হায়াতুন নবী (ﷺ) সম্বন্ধে একটি গবেষনাধর্মী আলোচনা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

★★★★★★ ★★★★ ★★ ★★★★★★★★★

প্রথমেই চলুন দেখে নিই কিভাবে সাজানো হয়েছে এই প্রবন্ধটি>>>

রাসুল (সা)এর দুনিয়া থেকে ওফাত লাভ করেছেন। উনার মৃত্যু শহীদি মৃত্যু। শহীদদের মর্যাদা। শহীদগনের রুহের অবস্থান রাসুল (সা) এর রুহের অবস্থানের পার্থক্য। নবীরা কবরে স্বশরীরেই জীবিত এবং হাদিসে বর্নিত উনাদের বার‍যাকের জীবনের বেশ কিছু কাইফিয়ত যা দুনিয়াবাসিদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যেমনউনাদের রুহ দুনিয়াবাসিদের মত উনাদের দুনিয়ার শরিরেই থাকে, নামাজ পড়া, সালামের জবাব দেয়া, দোয়া করা,শুনতে পাওয়া, রিযিক প্রাপ্ত হওয়া ইত্যাদি। আরো দুটি বিশেষ অবস্থা,যথাআসমান এবং জমিনে স্বশরীরে বিচরন। ইত্যাদি,, ,,,

রাসুল (সা)এর দুনিয়া থেকে ওফাতঃ

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ

“মুহাম্মদ (সাা.)তো একজন রাসূলই, আর তার পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।

(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৪৪)

অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ

“(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।

(সূরাহ যুমার, আয়াত নং ৩০)

সুতরাং একদিকে যেমনিভাবে নবীগণের ইন্তিকাল বা শির ওপর ঈমান রাখা অপরিহার্য, তেমনি এর সাথে সাথে এ ঈমান পোষণ করাও কর্তব্য যে, নবীগণ বরযখী জগতে বা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন এবং তাঁরা তাঁদের সেই বারযাখী জীবনে জীবিত মানুষের ন্যায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লাভ করেছেন-যা অপর সাধারণ মৃত ব্যক্তির নেই। যেমন, কবরে সশরীরে জীবিত থাকা, যমিন তাদের শরীর না খাওয়া, সেখানে রিযিক লাভ করা, নামায পড়া প্রভৃতি।

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু শহীদি মৃত্যুঃ

বুখারি শরীফের হাদিসে এসেছে,,,,,,

وَقَالَ يُونُسُ عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ عُرْوَةُ قَالَتْ عَائِشَةُ ـ رضى الله عنها ـ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ ” يَا عَائِشَةُ مَا أَزَالُ أَجِدُ أَلَمَ الطَّعَامِ الَّذِي أَكَلْتُ بِخَيْبَرَ، فَهَذَا أَوَانُ وَجَدْتُ انْقِطَاعَ أَبْهَرِي مِنْ ذَلِكَ السَّمِّ “.

আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত তখন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আয়েশা! খায়বরে যে বিষমিশ্রিত খাদ্য আমি খেয়েছিলাম, সে বিষের প্রভাবে আমার শিরা-উপশিরা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। (বুখারি -৪৪২৮)

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থের গ্রন্থাকার ইবনে কাসীর (রহ) খায়বারের যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিষ প্রয়োগের ঘটনা বর্ণনা করার পর বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শহীদি মৃত্যু হয়েছিল। কেননা যুদ্ধাবস্থায় আহত হয়ে, ওই আহত হওয়ার কারণে মৃত্যুবরণ করলে তা শহীদি মৃত্যু হবে এবং এ বিষয়ে সবাই একমত। আর নবীকারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বেলায়ও তাই হয়েছিল।

পবিত্র কুরআনে শহীদগণকে জীবিত ঘোষণাঃ

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন

وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ

“আল্লাহর পথে যারা নিহত (শহীদ) হয়, তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।

(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ১৫৪)

আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ

“যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয়েছে, তোমরা তাদেরকে মৃত জ্ঞান করো না। বরং তারা জীবিত; তাদের রবপ্রতিপালকের নিকট তারা রিযিকপ্রাপ্ত হয়।

(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৬৯)

উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহর পথে শহীদগণের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে মৃত বলা যাবে না। বরং তারা জীবিত। আবার উক্ত আয়াতদ্বয়েই রয়েছে যে, যারা নিহত (শহীদ) হয়েছেন অর্থাৎ মারা গিয়েছেন। কিন্তু তবুও তাদেরকে জীবিত বিশ্বাস করতে হবে।

এর স্বরূপ বা ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসীরের কিতাবে রয়েছেদুনিয়াতে তাদেরকে সকলে নিহত বা শহীদ হিসেবেই জেনে কাফনদাফন করেছেন। কিন্তু দুনিয়াবী মৃত্যুর পর আলমে বরযখে তারা জীবিতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অনন্য জীবন লাভ করেছেনযে জীবনে তারা মহান আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় জীবিত বলে ভূষিত হয়েছেন এবং তাদেরকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক দেয়া হয়যা তাদের বিশেষভাবে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। এক্ষেত্রে যদিও মুমিন বা কাফির নির্বিশেষে সকল মৃত ব্যক্তিরই আলমে বরযখে জীবিত হয়ে সুওয়ালজাওয়াব আরাম বা আজাবের সম্মূখীন হওয়ার কথা হাদীস শরীফে রয়েছে, কিন্তু শহীদগণের এক্ষেত্রে বিশেষত্ব হলো, অন্যান্য মৃতের তুলনায় তাদের জীবনঅনুভূতি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অধিক তাৎপর্যমণ্ডিতযদ্দরুণ তারা জীবিত হিসেবে জীবনোকরণ স্বরূপ রিযিক লাভ করেন। আর তাদের জীবনঅনুভূতির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাদের বিশেষ ধরনের জীবনের কিছু লক্ষণ পৃথিবীতেই তাদের দেহে প্রকাশ পায় যে, তাদের দেহ মাটিতে খায় না; তাদের লাশ বরাবর অবিকৃত থাকে। ধরনের বহু ঘটনা পৃথিবীতে প্রত্যক্ষিত হয়েছে।

(দ্রষ্টব্য : তাফসীরে কুরতবী, ৩য় খণ্ড, ২১৩ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে ইবনে কাসীর [ইফাবা], ৪র্থ খণ্ড, ২২০ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন [ইফাবা], ২য় খণ্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)

আলমে বারযাকে সাধারন শহীদগনের রুহের অবস্থাঃ

—————————————————————————

শহীদগণ আলমে বরযখে কিভাবে জীবিত অবস্হায় জীবন অতিবাহিত করেন এবং রিযিক লাভ করেন, সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন

أَرْوَاحهمْ فِي جَوْف طَيْر خُضْرٍ لَهَا قَنَادِيل مُعَلَّقَة بِالْعَرْشِ تَسْرَح مِنْ الْجَنَّة حَيْثُ شَاءَتْ

“শহীদগণের রূহ সবুজ রঙের পাখির পেটের ভিতরে বিশেষ সম্মানিত অবয়বে অনন্য জীবন লাভ করে। আর তাদের জন্য আরশে প্রদীপসমূহ লটকানো হয়। তারা জান্নাতে যেখানে খুশী বিচরণ করেন।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৭)

শহীদগণ আলমে বরযখে রিযিক কীভাবে লাভ করেন সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

الشُّهَدَاءُ عَلَى بَارِقِ نَهْرٍ بِبَابِ الْجَنَّةِ ، وَيَظْهَرُ بِبَابِ الْجَنَّةِ فِي قُبَّةٍ خَضْرَاءَ يَخْرُجُ عَلَيْهِمْ رِزْقُهُمْ مِنَ الْجَنَّةِ بُكْرَةً وَعَشِيًّا

“শহীদগণ জান্নাতের দ্বারে নির্ঝরণীর ঝলকে সবুজ গম্বুজের মধ্যে অবস্হান করেন। তখন জান্নাত থেকে সকাল সন্ধ্যায় তাদের নিকট রিযিক আগমন করে।

(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৮৬)

অপরদিকে সাধারণ মুমিনগণের রূহ সম্পর্কে হযরত কা ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

إِنَّمَا نَسَمَةُ الْمُؤْمِنِ طَائِرٌ يَعْلُقُ فِي شَجَرِ الْجَنَّةِ ، حَتَّى يُرْجِعَهُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى جَسَدِهِ يَوْمَ يَبْعَثُهُ

“মুমিনের রূহ পাখিরূপে জান্নাতের গাছে বিচরণ করেযে পর্যন্ত রোজ কিয়ামতে তার দেহে তাকে ফেরানো না হবে।

(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৫৩৫১)

সুতরাং এক্ষেত্রে শহীদগণের রূহ তারকার ন্যায়যা সবুজ পাখির ভিতর প্রবেশ করে। পক্ষান্তরে সাধারণ মুমিনগণের রূহ স্বয়ং পাখির স্বরূপ হয়ে যায়।

(তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা)

নবীদের রুহের এবং সাধারন শহীদগনের রুহের অবস্থার পার্থক্যঃ

——————————————————————————————-

উপরের আলোচনা থেকে এটা বুজা যায় যে শহীদগনের রুহকে পাখির পেটের ভিতর রাখা হয়। কিন্তু নবীদের রুহকে পূনরায় উনাদের স্ব স্ব শরীরে প্রবেশ করানো হয়।

নবীদের শরীর মাটির জন্য ভক্ষণ করা হারামঃ

————————————————————————-

হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমানিত নবীদের শরীর মাটির জন্য ভক্ষণ করা হারাম সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফে সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْثِرُوا الصَّلَاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَإِنَّهُ مَشْهُودٌ تَشْهَدُهُ الْمَلَائِكَةُ وَإِنَّ أَحَدًا لَنْ يُصَلِّيَ عَلَيَّ إِلَّا عُرِضَتْ عَلَيَّ صَلَاتُهُ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهَا قَالَ قُلْتُ وَبَعْدَ الْمَوْتِ قَالَ وَبَعْدَ الْمَوْتِ إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ

হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন–“তোমরা জুমুআর দিনে বেশী করে দরূদ পড়ো৤ কেননা, এদিন উপস্থিতির দিনফেরেশতাগণ এদিনে উপস্থিত হন৤ আর তোমাদের কেউ যখনই আমার প্রতি দরূদ পড়ে, তখনই সেই দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয় পর্যন্ত যে, সে দরূদ পড়া থেকে ফারেগ হয়।হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) বলেন, আমি বললাম–(আপনার) ওফাতের পরও তা হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন-“(আমার) ওফাতের পরও তা হবে৤ কারণ, আল্লাহ তাআলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে৤ কাজেই নবীগণ জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫)

অনুরূপভাবে সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী প্রভৃতিতে অপর রিওয়ায়াতে বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে

ﻋَﻦْ ﺃَﻭْﺱِ ﺑْﻦِ ﺃَﻭْﺱٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﻓْﻀَﻞِ ﺃَﻳَّﺎﻣِﻜُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓِﻴﻪِ ﺧُﻠِﻖَ ﺁﺩَﻡُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺨَﺔُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺼَّﻌْﻘَﺔُ ﻓَﺄَﻛْﺜِﺮُﻭﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗَﻜُﻢْ ﻣَﻌْﺮُﻭﺿَﺔٌ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﻴْﻒَ ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﺻَﻠَﺎﺗُﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺭَﻣْﺖَ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺑَﻠِﻴﺖَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﻛُﻞَ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ

হযরত আউস ইবনে আউস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন–“নিশ্চয়ই তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন৤ এদিনে হযরত আদম (.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনে সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে আর এদিনে সবাই সেই আওয়াজে বেহুঁশ হয়ে যাবে৤ সুতরাং এদিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী করে দরূদ শরীফ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হবে। সময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেনইয়া রাসূলুল্লাহ! (আপনার ওফাতের পর) যখন আপনি মাটিতে গলে যাবেন, সে অবস্থায় আপনার নিকট কিভাবে আমাদের দরূদ পৌঁছানো হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন–“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৪৮/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩৭৩/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫ প্রভৃতি)

রাসুলুল্লাহ (সা) এর রুহ উনার দুনিয়ার শরীরের মধ্যেই দেয়া হয়ঃ

@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوحِي حتَّى أرُدَّ عَلَيْهِ السَّلامَ

“যে কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করবে, আল্লাহ তাআলা আমার রূহ ফিরিয়ে দিবেন, তখন আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করবো।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪১/ বাইহাকীসুনানে কুবরা, হাদীস নং ১০২৭০)

অন্যান্য মুমিনদের রুহ তাদের দুুনিয়ার শরীরের মধ্যে দেয়া হয় নাঃ

———————————————————————————————-

অন্যান্য মুমিনদের রুহ তাদের দুুনিয়ার শরীরের মধ্যে দেয়া হয় না কারন মৃত্যুর পর তাদের দেহ মাটিতে মিশে যায়।

বারযাকের জীবনে নবীদের জীবন যাপনের বিশেষত্ত্বঃ

==================================

নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত এবং তারা সেখানে*নামাজ*পড়েনঃ

———————————————————————————————-

আলমে বরযখে শহীদগণের উল্লিখিত বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবনের চেয়ে অধিক শক্তিমান মর্যাদাপূর্ণ জীবন হচ্ছে নবীরাসূলগণের বরযখী জীবন। কারণ, তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত আছেনতাদের শরীরকে কখনো মাটি খেতে পারে না এবং তারা নামায পড়াসহ জীবিত মানুষের অনেক বৈশিষ্ট্য লাভ করেন।

নবীগণের কবরে জীবিত থাকা প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্হ ফাতহুল বারীতে আল্লামা ইবনে হাজর আসক্বালানী (রহ.) বলেন

لأن الأنبياء أحياء عند الله وإن كانوا في صورة الأموات بالنسبة إلى أهل الدنيا ، وقد ثبت ذلك للشهداء . ولا شك أن الأنبياء أرفع رتبة من الشهداء

“কেননা, নবীগণ মহান আল্লাহর নিকট জীবিত৤ যদিও তারা দুনিয়াবাসীদের দিক দিয়ে মৃতের রূপে আছেন৤ কারণ, প্রমাণিত আছে যে, শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত; আর নবীগণ নিঃসন্দেহে শহীদগণের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।

(ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪৪৪ পৃষ্ঠা)

আলমে বরযখে নবীগণের (.) জীবিত থাকার প্রমাণে বহু সহীহ নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসসমূহে তাঁদের কবরে জীবিত থাকা এবং শহীদগণের চেয়েও অধিক মর্যাদাপূর্ণ বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিতঅসাধারণ জীবন লাভের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ

“নিশ্চয়ই নবীগণ কবরে জীবিত; তারা নামায পড়েন।

(বাইহাক্বীহায়াতুল আম্বিয়া, ১৫ খণ্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৬৩৯১/ মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং ৩৪২৫ প্রভৃতি)

উক্ত হাদীসে নবীগণের (.) মৃত্যুর পর কবরে সশরীরে জীবিত থাকা এবং সেখানে নামায পড়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কবরে নবীগণের নামায পড়ার ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বর্ণনায় হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الأَحْمِرِ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ

“আমি যে রাতে আমাকে মিরাজে নেয়া হলো মূসা (.)-এর নিকট এলাম এমতাবস্হায় যে, তিনি লাল বালুকাস্তুপের নিকট স্বীয় কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮১/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২৫০৪/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৩১)

হাদীস উল্লেখ করার পর আল্লামা কুরতবী (রহ.) বলেন

وهذا الحديث يدل بظاهره على : أنه صلى الله عليه وسلم رأى موسى رؤية حقيقية في اليقظة ، وأن موسى كان في قبره حيا ، يصلي فيه الصلاة التي كان يصليها في الحياة ، وهذا كله ممكن لا إحالة في شيء منه ، وقد صح أن الشهداء أحياء يرزقون ، ووجد منهم من لم يتغير في قبره من السنين ، وإذا كان هذا في الشهداء كان في الأنبياء أحرى وأولى

“এ হাদীসের দ্বারা বাহ্যতভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত মূসা (.)কে বাস্তবেই জাগ্রত অবস্হায়ই দেখেছেন এবং মূসা (.) কবরে জীবিত ছিলেন, তিনি সেখানে সেই নামাযই পড়ছিলেনযা তিনি জীবদ্দশায় পড়তেন। সবই সম্ভব, এর কোন কিছুতে অবাস্তবতা নেই। আর বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, শহীদগণ জীবিত এবং তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন আর তাদের অনেককে এমন অবস্হায় পাওয়া গিয়েছে যে, অনেক বছর অতিক্রান্ত হলেও স্বীয় কবরের মধ্যে তাঁরা কোনরূপ পরিবর্তন হননি। তারা সম্পূর্ণ অবিকৃতরূপে আছেন। সুতরাং যখন শহীদগণের অবস্হা এই, তখনতো নবীগণের অবস্হা আরো উন্নত উত্তম হবে!” (আলমুফহিম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা)

তেমনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ঈসা (.) হযরত ইবরাহীম (.)কে অবস্হায় দেখেছেন যে, তারা নামায পড়ছেন বলে অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)

উল্লিখিত হাদীসসমূহে নবীগণের ওফাতের পর কবরে যে নামায পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে, এটা দুনিয়াতে তাঁদের প্রতি আরোপিত তাকলীফী নামায নয়, বরং এটা কবরে তাঁদের বিশেষ মর্যাদার পরিচায়ক তাশরীফী নামায। তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত হওয়ার পর নামাযের মাধ্যমে মহান আল্লাহর গুণকীর্তন করেনযেমন ফেরেশতাগণ মুকাল্লাফ না হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর বিভিন্ন ইবাদত পালনের দ্বারা তাঁর গুণকীর্তন করেন। নবীগণ কবরে গমনের পর কখন তাশরীফী নামায আদায়ের সম্মান লাভ করেন, সে সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لا يُتْرَكُونَ فِي قُبُورِهِمْ بَعْدَ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً , وَلَكِنَّهُمْ يُصَلُّونَ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى يُنْفَخَ فِي الصُّورِ

“নবীগণ তাঁদের কবরে চল্লিশদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নিবৃত্ত থাকেন না ছাড়া যে, তারা মহান আল্লাহর সমীপে নামায পড়তে থাকেন। আর তা অব্যাহত থাকবে যাবত (কিয়ামতের জন্য) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হয়।

(মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস নং ৩৪২৮/ মুসনাদে বায্‌যার, হাদীস নং ৬৩৯৬/ মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১১ পৃষ্ঠা)

আল্লামা সুয়ুতী (রহ) বলেনঃ

—————————-

নবী রাসুল গন স্ব স্ব কবরে মানব দেহ নিয়েই জীবিত আছেন। তারা সেখানে নামাজ আদায় করেন। নামাজ আদায় করা তাদের উপরে ফরজ হিসেবে নয় কেননা কবরের জীবনে কোন মানুষ শরীয়ত পালনে দায়িত্বশীল থাকে না। বরং নামাজ হচ্ছে তাদের আল্লাহ প্রেমের সুধা লাভ করার জন্য। (আমবাউল আযকিয়া বিহায়াতিল আম্বিয়া)

আলমে বরযখে নবীগণকে রিযিক প্রদান করা হয়ঃ

——————————————

অপরদিকে আলমে বরযখে শহীদগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে যেমন পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি আলমে বরযখে নবীগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। অধিকন্তু তাঁদের শরীর কবরে অক্ষত থাকে বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে৤ এসবই কবরে তাঁদের সশরীরে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ فنبيُّ الله حيٌّ يُرْزَق

“আল্লাহ তাআলা যমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন যে, নবীগণের শরীর খাবে। তাই আল্লাহর নবী মাত্রই জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৬৩৭)

সকল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলোনবী রাসূলগণ কবরে সশরীরে জীবিত আছেন; তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন এবং নামায পড়েন।

উপরোল্লিখিত দলীলপ্রমাণ দ্বারা বুঝা যাচ্ছেনবী রাসূল হিসেবে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত আছেন। আর তিনি সেখানে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন এবং তিনি সেখানে তাশরীফী নামায আদায়ের বিশেষ সম্মান লাভ করেন।

রাসুল (সা) কে সালাম দিলে সাথে সাথে তার জবাব দেনঃ

—————————————————

হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের সালামের জাওয়াবও সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে৤ সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوحِي حتَّى أرُدَّ عَلَيْهِ السَّلامَ

“যে কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করবে, আল্লাহ তাআলা আমার রূহ ফিরিয়ে দিবেন, তখন আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করবো।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪১/ বাইহাকীসুনানে কুবরা, হাদীস নং ১০২৭০)

এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট তাঁর রওজা মুবারকে দরূদ সালাম কী উপায়ে পৌঁছবে সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

إِنَّ لِلَّهِ مَلائِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الأَرْضِ يُبَلِّغُونِي عَنْ أُمَّتِيَ السَّلامَ

“নিশ্চয় আল্লাহর অনেক বিচরণকারী ফেরেশতা রয়েছেনযারা আমার নিকট আমার উম্মতের সালাম পৌঁছে দেন।

(সুনানে নাসায়ী, ২য় খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা/ সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং ৯১৪/ মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৪২১২)

রাসূলুল্লাহ (সা.) রওজামোবারক থেকে সরাসরি শুনতে পানঃ

————————————————–

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মুবারকের নিকটে এসে কেউ সালাম পেশ করলে, তা রাসূলুল্লাহ (সা.) সরাসরি শুনতে পান এবং তার উত্তর দেন৤ আর দূর থেকে তার নিকট দরূদ সালাম পাঠ করা হলে, তা ফেরেশতাগণের মাধ্যমে তাঁর নিকট পৌঁছানো হবে৤ মর্মে হাদীস শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ بَعِيْدًا أُعْلِمْتُه

“যে কেউ আমার কবরের নিকটে এসে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, আমি তা নিজেই শুনবো এবং যে দূর থেকে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, তা আমাকে জানানো হবে।

(আলকাওলুল বাদীলিলসাখাবী, ৩য় খণ্ড, ৯২৯ পৃ্‌ষ্ঠা/ আললাআলী লিলসুয়ূতী, ১ম খণ্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা/ ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৭৯ পৃষ্ঠা)

হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা গেলোরাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পরও তাঁর কবর মুবারকে তাঁর নিকট উম্মতের দরূদ পৌঁছানো হয় এবং সেই দরূদ স্বয়ং তিনি নিজে গ্রহণ করেন আর উম্মতের সালামের জাওয়াবও প্রদান করেন। সেই সাথে এটাও জানা গেলো যে, তিনি কবরে সশরীরে জীবিত। তেমনিভাবে সকল নবীই করবে জীবিত আছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উম্মতের আমলও পৌঁছানো হয়ঃ

—————————————————-

তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উম্মতের আমলও পৌঁছানো হয়, যা দেখে ভালো আমল হলে, তিনি খুশী হয়ে মহান আল্লাহর তারীফ করেন এবং আমল খারাপ হলে, আল্লাহর নিকট উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এটাও তাঁর রওজা মুবারকে সশরীরে জীবিত থাকাকে প্রমাণ করে৤ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন

حَيَاتِي خَيْرٌ لَكُمْ تُحَدِّثُونَ وَيُحَدَّثُ لَكُمْ، فَإِذَا أَنَا مُتُّ كَانَتْ وَفَاتِي خَيْرًا لَكُمْ، تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ فَإِنْ رَأَيْتُ خَيْرًا حَمِدْتُ اللَّهَ، وَإِنْ رَأَيْتُ غَيْرَ ذَلِكَ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكُمْ

“আমার জীবন তোমাদের জন্য মঙ্গলময়; তোমরা পরামর্শ করে কাজ করো আর তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়৤ এরপর যখন আমি ওফাতবরণ করবো, তখন আমার ওফাত তোমাদের জন্য মঙ্গলময় হবে৤ তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে; তাতে আমি যা ভালো দেখবো, সে জন্য মহান আল্লাহর তারীফ করবো আর যা মন্দ দেখবো, আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো।

(মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ১৯২৫/ ইবনে সা, তবাকাতে কুবরা, ২য় খণ্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা/ দাইলামী, ১ম খণ্ড, ১৮৪ পৃষ্ঠা)

সকল হাদীস দ্বারা হায়াতুন নবী (সা.) তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত থাকা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়।

মিরাজে অন্যান্য নবীদের সাথে রাসুলুল্লাহ (সা) এর সাক্ষাতঃ

————————————————

ছাড়াও মিরাজের ঘটনার হাদীস শরীফে অনেক নবীর কথা এসেছে যে, তাঁদের সাথে আসমানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেখাসাক্ষাত সালামকালাম হয়েছে এবং মূসা (.) উম্মতে মুহাম্মদীর উপর আরোপিত ৫০ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে আনতে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার পরামর্শ দেন। যার বদৌলতে পরিশেষে ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে ওয়াক্ত নামায ফরজরূপে বলবৎ করা হয়। আবার সকল নবী রাসূল (.) বাইতুল মুকাদ্দাসে তাশরীফ এনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইমামতীতে নামায আদায় করেন।

(দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬১৪)

বুখারি শরীফেরর হাদিসের আরো কিছু অংশ দেয়া হলঃ

আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর আবূ যার বলেনঃ তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) আসমানসমূহে আদম (), ঈদরীস (), মূসা (), ঈসা (), ইবরাহীম ()-কে পেলেন। আবূ যার (রাঃ) তাঁদের অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে বলেন নি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম ()-কে প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম ()-কে ষষ্ট আসমানে পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ যখন জিবরাঈল () রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইদরীস () এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঈদরীস () বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নাবী নেক ভাই! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরাঈল () বললেনঃ ইনি ঈদরীস () তারপর আমি মূসা () এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল নেক ভাই। আমি বললাম ইনি কে? জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ মূসা () তারপর আমি ঈসা () এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইনি ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম।(@ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), / সালাত৩৪২)

আল ইসাবা ফি তামিযেস সাহাবা গ্রন্থে আছে যে,,,,

যেহেতু ঈসা (আ) এখন পর্যন্ত মৃত্যু বরন করেননি বরং কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে এই দুনিয়াতে পুনরায় আগমন করবেন এবং কাফের দাজ্জালকে হত্যা করবেন। একারনেই তাকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদঃ

(সা) এর সাহাবা হিসেবে গন্য করা হয়।

হযরত মুহাম্মদ (সা) এবং ঈসা () ইহজাগতীক রুপেই জীবিত ছিলেন। এবং পরষ্পর সাহাবি হওয়ার জন্য যা অপরিহার্য। অন্যান্য নবী রাসুলগন সময় আমলে বারযাক তথা কবরে জীবিত ছিলেন। যাদের সাথে মেরাজ রজনিতে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর সাক্ষাত হয়েছিল।

এসব ঘটনা নবীগণের (.) সশরীরে জীবিত থাকাকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। সুতরাং সকল মুসলমানের আকীদাবিশ্বাস রাখা কর্তব্য৤

দুনিয়াতেই রাসুল (সা) এর সাথে নবীগনের সাক্ষাতঃ

———————————————

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، وَسُرَيْجُ بْنُ يُونُسَ، قَالاَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا دَاوُدُ بْنُ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِوَادِي الأَزْرَقِ فَقَالَ ” أَىُّ وَادٍ هَذَا ” . فَقَالُوا هَذَا وَادِي الأَزْرَقِ . قَالَ ” كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى مُوسَى – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – هَابِطًا مِنَ الثَّنِيَّةِ وَلَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللَّهِ بِالتَّلْبِيَةِ ” . ثُمَّ أَتَى عَلَى ثَنِيَّةِ هَرْشَى . فَقَالَ ” أَىُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ ” . قَالُوا ثَنِيَّةُ هَرْشَى قَالَ ” كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى يُونُسَ بْنِ مَتَّى – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – عَلَى نَاقَةٍ حَمْرَاءَ جَعْدَةٍ عَلَيْهِ جُبَّةٌ مِنْ صُوفٍ خِطَامُ نَاقَتِهِ خُلْبَةٌ وَهُوَ يُلَبِّي ” . قَالَ ابْنُ حَنْبَلٍ فِي حَدِيثِهِ قَالَ هُشَيْمٌ يَعْنِي لِيفًا .

আহমাদ ইবন হানবাল সুবায়হ ইবন ইউনূস ()……ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন আযরাক উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন বললেনঃ এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গিগণ উত্তর দিলেন, আযরাক উপত্যকা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমি যেন মুসা (আঃ)-কে গিরিপথ থেকে অবতরণ করতে দেখছি, তিনি উচ্চম্বরে তালবিয়া পাঠ করছিলেন তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হারশা গিরিপথে আসলেন তিনি বললেনঃ এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা গিরিপথ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আমি যেন ইউনূস ইবন মাত্তা (আঃ)-কে দেখছি তিনি সুঠামদেহী লাল বর্নের উষ্ট্রের পিঠে আরোহিত; গায়ে একটি পশমী জোব্বা, আর তাঁর উষ্টের রশিটি খেজুরের ছাল দিয়ে তৈরি, তিনি তালবিয়া পাঠ করছিলেন ইবন হানবাল তার হাদীসে বলেন, হুশায়ম বলেছেন, আরবি এর অর্থ আরবি খেজুর বৃক্ষের ছাল (সহিহ মুসলিম৩২৭)

হাদিস পেশ পরে আল্লমা সুয়ুতী (রহ) বলেন হাদিস থেকে প্রমান হলো যে নবী (সা) তাদেরকে জাগ্রত অবস্থায়ই তালবীয়া পড়তে দেখেছেন। সুতরাং থেকে বুজা গেলো নবী রাসুল গনের কবরের জীবন এত শক্তিশালি, উন্নত এবং পূর্নাংগ যে, তারা দুনিয়াতে (মৃত্যুর পরও) স্বশরীরে আগমন করতে পারেন। এবং হজ্জ্বের বিধানসমুহ সম্পাদন করতে পারেন। আর মানব চোখে তাদেরকে অবলোকন করাও সম্ভব।

এসব ঘটনা নবীগণের (.) সশরীরে জীবিত থাকাকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। সুতরাং সকল মুসলমানের আকীদাবিশ্বাস রাখা কর্তব্য৤

★★★★★★ ★★★★ ★★ ★★★★★★★★★

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment