মুসলমানের নাতি যেভাবে আজ ইহুদি প্রধানমন্ত্রী

– ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

বরিস জনসন। নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। শুনে না থাকলে খবরে কান পাতুন, এখন থেকে অহরহ এ নামটি শুনতে পাবেন। তিনি এখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। গতকাল তিনি সর্বোচ্চ ভোটে এ পদের জন্য মনোনীত হন। তার পদাদা ছিলেন একজন টার্কিশ মুসলমান। আধুনিক এবং সেক্যুলার মুসলমান। সেক্যুলার বলে পরিচয় দিতে পারলে আমাদের দেশসহ আরবের অনেক মুসলিমই নিজেকে ধন্য মনে করে। মনে করে তার ভেতরে আধুনিকতা প্রবেশ করেছে। আমাদের দেশে তো আধুনিক ও সেক্যুলার হওয়া মানে নিজের ধর্মীয় পরিচয় ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হিন্দুদের মতো করে কথা বলা, চলতে শেখা, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে ভুতপ্রেতের কাছে সাহায্য চাওয়াকে বোঝায়। ফলে নামায-রোযা করা মানুষকে সেকেলে, আনকালচার্ড, গোরা, মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল বলে অবহেলা করার একটা মানসিকতা আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

কে এই বরিস জনসন? উইকিপেডিয়াতে গেলেই এর চৌদ্দপুরুষ সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনাদেরকে সহজ করে এর পেছনের বংশাবলী একটু তুলে ধরছি।

এই বরিসের দাদা ছিলেন একজন মুসলমান, সেক্যুলার মুসলমান। তার বাবা ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের শেষ সময়ের একজন মন্ত্রী। পরে স্বাধীনতা কামিদের দ্বারা তিনি নিহত হন। নাম তার আলী কেমাল। এটি আরবি নাম কামালের টার্কিশ রূপ। তিনি বিয়ে করেছিলেন এক সুইশ খৃষ্টান মহিলাকে। উইনিফ্রেড ব্রুন জনসন। ১৯০৯ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের গোলযোগের কারণে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান এবং এর কিছুদিন পরই তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান জন্ম দিয়ে মারা যান। সন্তানের নাম রাখেন উসমান। উসমানীয় সাম্রাজ্যের টালমাটাল অবস্থায় তার পক্ষের লোকজন সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদকে ক্ষমতা থেকে সরালে আলী কেমাল তুরস্কে ফিরে যান। তার দুই সন্তান সেলমা এবং উসমান নানির কাছে বড় হতে থাকে। এক সময় মুসলমান নাম উসমান ঝরে পড়ে এবং কেবল উইলফ্রেড জনসন নামে পরিচিত হতে থাকেন। তিনিই বরিসের দাদা।

বরিসের বাবা বিয়ে করেন রাশিয়ান এক ইহুদি আর্টিস্টকে। ইহুদি এবং খৃষ্ট-মুসলমানের ঘরে জন্ম নেন আজকের বরিস। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এবং গতকাল থেকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। তার মুসলিম বিদ্বেষ জনবিদীত এবং বহুল আলোচিত। দেখা যাক মুসলমানদের জন্য কি অপেক্ষা করছে।

উল্লেখ্য, ব্রিটেনের রাণীর পূর্বপুরুষও মুসলমান। কালের পরিক্রমায় তিনি এখন খৃষ্টান মহিলা। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র পুত্রবধু আমেরিকান ইহুদি। আর ইহুদীদের রীতি অনুযায়ী সন্তান মায়ের পরিচয় ও ধর্ম গ্রহণ করে। মানে এদের সন্তান ইহুদি হিসেবে পরিচিতি পাবে। প্রধানমন্ত্রীর বোনের মেয়ে বিয়ে করেছেন ইংল্যান্ডের একজন খৃষ্টানকে। টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন এমপি। আজ থেকে হয়তো ৫০ বছর পর কেউ লিখবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিংবা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব পুরুষ বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিংবা উলটোটাও হতে পারে। এখন থেকে ২৫ বছর পরে সংবাদ ছাপা হতে পারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধী দলিয় নেতা আমেরিকান ইহুদি কিংবা ব্রিটেনের খৃষ্টান বংশোদ্ভূত। আজকে যারা বাংলাদেশে নিজেদেরকে সেক্যুলার হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করছেন তাদের নাতিপুতিরা একদিন ইহুদি বা খৃষ্টান বা হিন্দু হয়ে ফিরে আসলে অবাক হবেন না। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এবং আমাদের সন্তানদেরকে হেফাজত করুন এবং ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। এ রহমত থেকে যেন আমরা বঞ্চিত না হই। 

[ভালো লেগে থাকলে লেখাটি কপি করে আপনাদের টাইমলাইনে পোষ্ট করতে পারেন। আর দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।]

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *