় পরে গিয়েছি।’  

বাংলা ১২৩০ সালে (১৮২৩ খৃঃ) দাউদকান্দির গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন হযরত সোলায়মান শাহ। ১৩২৫ সালে মোতাবেক ১৯১৯ সালের ১৭ ই চৈত্র তিনি ইন্তিকাল করেন। বদরপুরে তাঁর বোনের বাড়িতে (মোল্লাবাড়ি) তাকে সমাহিত করা হয়। যেদিন উনি ইন্তিকাল করেন সেদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। এখনো এ সময়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়।

তাঁর উরস উপলক্ষে সেখানে মেলা বসে। সে মেলা সাতদিন স্থায়ী হয়। দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয় সেখানে। তবে মেলার পরিবেশ খুব একটা ভালো থাকে না। নেশা, গাঞ্জা, জুয়া, যাত্রা, দোকানপাট, সার্কাস, গানের আসর আর নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা – সব মিলিয়ে ভিন্ন এক রূপ লাভ করে সে মেলা। কোটি টাকার মামলা এটা। ১৭ চৈত্র আছরের পর থেকে দরূদ ও মিলাদের মাধ্যমে শুরু হয় মেলা, চলে ২৩ তারিখ দুপুর পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে এক সেকেন্ডের জন্যেও গান ও ঢোলের বারি বন্ধ হয় না। কয়েক কিমি ব্যাপী শত শত ডেরায় চলে গান, নারীপুরুষের সম্মিলিত নাচ, পালাগান আর খাওয়া-দাওয়া। ভক্তিমূলক গান, ভাবের গান, ইসলামী গান, লালনের গান, হাছন রাজার গান, বয়াতি গান, মরমি গান। প্রতিটি গানের সাথে অবাক করে বাজতে থাকে একই সুর ও লয়। ঢোলের বারিতে একটি শব্দই প্রতিধ্বনিত হয়, তা হলো, “হায়রে লেংটা, দোয়াই লেংটা”। দিনের চেয়ে রাতের মেলা জমে বেশি। মেলার সময়ে ওখানকার পরিবেশ থাকে কিছুটা ময়লাময়। চারিদিকে পায়খানা আর পেশাব। তবে অবাক কাণ্ড হলো এতো ময়লার পরও সেখানে কোনও দুর্গন্ধ ছড়ায় না। মেলা শেষ হলে দুর্গন্ধে ওখানে হাঁটা যায় না। তবে আরো একটি অবাক করার ব্যাপার ঘটে, তা হল মেলা শেষ হবার পর প্রতি বছর মুষলধারে বৃষ্টি নামে। এই বৃষ্টিতে সমস্ত ময়লা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়।

[আমি সর্বশেষ মেলায় গিয়েছিলাম খুব সম্ভবত ১৯৮৬ সালের দিকে। তবে ২০০১ সালে সোলায়মান শাহ রহঃ এর মাজার জিয়ারতে গেলে তা তালাবদ্ধ পাই। খাদেম লাল মিয়াকে খবর দিলে তিনি এসে আমার জন্য মাজারটি খুলে দেন।]

আজ ১৭ চৈত্র। ১০১ তম উরস শুরু হচ্ছে আজ। আল্লাহ্‌ পাক এই মজ্জুব অলিকে জান্নাতে উচ্চ মাকান দান করুন। তাঁর উছীলায় আমাদেরকে আহলে বাইতের আশেক ও গোলাম হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

[ভালো লেগে থাকলে লেখাটি কপি করে আপনাদের টাইমলাইনে পোষ্ট করতে পারেন। আর দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।]

Comments

4 responses to “সোলায়মান শাহ রহঃ-এর একটি কারামত”

  1. Hasnain Mahmud Siddiki Avatar

    আপনার প্রতিটি লেখাতেই দ্বীনের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো দরদ ফুটে উঠে
    অন্তর থেকে ভালবাসি
    আল্লাহর জন্য
    جزاكم الله خيرا و احسن الجزء

    1. Dr. Abdul-Baten Miaji Avatar
      Dr. Abdul-Baten Miaji

      জাজাকাল্লাহু খাইরান ভাইজান, আপনার সুন্দর এবং উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য। এ প্রেরণা রাসুলপ্রেমের টনিক হিসেবে কাজ করবে।

  2. Hasnain Mahmud Siddiki Avatar

    جزاكم الله خيرا و احسن الجزء

  3. Arafat Avatar
    Arafat

    খুব ভালো লাগসে আপনার কথা গুলো আমি নিজেও একজন ওলি ভক্ত লোক মানুষ বুঝে না দোষ তো আল্লাহর ওলি না মানুষের নিজের মানুষ কখনও নিজের দোষ ধরে না আরেকজনের উপর চাপায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভাই ভালো থাকবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *