রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুজাহানের বাদশাহ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
অনেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুজাহানের বাদশা বলতে আপত্তি করে আর নবী (দঃ) কে আল্লাহর দাস হিসেবে দেখতে চায় নাউজুবুল্লাহ!) তাদের জন্য এই পোস্ট।

ভুমিকা
১। প্রথমেই বলে নেই মহান আল্লাহ হলেন রাব্বুল আলামীন। তিনি সৃষ্টির একচ্ছত্র অধিপতি, মালিক, প্রতিপালক। আর মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (দঃ) হলেন সমগ্র বিশ্বসমূহের রহমত। নূর। সিরাজামমুনিরা। ইমামুল মুরসালীন। মানুষ জীন পশুপাখি সবার নেতাঃ সায়্যেদুস সাকালাইন, সাইয়্যেদুল কাউনাইন। আল্লাহ নিজে তাঁর প্রশংসা করেন আর দরূদ পড়েন। ফেরেস্তারাসহ সবাই তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেবলমাত্র একজন বাদশাহর পক্ষেই এমন সম্মান পাওয়া সম্ভব। তিনি আল্লাহর কাছে একদিকে সৃষ্ট, আব্দ আবার অন্য দিকে সবচে বেশি সম্মানের। আব্দ শব্দের অর্থ দাস ব্যবহারে আমাদের বিরত থাকা উচিত। কারণ আরবি আব্দ শব্দের অনেক অর্থ হতে পারে। মূল শব্দ আবাদা থেকে এর উৎপত্তি। যার অর্থ দাঁড়ায় এমন ব্যক্তি যিনি তাঁর প্রতিপালক আল্লাহর এবাদতে মশগুল। আল্লাহ কুরআনের বেশ কিছু স্থানে তাঁকে আব্দ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ আল্লাহর ইবাদাত করা অতি সম্মানের আর এ ভাবেই তিনি তাঁর রাসুল (দঃ) কে সম্মানিত করেছেন। দাস আমরা সাধারনত যে অর্থে ব্যবহার করি সে অর্থে আল্লাহ ব্যবহার করেননি। যেমন কুরআনে হযরত আদম (আ) এবং হযরত ইউনুস (আ) নিজেদেরকে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা দেন। আমরা তাঁদেরকে জালেম হিসেবে দেখলে আমাদের ঈমান থাকবে না।

২। এবার দলীল দেখুন। কুরানঃ “হে আমার প্রিয় হাবীব, আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য কল্যান ও রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (২১:১০৭) তিনি সৃষ্টির সেরা ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহর পরে সমস্ত সৃষ্ট জগতে আর কেউ নেই তাঁর সমকক্ষ।

“আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।” (৯৪:৪) তাফসীরে এর বিস্তারিত ব্যখ্যা পাওয়া যায়, ইবনে আব্বাস (রা) এর বর্ণনা থেকে যে যেখানেই আল্লাহর নাম সেখানেই রাসুল (দঃ) এর নাম উচ্চারিত হয়।

“হে ঈমানদারগণ! নিজেদের কন্ঠস্বরকে উঁচু করোনা ঐ অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী) এর কন্ঠস্বরের উপর এবং তাঁর সামনে চিৎকার করে কথা বলো না যেভাবে পরস্পরের মধ্যে একে অপরের সামনে চিৎকার করো, যেন কখনো তোমাদের কার্যসমূহ নিষ্ফল না হয়ে যায়। আর তোমাদের খবরই থাকবেনা। নিশ্চয়ই যারা আপন কন্ঠস্বরকে নিচু রাখে আল্লাহর রাসূলের নিকট, তারা হচ্ছে ঐ সব লোক, যাদের অন্ত্মরকে আল্লাহ তায়ালা খোদাভীরুদের জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা পুরস্কার রয়েছে।” ( সূরা হুজরাত: ২-৩)

তিনি আমাদের মত সাধারণ মানুষ নন আর তাই অন্য মানুষের সামনে যেভাবে কথা বলা যায় তাঁর সামনে সেভাবে কথা বলা নিষেধ করা হয়েছে। এখানেই পার্থক্য। কারণ তিনি দুনিয়ার সব বাদশাহদের ও বাদশাহ। কুর্নিশ ইসলামে নিষেধ, কিন্তু সম্মান নিষেধ নেই। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর তিনি যখন বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদেরকে পত্র দিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তখন কয়েকজন ব্যতীত অনেক রাজা বাদশাহই তাঁর পদতলে নিজেদের লুটিয়ে দিয়েছিলেন।

“”এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ (নামায) কায়েম করবেন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। অতি শিগগিরই আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে” (সূরা বনী ইসরাঈল, ৭৯)। এই আয়াতটির ব্যাখ্যায় মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আশরাফী (রহ:) লিখেছেন, ”এতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুইটি বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। একটি দুনিয়ায় আর দ্বিতীয়টি আখিরাতে। দুনিয়ায় তাঁর বিশেষ গুণ তাহাজ্জুদের নামায পড়া, আর আখিরাতে ‘মাকামে মাহমুদে’ (প্রশংসিত স্থানে) উপনীত হওয়া। ….কিয়ামতের ময়দানে হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাকামে মাহমুদে উপনীত হওয়া তাঁর আখেরাতের বিশেষত্ব। এটি এমন পবিত্র স্থান যেখানে উপনীত হয়ে হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবার জন্য শাফায়াতে কুবরা (মহানতম ও সর্বপ্রথম সুপারিশ) করবেন।

দেখুন সূরা জুমারের ৫৩ নং আয়াত কি বলে। আমরা সবাই হলাম নবীজি (দঃ) এর দাস, গোলাম, বান্দা। কুরআন বলে আমরা তাঁর বান্দা।

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

যাকে হাউজে কাউসার দেয়া হয়েছে তিনি কি হতে পারেন?

৩। হাদিস থেকে দলিলঃ
হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম ইরশাদ করেন, সকল নবীর উপর পাঁচটি বিষয় আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। আমাকে জাওয়ামেউল কালিম (স্বল্প কথায় অধিক তাৎপর্যপূর্ণ বাক্যে কথা বলার শক্তি) দেয়া হয়েছে। শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চার করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য গনিমতের মাল হালাল করা হয়েছে। সমস্ত্ম জমিনকে আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্রকারী করা হয়েছে। আমি সমস্ত্ম সৃষ্টির নিকট প্রেরিত হয়েছি। আমার উপরই নবুয়তকে শেষ করা হয়েছে। (মুসলিম : আস সহীহ, ৩/১০৯, হাদীস : ৮১২)
আমরা আমাদের মত মানুষকে আমাদের নেতা, বাদশাহ, সম্রাট রাজা মানতে পারি আর যিনি সৃষ্টির সেরা তিনি কি বাদশাহ হতে পারেন না?

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমাকে বেতেশতী পোশাক পরানো হবে, অতঃপর আমি আরশের ডানে দাঁড়াব। আমি ছাড়া কোন সৃষ্টি ঐ স্থানে দাড়াতে পারবেনা। (তিরমিযী : আস সুনান, হাদীস : ৩৫৪৪)

এই হাদিসটি থেকে আরও পরিষ্কার হয়ে গেল যে তিনি এই দুনিয়াতে যেমন বাদশাহ ছিলেন তেমনি পরকালেও বাদশাহ অর্থাৎ আল্লাহর পরে সবকিছু তাঁর অধীনে থাকবে। “আমার কতগুলো নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মদ, আমি আহমদ, আমি বিমোচনকারী, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কুফূরী উৎপাটন করেছেন। আমি হাশরের ব্যবস্থাপক আমার চরণযুগলের নিচে হাশর হবে।” (বুখারী হাদীস : ৩২৬৮/মুসলিম হাদীস : ৪৩৪৩)

হযরত ওক্ববাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেছেন, হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন— নিশ্চয় আমাকে পৃথিবীর সমস্ত ধন-ভান্ডারের চাবিগুচ্ছ দেওয়া হয়েছে। {বোখারী শরীফ ৮ খণ্ড, ৭৬ অধ্যায়, ৪৩৪ নং হাদিস)
যাকে সমস্ত ধনভাণ্ডারের চাবিগুচ্ছ দেয়া হয়েছে তিনি কি আপনার আমার মত সাধারণ?
যেমন মক্কা বিজয়ের সময় নবীকুল সরদার (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) আপন উম্মতকে পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের বাদশাহীর ওয়াদা দিয়েছিলেন । তখন ইহুদি ও মুনাফিক্বরা সেটাকে অসম্ভব মনে করলো। তারা বলতে লাগলো-পারস্য ও রোম সাম্রাজ্য অতিমাত্রায় শক্তিশালী। সুতরাং এ ওয়াদা পূরণ হবার নয়।
(খাযাইনুল ইরফান সুরা আল-ইমরান, আয়াত ২৬ এর শানে নূযুল)
অথচ এ ওয়াদা যথাসময়ে পূরণই হয়েছে।

সবকিছুর প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর এ কথাও সত্য এবং যুক্তিযুক্ত যে, এ মহান মালিকের যিনি মাহবুব (ঘনিষ্টতম বন্ধু) তিনি আল্লাহর দানক্রমে উভয় জাহানের মালিক ও হুকুমদাতা। কারণ প্রেমিক ও প্রেমাষ্টদের মধ্যে সম্পর্ক অটুট থাকে আর প্রেমিক তার সমস্ত জিনিষের মধ্যে আপন মাহবুবকে ইখতিয়ার ও অনুমতি দিয়ে থাকেন । কোন কিছু তাঁর নিকট থেকে গোপন করেন না। তাই আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
আমি তো রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম)কে মালিকই বলবো। কারণ তিনি হলেন মহান মালিকের হাবীব। বস্তুত প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের মধ্যে আমার –তোমার নেই। (হাদাইক্বে বখশিশ)

হিজরতের সময় হুযূর-ই আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) হযরত সুরাক্বাহ ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে বললেন, হে সূরাক্বাহ ওই সময় তোমার কী শান হবে, যখন কিসরার (ইরান সম্রাট) স্বর্ণের কারুকার্য কৃত কাঁকন তোমার হাতে পরানো হবে? উল্লেখ্য যে ওই সময় সুরাকা নবী (দঃ) কে পাকড়াও করে আরবের কাফেরদের হাতে তুলে দিতে অগসর হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ সবকিছুকে নবী (দঃ) এর অধিনস্ত করে দিয়েছিলেন। ফলে মাটি সুরাকাকে চেপে ধরেছিল। সরকার-ই দুআলম (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম)কে এ অদৃশ্য সংবাদ হযরত ওমর ফারুক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর খিলাফত আমলে পূর্ণ হয়েছে। ইরান বিজিত হলো। তখন মাল-ই গণীমত হিসেবে কিসরার কাঁকনও আসলো। হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু সুরাক্বাহ ইবনে মালিককে ডেকে ওই কাঁকন পরিয়ে দিয়িছেন।
{হুজ্জাতুল্লা-হি আলাল আলামীন ইত্যাদি। }

হযুর আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করছেন—
কিয়ামতের দিন লোকেরা যখন নিরাশ হয়ে যাবে, তখন কারামত ও চাবিগুচ্ছ আমার হাতে থাকবে। আর প্রশংসার পতাকা (লিওয়া-উল হামদ) আমার হাতে থাকবে।
{দারেমী, মিশকাত শরীফ পৃঃ ৫১৪।}

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর ও তাঁর হাবীবকে প্রদত্ত ধন-ভান্ডার থেকে উভয় জাহানে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু দান করুন। আমিন।

[Special thanks to Sohel Rana and Madinar Jatri for helping with references]

দু’জাহানের বাদশাহ নবী কামলিওয়ালা ﷺ
১ম পর্বঃ নবী ﷺ দুনিয়ার বাদশাহ্
بسم الله الرحمن الرحيم
اللهم صلى على سيدنا محمد وعلى آل سيدنا محمد وبارك وسلم

নবী ﷺ কে দুজাহানের বাদশাহ বললে ওহাবী, আহলে হাদিস, জামাত-শিবির, লা-মাজহাবীদের কলিজা ছিঁড়ে যায়। তারা বলে দুজাহানের বাদশাহ আল্লাহ, নবী নয়। কেমন মুর্খের মত উক্তি। তারা শিরক শিরক বলে চিৎকার করছে। তাদের জন্য এই দলীল। আল্লাহ পাক যে সব কিছুর স্রষ্টা আর মালিক তা নিয়ে কি কারো সন্দেহ রয়েছে? আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ কে দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ দিয়ে তাঁকে বণ্টনকারী বানিয়ে দিয়েছেন (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)। পৃথিবীতে তিনি রহীম, সমগ্র বিশ্বসমূহের জন্য রহমত, সায়্যেদুল কাউনাইন, সায়্যেদুস সাকালাইন, ইমামুল মুরসালীন। আর আখেরাতে তিনি শাফায়াতকারী, হাউজে কাউসার প্রাপ্ত, আরশে আল্লাহর ডানপাশে উপবিষ্টকারী ও মাকামে মাহমুদ প্রাপ্ত।

হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত ওসমান ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম কি ছিলেন? উনারা ছিলেন মুসলিম জাহানের খলিফা অর্থাৎ শাসক। যাঁদের অধীনে প্রতিটি মুমিন ছিলেন আর এজন্য এঁদেরকে বলা হতো আমীরুল মুমেনীন, মুমিনদের আমীর, সর্দার, নেতা। এখন প্রশ্ন নবীজি ﷺ জীবিত থাকাকালীন কি ছিলেন? দেখুন কুরআন কি বলেঃ

“আপনার রব (আল্লাহ পাক) এর কসম! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের জাহিরী এবং বাতিনী প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ﷺ কে ফায়ছালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে এবং তাদের অন্তরে সে বিষয়ে চুল-চেরা সংকীর্ণতা না থাকবে। বরং বাহ্যিক- আভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকে তা আনুগত্যতার সাথে মেনে নিবে।” (সূরা নিসা-৬৫)

নবী করীম ﷺ কে জাহেরি বাতেনি প্রত্যেক ব্যাপারে ফায়সালাকারী না মানলে ঈমান আনার পর ও সে মুমিন হতে পারবে না। তিনি ছিলেন বিশ্বনেতা, সায়্যেদে আরব ও আজম, আরব অনারব সবার নেতা। সায়্যেদুল কাউনাইন, সায়্যেদুস সাকালাইন। শুধু তাই নয়, তিনি সব নবী-রাসুল (আ) গণের নেতা বা ইমাম। মিরাজের মাধ্যমে আল্লাহ পাক সৃষ্টির সবকিছুকে তাঁর পায়ের নিচে ও অধীন করে দিলেন। তাঁকে বাদশাহ বলে সম্বোধন করা হতো না। কিন্তু তিনি দুনিয়ার কোন বাদশাহর চেয়ে কোন দিক দিয়ে কি কম ছিলেন?
আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে বাদশাহ মানলে যদি শিরক করা হয় তাহলে তাদের দাবি অনুযায়ী আল্লাহ নিজে শিরক করেছেন, নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ বলেনঃ

“হে আমার হাবীব, আপনি বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।”
অর্থাৎ আল্লাহ পৃথিবীর মানুষদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে বাদশাহ বানান। তাহলে সৃষ্টির সেরা এবং সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য যিনি রহমত তাঁকে বাদশাহ বললে সমস্যা কোথায়? সমস্যা নবীদুশমনদের অন্তরে। তাদের অন্তর বক্র এবং নবী বিদ্ধেষে পরিপূর্ণ। নবী ﷺ এর প্রসংশা, শান ও মান শুনলে তাদের খুব কষ্ট হয়। উল্লেখ্য সৌদি বাদশাহগণ নিজেদেরকে মালেক বা বাদশাহ বললে তা শিরক হয়না। সৃষ্টির সেরা মুহাম্মাদ ﷺ কে বাদশাহ বললে শিরক হয়। একমাত্র মুর্খরাই তা বলে, বিশাস করে ও মানে। সৌদি বাদশাহদের নামের আগে ملك ব্যবহৃত হয়। سلطان ও আরবি শব্দ অথচ তারা এটি ব্যবহার করে না।

নবী ﷺ কেবল মুসলিম জাহানের বাদশাহই ছিলেন না তিনি হলেন মুমিনদের অভিভাবক ও দুঃখ কষ্ট দূরকারী। আল্লাহ পাক বলেনঃ

“নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তাশরীফ এনেছেন তোমাদের মধ্য থেকে সেই রাসূল, যাঁর কাছে তোমাদের দুঃখ-কষ্ট অত্যন্ত বেদনাদায়ক, যিনি তোমাদের উপকার একান্তভাবে কামনাকারী এবং যিনি মু’মিনদের ওপর পূর্ণ দয়াবান।” (সূরা তওবা, ১২৮)।

পৃথিবীর কোন নেতা, সম্রাট, বাদশাহ বা রাজাই আমাদের জন্যে অনুকরণীয় নয় যেমন অনুকরণীয় মুহাম্মাদূর রাসুলুল্লাহ ﷺ আর এজন্যেই আল্লাহ ঘোষণা করেনঃ

“অবশ্যই রাসুলুল্লাহ-এর মধ্যে তোমাদের জন্যে রয়েছে সুন্দরতম অনুকরণীয় আদর্শ” (সূরা আহযাব, ২১)।

রাসুল ﷺ নিজে কি বলে দেখুনঃ “নিশ্চয়ই আমি বণ্টনকারী, আল্লাহ্ তা’লা দাতা” (মেশকাত শরীফ, জ্ঞান অধ্যায়)। পৃথিবীর এমন কোন রাজা-বাদশাহ রয়েছেন যিনি আমাদের প্রিয় নবী ﷺ এর মত এমন বণ্টনকারী? তিনি কেমন বণ্টনকারী তা পূর্বের পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে সহিহ হাদিস দিয়ে। এখানে তার পুনরাবৃত্তি করলাম না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে কুরআন, হাদিস ও ইসলামকে বোঝার ও জানার তৌফিক দান করুণ। আর আমাদের সবাইকে যেন নবীপ্রেমিক বানিয়ে দেন। আমীন!

উল্লেখ্য হুদায়বিয়ার সন্ধির পর নবী ﷺ যখন ইসলামের প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়ে দিকে দিকে পত্র পাঠাতে লাগলেন, পারস্য আর রোমের শাসকদের ব্যতীত অন্য সব রাজা-বাদশাহগণ নবীজি ﷺ এর পদতলে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আরবে তখন রোম আর পারস্যের অধীনে অনেক ছোট ছোট অঙ্গরাজ্য বিদ্যমান ছিল। তাদের সবাই নিজেদের রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে ইসলামের পতাকাতলে মুহাম্মাদ ﷺ কে নিজেদের নেতা ও মালেক বা বাদশাহ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। মিশরের অধিপতি নিজের আনুগত্য প্রকাশের সাথে সাথে কিছু উপঢৌকনও দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল উম্মুল মুমেনিন মারিয়া কিবতি ও তাঁর বোন, সিল্ক ও কিছু সোনাদানা। তাবুক অভিযানে কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। কিন্তু তাবুকের আশে পাশের ছোটো ছোট অঙ্গরাজ্যগুলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে মুসলমানদের অধীনে চলে আসে। তখন মুসলমানদের শাসক ছিলেন কে? এ প্রশ্ন ওই মুর্খদের কাছে। এক শাসক অন্য শাসকের সাথে চুক্তি করে। তাদের কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ না করে ও মুহাম্মাদ ﷺ কে তাদের শাসক/বাদশাহ মেনে নিয়েই চুক্তি করেছিলেন।

বিঃদ্রঃ পরের পর্বে ইনশাল্লাহ নবী ﷺ কীভাবে পরকালের বাদশাহ তা তুলে ধরবো। আমাদের সাথেই থাকুন আর পোস্টটি শেয়ার করে আপনার বন্ধু ও পরিবারের অন্যদেরকে আহলে হাদিস, ওহাবী, সালাফী নামধারীদের মিথ্যা প্রবঞ্চনা থেকে বাঁচান।

সৌজন্যেঃ ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী, সুইডেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment