শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ’র ভবিষ্যৎবাণীর সত্যতা যুগে যুগে প্রমাণিত

– ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

এ ক’দিন হন্যে হয়ে মুসলমানদের উত্থান এবং পতনের ইতিহাস ঘাঁটছিলাম। উমাইয়্যা থেকে আব্বাসীয়, আইয়ুবী থেকে মামলুক, উসমানীয় থেকে সাফাভিদ এবং দাসবংশ থেকে মুঘল। ইতিহাসে একজনের পতনের মাধ্যমে অন্যজনের উত্থান, আল্লাহ্‌ পাক কর্তৃক সে এক অবর্ণনীয় অপ্রতিরোধ্য বিধান। যে মুসলমানেরা দিকে দিকে বিজয়ের নিশান জ্বালিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে দেশ দেশ থেকে দেশে ছুটে চলেছে, রাজ্যের পর রাজ্য পরাভূত করেছে, সে মুসলমানরাই আবার কখনো অন্য জাতির দ্বারা পদদলিত হয়েছে। বর্তমানকালে বার্মা, ভারত, ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য দেশে মুসলমানদের যেমন কচুকাটা করা হচ্ছে, ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনার দৃষ্টান্ত রয়েছে। কারবালার ঘটনা এর থেকে আলাদা, কেননা, তা ছিল দুনিয়ালোভী মুসলমান নামধারী নামাযী কিছু নরপশু কর্তৃক আহলে বায়েতের প্রতি অনাচার ও নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ। তবে ইতিহাসে এরকম অনেক করুণ এবং জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ লক্ষ মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ, নদীনালা, বাড়িঘর আর বিধর্মীদের তলোয়ার।

ঘটনা থেকে ঘটনা খুঁজতে খুঁজতে এমন একটি বিষয় খুঁজে পেয়েছি যা একেবারেই অলৌকিক।

পড়তে পড়তে আমার গা ঘেমে উঠছিল। রাসূল ﷺ সেই ১৪শ বছর পূর্বে গাযওয়ায়ে হিন্দ বা ভারতের যুদ্ধের কথা ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। সে যুদ্ধসহ পৃথিবীর বেশ কিছু ব্যাপারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরো ব্যাপক এবং বিস্তারিত বর্ণনা করে গেছেন তাঁরই বংশধর থেকে আগত একজন অলি কাব্যাকারে লিখিত একটি কাসীদার মাধ্যমে। নাম তাঁর শাহ নি’মাতুল্লাহ অলি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত শাহ নি’মাতুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি আজ থেকে প্রায় ৯ শ বছর পূর্বে হিজরী ৫৪৮ সালে মোতাবেক ১১৫২ খ্রিস্টাব্দে এক ক্বাসিদা (কবিতা) রচনা করেন। আজ পর্যন্ত ইতিহাসের প্রতিটি বিষয়ে তাঁর ভবিষ্যৎবাণী ফলে গেছে আশ্চর্যজনকভাবে। ইংরেজ শাসনের ক্রান্তিকালে এ ক্বাসিদাটি মুসলমানদের মধ্যে মহাআলোড়ন সৃষ্টি করে। এর অসাধারণ প্রভাব লক্ষ্য করে ব্রিটিশ বড় লাট লর্ড কার্জনের শাসনামলে (১৮৯৯-১৯০৫) এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

শাহ নি’মাতুল্লাহ সিরিয়ার আলেপ্পুতে জন্মগ্রহণ করেন। তার জীবনীকার আব্দুর রাজ্জাক কিরমানি এবং আব্দুল আযিয ওয়াইজের গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় যে, শাহ নি’মাতুল্লাহর বংশ পরম্পরা ইমাম মুসা কাজিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে শুরু হয়েছে। শাহ নি’মাতুল্লাহ ব্যাপকভাবে মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেন, অনেক পীর এবং বুজুর্গ থেকে দর্শনশাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করেন, এতদিন পর্যন্ত তিনি এমন কোন পীরের সন্ধান পাননি যার হাতে বায়াতের মাধ্যমে তাকে পীর হিসেবে গ্রহণ করবেন। শাহ নি’মাতুল্লাহ প্রসিদ্ধ ইসলামি পন্ডিত, দার্শনিক এবং আধ্যাত্বিক সুফি ইবনে আরাবির লেখনির উপর ব্যাপক গবেষণা করেন। তিনি মক্কা শরীফে আব্দুল্লাহ ইয়াফির সাথে দেখা করেন এবং পরবর্তীকালে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তার গুরুর সাথে ৭ বছর ধরে গভীর গবেষণায় নিমগ্ন ছিলেন। আধ্যাত্বিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তনের পর তিনি আবারো বিশ্বময় সফরে বের হন, তবে এবার স্রষ্টা কর্তৃক ইলমে হাক্বীকতে সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক ব্যক্তি হিসেবে।

শাহ নি’মাতুল্লাহ সাময়িকভাবে সামারকান্দের নিকটে মধ্য এশীয় সিল্ক রোডের পাশে বসবাস করতেন। এটি সেই জায়গা যেখানে তিনি তামেরলেইন বিজয়ীর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। কিন্তু পার্থিব শাসকের সাথে দ্বন্দ এড়ানোর জন্য শাহ নি’মাতুল্লাহ ঐ এলাকাটি তাড়াতাড়ি ত্যাগ করেন এবং অবশেষে কেরমানের বালোচ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। বর্তমানে ইরানের মাহানে তার মাজার অবস্থিত। শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ’র মৃত্যুর পরপরই তাঁর খ্যাতি পারস্য এবং ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে (যদিও ভারতে তাঁর উপস্থিতি তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না) এবং বলা হয়ে থাকে বর্তমানে তাঁর নামে যে তরিকা প্রচলিত রয়েছে সে তরিকায় তিনি বহু অনুসারীর বায়াত গ্রহণ করেছেন।

আল্লাহর অলিগণের কারামত সত্য এবং আল্লাহর অলিগণের ক্ষমতাও পরীক্ষিত। পবিত্র কুরআনের সূরা নামলের ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ পাক হযরত সোলায়মান আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর এক বান্দার মাধ্যমে দেড় হাজার কিমি দূর থেকে রাণী বিলকিসের সিংহাসন চোখের পলকে আনয়নের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ্‌ পাক তাঁর অলিগণের শান ও মর্যাদা উল্লেখ করতে গিয়ে ঘোষণা করেন, অলিগণের হাত, পা, মুখ, চোখ মুলত আল্লাহরই হাত, পা, মুখ ও চোখ। অর্থাৎ আল্লাহর অলিগণ যা করেন তা আল্লাহ্‌ পাকের ইশারাতেই করে থাকেন। ফলে তাঁদের সর্বকাজে আল্লাহ্‌ পাক খুশি থাকেন এবং তা বাস্তবায়ন করে দেন।

উক্ত আলোচনায় শাহ নি’মাতুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও তেমনি আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ভবিষ্যতের ব্যাপারে এমন কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন যা আজ পর্যন্ত প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনায় এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতেও বাকি বর্ণনাগুলোর সত্যে পরিণত হবে। কেননা, ভারত বর্ষ বা গাজওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অসংখ্য হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে সতর্ক করে গিয়েছেন। সেসব ঘটনার কিছু ঘটেছে এবং বাকিগুলো সামনে ঘটবে ইনশাআল্লাহ।

শাহ নি’মাতুল্লাহ অলি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো থেকে কিছু ঘটনা এমন সূক্ষ্ম এবং নির্ভুল ভাবে বর্ণনা করে গেছেন যে বিভিন্ন ঘটনার নায়ক এবং খলনায়কদের নাম কিংবা তাদের নামের অদ্যাক্ষর কিংবা বিশেষ কিছু নিদর্শন পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর ওই ভবিষ্যৎবাণীর বিশেষ অংশগুলোতে সমসাময়িক বিশ্ব এবং বিশেষ করে ভারতবর্ষের মুসলমানদের অবস্থা বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত হয়েছে। ফলে তাঁর ওই কাসিদা ভারতের মুসলিম এবং অমুসলিমদের কাছে সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের হিন্দু ঋষিগণ এ নিয়ে অনেক গবেষণা করছেন। ইহুদীরা যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে অবগত এবং ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের যুগে মুসলমানদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য গারকাদ বৃক্ষ রোপণ করছে, ভারতের হিন্দুরাও এই কাসিদার বদৌলতে তাদের ভবিষ্যৎ পরাজয় সম্পর্কে সম্মক অবগত এবং এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তাদের সেই অনাগত পরাজয় কোন ভাবেই ঠেকানো সম্ভব নয়। কেননা, যা ঘটবে তা আল্লাহ্‌ পাকের ইশারাতেই ঘটবে। 

[উল্লেখ্য, শাহ নি’মাতুল্লাহ অলি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির লিখে যাওয়া কাসীদা থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ এবং এর সাথে বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে একটি পর্যালোচনামূলক লেখা আসছে। আল্লাহ্‌ অলিগণের কারামত সত্য এবং তাঁরা যে কাশফের মাধ্যমে অনেক অজানা তথ্য আল্লাহ কর্তৃক ইলহাম প্রাপ্ত হন এই কাসীদাটি তারই প্রমাণ। পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেল এ নিয়ে ৮ পর্বের একটি ধারাবাহিক পর্যালোচনা প্রচার করেছে উর্দুতে। সেটিও অনেক তত্থ্য সমৃদ্ধ। আল্লাহ্‌ পাক তৌফিক দিলে আমি অধম শাহ নি’মাতুল্লাহ অলি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির বিখ্যাত সেই কাসীদাটির কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা করবো। এটি কাব্যানুবাদ করেছেন কবি রুহুল আমীন। সাথেই থাকুন। আপনাদের আগ্রহ দেখতে পেলে ধারাবাহিক এই বিশেষ লেখাটি সম্পন্ন করতে আমার জন্য সুবিধা হবে। আল্লাহ্‌ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উছীলায় আমাদের সবার এই খেদমত করুল করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।]

[পাকিস্তানী টিভিতে এ নিয়ে ৮ পর্বের আলোচনাটি দেখতে নিচের লিংকে যান প্লীজ। অথবা Zaid Hamid লিখে ইউটিউবে সার্চ দিন। https://goo.gl/PmPsGf ]

[ভালো লেগে থাকলে লেখাটি কপি করে আপনাদের টাইমলাইনে পোষ্ট করতে পারেন। আর দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।]

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *