=================
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী (https://www.facebook.com/DrMiaji)
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم
আহলে হাদিস, জামাত-শিবির, ওহাবী সালাফীরা কথায় কথায় দলীল চায়। প্রশ্ন করে, এটা কি রাসুল (দঃ) এর আমলে ছিল? সাহাবারা কি তা করেছেন? তাবেঈ বা তাবে তাবেঈনগণ কি তা করেছেন?… ইত্যাদি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম রাসুল (দঃ) এর যুগ থেকে শুরু করে অদ্যাবদি চলমান রয়েছেন। অর্থাৎ তাদের সন্ত্রাসী এবং মুনাফিকী রাসুল (দঃ) এর যুগ থেকেই চলে আসছে। তাদের খবিসী আর বদ আক্বীদার কারণে রাসুল (দঃ) পর্যন্ত তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। রাসুল (দঃ) এর সাথে তারা যেমন বেয়াদবি করতো, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবা, তাবেঈ, তাবে তাবেঈনগণ সহ যুগে যুগে তারা আল্লাহর ওলিদের শানে বেয়াদবী করে নাফরমানি করতো। তাদের কর্মকাণ্ড ছিল সত্যের বিপক্ষে আর ফেতনা ফ্যাসাদ লাগিয়ে রাখাই ছিল তাদের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য। যেমন আল্লাহ পাক তাদের উদ্দেশ্যে সূরা বাকারার ১১ ও ১২ নং আয়াতে বলেনঃ “আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি। মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।”
ইতিহাস এদেরকে চিনে খারেজী হিসেবে। এদের বৈশিষ্ট্য হলো কবীরা গোনাহকে শিরক মনে করা। রাসুল (দঃ) কে আমাদের মতই মানুষ এবং তাঁরও ভুল হতে পারে মনে করা। সাহাবাদেরকে পথভ্রষ্ট মনে করা ইত্যাদি। যেমন আজকের মউদুদি মতবাদে বিশ্বাসীরা, সালাফীরা, আহলে হাদিসের অনুসারীরা কিংবা ওহাবীবাদের অনুসারীরা নবী-রাসুল, সাহাবা, আউলিয়াদের শানে ও মানে আপত্তিকর কথা বলে এবং বেয়াদবি করে থাকে। সূরা কাহফের ১১০ নং আয়াত না বুঝে তারা কথায় কথায় দলীল দেয় যে রাসুল (দঃ) আমাদের মতই মানুষ। নাউজুবিল্লাহ! কথায় কথায় মুসলমানদেরকে মুশরিক বলে অভিহিত করাও তাদের একটি বৈশিষ্ট্য। তারা আল্লাহর ফয়সালা ব্যতীত অন্য কারো ফায়সালা যেমন রাসুল (দঃ) বা সাহাবাদের ফায়সালা মানতে অস্বীকৃতি জানাতো। আলোচনার পরিবর্তে গুপ্ত হত্যা তাদের কাছে বেশী প্রিয়। যেমন খারেজীদের গোপন সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা হযরত আলী রাঃ কে শহীদ করে। মুয়াবিয়া রাঃ অসুস্থ থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
রাসুল (দঃ) এর সাথে এদের বেয়াদবী
————————–———
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (দঃ) কোন কিছু বন্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে আব্দুল্লাহ বিন যুলখওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইনসাফ করুন! তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তাহলে আর কে ইনসাফ করবে? ওমর বিন খাত্তাব রাঃ বললেন, আমাকে অনুমতি দিন, তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও! তার জন্য সাথীবৃন্দ রয়েছে। যাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের রোযার তুলনায় তোমরা তোমাদের রোযাকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এরূপ বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের পরে লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে তাকালেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার কালে তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন্য হবে মহিলাদের স্তনের মত। অথবা বলেছেন, বাড়তি গোস্তের টুকরার মত। লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় আবির্ভাব হবে। আবূ সাঈদ রাঃ বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবীজী দঃ থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী রাঃ তাদের হত্যা করেছেন । তিনি বলেন, ওর সম্পর্কেই নাজিল হয়েছে-ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সাদকা সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে।
{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩২৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৬}
খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে এদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
————————–————————–
হযরত আবু বকর রাঃ এর সময় থেকেই এ দলটি বিভিন্ন উছিলায় জাকাত দানে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। কোথাও আবার তারা ভণ্ড নবুয়তের দাবি করে বসে। হযরত আবু বকর রাঃ খুব শক্ত হাতে এদের দমন করেন। হযরত উমর রাঃ এর সময় এ দলটি তেমন কোন সুযোগ করে উঠতে পারেনি তাঁর কঠোরতার কারণে। কিন্তু হযরত উসমান রাঃ এর কোমলতার সুযোগ নিয়ে এই দলটি তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এতই বাড়াতে থাকে যে শেষ পর্যন্ত তারা খলিফাকে শহীদ করে ছাড়ে। আর মুসলমানদের মধ্যে এমন ফেতনা সৃষ্টি করে যার ফলে মুসলিম সমাজ চিরতরে দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যায়। শিয়া ও সুন্নী।
বর্তমান যুগের খারেজী
———————
বর্তমান যুগের খারেজী হল ওহাবী নজদী সালাফী নামধারী ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী একদল বিপদ্গামী। জায়গা বিশেষে তাদের নামও ভিন্ন। যেমন আরবে এরা সালাফী, ওহাবী, লা-মাজহাবী। ভারতবর্ষে এরা আহলে হাদিস, জামাতী, হেফাজতি। কোথাও এরা আল-কায়েদা, আল-শাবাব, বোকো হারাম, তালিবান, তাকফিরি। আর এখন নতুন নাম হল ইসলামী খেলাফত। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর শিকড় এক জায়গায়। তাদের বিভিন্ন অংগসংগঠন রয়েছে যেমন, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাহিনী ইত্যাদি।
তাদের ব্যাপারে নবীজি (দঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী/
তাদের চেনার উপায়ঃ তারা অল্প বয়স্ক এবং নির্বোধ হবে
————————–——————–
হযরত আলী রাঃ বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (দঃ) কে বলতে শুনেছি, শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে যারা হবে অল্পবয়স্ক যুবক, নির্বোধ। তারা সৃষ্টির সবচাইতে শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে। অথচ ঈমান তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তাদেরকে যেখানে ই তোমরা পাবে হত্যা করবে। কেননা তাদেরকে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে প্রতিদান রয়েছে।
{সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-২৩২৮}
হযরত আবূ সালামা ও আতা বিন ইয়াসার থেকে বর্ণিত। তারা আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ এর কাছে এলেন। তারা তাকে “হারুরিয়্যাহ” সম্প্রদায় সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন যে, আপনি কি নবীজী দঃ থেকে এদের সম্পর্কে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হারূরিয়্যাহ কি তা আমি জানি না। তবে নবীজী দঃ কে বলতে শুনেছি এ উম্মতের মধ্যে বের হবে। তার থেকে সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে কথাটি বলেননি। যাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পড়বে বটে কিন্তু তা তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তীর নিক্ষেপকারী তীরের প্রতি, তার অগ্রভাগের প্রতি, তীরের মুখে বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করে, তীরের ছিলার বেলায়ও সন্দেহ হয় যে, তাতে কিছু রক্ত লেগে রইল কি না?
{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩২২}
পূর্বাঞ্চল এবং মাথা মুণ্ডন
———————–
আরও পরিষ্কার করে নবীজি (দঃ) তাদের উতপত্তির স্থল ভারতবর্ষের দিকে ইংগিত করেছেন। এবং বলেছেন এরা মাথা মুণ্ডন করবে।
আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। নবীজী দঃ বলেছেন, পূর্বাঞ্চল থেকে একদল লোকের অভ্যুদয় ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, তবে তাদের এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকার [ধনুক] থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত ধনুকের ছিলায় না আসে। বলা হল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেন, তাদের আলামত হল মাথা মুণ্ডন।
{সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৭১২৩}
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী ও আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল দঃ ইরশাদ করেছেন, অচিরেই আমার উম্মতের মাঝে মতভেদ হবে। যাদের মাঝে একদলের ভাষা হবে মিষ্ট। কিন্তু কাজ হবে জঘন্য। তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত ধনুকের ছিলায় না আসে। যারা তাদের হত্যা করবে তাদের সাধুবাদ। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করবে, কিন্তু আল্লাহর কিতাবের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। যারা তাদের হত্যা করবে তারা তাদের থেকে উত্তম হবে। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাদের নিদর্শন কী? তিনি বললেন, ন্যাড়া মাথা।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৭
তারা নিজেরাই হবে প্রকৃত শিরককারী
————————–———–
সহীহ হাদিস অনুসারে জামাতি, লা-মাজহাবী, আহলে হাদিস, ওহাবীরা নিজেরাই শিরক আর বিদাতে পতিত। দেখুন সহীহ হাদিস দ্বারা দলীল।
ইবনে ইয়ালা (রা) হযরত হুজাইফা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুল (দঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্য থেকে এমন মানুষের আশংকা করি, যে এত বেশি বেশি কুরআন পড়বে যে তার চেহারা উজ্জ্বল হবে আর ইসলামকে সে নিজের করে নিবে। আল্লাহ যতক্ষন চান এরকম থাকবে। তারপর আল্লাহ তার থেকে তা উঠিয়ে নেবেন যখন সে কুরআনকে পাশে রেখে দেবে আর তলোয়ার নিয়ে তার প্রতিবেশীকে শিরকের অভিযোগে আক্রমণ করতে যাবে।’ নবী (দঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল তাদের দুজনের মধ্যে কে শিরকের দোষে দুষ্ট? তিনি বললেন, ‘অভিযোগকারী’।
আলবানি এই হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, তাহকিক নাসির আলবানি, ভলিউম ০০১, হাদিস নং ৮১ [সিলসিলাত আল-আহাদিস আল-সাহিহাহ – আলবানি ভলিউম ০০৭ –এ, পৃষ্ঠা ৬০৫ হাদিস নং ৩২০১] সহীহ ইবনে হিব্বান, ১ খণ্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা।
হাদিসে বর্ণিত খারেজী সম্প্রদায়ের সাথে বর্তমান কালের জামাত-শিবির, আহলে হাদিস তথা আহলে খবিস, লা-মাজহাবি, হেফাজতি, তাবলিগি, ওহাবী-সালাফীদের সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তারা তুলনামূলক অল্পবয়স্ক এবং নির্বোধ। তাদের ধর্মীয় জ্ঞান কিছু বাংলা কিতাবেই সীমাবদ্ধ। কাজেই তাদের সুন্দর আর মিষ্টি কথা থেকে সাবধান। মিষ্টি কথার আড়ালে রয়েছে ঈমানহরণের উপকরণ। সাধারণ মুসলমানগণ না বুঝে খুব সহজেই তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসে তারা জড়িয়ে পড়ছে। তারা মনে করছে তারা ইসলামের মহান সেবা করছে। তাদের মগজ এমনভাবেই ধোলাই করা হয় যে তারা সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারেনা। নিজেকে সঁপে দেয় নিকৃষ্টতম গহ্বরে। চেয়ে দেখুন এই তাকফিরি গোষ্ঠী পবিত্র কালেমাকে পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারা কেবল তাউহিদে বিশ্বাস করে। রেসালাত তাদের কাছে কিছুই না।
আসুন তাদেরকে প্রতিহত করি এবং তাদের মিথ্যা প্রবঞ্চনা থেকে নিজেদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল রক্ষা করি।
Leave a Reply