অভদ্র আচরণ বা গালাগালি সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস কী বলে?
নীচে কুরআন এবং হাদিসের আলোকে গালাগালি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। আপনি এগুলো আপনার সংগ্রহে রাখতে পারেন। যাতে সময় মতো এর সঠিক প্রয়োগ করতে পারেন। তবে ভুলেও আপনি প্রতিপক্ষকে গালি দিতে যাবেন না। বরং প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করতে দিন।
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেন,
“মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না (গালি দিও না)। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গর্হিত। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।” [সূরা আল-হুজরাত ৪৯:১১]
আল্লাহ পাক অন্য এক আয়াতে এরশাদ করেন, “ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মুর্খ জাহেলদের কাছ থেকে দুরে থাকো।” [ সুরা আরাফ: ১৯৯ ]
অন্য আয়াতে এসেছে, “রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।” (সুরা ফোরকানঃ ২৫:৬৩)
হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেই প্রকৃত মুসলমান যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বি আল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদেরকে গালাগালি করা ফাসেকি আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফরী। [বুখারী ৪৮, মুসলিম ৬৪]
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই বাক্তি যে তার বাবা মাকে গালি দেয়! সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ, কেউ কি তার বাবা মাকে কখনো গালি দেয়? উত্তরে তিনি বলেন, যে তার অপর মুসলমান ভাইয়ের মা বাবাকে গালি দেয় আর বদলে সেও তার বাবা মাকে গালি দেয়। [বুখারী, মুসলিম]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বি আল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুনাফেকের ৪ টা আলামতের একটা হলো যখন ঝগড়া করে তখন অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে। [বুখারী শরীফ: ২২৯৭]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুমিন খোটা দানকারী, অভিশাপকারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীল ভাষী হয় না। [তিরমিজি ১৯৭৭, মুসনাদে আহমদ ৩৮২৯]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে বাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে তার উচিত হয় উত্তম কথা বলা নয়তো চুপ থাকা। [বুখারী: ৬০১৮]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যে বাক্তি উভয় চোওয়ালের মধ্যভাগ (জিহবা) ও দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জাস্থান) হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি। [বুখারী: ৬৪৭৪]
হজরত আলী রাদ্বি আল্লাহু তালা আনহু বলেন, নিচু লোকের হাতিয়ার হলো গালি, সে যদি খারাপ কিছু বলে তার কথার জবাব দিওনা, কেননা হতে পারে এর চেয়েও খারাপ কোন বাক্য তার ঠোঁটের কাছেই রয়েছে, তুমি যদি উত্তর দাও তাহলে সে তা বলতে শুরু করবে|
তবে মনে রাখবেন, আপনি দলিল দেন আর নাই দেন, বাতিলেরা কখনই হেদায়েত প্রাপ্ত হবে না। দলিল আর যুক্তি দিয়ে তাদেরকে বহুবার পরাভুত করা হয়েছে। কিন্তু তারা তা মেনে নেয় না। খনিকের জন্য চুপ থাকে। আবার অন্য পোস্টে গিয়ে পূর্বের মতই আচরণ করতে থাকে।
তবে আশার কথা হল, তারা হক আক্বীদায় না আসলেও সাধারণ মুসলমানগণ আমাদের ভালো ব্যবহার, দলীল আর যুক্তি দেখে ঠিকই সত্য গ্রহণ করবে, যদি আল্লাহ পাক তাদের জন্য হেদায়েত নসীব করেন। ধন্যবাদ!