মিরাজের রজনীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌কে দেখেছেন – ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

“তাঁকে শিক্ষাদান করেন শক্তিশালী, অধিক ক্ষমতাধর। তারপর তিনি স্থির হয়েছিলেন ঊর্ধ্ব দিগন্তে। অতঃপর তিনি তাঁর নিকটবর্তী হলেন। তখন আরও নৈকট্য চাইলেন, ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ ধনুকের ব্যবধান রইল কিংবা তারও কম। তখন তিনি তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন।” (৫৩:৩-৮)”এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতিনিকটবর্তী…র ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ ধনূকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন।” (বুখারী ৭৫১৭, ই ফাঃ ৭০০৯, মুসলিমঃ ১৬২, আহমাদঃ ১২৫০৭)

বুখারির পূর্ণ হাদিসটি নিচে দেয়া হলঃ

বদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত! তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল) অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, -তিনি কে? মধ্যের জন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যাক্তি। সর্বশেষ জন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যাক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এ জন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘূমন্ত, অন্তর ঘূমায় না। অনুরুপ অন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনেরও (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না। এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কুপের কাছে রাখলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাথীদের থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয়। এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ন করলেন। তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্হাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরাঈল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যা। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত।

বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না। দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে পেলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেনঃ তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পূত্র। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসঁমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরাঈল! জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল। এরপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসা’দ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরাঈল! এটি কি? জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন। তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্হানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরাঈল! তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যা। তাঁরা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্হানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেনঃ তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ রয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহি ওয়াসাল্লাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , যায় নাম আমি স্বরন রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আছেন সপ্তম আসমানে।

সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এত উদ্ধে আরোহণ করান হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জাননা। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতিনিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু, ধনূকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসা র কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আপনার উম্মাত তা আদায়ে সম্মহম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যা। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাচ সংখ্যায়ও মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে থামিয়ে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও নামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দূর্বল। সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরাঈলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবাবেও জিবরাঈল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ -হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দূর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন।

এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আপনার দরবারে হাযির, বাবার-হাযির। আল্লাহ বললেনঃ আমার বান্দার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা “উম্মুল কিতাব- তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা র কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যবস্হা নিয়ে এসেছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য – সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশ্য করছি। কিস্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন। এবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মূসা , আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ অবতরন করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment