মহানবী (দঃ) এর রওজা মুবারক সরিয়ে ফেলা এবং মসজিদে নববীতে পরিবর্তনের প্রস্তাব গুজব নয়, সত্যি!

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী (https://www.facebook.com/DrMiaji)
সৌদি নজদি সরকার কর্তৃক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর দুই সাথী রাদিয়াল্লাহু আনহুমার পবিত্র রওজা মুবারক সরিয়ে ফেলা, উম্মুল মুমেনীনগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং মা ফাতেমা রাদিউয়াল্লাহু আনহার খাস কামড়া মসজিদে রূপান্তরের পরিকল্পনার যে খবর বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয়েছে তার সত্যতা মিলেছে। কিন্তু সৌদি সরকারের অনুগত কিছু দল ও মত এই খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দিতে এখনো তৎপর। হেফাজতি-ওহাবী কিংবা আহলে হাদিসের লোকজন যারা সৌদিকে তাদের আদর্শ মনে করে তারা বলে বেড়াচ্ছে যে মহানবী (দঃ) এর পবিত্র রওজা মুবারক সরিয়ে ফেলা এবং মসজিদে নববী (দঃ) এ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্তের খবর গুজব মাত্র।

এই পরিকল্পনার নায়ক ডঃ আলী বিন আব্দুল আজিজ নামের এক ওহাবী শিক্ষক যিনি ইমাম মুহাম্মাদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। পবিত্র মক্কা ও মদীনা শরীফের কর্তৃপক্ষের কাছে এই প্রস্তাবটি জমা দেয়া হয়েছে। তবে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। আর সালাফী গোষ্ঠী এই যুক্তিতেই সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি বিশ্বের মুসলমানদেরকে এখনই এরূপ আত্মঘাতী এবং কুফরী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। কারণ এর আগে সালাফীদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী ঠিক এমনই এক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যা অনেক সালাফী কর্তৃক সমর্থিত। একবার এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়ে গেলে আমাদের আর কিছুই করার থাকবেনা। কাজেই এখনই সময় এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা। এই লিখাটির নিচে সম্পূর্ণ প্রস্তাবনাটির মূল কপির একটি লিংক দেয়া হয়েছে। যারা একে কেবলই গুজব বলে উড়িয়ে দিতে চান তারা প্রস্তাবটি নামিয়ে পড়ে দেখতে পারেন।

কি কি পরিবর্তন আনা হতে পারে
————————————–
• রওজা মুবারকের পূর্ব পাশ, উত্তর পাশের আহলুস সুফফা অর্থাৎ উম্মুল মুমেনীনগণের হুজরাসমূহ, মা ফাতেমা রাঃ এর হুজরা ঘিরে বাবে জিবরাইলসহ পুরো কমপ্লেক্সকে দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেয়া। যদিও ডঃ বিন আব্দুল আজিজ বলেছেন তা কাঠের দেয়াল হবে। যাতে জিয়ারতকারীরা আর রাসুল (দঃ) এর রওজা মুবারকের কাছে গিয়ে জিয়ারত করতে না পারে। তার মতে এই পরিবর্তনের ফলে মা ফাতেমা রাঃ এর হুজরা বদ্ধ কমপ্লেক্সে চলে যাবে ফলে শিয়ারা এই হুজরাকে ঘিরে ঝামেলা করতে পারবেনা। তিনি মনে করেন এর ফলে জিয়ারতকারিরা রওজা মুবারক জিয়ারতের মাধ্যমে শিরক-বিদাত থেকে বেঁচে যাবে। [তাদের মাথায় কেবল শিরক-বিদাত কাজ করে। এর বাইরে তারা আর কিছু বুঝেনা।]
• হুজরার দেয়াল এবং কলামের উপর অঙ্কিত প্রশংসাসূচক শ্লোকগুলো মুছে দেয়া। এতে নাকি শিরকের পথ বন্ধ হবে। [মক্কা ও মদীনার হারামাইন শরিফাইনের মসজিদে তাদের বাদশাহদের নামে ফটক রয়েছে। সেগুলো কি বিদাতের আওতায় পরে না? সেগুলোর ব্যাপারে প্রস্তাবনায় কিছু উল্লেখ নেই।]
• রওজা মুবারকের পাশের স্তম্ভের গায়ে লেখা সাহাবা এবং বারো ইমামের নামসমূহ মুছে ফেলা। তিনি আশংকা করছেন এগুলোকে কেন্দ্র করে ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়। ??
• বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুসলিম রাজা-বাদশাহর নামাঙ্কিত মিম্বর, মূল্যবান পাথর, মুজাইক এবং রওজা মুবারকের উপর আয়াত লিখিত পর্দা ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এগুলোকে সরিয়ে দেয়া। তার মতে এগুলোর শিরকের উপাদান। [নাউজবুল্লাহ!]
• রওজা মুবারকের উপরে যে গম্বুজ তৈরি হয়, তাও তার মতে বড় বিদাত যা পারস্য, রোম ও চীনা শিল্পকলার প্রভাব বিদ্যমান। যদিও এই মুহূর্তে সবুজ গম্বুজ ভেঙে ফেলার কোন প্রস্তাব আসেনি। তবে এর উপর তামার প্রলেপ মুছে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এই সবুজ গম্বুজে আর কোন ধরণের কারুকাজ না করারও প্রস্তাব করা হয়। [ইসলামী ঐতিহ্য ধ্বংসই তাদের আসল লক্ষ্য!]
• দেয়ালের বিভিন্ন ডিজাইন এবং কারুকার্য মুছে মসজিদকে যথা সম্ভব সাদামাটা করা। সলফে সালহীনদের আমলে যেমনটি ছিল। [তারা নিজেদেরকে সালাফী দাবি করে আসছে!]
• মসজিদে নববী (দঃ) এর দক্ষিনপাশের দেয়াল ভেঙে মসজিদকে কেবলার দিকে সম্প্রসারণ করারও প্রস্তাব করা হয়।
• ## যদিও রওজা মুবারক ভাঙার কথা সরাসরি উল্লেখ নেই। মনে হচ্ছে এই খবরটি নেয়া হয়েছে সালাফী ইমাম আলবানীর কিতাব থেকে যেখানে আলবানী রওজা মুবারককে (রাসুল দঃ এবং তাঁর দু সাথীর দেহ) তুলে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

সালাফী, ওহাবী, লা-মাজহাবী, নজদি, আহলে হাদিস, দেওবান্দি সহ সকল বাতিল ফের্কার মতানুসারে কবর জিয়ারত বিদাত ও শিরকের পথ উন্মুক্ত করে। এমন কি রাসুল (দঃ) এর রওজা জিয়ারত হলেও। যদিও কবর জিয়ারত খাস সুন্নাত। ফলে তারা মানুষকে জিয়ারত থেকে পরিপূর্ণ বিরত রাখতেই এই উদ্যোগের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে।

নীচের লিংক থেকে প্রস্তাবনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ধন্যবাদ!

ড. আলী বিন আব্দুল আযীযের “عمارة مسجد النبي عليه السلام ودخول الحجرات فيه دراسة عقدية” শীর্ষক গবেষণা: http://faculty.mu.edu.sa/download.php?fid=77545

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment