পবিত্র মে’রাজ শরীফ যেসব বিষয় প্রমাণ করেঃ

=============

ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
————
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم
কুরআন ও হাদিসের আলোকে মহানবী ﷺ সশরীরে মে’রাজে গমন করেছিলেন। কেউ কেউ প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে মে’রাজ হয়েছিল স্বপ্নযোগে। তাদের সে ধারণা ও ব্যাখ্যা ভুল। কারণ এ ব্যাপারে পরিষ্কার আয়াত রয়েছে আর রয়েছে মহানবী ﷺ এর অসংখ্য হাদিস শরীফ। তাছাড়া স্বপ্নযোগে মে’রাজ সংগঠিত হয়ে থাকলে তা নিয়ে মক্কার কাফেরদের এতো হৈচৈ করার কোন কারণ থাকতো না। সশরীরে মে’রাজকে বিশ্বাস করার কারণেই হযরত আবু বকর (রাঃ) পেয়েছিলেন সিদ্দিকে আকবরের উপাধি।

পবিত্র মে’রাজ শরীফ প্রমাণ করেঃ

• নবীজি ﷺ আল্লাহ্‌ পাককে দেখেছেন
• নবীজি ﷺ নূরে মুজাসসাম
• নবীজি ﷺ ইমামুল মুরসালীন
• নবীজি ﷺ সৃষ্টির সেরা
• নবীজি ﷺ আসমান ও জমীনে সমান ভাবে সম্মানিত
• নবী ﷺ কে সংবর্ধনা দিতে আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং লক্ষ লক্ষ ফেরেস্তা উপস্থিত ছিলেন
• আল্লাহ্‌ নিজে তাঁর গোপন রহস্য রাসুল ﷺ এর কাছে উন্মোচন করেন
• নবীজি ﷺ ইলমে গায়েব প্রাপ্ত
• নবীগণ জীবিত। নবীগণ মুহূর্তের মধ্যে কবরে, বায়তুল মুকাদ্দাসে কিংবা আসমানে ভ্রমণের ক্ষমতা রাখেন
• একমাত্র নবীজি ﷺ আল্লাহর নিদর্শনাবলী স্বচক্ষে দেখেছেন
• মে’রাজ সংগঠিত হয় আল্লাহ পাকের আমন্ত্রণে

নিচে বিস্তারিত আলোচনা করার আশা রাখি ইনশাল্লাহ!
=================================

• নবীজি ﷺ আল্লাহ্‌ পাককে দেখেছেন
======================
মে’রাজের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক কুরআনের সূরা বনী ইসরাইলের শুরুতে “সুবহানাল্লাহ” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ অবাক হবার মত কিছু ঘটলেই “সুবহানাল্লাহ” বলা হয়।

আল্লাহ বলেনঃ
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (১৭:১)

সূরা আন-নাজমে আল্লাহ আরও বিস্তারিত বর্ণনা করেন। মে’রাজের রাতে মহান আল্লাহ পাক তাঁকে দর্শন দিয়ে নিজ কুদরতের গোপন রহস্যের ভাণ্ডার খুলে দিয়েছিলেন। আল্লাহ পাক সেকথা বলেন এভাবেঃ
“তাঁকে শিক্ষাদান করেন শক্তিশালী, অধিক ক্ষমতাধর। তারপর তিনি স্থির হয়েছিলেন ঊর্ধ্ব দিগন্তে। অতঃপর তিনি তাঁর নিকটবর্তী হলেন। তখন আরও নৈকট্য চাইলেন, ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ ধনুকের ব্যবধান রইল কিংবা তারও কম। তখন তিনি তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন।” (৫৩:৩-৮)

সাধারণ কিছু মুফাসসীর এই সুরার প্রথম আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় বলেন যে এখানে আল্লাহ পাক নয় বরং জিব্রাইল (আঃ) নবীজি ﷺ কে শিক্ষা দেন। এবং তিনিই তাঁর অতি নিকটবর্তী হয়েছিলেন আপন সুরতে। কিন্তু আয়াতগুলো পর্যায়ক্রমে পড়ে গেলে যে কেউ সহজেই বুঝতে পারবেন যে “শক্তিশালী” ও “ক্ষমতাধর” কেউ নবী করীম ﷺ কে শিক্ষা দেন বলতে আল্লাহ পাক নিজেকেই বুঝিয়েছেন। কারণ জিব্রাইল (আঃ) কেবল বার্তা বহনকারী এবং রাসুল ﷺ এর খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি শিক্ষক হতে পারেন না। অসংখ্য হাদিসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ নিজেই তাঁর রাসুলকে শিখিয়েছেন। তা না হলে নামাজ ফরজ হবার আগেই বাইতুল মুকাদ্দাসে কী করে নবী ﷺ সমস্ত আম্বিয়া কেরাম এবং লক্ষ লক্ষ ফেরেস্তার নামাজে ইমামতি করলেন? ইমামের তো নামাজের ব্যাপারে মোক্তাদির চেয়ে বেশী জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যান্য নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম) তো নামাজ প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং জানতেন কীভাবে নামাজ পড়তে হয়। কিন্তু আমাদের নবী ﷺ এর উপর তো নামাজ ফরজ হয় মে’রাজের রাতে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে বোরাক ও রফরফযোগে আরশে আজীমে যাবার পর। মে’রাজ সংগঠিত হবার পূর্বেই তিনি যেহেতু নামাজে ইমামতি করেছিলেন, কাজেই তিনি নামাজ সম্পর্কে জানতেন। আর তাঁর শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ পাক। এ কারণেই সূরা আর-রহমানে আল্লাহ বলেনঃ “করুনাময় আল্লাহ। শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা।” (৫৫:১-৪)

মানুষ সৃষ্টি করার আগে আল্লাহ পাক কাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন? মানুষ সৃষ্টি করার পর তিনি মানুষকে বায়ান অর্থাৎ কথাবলা শিখিয়েছেন। তাফসীরকারগণ এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদ ﷺ কে আদি সুরতে থাকার সময়েই কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ “হযরত আদম আঃ দেহ আর আত্মার মাঝামাঝি থাকার সময়েও তিনি নবী ছিলেন”।

আর “তাঁদের মধ্যে দু’ ধনুকের ব্যবধান রইল কিংবা তারও কম। তখন তিনি তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন।” বলতে যদি জিব্রাইল আঃ কে বুঝানো হয়, তাহলে বেশ অবাক হতে হয়। দুই ধনুক কিংবা তারচেও নিকটবর্তী হলেন জিব্রাইল আঃ আর তারপর ওহী নাজিল করলেন আল্লাহ এবং তাঁর বান্দাকে। এতে বুঝা যায় যে “তিনি” নিকটবর্তী হলেন বাক্যের সর্বনাম “তিনি” হলেন আল্লাহ পাক। কেননা মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা, জিব্রাইলের নন। বিখ্যাত সব মুফাসসীরিনে কেরাম এরকমেই ব্যাখ্যা করেছেন। আর দুই ধনুকের ব্যবধান বা তারচেও নিকটবর্তী হয়েছিলেন মহান আল্লাহ পাক। সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমের কিছু হাদিস এব্যাপারে পরিস্কার বর্ণনা করে এভাবেঃ

“প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর ﷺ নিকটবর্তী হলেন। অতিনিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ ধনূকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন।” (বুখারী ৭৫১৭, ই ফাঃ ৭০০৯, মুসলিমঃ ১৬২, আহমাদঃ ১২৫০৭)

আহলে হাদিসের স্বঘোষিত শাইখগণ বোঝার চেষ্টা করেন যে কেউ আল্লাহ্‌কে দেখেনি এমনকি নবী কারীম ﷺ ও না। তারা হযরত মা আয়েশার (রাঃ) একটি হাদিসের উল্লেখ করেন যে, “যে বলবে মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহ্‌কে দেখেছেন সে মিথ্যা বলছে”। কানজুল ঈমানসহ অনেক তাফসীরেই সূরা আন-নাজমের আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় মা আয়েশার উক্ত হাদিসের জবাবে বলা হয়েছে যে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস অনুসারে নবীজি ﷺ আল্লাহ্‌কে দেখেছেন। এবং তাঁর হাদিসে নবী ﷺ এর থেকে “হ্যা-সুচক” বর্ণনা রয়েছেন। আর মা আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস নবী ﷺ পর্যন্ত পৌঁছেনি। তাছাড়া কোন ব্যাপারে “হ্যাঁ” এবং “না-সূচক” কিছু থাকলে “হ্যা-সূচক” গ্রহণযোগ্য কেননা যিনি “হ্যাঁ” বলছেন তিনি জেনেই বলছেন। আর যিনি “না” বলছেন, হয়তো তিনি নিজে জানতেন না। এর অর্থ এই নয় যে তার কোন অস্তিত্ব নেই।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *