সেদিন শাফায়াত করতে পারবেন কারা?


==================
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী (https://www.facebook.com/DrMiaji)
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم

রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোক সুপারিশ করবে।
(১) নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম ।
(২) উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম।
(৩) শহীদ গন।
[তথ্যসূত্রঃ- সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফঃ ৫৩৭০]

তাছাড়া বিভিন্ন হাদিস শরীফ থেকে জানা যায় যে সকল নবী, রসূল, আওলিয়ায়ে কিরাম, আলেম, কুরআনে হাফেজ, নামাজ, রোজা, কুরআন, দুরূদ ইত্যাদি সকলেই কাল কিয়ামতের কঠিন দিনে (এমন কি কবরে) সুপারিশ করবে।

কুরআনের এবং কুরআনে হাফেজের সুপারিশঃ
————————–————-
যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়ে এবং কুরআনকে সমুন্নত রাখে আর এর মধ্যে বর্নিত হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম জানে, আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এবং তার পরিবারস্থ লোকদের মধ্যে থেকে এমন দশজন ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ কবুল করবেন, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়েছে।”
[তথ্যসূত্রঃ- মুসনাদে আহমদ, সুনানে তিরমিযী শরীফ, সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ, দারেমী]

আলেম ও নেক্কার বান্দার সুপারিশঃ
————————–
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমার উম্মতের কোন ব্যক্তি বিরাট দলের জন্য সুপারিশ করবে। আবার কেউবা নিজ আত্মীয় স্বজনের জন্য সুপারিশ করবে। আবার কেউ একটি লোকের জন্য সুপারিশ করবে। শেষ পর্যন্ত আমার সকল উম্মত বেহেশতে প্রবেশ করবে।
[তথ্যসূত্রঃ- সুনানে তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ ৫৩২৬]

অন্য একটি রেওয়াতে আছে হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্নিত। রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, জাহান্নামীদের সাড়িবদ্ধ ভাবে দাঁড় করানো হবে। অতঃপর জান্নাতবাসীদের মধ্যে হতে এক ব্যক্তি তাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবেন। ফলে জাহান্নামীদের এক ব্যক্তি তাকে বলবে, হে ব্যক্তি! আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি ঐ ব্যক্তি, যে (তৃষ্ণার সময়) আপনাকে পানি পান করিয়েছিলাম এবং তাদের মধ্যে হতে অন্য এক ব্যক্তি বলবে আমি ঐ ব্যক্তি যে ওযু করার জন্য আপনাকে পানির পাত্র দিয়েছিলাম। ফলে তার জন্য সুপারিশ করা হবে, অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
[তথ্যসূত্রঃ- সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ ৫৩৬৪]

কুরআন শরীফ এবং রোজার সুপারিশঃ
————————–———–
রোজা এবং কুরআন শরীফ উভয়ই বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা আরজ করবে, হে আল্লাহ পাক! আমি তাকে দিবাভাগে খানা-পিনা থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কুরআন শরীফ বলবে, হে আল্লাহ পাক! আমি তাকে রাত্রিবেলা আরামের নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি, কাজেই আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।
[তথ্যসূত্রঃ- মুসনাদে আহমদ, তাবরানী শরীফ, সুনানুল কুবরা, ইবনে আবিদ্দুনইয়া]

সূরা মূলক বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। হাদীস শরীফে বর্নিত আছে- নিশ্চয়ই কুরআন শরীফে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একখানা সূরা আছে যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে। আর তা হচ্ছে- সূরা মুলক।
[তথ্যসূত্রঃ- মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ, মুস্তাদরেকে হাকেম]

আল্লাহর ওলিদের সুপারিশঃ
————————–
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল জাদয়া রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের এক ব্যক্তির সুপারিশে বনী তামীম গোত্রের লোক সংখ্যা হতেও অধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।
[তথ্যসূত্রঃ- সুনানে তিরমিযী শরীফ, সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ ৫৩৬১, সুনানে দারেমী]
আহলে হাদিস নামধারী সালাফীরা অপপ্রচার করে থাকে কিয়ামতের দিন নাকি কেউ সুপারিশ করতে পারবেনা। এমনকি আমাদের নবী (দঃ) ও না। নাউজবুল্লাহ। আল্লাহর রাসুল (দঃ) সম্পর্কে তাদের কেমন মিথ্যাচার। অথচ সে নবী (দঃ) এর একজন উম্মত সেদিন এতো লোককে শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। সুবহানআল্লাহ!

অন্য রেওয়াতে আছে, যখন মুমীন (আল্লাহর অলীগণ) দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেল, তখন তাঁদের মুমীন ভাইদের জন্য তাঁরা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে, “হে আমার প্রতিপালক! এরা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ। তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত, আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সত্কাজ করত।” তখন আল্লাহ বলবেন, “যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। তাদের মুখমন্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে।” অতঃপর আল্লাহর অলীগণ সেখানে জাহান্নামীদের নিকট যাবেন। এসে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে। এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে।
[তথ্যসুত্রঃ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭০০১)

রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন “শাফায়াতে কুবরার” অধিকারী
————————–—————–
রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন, কিয়ামতের দিন আমিই হবো সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগনের ইমাম ও তাদের খতীব এবং আমিই হবো তাঁদের ছহিবে শাফায়াত এতে আমার কোন ফখর নেই।”
[তথ্যসূত্রঃ- সুনানে তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ ৫১৪ পৃষ্ঠা]

সহীহ বুখারী শরীফে বর্নিত আছে-
রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন হাশরবাসীগন বিক্ষিপ্ত ভাবে ছোটাছুটি করে একজন অন্যজনের নিকট চলে যাবে। অতঃপর তারা হযরত আদম আলাইহিস সালামের নিকট এসে বলবে, আপনি আপনার রবের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। তখন তিনি বলবেন, আমি এখন একাজে উপযুক্ত নই। তোমাদের এ ব্যাপারে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের নিকট যাওয়া উচিত, কেননা তিনি হচ্ছেন পরম করুনাময় আল্লাহ পাকের খলীল। সূতরাং তারা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের নিকট এসে সুপারিশ প্রর্থনা করবে। তিনিও বলবেন, আমি একাজে সক্ষম নই। সুপারিশের জন্য তোমরা হযরত মুসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহ পাকের সাথে কথা বলেছিলেন। অতপর তারা মুসা আলাইহিস সালামের নিকট আসবে এবং সুপারিশ প্রার্থনা করবে। তিনি বলবেন আমিও সক্ষম নই। তবে তোমাদের হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাওয়া উচিত। কেননা তিনি হচ্ছেন, রুহুল্লাহ। তখন তারা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে আসবে এবং সুপারিশ প্রার্থনা করবে। তিনিও বলবেন আমি এ ব্যাপারে সক্ষম নই। তবে তোমাদের হযরত সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাওয়া উচিত। তখন তারা আমার নিকট আসবে, আর আমি তাদের আশ্বস্ত করে বলবো, আমিই এ ব্যাপারে সক্ষম। তখন আমি আমার প্রতিপালকের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করবো।”
[তথ্যসূত্রঃ- সহীহ বুখারী শরীফঃ ৪৭১২, ৭৫১০]

এ হাদীস শরীফ থেকে বোঝা গেলো রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন শাফায়াতে কোবরার অধিকারী। অর্থাৎ তাঁর পূর্বে কেউই সুপারিশ করতে পারবে না। সকল নবী, রসূল, আওলিয়ায়ে কিরাম, আলেম, নামাজ, রোজা, কুরআন, দুরূদ ইত্যাদি বিষয় সকলেই সুপারিশ করবে কিন্তু এসকল সুপারিশ হবে শাফায়াতে কোবরা রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশের পর। তাঁর কাছে মানুষজন সুপারিশের জন্য আসলে তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দেবেন না। আর এসবই হবে আল্লাহ পাকের সামনে। আহলে হাদিস, সালাফী, ওহাবী, নজদিরা উছিলার ব্যাপারে যে অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে থাকে তা এই হাদিস দ্বারা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেল। অর্থাৎ যার কাছে জীবিত অবস্থায় সাহায্য চাওয়া যায়, মৃত্যুর পরও তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া যায়। আমাদেরকে রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াত নসীব করুণ! আমীন

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *