পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের আলোকে শাবানের মধ্যরাত্রি বা শবে বারাত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী 
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم
পহেলা জুন ২০১৫ পবিত্র শবে বারাত বা শাবানের মধ্য রাত্রি। প্রতিটি মুমিন মুসলমান বান্দার জন্য এই রাত্রিটি হল আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে সম্মানিত, মহিমান্বিত এবং বরকতময় এক রজনী। পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে এই মহিমান্বিত রাত্রির প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। আর বেশ কিছু হাদীস শরীফে এই রাত্রির গুরুত্ব এবং মহত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
 
আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
حم- وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ- إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ- فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ-
”শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দু’খানঃ ৪৪:২-৫)
 
মুফাসসিরীনে কেরামের কেউ কেউ মনে করেন সূরা দু’খানের উল্লেখিত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদর-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে সুস্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি……..।” আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে তা সূরা ক্বদরেও উল্লেখ আছে।
 
কিন্তু এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করলে বোঝা যাবে কেন অনেক মুফাসসিরীনে কেরামের মতে ”লাইলাতাম মুবারাকা” বলতে আসলে শাবানের মধ্য রাত্রিকে বুঝানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন, “মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শা’বান মাসের মধ্য রাতকে বুঝিয়েছেন (যা আমাদের কাছে শবে বরাত হিসেবে পরিচিত)। আল্লাহ পাক এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।” (ছফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ড, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, রুহুল বয়ান, আবী সাউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন, কামলালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ দুরার, মাদারিক)
 
”লাইলাতাম মুবারাকাহ” দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ সূরা দু’খানের ৪ নম্বর আয়াত শরীফ (فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ)। এই আয়াত শরীফের يُفْرَقُ শব্দের অর্থ ফায়সালা করা। প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে কেরামগণ يُفْرَقُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু অর্থাৎ লেখা হয়, ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়, ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়, ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়, ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
 
কাজেই ইয়ুফরাকু -র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, ”লাইলাতুম মুবারাকাহ” দ্বারা শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রামাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকে লাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে খাযীন, তাফসীরে ইবনে কাছীর, বাগবী, কুরতুবী, রুহুল বয়ান, লুবাব প্রমুখ তাফসীর গ্রন্থসমূহ)
 
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক যে সুরা দু’খান-এ বলেছেন, ”আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি” এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল ”আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি।” আর সুরা ক্বদর-এ ”আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক শবে বরাতে কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন এবং শবে ক্বদরে তা নাযিল করেন। হাদিস শরীফের আলোকে আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে লাইলাতুল বারাত বা শাবানের মধ্য রাত্রির গুরুত্ব মহান আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ এর কাছে অতীব মর্যাদার। আর আমাদের জন্যে তা বরকতময়, ক্ষমা প্রাপ্তির এক মহা সুযোগ। সহীহ হাদিসের আলোকে এ রাত্রি কবরবাসীর জন্যেও মাগফেরাতের, যদি তাদের কোন নেক সন্তান এই রাত্রিতে আল্লাহর কাছে তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করে। হাদিসের আলোকে শবে বারাত বা শাবানের মধ্যরাত্রি সম্পর্কে বর্ণনা আসছে সামনে।
 
শাবানে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়
 
পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, স্বনামধন্য মুফাসসিরীনে কেরামগণ “লাইলাতাম মুবারাকা” বলতে শাবানের মধ্য রাত্রি অর্থাৎ শবে বারাত বা লাইলাতুল বারাতকে চিহ্নিত করেছেন। পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ শুরু হয়েছে পবিত্র মহিমান্বিত ক্বদরের রজনীতে। এই নিয়ে কারো কোন সংশয় নেই। কিন্তু সূরা দুখানের ”লাইলাতাম মুবারাকা” বলতে ক্বদরের রাতকে বুঝানো হয়নি বলে মত দিয়েছেন বিখ্যাত অনেক মুফাসসিরীনে কেরাম। কারণ আল্লাহ পাক এমন এক বরকতময় রজনীতে কোরআন নাজিলের উদ্যোগ নিয়েছেন যে রজনীতে ’প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা করা হয়’। সহীহ হাদিসের আলোকে সেই রজনী শাবানের মধ্য রজনী, যে রজনীতে প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা করা হয়। এ কারণে রমজান মাস ব্যতীত একমাত্র শাবান মাসই রাসুল ﷺ এর কাছে অত্যধিক প্রিয় মাস ছিল। রমজান ব্যতীত এ মাসেই তিনি অধিক রোযা পালন করতেন আর নফল আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। এ মাসে আমরা যেন আমাদের আমল ও বাড়িয়ে দেই সে ব্যাপারে তিনি পরামর্শও দিয়েছেন।
সহীহ বুখারি এবং সহীহ মুসলিমের বেশ কিছু হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনাকারীর মাধ্যমে একথা আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন রাবির শব্দে কিছু তারতম্য রয়েছে কিন্তু বিষয়বস্তু একই।
 
”আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ শাবান মাস ব্যাতীত বছরের অন্য কোন মাসে এত অধিক সাওম (রোযা) পালন করতেন না। তিনি বলতেনঃ তোমরা যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে ভাল কাজ কর। কারণ আল্লাহ তা’আলা সওয়াব দিতে কখনও ক্লান্ত হন না বরং তোমরাই আমল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়। তিনি আরও বলতেনঃ বান্দা যে কাজ নিরবিচ্ছিন্নভাবে করতে পারে, তাই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়- তার পরিমাণ কম হলেও।” (সহীহ বুখারিঃ ১৮৪৬ ই ফা, সহীহ মুসলিমঃ ২৫৯৮)
 
শবে বারাতের বিরোধিতাকারীরা প্রশ্ন তুলবেন এখানে তো শাবান মাসের কথা বলা হয়েছে, বিশেষ কোন দিনের বা রাতের কথা বলা হয়নি। অপেক্ষা করুণ। তাদের প্রশ্নের জবাব আসছে নিচের হাদিসে। শাবানের মধ্য দিনের রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল ﷺ বলেন, কেউ যদি এ দিনের রোজা না রেখে থাকে সে যেন রমজানের পরে একটির বিনিময়ে দুইটি রোজা রাখে। দেখুন হাদিসটিঃ
 
”ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি শাবান মাসের মধ্যভাগে সাওম (রোযা) পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ যখন-তুমি সাওম (রোযা) পালন করনি, তখন দুই দিন সাওম পালন করে নিও।” (সহীহ বুখারিঃ ১৯৮৩/ ১৮৫৭- ই ফা, সহীহ মুসলিমঃ ২৬২২)
 
এব্যাপারে আরও কিছু হাদিস রয়েছে উপরোক্ত হাদিসের আগে ও পরে। যাদের কাছে উক্ত কিতাবগুলো রয়েছে তারা পড়ে নিতে পারেন। এ পর্যায়ে এসে শবে বারাতকে বিদাত আখ্যাকারীগণ বলবেন, এটা তো রোজা রাখার ব্যাপারে। কোন রাতকে মর্যাদা দেবার ব্যাপারে নয়। তাদের জন্য নিচের হাদিস দু’টি গুরুত্বপূর্ণ।
 
”উসামা বিন যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমান রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন: রজব এবং রামাযানে মধ্যবর্তী এ মাসটি সম্পর্কে মানুষ উদাসিন থাকে। অথচ এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে, এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।” (মুসনাদ আহমাদ ৫ম খন্ড ২০১ পৃষ্ঠা। সুনান নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম। আলবানী সাহেব এ সনদটিকে হাসান বলে মত দিয়েছেন। দ্র: সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ্‌। হাদীস নং ১৮৯৮)
 
আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিতঃ নবী (দঃ) শাবান মাসে রোজা রাখতেন। আমি আরজ করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল! সকল মাসের মধ্যে কি আপনার নিকট শাবানে রোজা রাখা অধিক পছন্দনীয়? তখন তিনি ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’লা এ বৎসরে মৃত্যুবরণকারী প্রতিটি আত্মার নাম এ মাসে লিখে দেন। আর আমি এটা পছন্দ করি যে, আমার বিদায়ের সময় (যখন) আসবে তখন যেন আমি রোজা অবস্থায় থাকি। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং ৪৮৯০, দারুল কুতুব বৈরুত)
 
উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণ হয় যে শাবান মাসে আমাদের আমল আল্লাহর কাছে পৌঁছে আর কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী অনেক প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়। কাজেই যে রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়ে থাকে সে রাত্রি ক্বদরের রজনী নয়। বরং সে রাত্রিটি হল শাবানের কোন এক রাত্রি। আর শাবানের মধ্যরাত্রি নিয়ে অন্যান্য হাদিস গ্রন্থের হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সে রাত্রিটি হল শাবানার মধ্য রাত্রি বা শবে বারাত। যা ১৪ শাবানের দিবাগত রাত। আর শাবানের শেষ অংশে রোজা রাখার ব্যাপারে রাসুল ﷺ নিরুৎসাহিত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা:) হতে বণির্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘শাবান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা রোযা রেখো না (মুসনাদ আহমাদ (২/৪৪২)
 
আর নিচের হাদিসটি শবে বারাত অস্বীকারকারীদের মুখে ছাই নিক্ষেপ করে দিয়েছে যারা বলে বেড়ায় শবে বারাত বলে কুরআন ও হাদিসে কিছু নেই, শবে বারাত বিদাত।  
إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان ، فيغفر لجميع خلقه ، إلا لمشرك أو مشاحن
”হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (পৃথিবীর) দিকে তাকিয়ে দেখে মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪)
 
আহলে হাদিসের ইমাম আলবানি সাহেব এই হাদিসটিকে সহীহ বলে মত দিয়েছেন। কাজেই এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করলে তাদের নিজের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে নিয়োজিত হতে হবে।
 
হাদিস শরীফের আলোকে শবে বরাতের ফজিলত
==========================
ইদানিং ফেসবুক আর ইন্টারনেটে বেশ কিছু মুফতির আগমন ঘটেছে। তারা সৌদি ওহাবী সরকারের আশির্বাদপুষ্ট কিন্তু নিজেদের পরিচয় দেয় আহলে হাদিস, লা মাজহাবী কিংবা সালাফি বলে। তারা তাদের কর্মকাণ্ডের বিনিময়ে লাভ করে আর্থিক সুবিধা। অর্থাৎ তারা ওহাবীদের বেতনভুক্ত চাটুকার এবং ওহাবীবাদের প্রচারক। তাদের কাজ হল ইসলামে নতুন নতুন ফের্কার আবির্ভাব ঘটানো। যেসব বিষয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে প্রচলিত সেসব আমলকেও তারা বিদাত, শিরক ইত্যাদি নামে অভিহিত করে সাধারণ মুসমানকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে। যেমন তাদের মতে শবে বারাত বলে কুরআনে হাদিসে কিছু নেই। এটা বেদাত। একথা শুনে যে কেউ হঠাত ভাবতে পারেন তাইতো, কুরআনে তো শবে বারাত বলে কোন শব্দ নাই। এটা তাদের এক ধরণের ধোঁকা বা ফাঁদ।
 
আসলে শবে বারাত ফার্সি শব্দ তাই এই শব্দগুলো কুরআন বা হাদিসে নেই। যেমন নামাজ-রোজাও কুরআনে বা হাদিসে নেই। কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সালাত আর সাওম। এগুলোর ফার্সি প্রতিশব্দ হল নামাজ ও রোজা। তেমনি ভাবে শবে বারাত ও ফার্সি শব্দ। আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি কুরআনে “লাইলাতাম মুবারাকা” বলে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সূরা দুখানে শবে বারাতকে উদেশ্য করেছেন। এবং তিনি ঘোষণা করেন যে ‘এই রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়ে থাকে’। হাদিসে এই রাত্রিকে বলা হয়েছে “লাইলাতুন-নিসফু মিন শাবান” অর্থাৎ শাবানের মধ্য রাত্রি। কোন কোন তাফসীরকারগণ “লাইতাতাম মুবারাকা” দিয়ে শবে কদরকে বুঝিয়েছেন আবার অনেকেই এর দ্বারা শবে বারাতকে বুঝিয়েছেন। কেননা যে রাতে ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয় কিংবা প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা শবে কদর নয়, বরং শবে বারাত বা শাবানের মধ্য রাত্রি। এই নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে তার কিছু সহীহ আর কিছু হাসান সহীহ পর্যায়ের। তবে শবে বারাতের বিরোধিতাকারীদের বলতে শুনবেন ওইসব হাদিস জাল, দুর্বল কিংবা বানোয়াট।
 
শবে বারাত সংক্রান্ত অনেক হাদিসের মধ্যে কিছু হাদিসের কয়েকজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে কিছু সন্দেহ রয়েছে, যেমন তাদের কারো নামে অভিযোগ রয়েছে যে তাদের মেধা অন্যান্য বর্ণনাকারীর সমপর্যায়ের নয়। কারো বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ যে তিনি হাদিস বাড়িয়ে বলতেন। কিন্তু পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই যে হাদিসের বিষয়বস্তু ঠিক রেখে একই হাদিস একাধিক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বিভিন্ন কিতাবে স্থান পেয়েছে। কাজেই বুঝা যায় যে হাদিসটির প্রতিটি শব্দ হুবহু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী না হলেও তাঁর ভাবার্থটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিমের অনেক হাদিস পড়লে দেখতে পাবেন হাদিস এক কিন্তু রাবি ভেদে কথা বা শব্দের তারতম্য রয়েছে। যেহেতু শবে বারাত সম্পর্কিত হাদিসগুলোর মধ্যে আমল ও ফজিলতে মিল খুঁজে পাওয়া যায় এবং অনেক বিখ্যাত সাহাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত কাজেই সেগুলো হাসান সহীহ। এমত পোষণ করেছেন আহলে হাদিসের ইমাম আলবানি নিজেও। নিচে আলবানি সাহেবের উক্তিটি তুলে ধরা হবে ইনশাল্লাহ।
 
শবে বরাত ফযীলতপূর্ণ নয়, বা এ রাতে গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা বেদাত এ মর্মে কোন হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিদ্যমান নেই। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত আছে শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে। তবে যেহেতু এ মতের বিপরীত কোন হাদীসই বিদ্যমান নেই, তাই শবে বরাতকে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরও বেদাত বলাটা হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। আর জেনে কেউ এমনটি বলে থাকলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস অস্বীকারের ফলে ঈমানহারা হয়ে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের প্রতি বিদ্বেষী হওয়া ছাড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ ফযীলতপূর্ণ রাতকে কেউ অস্বিকার করতে পারে না।
 
নিম্নে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল
—————————————
 عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )
হযরত আলী বিন আবু তালীব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। {সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২, }
 
এ হাদিসটি অন্য আরও সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যেখানে ১০০ রাকাত নফল নামাজের কথা উল্লেখ রয়েছে যা নিম্নে বর্ণিত অন্যান্য হাদিসে নেই। কাজেই ধরে নেয়া যায় যে ১০০ রাকাত নফল নামাজের ব্যাপারটা অতিরঞ্জিত। পুরো হাদিসটি বানোয়াট বা জাল বলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীকে অস্বীকার করার শামিল।
নবী দুশমন নব্য ফেতনাবাজ আহলে হাদিস নামধারীরা এরকম করে থাকে। আল্লাহর লানত তাদের উপর।  
عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب
হযরত আয়শা রাঃ বলেন-এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রাঃ বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯} 
 
عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن )
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে] আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪} 

এ হাদীসটির ব্যাপারে গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম শায়েখ আলবানীর বক্তব্য
———————————————
গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের ইমাম আলবানী তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীসটির ব্যাপারে বলেন। ‘এই হাদিসটি সহীহ’ এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন # মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ # আবু সা’লাবা রাঃ # আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ # আবু মুসা আশয়ারী রাঃ # আবু হুরায়রা রাঃ # আবু বকর সিদ্দীক রাঃ # আউফ বিন মালিক রাঃ # আয়েশা রাঃ প্রমুখ সাহাবাগণ। 
 
মা জননী হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি হুজুর ﷺ কে বলতে শুনেছি, এমন চারটি রাত রয়েছে, যাতে আল্লাহ তাআলা সকল মানুষের উপর নেকীর দরজা খুলে দেন। এগুলো হচ্ছে- ঈদুল ফিতর, ঈদুল আদ্বহা, শাবানের মধ্যবর্তী রাত ও আরাফাতের রাত্ এগুলোতে আল্লাহ তাআলা মানুষের বয়স, রিযিক ও হজ্জ্বের ব্যাপারে নির্দেশনাদি লিপিবদ্ধ করে দেন। (গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃষ্ঠা: ৩৬২)।
 
হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ঔয়া সাল্লাম )-কে বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান ( অর্থাৎ, লাইলাতুল বারাআত )। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ ( কালব বংশের বকরীগুলোর শরীরে, অন্য বকরীর তুলনাই লোম বেশী ) গুনাহগার বান্দা হলেও। – ( তিরমীযি শরীফ , হাদীস নং- ৭৩৯ )
 
উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন, ”সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত ‘ইসলাহুল মাসাজিদ’ গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, ‘শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে’ সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া (ঘারতেড়া) স্বভাবের, আর তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম।”
 
আলবানী সাহেবের বিশ্লেষণ থেকে একথা নির্ধিদ্ধায় আমরা বলতে পারি হাদিস দ্বারা শবে বারাত প্রমাণিত।
 
বিখ্যাত আলেমগণের মতে শাব এ বারাত
======================
# ইমাম শাফেয়ী বলেন-
و بلغنا أنه كان يقال إن الرعاء يستجاب في خمس في ليال في ليلة جمعة و ليلة الأضحى و ليلة الفطر و اول ليلة من رجب و ليلة النصف من شعبان
আর আমাদের নিকট এরূপ বর্ণনা এসেছে যে, নিশ্চই পাঁচটি রাতে বান্দার দুআ’র জবাব দেয়া হয় অর্থাৎ দু’আ কবুল করা হয়, জুমার রাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহার রাত, রজবের প্রথম রাত এবং শাবানের মধ্য রাত (শবে বরাত)। [আল উম্ম, ১:২৩১/২:৪৮৫, ইবনে রজব লাতায়িফুল মা’আরিফ ১:১৩৭]
 
# খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ বসরায় তার গভর্নরকে লিখেন-
عليك بأربع ليال من السنة فإن الله يفرغ فيهن الرحمة إفراغا أول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الفطر وليلة الأضحى
বছরে চার রাতের ব্যাপারে তোমার সতর্ক থাকা প্রয়োজন, কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা ঐ রাতগুলোতে তার রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন। তা হল, রজবের প্রথম রাত, শাবানের মধ্য রাত এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত। [ইবনে রজব লাতায়িফুল মা’আরিফ ১:১৩৭]
 
# ইবনে তাইয়িমাহ তার স্বীয় ফতোয়া গ্রন্থে লিখেছেন-
إذَا صَلَّى الْإِنْسَانُ لَيْلَةَ النِّصْفِ وَحْدَهُ أَوْ فِي جَمَاعَةٍ خَاصَّةٍ كَمَا كَانَ يَفْعَلُ طَوَائِفُ مِنْ السَّلَفِ فَهُوَ أَحْسَنُ
যদি কোন ব্যক্তি একাকী অথবা নির্দিষ্ট জামাতের সাথে শা’বানের মধ্য রাতে ইবাদত করে যেমনটা সালফে সালেহীনগণ করতেন অবশ্যই তা অধিক উত্তম হবে। [মাজমাউ’ল ফতওয়া ফতোয়ায়ে তাইয়িমাহ, ২৩তম খণ্ড, ১৩১ পৃষ্ঠা] 
وَأَمَّا لَيْلَةُ النِّصْفِ فَقَدْ رُوِيَ فِي فَضْلِهَا أَحَادِيثُ وَآثَارٌ وَنُقِلَ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْ السَّلَفِ أَنَّهُمْ كَانُوا يُصَلُّونَ فِيهَا فَصَلَاةُ الرَّجُلِ فِيهَا وَحْدَهُ قَدْ تَقَدَّمَهُ فِيهِ سَلَفٌ وَلَهُ فِيهِ حُجَّةٌ فَلَا يُنْكَرُ مِثْلُ هَذَا
শাবানের মধ্য রাতের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদীস এসেছে, আছার তথা সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনা, তাবে তাবেঈগন সালফে সালহীগনের বক্তব্য রয়েছে আর তারা এই রাতে ইবাদত করতেন। সালফে সালেহীনদের মধ্যে এ রাতে ইবাদতের ব্যাপারে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা পাওয়া যায় এবং এ ব্যাপারে (শবে বরাত) কোন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় নি। [মাজমাউ’ল ফতওয়া ফতোয়ায়ে তাইয়িমাহ, ২৩তম খণ্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা]
# এমনিভাবে ফিক্বহে হানাফীর প্রসিদ্ধ কিতাব আদ্দুররুল মুখতারে শবে বরাতের সম্পর্কে বলা হয়েছে। [১ম খণ্ড,২৪-২৫ পৃষ্ঠা]
 
শবে বরাতে নির্ধারিত আমল কি?
==================
পূর্ববর্তী পোস্টগুলোতে অনেকগুলো সহীহ হাদিসের মাধ্যমে শবে বারাতের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। সেসব হাদীস শরীফ থেকে শবে বরাতের যেসব আমল পাই সেগুলো হলোঃ-
১। ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। ২। কবর যিয়ারত করা। ৩। নফল ইবাদত করা, যেমন নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা, জিকির আজকার করা। ৪। পরদিন রোযা রাখা। ৫। এ রাত উপলক্ষ্যে ফকীর মিসকিনকে দান-খয়রাত করা অতি উত্তম। কেননা দান-খয়রাতের কথা পবিত্র কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ রাত যেহেতু মহিমান্বিত, এ রাতের দান-খয়রাত বিনা দলীলে পূণ্যময় কাজ।
 
শবে বরাতে বর্জনীয় কাজ
—————
১। আতশবাজি।
২। ইসলামের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক সব কিছু বর্জনীয়। যেমন গান-বাজনা, নাচ ইত্যাদি।
জাজাকাল্লাহু খাইরান! আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ রাতে অগনিত আমল করার তৌফিক দান করুণ! আমীন!
(https://www.facebook.com/DrMiaji)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

1 thought on “পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের আলোকে শাবানের মধ্যরাত্রি বা শবে বারাত”

  1. খুব সুন্দর একটি ইসলামী ওয়েব সাইট

    Reply

Leave a Comment