জংগীবাদের উৎস এবং তা দমনে রাষ্ট্রের করণীয়

jongibad

ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী

[ধারাবাহিক ভাবে বেশ কিছু পর্বে জংগী দমনে সরকার ও সুন্নী সংগঠনের করণীয় কি তা প্রকাশ করা হবে, ইনশা আল্লাহ! পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে কপি করে আপনার টাইমলাইনে পোস্ট করুণ। ধন্যবাদ!]

সরকার জংগী ইস্যুকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সামনে নিয়ে এলেও তা দমনে এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত এবং সময়োপযোগী কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এর উৎস কি এবং কেন যুবসম্প্রদায় এই আত্মঘাতী পথ বেছে নিয়ে নিজেদের এবং তাদের আপনজনদের জীবন বিপন্ন করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। অথচ অহরহই জংগী ধরা পরার খবর আমরা দেখছি। সাথে উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই-পুস্তক আর রাসায়নিক দ্রব্যাদি যা দিয়ে সহজেই তৈরি করা যায় শক্তিশালী বোমা। সরকার তাদের রাজনৈতিক সুবিধার্থে এই সমস্যা জিইয়ে রাখছে কিনা তাও ভাবার বিষয়।

এর উৎস কোথায়?

জংগীবাদের উৎস খোঁজার আগে দেখতে হবে এদের আদর্শ কি! খুঁজে বের করতে হবে কোন আদর্শ বা মতবাদের অন্ধ বিশ্বাসে এরা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করে না। এরা কি কোন রাজনৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, নাকি কেবল ধর্মীয় আদর্শেই নিজেদের বিলীন করছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটু দেখি নেই বাংলাদেশে এযাবৎ কালের জংগী হামলা এবং এর প্রকার ভেদ। চলতি শতাব্দীর আগে এই জংগীবাদের ব্যাপারে তেমন কিছু শোনা যায়নি। বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দশকের শুরুতে হঠাৎ করেই যেন জংগীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। উত্তরবঙ্গে জংগীবাদের প্রাণপুরুষ সিদ্দিকুল ইসলাম অরফে “বাংলা ভাই”-য়ের কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। পুরো উত্তরবঙ্গে সে চালিয়েছিল সন্ত্রাসের তাণ্ডব। তার নাম শুনলে ভয়ে কাঁপত না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। ইসলামের নামে সে লালন করেছে সন্ত্রাস। আর জিম্মি করেছিল অগনিত মানুষকে। সে মউদুদিবাদী সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাথে জড়িত ছিল। তার ধর্মীয় গুরু ছিল শায়েখ আব্দুর রহমান। যে এককালে জামাতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল।

আপনাদের আরো মনে থাকার কথা জেএমবি (জমিয়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) এবং হুজি’র (হরকাতুল জিহাদ) তাণ্ডব। ২০০৫ সালে এ সংগঠন দু’টি সমগ্র বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ৬৩ জেলায় একযোগে মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে বোমা হামলা চালিয়ে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের নতুন রেকর্ড গড়েছিল। সেটি ছিল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচে’ অবাক করা এবং অভূতপূর্ব একটি ঘটনা। এ সংগঠন দু’টির মুল বাণী ছিল, তারা আল্লাহ ব্যতীত মানুষের তৈরি আইন মানে না। ফলে এদের আক্রমণের লক্ষ্যস্থল ছিল সরকারী ভবন, বিশেষ করে আদালতসমূহ। তাদের এ হামলায় কয়েকজন জজও নিহত হন। এই সংগঠনগুলোর কর্তাব্যক্তি ছিলেন বাংলাদেশের আহলে হাদিসের প্রধান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আসাদুল্লাহ গালিব। বিএনপি সরকার একে গ্রেপ্তার করলেও তত্বাবধায়ক সরকার আসার পর তিনি ছাড়া পান।

নামে-বেনামে এ সময়টিতে গড়ে উঠে প্রচুর জংগী সংগঠন। রেপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এদের বিরুদ্ধে খুব চৌকস এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিলে এদের বেশ কিছু সদস্য নিহত হয়, কেউ বা আইনের আওতায় আসে এবং পরে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলে। তবে অনেকেই আত্মগোপন করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় কিংবা অন্য কোন নতুন সংগঠনের অধীনে নতুন করে নিজেদের সংগঠিত করতে থাকে। এদেরই শাখা-প্রশাখা হিসেবে আমরা কখনো নাম শুনি “আনসারুল্লাহ বাংলা টীম”, “হিযবুত তাহরীর”, “হিযবুত তাওহীদ” সহ নামে-বেনামে আরো অনেক সংগঠন। যাদের লিস্ট হয়তো দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। এরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদা, তালিবান এবং বর্তমানকালের সবচে’ আলোচিত সন্ত্রাসী বাহিনী “আইএসআইএল” বা সংক্ষেপে “আইএস” কিংবা ইসলামী খিলাফতের ইসলামের নামে জিহাদ ও জংগীবাদের আদর্শ দ্বারা ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ। ফেসবুকে এদের স্ট্যাটাস দেখলেই অনুভব করা যায় এদের মূল মডেল। অথচ অল্প কিছু আরব দেশ ছাড়া পুরো মুসলিম বিশ্ব এদেরকে মুসলমানই গণ্য করে না।

এদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মসজিদ, মাজার, ঐতিহ্য, ইতিহাস কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। কিন্তু অবাক হবার ব্যাপার হচ্ছে যে তারপরও এদেশের জংগীবাদের হোতা আহলে হাদিস আন্দোলন, জামাত-শিবিরের সদস্য বা এদের অনুগতরা ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে পরিচয় দানকারী আইএসের অগ্রগতিতে উল্লাশ প্রকাশ করে থাকে। তাদের মতে হাদিসে বর্ণিত গাযওয়া-এ-হিন্দ এদের মাধ্যমেই সংগঠিত হবে। এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে এরা রুল-মডেল হিসেবে বিবেচনা করে এবং সত্যিকারের মুজাহিদ মনে করে। শুধু তা-ই নয়, আহলে হাদিস বা লা-মাজহাবী আন্দোলন প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে আইএস এবং বিভিন্ন দেশের মুজাহিদদের পক্ষে সদস্য সংগ্রহের কাজ করে থাকে। গত বছর ডঃ বিলাল ফিলিপ্স বাংলাদেশে এসেছিলান এ ধরণের গপন এজেন্ডা নিয়ে। কিন্তু সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপে ফিলিপ্সকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হয়। ফলে এদের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। কিন্তু থেমে থাকেনি এদের কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশের অনেক তরুণী এদের মিথ্যা প্ররোচনায় সিরিয়ায় মুজাহিদদের যৌন সেবক হতে প্রস্তুত। এমনি একজনকে কিছুদিন আগে তুরস্ক থেকে ফেরত আনা হয়।

এরা কাদেরকে টার্গেট করে?

দেশের ভেতরে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো প্রাথমদিকে টার্গেট করতো মাদ্রাসা পড়ুয়া গরীব ছাত্রদেরকে। তাদেরকে আর্থিক সহায়তার প্রলোভন দেখানো হতো। জিহাদের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এদের মগজ ধোলাই করে বিভিন্ন স্থানে হামলার জন্য তৈরি করা হতো। এদেরকে ধারণা দেয়া হতো, “মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী!” জান্নাতের হুর গেলমান সম্পর্কে এমন সব আয়াত এদের শোনানো হতো যে এরা এক অতীন্দ্রিয় সুখের জগতে বিচরণ করতো। ফলে এদের দ্বারা ইসলাম ও জিহাদের নামে যে কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা অতি সহজ হতো। তরুণ অল্প শিক্ষিত গরীব বাবা-মায়ের সন্তানেরা এদের লোভনীয় ফাঁদে সহজেই আটকা পড়তো। প্রয়াত তারেক মাসুদের “রান-ওয়ে” ছবিটি এ পন্থায় অসহায় কম বয়সীদের সন্ত্রাসী দলে নিয়োগ দেবার উপর প্রামাণ্য চিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কিন্তু অতি সম্প্রতি আহলে হাদিস আন্দোলন এদের কৌশল পরিবর্তন করে। গরীব অল্প শিক্ষিত মাদ্রাসা ছাত্রদের টার্গেট করার পরিবর্তে এরা এখন লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ুয়াদের। যাদের আবার বেশির ভাগই স্বচ্ছল পরিবারের এবং শিক্ষিত বাবা-মায়ের সন্তান। এমনই একজন তরুণ এখন আমেরিকার জেলে সাজা ভোগ করছে।

অধুনা এই মগজ ধোলাইয়ের কাজটি হয়ে থাকে অতি সূক্ষ্মভাবে এবং সুকৌশলে। দেশের বুর্জোয়া ধর্মীয় গোষ্ঠী জামাত-শিবির আর ধর্মত্রাস আহলে হাদিস পরিচালিত টিভি চ্যানেলগুলো এই দায়িত্ব পালন করছে। সাধারণ শিক্ষিত আধুনিক নাগরিকদের এরা “সহীহ হাদিসের” মারপ্যাঁচে আটকে ফেলছে। খুব চাতুরতার সাথে সাধারণ মুসলমানের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয় যে, বাবা-দাদার অনুসৃত ধর্ম অনুসরণ করলে মুশরিক হয়ে মরতে হবে। আমাদেরকে অনুসরণ করতে হবে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম।” এরা এদের এই চাতুরতায় যেসব আয়াত ব্যবহার করে থাকে সেসব আয়াত আরবের কাফের আর মুশরিকদের উদ্দেশ্য করে অবতীর্ণ হয়েছিলো। অথচ এরা এগুলো নির্দ্বিধায় মুসলমানের ক্ষেত্রে চালিয়ে দিচ্ছে। কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে সবার পরিষ্কার ধারণা না থাকার কারণে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই এই “সহীহ দলীলের” ফাঁদে পা দিচ্ছে। তেমনি একটি আয়াত আবুল ‘আলা মউদুদি তার “ইসলামের হাকীকত” প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন।

“যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে এস, তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে?” (সুরা মায়েদাঃ ১০৪)। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এ আয়াতটি কাফির আর মুশরিকদেরকে তাদের বাপ-দাদার অনুসৃত পথ ছেড়ে আল্লাহ পাকের মনোনীত ধর্ম ইসলাম অনুসরণ করার কথা বলা হচ্ছে। কেননা কোন মুসলমান ইসলাম এবং রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিধান বাদ দিয়ে বাপদাদাকে অনুসরণ করে না। কিন্তু মউদুদি-পন্থী এবং আহলে হাদিসের লোকেরা মনে করে আমরা মাজহাব অনুসরণ করে প্রকৃত ইসলাম বাদ দিয়ে বাপ-দাদার পথ অনুসরণ করছি। তাদের মতে মাজহাব মানা শিরক। এরা প্রায়ই বলে থাকে, “আল্লাহ এক, নবী এক, ধর্ম এক। আমরা কি মুহাম্মাদী ইসলাম অনুসরণ করবো, নাকি আবু হানিফার ইসলাম অনুসরণ করবো?” নাউজুবিল্লাহ! ডাক্তার জাকির নায়েক ও এসব আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেন। তাঁর লেকচার শুনলেই এর সত্যতা মিলে।

আমাদের ভারতবর্ষে আল্লাহর ওলী (রাহিমাহুমুল্লাহি আজমাঈন) গণের মাধ্যমে ইসলাম এসেছে। তাঁদের সবাই ছিলেন সঠিক ও সত্য পথের উপর। তাঁদের মধ্যে আবার কেউ কেউ ছিলেন যুগের মুজাদ্দিদ। তাঁদের পরে এই ভারতে তথা ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক মুহাদ্দিস এবং মুজতাহিদের আগমন ঘটেছে। ফলে এখানকার মুসলমানগণ ধর্ম সম্পর্কে গাফেল নন। কিন্তু আরবের নজদে নতুন ফেরকার প্রবর্তনের পর এদের দৃষ্টিতে এরা ব্যতীত অন্য সবাইকে মুশরিক মনে করা শুরু হয়। ফলে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। নজদি ওহাবী মতবাদের প্রচার প্রসারের ফলে গড়ে উঠে যতসব জংগী সংগঠন। আগেও উল্লেখ করেছি যে, আল-কায়েদা, তালিবান, আল-শাবাব, বুকো হারাম, নুসরা ফ্রন্ট, দায়েশ, ইসলামী খিলাফতসহ বাংলাদেশের অসংখ্য জংগী সংগঠন তৈরিতে সরাসরি হাত রয়েছে সৌদি ওহাবী, পশ্চিমা ইহুদি আর খৃষ্টানচক্রের। লক্ষ্য করুণ এদের সবার আক্বীদা হলো সৌদি ওহাবী নজদী আক্বীদা। তথা ইসলামকে বিনাশ করার এক ভয়ংকর নীলনকশা। আর সে নীলনকশা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে মউদুদিবাদ এবং আহলে হাদিস তথা লা-মাজহাবী চক্র। কেননা এদের নাম ও সংগঠন ভিন্ন হলেও এদের আক্বীদায় কোন পারথক্য নেই।

উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার হলো যে আহলে হাদিস এবং মউদুদি মতবাদের বাহকগণ দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমল মতি যুবকযুবতিদেরকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। আর কৌশল হিসেবে বেছে নিচ্ছে কোট-টাই পড়া ডাক্তার জাকির নায়েকের ভিডিও। পীস টিভিতে এবং অনলাইনে এসব মাল-মশলার ব্যাপক প্রসারের ফলে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিপুল আর্থিক অনুদানের ফলে এরা এদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছে অতি সহজে। আর যেহেতু এর প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, এরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রের করণীয়

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মধ্যেই জংগীদের আস্তানায় হামলা করে কিছু জংগী গ্রেফতার করছে তবে অনেকেই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরা যে আদর্শ এবং মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের জান ও মালের তোয়াক্কা না করে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে এর প্রতিকার কেবলমাত্র গ্রেফতার আর আইনের প্রয়োগ দিয়ে সম্ভব হবে না। এর জন্য প্রয়োজন এর উৎস খুঁজে দেখা এবং সে উৎসকে রোধ করা। রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক বেশি জরুরী। দু’একজন বিপথগামী যুবক বা যুবতীকে গ্রেফতার করলেই বাকীরা এ পথ ছেড়ে পালাবে না। বরং এর উল্টোটা হবার সম্ভাবনা। নদীর স্রোতে যত বেশি বাঁধা আসে, স্রোতের গতি ততই বেড়ে যায়। এদের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। বাঁধা আসলে এদের ভেতরের জিহাদী মনোভাব আরো চাঙ্গা হয়ে উঠাই স্বাভাবিক। এরা যে গোলকধাঁধায় আবর্তিত হচ্ছে, সে গোলকধাঁধার চক্রকে ভেঙ্গে দিতে হবে। যাতে তাঁরা তাদের বিভ্রান্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে নিজেরাই সেপথ থেকে ফিরে আসতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং উপযুক্ত-দক্ষ জনবল। এর জন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত পরিকল্পনা। আর রাষ্ট্রকেই এ নিয়ে ভাবতে হবে। রাষ্ট্র সঠিক, যোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।

কি কি করণীয়?


১। রাষ্ট্রকে আন্তরিক হতে হবে। রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় জংগীবাদকে সামনে নিয়ে আসা এবং এর প্রতিকার না করে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করলে সব পদক্ষেপই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

২। প্রথমেই আসে আক্বীদার বিষয়। কারণ আক্বীদার বিভ্রান্তির কারণেই যুবসম্প্রদায় খুব সহজে ভুল পথ বেছে নিচ্ছে।

৩। জিহাদের ভুল ব্যাখ্যার জবাবে সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা।

৪। জাতীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় বিতর্কিত বিষয়ের উপর বাহাস তথা বিতর্কের আয়োজন করা। যেসব বিষয় নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়, সেসব বিষয়ের উপর কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস ভিত্তিক আলোচনা হলে সঠিক ও সত্য বেরিয়ে আসবে। ফলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হবে। মাজহাব, শরী’আর উৎস, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কিত যেসব বিষয় নিয়ে মতভেদ দেখা দেয় সেগুলো এই আলোচনায় আনা প্রয়োজন।

৫। এসব আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়ন জরুরী। যাতে এই নীতিমালার বাইরে কোন আলেম বা বক্তা কোন মিডিয়ায় নিজেদের বক্তব্য প্রচার করতে না পারে। ফলে পীস টিভি কিংবা অন্যান্য মিডিয়ার অপপ্রচার থেকে যুবসমাজ তাদের ঈমান ও আক্বীদা রক্ষা করতে পারবে।

৬। প্রয়োজনে মিশর, তিউনিসিয়া, চেচেনিয়াসহ অনেক মুসলিম দেশের অনুকরণে জংগীবাদের উৎসাহব্যঞ্জক বই-পুস্তক নিষিদ্ধ করতে হবে।

৭। বিদেশি সংস্থা যেমনঃ আল-কায়েদা, ইসলামী খিলাফতসহ অন্যান্য সংগঠন যাতে এদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া। দেশের নাগরিকদের সচেতন করে তোলার জন্য সকল মিডিয়ায় জংগী গোষ্ঠীর ভুল ব্যাখ্যার জবাবে সঠিক ব্যাখ্যা প্রচার করা।

৮। বিদেশ থেকে আগত অর্থের ব্যাপারে আরো সচেতনতা গ্রহণ করা। এনজিও সম্পর্কিত কিছু আইন রয়েছে, কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ আছে বলে মুনে হয় না। হলে দেশে জংগীবাদের এতো প্রসার হতো না।

কষ্ট করে এতো বড় লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কমেন্টে আপনাদের মুল্যবাদ পরামর্শ কাম্য। তবে গালিগালাজ এবং গোঁয়ার্তুমি পরিহার্য্য। সবাইকে ধন্যবাদ!

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *