ডাঃ জাকির নায়েক বেশি জ্ঞানী না শয়তান?
====================
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
———
ডাঃ জাকির নায়েকের প্রসংগ এলেই একদল লোক বলতে শুরু করে তিনি কুরআন, বাইবেল, গীতা সহ যে কোন ধর্ম গ্রন্থ থেকে মুখস্ত সব রেফারেন্স বলে দিতে পারেন। আমি তাদের কথার সাথে একমত। জাকির নায়েকের মেধা এবং স্মৃতি শক্তি অত্যন্ত প্রখর তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি কম্পিউটারের গতিতে যে কোন রেফারেন্স নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারেন।
তার সবচে’ যে ব্যাপারটি মানুষকে বেশি নাড়া দিয়েছে তা হল তিনি তুলনামূলক ধর্মীয় (Comparative Religion) বিতর্কে একজন উঁচু মানের তাত্ত্বিক। তার যুক্তি এবং বক্তব্য শুনে অনেক অমুসলমান কালেমা পড়ছেন, তাও অনস্বীকার্য। তবে তা নিয়ে অতি লম্পঝম্প করা বোধ হয় উচিত হবে না। কেননা যে খাজা গরীবে নেওয়াজ (রহঃ) সম্পর্কে এই ডাঃ নায়েক তাচ্ছিল্যভরে বক্তব্য দিয়েছেন্ সে খাজা গরীবে নেওয়াজ (রহঃ) একাই ৮০ (আশি) লক্ষ হিন্দুকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে এসেছিলেন। ফলে আজ ভারতবর্ষে মুসলমান আছে। আর তাঁর এই মহা অবদানের কারণেই মুসলমানগণ এখানে প্রায় ৭০০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। ডাঃ নায়েকের ভক্তবৃন্দ বলবেন কি ডাঃ নায়েক কতজন হিন্দুকে মুসলমান বানিয়েছেন?
উল্লেখ্য, ডাঃ নায়েকের বক্তব্যে যতনা অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করছে, তারচে’ লক্ষ গুণ বেশি ঈমানহারা হচ্ছে। আর আক্বীদার দিক থেকে তো ভ্রান্তির কোন হিসেবেই নেই। কেননা ঈমানের মুল হলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম)। ইয়াজিদের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করে ডাঃ নায়েক ঈমানের এ শর্ত লঙ্গন করেছেন। একই সাথে নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র এবং তাঁর হত্যাকারীকে ভালোবাসা যায় না। ডাঃ নায়েক ইয়াজিদের নামের শেষে রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহু বলার পক্ষে। নাউজুবিল্লাহ! ডাঃ সাহেবের উক্ত বয়ানের ভিডিও পেতে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুণঃ
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন,
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ।” (সুরা আহযাব, আয়াত ৬)
আল্লাহ পাক আরো ঘোষণা দেন,
“বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভা্ই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর – আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (সুরা তওবা, আয়াত ২৪)
আর নবী (দঃ) এর ভালোবাসা ঈমানের প্রধান শর্ত তা নিয়ে তো বিখ্যাত হাদিসটি সবাই জানা। আমি আর তার রেফারেন্স দিলাম না।
এবার আসুন আসল কথায়। কে বেশি জ্ঞানী? শয়তান না জাকির নায়েক? কে বেশি আমল কারী, শয়তান না ডাঃ জাকির নায়েক? ডাঃ নায়েকের বক্তব্য শুনে কিছু অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর ইবলিশ তার জ্ঞান আর আমল দ্বারা ফেরেশতাদের শিক্ষকের মরযাদা লাভ করেছিল। মুয়াল্লিমুল মালাইকা। তার প্রায় ৯ লক্ষ বছরের ইবাদত আর ফেরেশতাদের উস্তাদের পদ একটি মাত্র বেয়াদবির কারণে বরবাদ হয়ে গেল। কারণ যে আদম আঃ কে সিজদা করার হুকুম হয়েছিল, সে আদম আঃ এর কপালে আপনার আমার প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নূর মুবারক বিদ্যমান ছিল। আর রাসুল (দঃ) এর সাথে বেয়াদবি কারণে আমল বরবাদ হয়ে যায় যা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ বলেন, “মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।“ (৪৯:২)
এবার বলুন, জাকির নায়েকের যত কীর্তি আর অর্জন ধূলিকণার মত হাওয়ায় উড়ে যেতে কতক্ষণ সময় লাগে? যে নবী (দঃ) এবং তাঁর আহলে বায়েতকে নামাজে সালাম দেয়া ওয়াজিব, সে আহলে বায়েতের ৭২ জন সম্মানিত সদস্যকে শহীদকারী এবং সম্মানিত নারীদের বেপর্দা করে কারবালা থেকে দামেস্কে নিয়ে যাবার হুকুম দাতাকে ভালবাসলে নবীর (দঃ) এর প্রতি ভালোবাসা থাকে? যদি এরপর ও বলেন থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ঈমানে বড় ধরণের ঘাপলা রয়েছে। অতি সত্বর তওবা করে নতুন করে ঈমান আনুন। পীস টিভিতে ইমাম হুসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং কারবালার আলোচনা শুনবেন না। কারণ তাদের মতে কারবালার আলোচনা করা বিদাত। নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ আমাদের ঈমান, আক্বীদা ও আমলকে পীস টিভির মত বাতিল ও বিদাতি টিভির ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করুন! আমীন!