“নূর” সংক্রান্ত হাদিস নিয়ে দেওবান্দি ওহাবীদের মিথ্যাচারের জবাব

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।
ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم
কথায় আছে – “মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত”। আবার কিছু কিছু কাঠমোল্লার দৌড় সৌদি নজদি সরকার কর্তৃক রচিত কিতাব পর্যন্তই। এর বাইরেও যে আরও কিছু থাকতে পারে, তা তাদের শূন্য মগজে ধরেনা। তাদের কাছে সিহাহ সিত্তার কিতাবই সব। এর বাইরেও যে আরও বহু সহীহ হাদিস গ্রন্থ রয়েছে তা তারা জানেও না, আর অন্য কেউ বলে দিলে তারা তা মানতেও চায়না। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে বর্ণিত “নূর” সংক্রান্ত হাদিসের বেলায়ও তাদের অজ্ঞতা আরও ব্যাপক। ইতিহাস প্রসিদ্ধ অসংখ্য কিতাবে “নূর” সংক্রান্ত হাদিসটি মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে রয়েছে বলে রেফারেন্স থাকার পরও তারা দানাই ফানাই করে মিথ্যাচার করার অপচেষ্টা করে থাকে যে উক্ত গ্রন্থে হাদিসটি নেই। তা নাকি সুন্নিদের আবিষ্কার। 
তাদের মিথ্যাচার উন্মোচন করার পূর্বে ছোট্ট একটি গল্প বলে নিতে চাই, তাহলে তাদের অজ্ঞতা কিছুটা হলেও পরিমাপ করা সম্ভব হবে। অজো পাড়াগাঁয়ের এক গরীব কৃষক যমুনা ব্রিজ দেখে বলে উঠলো, “মাগগো মা, এত্ত বড় ব্রিজ বানাইতে ৫০০ টাকার কম খরচ হয় নাই।” অর্থাৎ ওই নিরক্ষর গরীব কৃষক জীবনে ৫০০ টাকার বেশী দেখেওনি, আর এর চেয়ে বেশী টাকার মালিক সে কোনদিন হতেও পারেনি। কাজেই তার স্বল্প জ্ঞানে যমুনা ব্রিজের খরচ ৫০০ টাকাই জুতসই মনে হয়েছে।

“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত” নামের ভুয়া একটি পেজের এডমিন কোন এক অখ্যাত মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল দেওবান্দিপন্থী, তার স্বল্প জ্ঞানের পরিধিতে বুঝে ফেলেছে যে মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবে নূর বিষয়ক যে হাদিসের কথা বহুল প্রচলিত তার নাকি কোন অস্তিত্ব নেই। তা নাকি সুন্নী ওলামা বিশেষ করে আলা হযরত ইমাম আহমাদ রেজা খান রহঃ কিংবা সুন্নীদের বানানো। তার এই অনুধাবন থেকে সে কেবল একটির পর একটি পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে তার অজ্ঞতা প্রসূত মিথ্যাকে বাস্তবে রূপ দানের জন্য। তার প্রধান যুক্তি হল হাদিসের পৃষ্ঠা নম্বরে গরমিল নিয়ে। ২য় যুক্তি হল লাহোর থেকে প্রকাশিত কিতাবটির স্ক্রিনশট। পাকিস্তানের লাহোর থেকে উর্দু অনুবাদসহ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাককে সে রেজভিদের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছে।
তার উত্থাপিত অন্য আরেকটি লিংক-এ দেখলাম “মাক্তাবাতুল ইসলামিয়্যা”য় মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে, যা ওহাবীদের প্রকাশনা। ১৯৮৩ সালে এই কিতাবটি প্রকাশের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে “নূর” সংক্রান্ত আলোচ্য ১৮ নং হাদিসটি বাদ দেয়া হয়েছে।

এই যুক্তিগুলোকে সামনে রেখে সে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে যে মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে নূর বিষয়ক কোন হাদিস নেই। কাজেই আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরকে যে প্রথমে তৈরি করা হয়েছে বলে যে দাবি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত করে আসছে তা ভ্রান্ত এবং শিরকের পর্যায়ে পড়ে। নাউজুবিল্লাহ!

তাদের অজ্ঞতাপ্রসূত যুক্তি খণ্ডন
পৃষ্ঠা নম্বরে গরমিলের কারনঃ
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবটির মূল কপি এখন মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। তবে তা অতি পুরাতন হবার কারণে গ্রান্থাগারে কোন পাঠক তা স্পর্শ করতে পারেন না। মূল কিতাবের ৯৯ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে নূর বিষয়ক হাদিসটি। আর হাদিস নং ১৮ তা বর্তমানে অপরিবর্তিতই আছে। বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ উত্থাপিত হবার পর বৈরুত থেকে ২০০৫ সালে (১৪২৫ হিজরিতে) উক্ত হাদিস সহ বাদ যাওয়া অন্য সব হাদিস নিয়ে কিতাবটি আবার প্রকাশিত হয়। আর বৈরুত থেকে প্রকাশিত কিতাবে ১৮ নং হাদিসটিই হল আমাদের আলোচ্য নূর বিষয়ক হাদিস যা স্থান পেয়েছে ৬৩ থেকে ৬৬ নং পৃষ্ঠায়। ফলে মূল কিতাব আর পরে প্রকাশিত কিতাবে পৃষ্ঠা নম্বরে পার্থক্য থাকাই সাভাবিক। অন্য দিকে আরব আমিরাতে সরকারীভাবে বাদ পড়ে যাওয়া হাদিসগুলো নিয়ে ছোট্ট একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। ফুটনোটে তিন জন রাবীর জীবনী এবং হাদিস শাস্ত্রে তাদের অবদানও বর্ণিত হয়েছে যা স্ক্রিনশটে স্পষ্ট বোঝা যায়।

এখন ওহাবী নজদিদের প্রকাশিত কিতাব দেখে (অনলাইনে প্রাপ্য) যে কেউ বিভ্রনাতির মধ্যে পড়তে পারে। যেমনটি তারা পড়েছে।

স্ক্রিনশটের সমধানঃ
লাহোর থেকে প্রকাশিত কিতাবে উর্দু তরজমা রয়েছে ফলে দেওবান্দি পন্থীরা অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে যে মূল কিতাবে এই হাদিসটি নেই কিন্তু লাহোর থেকে প্রকাশি কিতাবে সুন্নী ওলামাগণ চালাকি করে তা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তর্কের খাতিরে আমি লাহোর থেকে প্রকাশিত কিতাবের প্রসংগ বাদ দিতে চাই। হতে পারে তাদের ভাষায় রেজভিরা তাদের নিজস্ব প্রেস থেকে প্রিন্টের সময় ইচ্ছা করে ওই হাদিস ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিন্ত্য আমার কাছে উক্ত হাদিসটির আরও যে দুটো স্ক্রীনশট রয়েছে তা রেজভিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। একটি ইস্তাম্বুল থেকে আর আরেকটি আল-আজহার থেকে। আল-আজহার থেকে সম্প্রতি তা পাঠিয়েছেন সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হাসান নামে আল-আজহারে পড়ুয়া আমার এক বন্ধু। তিনি তার মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে পাঠিয়েছেন। দুটো কিতাবই বৈরুত থেকে ২০০৫ এ প্রকাশিত। ফলে পৃষ্ঠা নং একই।

না জেনে কিংবা মিথ্যা জেনে অন্যকে দোষারোপ করা কোন মুমিনের কাজ নয়। তারা আরও দাবি করে আসছে যে ফটোশপ দিয়ে কারসাজি করে স্ক্রিনশটে উক্ত হাদিসটি বসানো হয়েছে। এটা তারা অজ্ঞতা থেকে বলছে। কারণ কারসাজি করলে বোঝা যায় যে তাতে কারসাজি করা হয়েছে কিনা। আর আসল চিরদিনই আসল। যে কেউ ভাল করে লক্ষ্য করলে আর একটু বুদ্ধি খাটালেই তা অনুধাবন করতে পারবেন।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! পোস্টের ছবিতে দেখুন তো দুটো স্ক্রিনশটে কারসাজি করা হয়েছে কিনা?

তাহলে প্রমাণিত হল দেওবান্দি পন্থীরা ইচ্ছা করে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান ও মানকে ছোট করতে বদ্ধ পরিকর। কোন না কোন ভাবে তারা তা করতেই বেশী ভালবাসে। উক্ত ভুয়া আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পেজে এধরণের প্রচুর মিথ্যাচারের পোস্ট রয়েছে। আর ওখানে আরও কিছু পোস্ট রয়েছে আমাদের নবী (দঃ) কে বড় ভাইয়ের মত শ্রদ্ধা করা নিয়ে। তাদের গুরু ইসমাইল দেহলভির লিখিত এবং সৈয়দ আহমদ বালাকোটির নিঃসৃত পুস্তক “সিরাতুল মুস্তাকিম” কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে। তাদের পেজে আরও পাবেন কীভাবে আমাদের নবী (দঃ) আমাদের মতই মানুষ। নাউজুবিল্লাহ!


তাদের পরবর্তী আক্রমণ হল উপরোক্ত হাদিসটি দুর্বল। ইনশাল্লাহ আমি পরবর্তী পোস্টে উক্ত হাদিসের প্রত্যেক রাবির জীবনীর উপর আলোচনা করে প্রমাণ করবো তাদের এ দাবিও মিথ্যা। কাজেই আমাদের সাথেই থাকুন আর এ পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ! ধন্যবাদ! [এই স্ক্রিনশটের পরও কারো মনে সন্দেহ থাকলে অপেক্ষা করুণ। আল-আজহারে আমার বন্ধুকে উক্ত হাদিসসহ আলোচিত কিতাবের একটি ভিডিও পাঠাতে অনুরোধ করেছি। শিগ্রই তা আমার কাছে এসে যাবে ইনশাল্লাহ!]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment