কোরআন ও হাদিসের আলোকে যাকাত

zakat

ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী

———

যাকাত কি ?
যাকাত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তিসমূহের একটি ভিত্তি। যা ইসলামের মৌলিক ইবাদত সমূহের মধ্যে অন্যতম ইবাদত। প্রত্যেক মুসলমানকে যেমন যাকাত ফরয হওয়ার বিষয় সম্পর্কে বিশ্বাস করতে হবে, ঠিক তেমনিভাবে যার উপর যাকাত ফরয তাকে তা নিয়মিত পরিশোধও করতে হবে। যাকাত একজন মুসলমানের অর্থ-সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। যাকাতের শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি, পরিশুদ্ধি, বরকত ইত্যাদি। কারণ যিনি যাকাত প্রদান করবেন, তার সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং সাথে সাথে তা তাকে বালা-মুছিবত থেকেও রক্ষা করবে। যাকাত প্রদানকারীর মন পবিত্র হয়, তার সম্পদে বরকত হয় এবং তা বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহ পাক সুরা তওবার ১০৩ নং আয়াতে ঘোষণা দেনঃ
“হে নবী! আপনি তাদের (ধনীদের) ধনসম্পদ থেকে সদকা (যাকাত) নিয়ে তাদরেকে পাক পবিত্র করুণ, (নেকীর পথে) তাদেরকে এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুণ। আপনার দোয়া তাদের সান্ত্বনার কারণ হবে। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।” (সুরা তওবাঃ ১০৩)

যাকাত ফরজ হওয়ার দলীল
“তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা নিবিষ্ট মনে একান্তভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে, যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। (বাইয়্যিনাহঃ ৫)
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎ কাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত প্রদান করেছে, তাদের জন্য পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।” (সুরা বাক্বাররাঃ ২৭৭)
কুরআন শরীফে আল্লাহ তা’আলা যখনই নামায প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন, পাশাপাশি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাকাত আদায়েরও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নামায কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো’। [দেখতে পারেন ২:৪৩, ২:৮৩, ২:১১০, ২৪:৫৬, ৫৮:১৩ –ইত্যাদি আয়াতগুলো।] আবি আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনে ওমার ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি যে, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দেয়া, শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকলে হজ্জ্ব করা এবং রমযান মাসে রোযা রাখা”। (বুখারী ও মুসলিম)

যাকাত কখন ফরজ?
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ-মস্তিষ্ক প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর মালিকানায় নিসাব পরিমাণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থাকলে এবং তা এক চন্দ্রবছর অতিবাহিত হওয়ার পর তার ওপর যাকাত আদায় করা ফরজ হবে। (রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯, ৮২)

যেসব জিনিসের ওপর জাকাত ফরজ হয়
* সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরজ হয়। আলবাহরুর রায়েক ২/২০৯
* ব্যাংক-ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, ট্রেজারি বিল, ব্যাংক গ্যারান্টি মানি ইত্যাদি নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপর যাকাত ফরজ হবে।
* সোনা-রুপার অলঙ্কার সবসময় বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক, সব অবস্থায় তার যাকাত দিতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৫, হাদিস : ১৫৬৩; সুনানে কুবরা, নাসায়ি, হাদিস : ২২৫৮)
* হজের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘরবাড়ি নির্মাণ, ছেলেমেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হয়, তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে বছরান্তে এর ওপরও যাকাত ফরজ হবে। অবশ্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি খরচ হয়ে যায়, তাহলে তার যাকাত দিতে হবে না। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস: ৭০৩২)

জাকাতের নিসাব
* স্বর্ণের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি।
* রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি।
* টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯৯৩৭)

যেসব জিনিসের ওপর যাকাত ফরজ নয়
* নিজের ও পোষ্য পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর যাকাত ফরজ নয়। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫)
* গৃহের আসবাবপত্র, যেমন খাট-পালং, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি এবং গৃহসামগ্রী, যেমন হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির ওপর যাকাত ফরজ নয়—তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস: ৭০৯৩, ৭০৯২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১০৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫)
* পরিধেয় বস্ত্র, জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে, তবুও তাতে যাকাত ফরজ হবে না।—রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫

কখন কীভাবে যাকাত দিতে হবে?
* যেদিন চন্দ্রবছর হিসেবে এক বছর পূর্ণ হবে, যেমন এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত, সেদিন সঞ্চিত সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়ে যায়। তাই যাকাত ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব না করে আদায় করে দেয়া উত্তম। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১০৫৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৭)
* যে সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে, এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ (২.৫%) যাকাত আদায় করা ফরজ। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৭০৭৭)
* ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে পাইকারি বাজারদর অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে যাকাত আদায় করবে।

যাকাত যার প্রাপ্য!
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে জাকাত একটি। এর হক্ব ঠিকমতো আদায় না হলে আমরা নিজেকে পুরোপুরি মুসলমান বলে দাবী করতে পারি না। কেননা, আল্লাহ পাক আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুরোপুরি রূপে ইসলামে প্রবেশ করার জন্য। আপনার জাকাত প্রকৃত হকদারকে দিচ্ছেন তো? সাবধান, কিছু মানুষের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে টিভি চ্যানেলসহ কোন প্রতিষ্ঠানকে দিলে আপনার ফরজ আদায় হবে না। পবিত্র কুরআনে পরিষ্কারভাবে জাকাত বা সাদাকা প্রাপ্যদের তালিকা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ

“সাদাকাহ বা জাকাত পাবার যোগ্যতা রাখে শুধুমাত্র ফকির, মিসকীন, যাকাত সংগ্রহকারী, যাদের অন্তরে (ইসলামের প্রতি) ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা আছে, আর ক্রীতদাস মুক্তিতে, ঋণগ্রস্থরা, যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে আর মুসাফির। এটা আল্লাহর তরফ থেকে ফরয। আল্লাহ পাক সমস্ত কিছু জ্ঞাত আছেন, আর তিনি হিকমাতওয়ালা।” (সুরা তাওবাহ আয়াত ৬০)
উপরোক্ত আয়াতে ৮ ধরনের লোকের কথা বলা হয়েছে।

১) ফকিরঃ তার যা প্রয়োজন তা তার কাছে একেবারেই নেই ।
২) মিসকীনঃ মিসকীন ফকিরের চেয়ে উত্তম । যেমন তার প্রয়োজন ১০ টাকার আছে মাত্র ৭ টাকা। আল্লাহ বলেন – “আর ঐ নৌকা যা ছিল কয়েকজন মিসকীনের, যারা সমুদ্রে কাজ করত।” (সুরা কাহাফ আয়াত ৭৯)
৩) যাকাত সংগ্রহকারীঃ ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}
৪) যাদের অন্তর ইসলামের দিকে ঝুঁকেছেঃ যে সমস্ত গরীব বিধর্মী যারা ইসলাম গ্রহণ করতে চায় বা মুসলিমদের শত্রুর হাত হতে রক্ষা করতে চায় তাদের যাকাত দেওয়া যাবে। যেমন সফওয়া ইবনু উমাইয়াকে হুনাইন যুদ্ধের গণীমাত দিয়েছিলেন। রাসুল (দঃ) আবু সুফিয়ান ইবনু হারবকে, আক্‌বা ইবনু হাবেসক এবং উয়াইনাহ ইবনু মিহসানকে জাকাত দিয়েছিলেন (মুসলিম)।
৫) ক্রিতদাস মুক্তিতেঃ দাসদের মুক্ত করা, শত্রুর হাতে বন্দী তাদেরও মুক্ত করা ইত্যাদি। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।
৬) ঋণগ্রস্থঃ সেসব গরীব যারা ঋণ করেছে এবং শোধ করার সামর্থ নেই তাদের যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যাবে। বাংলাদেশসের লক্ষ লক্ষ ঋণ খেলাফী ধনী এর আওতায় আসবেনা যারা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে শোধ করতে পারছে না। তাদের ওই ঋণ জীবন বাঁচানোর তাগিদে নেয়া হয়নি। বরং তা নেয়া হয়েছিলো নিজেদের বিলাশিতাকে পরিপূর্ণ করার মানসে।
৭) যারা আল্লাহর রাস্তায় আছেঃ যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। বর্তমানে জিহাদের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কাজেই এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। এতিমখানায় দেয়া যেতে পারে যেখানে গরীব বাচ্চারা লেখাপড়া করে। তবে প্রাপ্ত জাকাত বা ফিতরার টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়া যাবেনা। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}
৮) মুসাফিরঃ ঐ মুসাফির যে এক স্থান হতে অন্য স্থানে বা দেশ হতে অন্য দেশে গেছে কিন্তু টাকার অভাবে নিজ গৃহে ফিরতে পারছে না। তাকে ঐ পরিমান যাকাত দেয়া হবে যাতে নিজের গৃহে ফিরে আসতে পারে। যদি কোথাও ধার কর্জ পায় তবে যাকাত নিতে পারবে না।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ করেছেন এই যে, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না।

যেমন কাউকে কোন বস্তু ভোগ দখলের অধিকার দিয়ে নিয়ত করল যাকাতের, তাহলে এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ নয়, যদিও তাতে গরীব মানুষ থাকে, নামায পড়ে, পড়াশোনা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের গরীবদের, মাদরাসা গরীব ছাত্রদের, মসজিদের গরীব মুসল্লিদের যাকাত দিলে তাতে মালিক বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি থাকায় তা জায়েজ হবে। {ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮, আল হিদায়া-১/২০৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/২৯৯}

যাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না
* যে ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ, যাতে যাকাত আসে না, যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও নিসাবের সমমূল্য পরিমাণ আছে, তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮)
* যাকাতের টাকা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করা হলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন—রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, বিদ্যুত্-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। কেননা শরিয়তে যাকাতের বিধান দেয়া হয়েছে ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্য; সামাজিক প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। যাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসার বিল্ডিং নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যয় করা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দেয়া, ওয়াজ-মাহফিলের জন্য ব্যয় করা বা এগুলোতে সহায়তা দেয়া, মিডিয়া তথা রেডিও, টিভি চ্যানেল করা জায়েজ নয়; বরং যাকাতের টাকা তার হকদারকেই মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অন্য কোনো ভালো খাতে ব্যয় করলেও যাকাত আদায় হবে না। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৬৯৪৭, ৬৯৪৮, ৭১৩৭, ৭১৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪)
* নিজের বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তি—যারা তার জন্মের উত্স তাদের নিজের যাকাত দেয়া জায়েজ নয়। এভাবে নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের যাকাত দেয়া জায়েজ নয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেয়া জায়েজ নয়। (রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮)

যাকাত পরিশোধ না করার পরিণাম
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পূঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন স্বর্ণ ও রৌপ্য জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটা তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পূঞ্জীভূত করতে। সূতরাং তোমরা যা পূঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর।” (সুরা তওবা-৩৪-৩৫)

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কোন ব্যক্তি যদি তার ধনসম্পদের যাকাত না দেয় তবে ঐ সম্পদ কিয়ামতের দিন অজগর সাপের আকার ধারণ করে তার গলদেশ বেষ্টন করবে”।

অতঃপর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুরা আল-ইমরানের ১৮০ নং তিলাওয়াত করলেন,
“আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।” (সুরা আল-ইমরানঃ ১৮০)

হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সুদখোর, সুদদাতা, এর সাক্ষী ও লেখক, উল্কি অংকনকারিণী এবং যে নারী উল্কি অংকন করায়, অভিশপ্ত ঐ ব্যক্তি যে যাকাত দিতে অস্বীকার করে, হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করানো হয়, এদের সকলের উপর আল্লাহর অভিশাপ বা লা’নত ”।(আহমাদ ও নাসায়ী)

হাদীসে বর্ণিত আছে , একদা দু’জন মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসল। তাদের দু’জনের হাতে স্বর্ণের কংকণ ছিল। তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা তোমাদের অলংকারের যাকাত দাও কি?” তারা বললো, “না ”। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা কি পছন্দ করবে যে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে আগুনের দু’টি বালা পরিয়ে দিবেন”? তারা দু’জন বলল, “না “। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তাহলে তোমরা এ স্বর্ণের যাকাত প্রদান কর ”। (তিরমিযি)

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *