কা’বার সৌন্দর্য্য

ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

চারকোণা বিশিষ্ট একটি স্থাপনা। কাছ থেকে দেখলে কখনও মনে হয় খুব ছোট। কখনও আবার মনে হয় অনেক বড়। এর চারপাশে রয়েছে মসজিদুল হারাম। দশ লক্ষেরও বেশি মুসুল্লি যেখানে একসাথে নামায আদায় করতে পারেন। মসজিদুল হারাম অতিক্রম করে কা’বার দিকে অগ্রসর হতেই চোখে পড়ে কা’বা! মনে হয় পুরো চত্বর জুড়ে এ ঘরের অবস্থান। প্রশান্ত, প্রশস্ত, শান্তিময় কা’বা। এজন্য কা’বা দৃষ্টিগোচর হতেই পড়তে হয় “আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, ওয়া ইলাইকা ইয়ারজিউস সালাম।” [হে আল্লাহ্‌, আপনিই শান্তিময়, আপনিই শান্তির উৎস আর আপনার দিকেই শান্তি ফিরে আসে।] অথচ আমরা জানি, এর চারপাশে যথেষ্ট জায়গা খালি রয়েছে তাওয়াফের জন্য। এরপর রয়েছে মকামে ইব্রাহীম। এরপর রয়েছে চারপাশ থেকে নামাযের স্থান। এরপর রয়েছে জমজম কুপের মুখ। বর্তমান এর চারপাশে তাওয়াফের জন্য তৈরি করা হয়েছে গোলাকৃতির চত্বর। যা মূল তাওয়াফের স্থানের পর। এক তলা, দু’তলা এবং তিনতলা পর্যন্ত উঁচু। প্রতি তলাতেই যে যার মতো তাওয়াফ করছেন। জামাআতে নামাযের সময় বাদে এক মুহূর্তের জন্যেও থামে না এই তাওয়াফ। আল্লাহু আকবার! 

আল্লাহ্‌র ঘর কা’বার কী শান! কী তাঁর মহিমা! কী তাঁর রূপ ও সৌন্দর্য! কী তাঁর ব্যক্তিত্ব! কালো জামার উপরে সোনার অক্ষরে রেখা ও লেখা। যে কালেমা নিয়ে নব্য খারেজীরা কূট মন্তব্য করছে, যে কালেমা থেকে রেসালতের অংশ “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাদ দিতে বদ্ধপরিকর, সে কালেমা খচিত রয়েছে এর অনিন্দ্যসুন্দর গিলাফে। যাকে কিসওয়াহ বলা হয়। একবার নয়, দু’বার নয়। অসংখ্যবার। চারপাশের পুরো কিসওয়া ব্যাপী। যাতে মদিনা-মুনিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণকারীদের চোখ ফাঁকি দিতে না পারে।

সারা বছর কালো পোশাকে আবৃত থাকলেও, হজ্বের সময়ে হাজীগণের সম্মানে তাঁকে সাদা পোশাকে জড়ানো হয়। সে শুভ্রতারও সে কি রূপ। যে পোশাকই পরানো হোক না কেন, কা’বা তাঁর চির গাম্ভীর্যতা নিয়েই থাকে। শান্ত ও গাম্ভীর্য কা’বার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। শুধু তাই নয়। এই গাম্ভীর্য এবং শান্ত ভাব বজায় রাখার জন্য রাব্বুল ‘আলামীন পবিত্র কুরআনে এই ঘর এবং এর আশেপাশের স্থানকে পবিত্র এবং শান্তিময় বলে আখ্যায়িত করেছেন। মানা আর না মানা শাসকদের ব্যাপার। কখনো নিজেদের প্রয়োজনে তারা কুরআনের এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্গণ করেন। যেমন করেছিলেন ১৯৭৯ সালে কিছু বিদ্রোহীকে কব্জা করার জন্য।

যেমনটি আগেই বলেছি, কা’বার চারপাশে মসজিদুল হারাম। প্রায় দশ লক্ষ মানুষ একসাথে নামায আদায় করার মসজিদ। এই মসজিদ ভেদ করে যেদিক থেকেই কা’বার চত্বরে প্রবেশ করুন না কেন, সেই একই ভাবগম্ভীর পরিবেশ লক্ষ্য করবেন। আরো লক্ষ্য করবেন এর অপার সৌন্দর্য। আমরা বাংলাদেশের মানুষ খুবই ভাগ্যবান বলতে হবে, কেননা, কা’বার মূল আকর্ষণ এর দরোজা এবং হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর। এই পয়েন্টকে কেন্দ্র করেই নামাযে দাঁড়ানোর জন্য লাইন আঁকা হয়েছে। কেন্দ্রবিন্দু হলো কালো পাথর ও দরোজা। এ দুটোই বাংলাদেশের দিকে মুখ করা। মানে আমরা যখন বাংলাদেশ থেকে নামাযে দাঁড়াই, কা’বার কালো পাথর এবং দরোজার দিকে মুখ করেই দাঁড়াই। তাওয়াফও শুরু করতে হয় এই কোণা থেকে। এরপর রয়েছে কা’বার হাতীম। যা এক সময় কা’বার অংশ ছিল।

কাবা
কা’বা শরীফ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স যখন ৩৫, বন্যায় তখন কা’বার বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কুরাইশরা কা’বা মেরামত করলেন। কিন্তু অর্থাভাবে হাতীমের অংশ বাদ দিলেন। যাকে হাজরে ইসমাইলও বলা হয়। উত্তর পাশের সেমি সার্কুলার বা অর্ধ চন্দ্রাকৃতির পাথর ঘেরা যে স্থান রয়েছে, সেটিই হাতীমে কা’বা। অনেকের মতে, কা’বা ঘেঁষে এখানেই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম স্ত্রী হাজেরা এবং পুত্র ইসমাইল আলাইহিমাস সালামের থাকার জন্য ঘর তৈরি করেছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন এখানেই মা হাজেরা এবং নবী ইসমাইল আলাইহিমাস সালাম চিরশায়িত আছেন। এ স্থান কা’বার অংশ হওয়ায় তাওয়াফ কারীগণ হাতীম সহ তাওয়াফ করেন। মি’রাজের রাতে এখানেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শায়িত ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, জানাজা নামাযের জন্য লাশগুলোও এখানেই রাখা হয়। সময় সুযোগ হলে এখানে দু’রাকআত নামায পড়ে নেবেন। কা’বার চারপাশ সমান নয়। একদিকে একটু লম্বা। কা’বার দরোজা, হাতীম শুরু হবার কোণা, হাতীম আর পরবর্তী কোণা যাকে রোকনে ইয়ামেনী বলা হয়, অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্থান। এসব স্থানে দোয়া করলে দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। কা’বার দরোজা থেকে সামান্য পূর্ব দিকে এলেই মাকামে ইব্রাহীম। যেখানে রক্ষিত আছে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের পায়ের ছাপ। যে পাথরে ভর করে তিনি পবিত্র কা’বায় গাঁথুনি দিতেন। আল্লাহ্‌ পাক তাঁর এই শ্রমকে পৃথিবীবাসীর কাছে কিয়ামত পর্যন্ত স্মরণীয় করে রাখার জন্য পবিত্র কুরআনে এই স্থানের জিয়ারত এবং এখানে নামাযের কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে এসব পুণ্যস্থান বারবার জিয়ারত করার তৌফিক দান করুন। এর উছীলায় আমাদের ঈমান, আক্বীদা ও আমলকে মজবুত করুন। আর আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

[ভালো লেগে থাকলে লেখাটি কপি করে নিজ নিজ টাইমলাইনে পোষ্ট করতে পারেন। আর দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই আপনার মতামত জানাবেন।]

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *