আশুরা (এক) – কারবালার ঘটনা নিয়ে বাতিলদের মিথ্যাচার – ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

আমি যখন কারবালা ঘটনা পড়ি তখন মন খারাপ হয়ে যায়। এমন করুণ আর নির্মম ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে বিরল এমন কি বিশ্ব ইতিহাসেও অদ্বিতীয়। নামধারী মুসলমান কিন্তু হাকিকতে মুনাফিকদের দ্বারা নবী দৌহিত্র এবং তাঁর পরিবারের উপর এমন অত্যাচার অকল্পনীয়। তখনো সাহাবাগণের অনেকেই জীবিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম গত হয়েছেন মাত্র ৫০ বছর। যারা এমন গর্হিত কাজ করেছেন তারাও মুসলমান ছিল, নামাজে এরাও আহলে বায়েত এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লামকে সালাম দিত। তাদের সামনে নবী পরিবারের অসহায় মানুষগুলো ছিলেন, ছিলেন মহিলা, শিশু ও কিশোর। একে একে সবাইকে এরা হত্যা করে ফেলল। একজন নয়, দুজন নয়, ৭২ জনকে। তাদের লাশগুলোকে অসম্মান করল। মাথাগুলো কেটে আলাদা করল। লাশের উপরে ঘোড়া চালিয়ে সেগুলো ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিল। মহিলা ও শিশুদের নিয়ে তামাশা খেলল। কারবালা থেকে কুফা, কুফা থেকে সুদূর দামেস্কে নিয়ে গেল হাঁটিয়ে, বেপর্দা করে। আহ! এসব ভাবলে আর ঠিক থাকতে পারি না।

অথচ সেই খল-নায়কদের এখনকার কিছু খলনায়ক জান্নাতী বলে রায় দেয় আর নামের শেষে রাঃ পড়ে। আল্লাহর লানতও এদের জন্য যথেষ্ট হবে না। এরা আল্লাহ পাকের নিষ্ঠুর গজবের জন্য তৈরি হচ্ছে। এদেরকে লানত দেবার ভাষা আমার জানা নেই।

[এটি দলিল ভিত্তিক গবেষণালব্ধ একটি রচনা। নিজে পড়ুন এবং আপনার টাইমলাইনে কপি পেস্ট করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ!]

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালামু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কারবালা প্রান্তরের সেইসব মহান শহীদদের প্রতি লক্ষ কোটি দরুদ ও সালাম জানিয়ে আজকে একটি গবেষণা ধর্মী লিখা পেশ করছি। সাথে সাথে পাপিষ্ঠ, নরাধম, জাহান্নামের কীট, মক্কা-মদীনা ধ্বংসকারী, সাহাবাদের অপমানকারী, হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে অবৈধ খেলাফতকে আঁকড়ে থাকা এবং কারবালার নির্মমতার আদেশকারী এজিদের প্রতি আল্লাহ্‌ পাকের শত লানত কামনা করছি। আর লানত তাদের প্রতি যারা এজিদের বন্দনায় বিমোহিত এবং এজিদ ও তার ধ্বংসলীলাকে সমর্থন করে কারবালার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করাকে বিদ’আত হিসেবে আখ্যায়িত করে। নব্য এজিদিয়া তথা আহলে খবিস, ঘোমটা মৌ-লোভী আর টাই ওয়ালাদের প্রতিও শত কোটি লানত বর্ষিত হোক কারণ এরা সবাই এজিদকে ভালোবাসে, এজিদের জন্য জান্নাত কামনা করে এবং অপরদিকে ইমাম হুসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বিদ্রোহী মনে করে থাকে। নাউজুবিল্লাহ!

ওহাবী, আহলে খবিস, কওমি তথা ভ্রান্ত সব দলের শিকড় রসুনের গোরার মতো এক জায়গায় এসে মিলেছে। কারবালার নির্মম ঘটনা সমস্ত মুসলমানের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কে হক্বপন্থী আর কে বাতিল পন্থী। উপরোক্ত দলগুলোর সবাই পাপাচার এজিদকে কেবল নির্দোষই মনে করে না, বরং জামানার শ্রেষ্ঠ আলেম বলে আখ্যায়িত করে থাকে। আর এর সাথে নবী দৌহিত্র আর মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার নয়নের মণি বেহেশতের সর্দার ইমাম হুসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে মনে করে ন্যায় সংগত খলিফা এজিদের বিরুদ্ধাচারণকারী। এজিদ নাকি ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ ছিল। আস্তাগফিরুল্লাহ!  

অনেকদিন যাবত মনে মনে পরিকল্পনা করে আসছিলাম, আশুরা নিয়ে একটি ব্যতিক্রমধর্মী লেখা লিখবো। গবেষণাধর্মী এই লেখাতে খুঁজে দেখব কেন সালাফী নামধারী আহলে খবিস শয়তানেরা এজিদ কর্তৃক সংগঠিত কারবালার ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, নবী-ওলী দুষমন ভ্রান্ত এই দলগুলো কেনই বা এজিদের মতো একজন পাপিষ্ঠ নরাধমকে মনে করে নির্দোষ এবং জানামার শ্রেষ্ঠ আলেম। নাউজুবিল্লাহ! সৌদি বেতনভুক্ত এবং পেট্রো-ডলারের কেনা গোলামদের মুখে সত্যকে আড়াল করার কুপ্রবৃত্তি লক্ষ্য করবেন। এদের সবার কিতাব, বই-পুস্তক আর আলোচনায় একটি বিষয় তারা অবশ্যই তুলে ধরার জোর অপচেষ্টা করে আসছে। আর তা হলো, আশুরা পালন করা যাবে। কিন্তু কারবালার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা, এদিনের স্মরণ করা এবং শোক পালন করা হারাম এবং বিদ’আত। এর পিছনে রহস্য কী?

এবার তাহলে পবিত্র কুরআনের আয়াত, সহীহ হাদিস এবং ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকে একটু খোঁজ নিয়ে দেখি কেন কারবালার ঘটনাকে এরা মিথ্যা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করে আর কেনই বা এ দিনের আলোচনা তথা শিক্ষা থেকে মুসলিম উম্মাহকে বঞ্চিত ও বিরত রাখতে সচেষ্ট।

তারা তাদের ভ্রান্ত দাবীর স্বপক্ষে কুরআনের কিছু আয়াত এবং কিছু হাদিস পেশ করে থাকে। সূরা নিসার ৫৯ আয়াতে আল্লাহ্‌ পাক বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো আর আনুগত্য করো রাসুলের এবং তোমাদের অন্তর্গত ‘ঊলুল আমর’ তথা আদেশ দাতাগণের।”

পাশাপাশি নিচের হাদিসগুলো সে আদেশেরই ইঙ্গিত বহন করে। 

হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, “আমার পরে এমন কিছু শাসক আসবে যারা আমার হেদায়েত অনুসরণ করবেনা এবং আমার সুন্নাহও মানবেনা। তাদের মধ্যে কারো কারো শরীর হবে মানুষের, কিন্তু মন হবে শয়তানের।” হুযায়ফা প্রশ্ন করলেন, “সেই সময় আমি থাকলে আমার কি করা উচিত?” তিনি (ﷺ) জবাব দিলেন, “তোমার উচিত হবে তার কথা শোনা এবং মান্য করা, যদিও সে তোমাকে কষ্ট দেয় এবং তোমার ধনসম্পদ কেড়ে নেয়।” [মুসলিমঃ ৪৬৩৪]

অন্য রেওয়ায়তে রয়েছে যে, “তোমরা শাসকের ততক্ষন পর্যন্ত আনুগত্য করো যতক্ষণ পর্যন্ত না দেখ যে সে কুফরীতে লিপ্ত হয়েছে যা সম্পর্কে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ বর্তমান রয়েছে।” [মুসলিমঃ ৪৬২০]

তার মানে কি ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এজিদের হাতে বায়াত না নিয়ে কুফুরি করেছেন? কিন্তু আল্লাহ্‌ পাক তো পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন তিনি আহলে বায়াতকে পবিত্র রাখবেন [সূরা আহযাব, আয়াত ৩৩, মুসলিমঃ ৬০৪৩ ইঃ ফাঃ]। কুরআন এবং অসংখ্য হাদিস অনুসারে আহলে বাইতের কেউ এমন কোনও ভুল করতে পারেন না যা কুফুরির পর্যায়ে পড়তে পারে। মূলতঃ তাঁরা সবাই পাপ থেকে পবিত্র এবং মহান রবের কুদরত তাঁদেরকে হেফাজত করেন।

খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনউদ্দিন চিশতি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন-

শাহ আস্ত হুসাইন, বাদশাহ আস্ত হুসাইন,
দ্বীন আস্ত হুসাইন, দ্বীন পানাহ আস্ত হুসাইন,
ছেরদাদ ওয়া না দাদ দস্ত দরে দস্তে ইয়াজিদ,
হক্কা কে বেনায়ে লা ইলাহ আস্ত হুসাইন।

অর্থাৎ- আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট হলেন হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু),
বাদশাহ হলেন হুসাইন,
ধর্ম হলেন হুসাইন,
ধর্মের আশ্রয়দাতা হলেন হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।
দিলেন মাথা মোবারক, না দিলেন বায়াতের হাত, ইয়াজিদের হাতে।
সত্য তো এটাই যে কালেমার সমস্ত স্তম্ভই হলেন হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।

উপমহাদেশের খ্যাতনামা আলেম ও কবি মওলানা মোহাম্মদ আলী জওহরের কবিতা,

‘কাতলে হোসাইন আসল মে মুর্গে ইয়াজিদ হ্যায়,
ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কে বাদ’।

আর এরা বলে কারবালার ঘটনার পর ইসলাম মরে গেছে। কারবালার ঘটনার ফলশ্রুতিতে এজিদের পতন হয়েছিল, এটাকেই কি এই নফস-পূজারি ঘোমটা মৌ-লোভীরা ইসলামের পতন মনে করে? মুসলমান মনে করে ইমাম হুসেইন রাঃ হলেন সত্যের মাপকাঠি আর এজিদ-পুজারী, নফস-পূজারী এ দলগুলো মনে করে এজিদ ছিল ইসলামী খেলাফতের ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকার। আস্তাগফিরুল্লাহ! এরা দুনিয়াবী অর্থের মায়ায় এতই বিভোর হয়ে আছে যে, নামাজে যাদের উপর দরুদ না পড়লে নামাজই হবে না, তাদের সমালোচনা করতেও একটু বুক কাঁপে না।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *