নিজে নিজে কিতাব পড়ে যদি মুহাদ্দীস হওয়া যেত, তাহলে বাংলায় সবাই পিএইচডি-ধারী হতো
=============
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
———-
কিছুদিন যাবত বাংলায় অনার্স পড়ুয়া এক ছেলে বারবার আমাকে ইনবক্সে কপি-পেস্ট করে পোস্ট পাঠাচ্ছে। আমার টাইমলাইনে এসে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করছে। তাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছি, কোন বিষয়ে তার জানার থাকলে সে যেন সুনির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে লিখে, আমি চেষ্টা করবো তার প্রশ্নের উত্তর দিতে। সে হলো ডাঃ জাকির নায়েকের ভক্ত। কেবল ভক্ত নয়, অন্ধ ভক্ত। পীস টিভি দেখে আর বাংলা কিছু বইপুস্তক পড়ে সে বুঝেছে, বাপদাদার ধর্ম অনুসরণ করা যাবে না। ধর্ম অনুসরণ করতে হবে মুহাম্মাদ ﷺ এর। অর্থাৎ তার মতে তার বাপ-দাদারা (আমাদের নয়) ভুল ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, কাজেই না বুঝে তাদের সে ভুল ধর্মকে অনুসরণ করা ঠিক নয়।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ﷺ কে অনুসরণ না করে কেউ যদি তার বাপদাদাকে অনুসরণ করে সে ভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত থাকবে। পবিত্র কুরআনে এমন কিছু আয়াত এসেছে আরবের কাফের মুশরিকদেরকে সতর্ক করে। (“আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।” দেখুন সুরা বাক্বারা – ২:১৭০) আর এ যুগের নব্য ফিতনাবাজ আহলে হাদীস সেসব আয়াতকে মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে ইসলামে বিভেদ সৃষ্টি করছে।
ইসলাম কি যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়? তার কথা মতো তার বাপদাদারা এক ভাবে ধর্ম পালন করেছে। এখন সময় এসেছে তা পরিবর্তন করে নতুন ভাবে পালন করার। যেমনটি তারা করে থাকে। আমাদের ধর্ম থেকে ১৪শ বছর পূর্বে যেমন ছিল, এখনো তেমনি আছে। রাসুল ﷺ কে দেখে তাঁর সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লহুম আজমাইন) যেভাবে আমল করেছেন, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈন, যুগের ইমাম, মুহাদ্দীস, মুফাসসীরিনে কেরাম, আল্লাহ তা’লার প্রিয় বান্দা অর্থাৎ আল্লাহ ওলীগণ সেভাবেই আমল করে এসেছেন। তাঁদের অনুসৃত সে আক্বীদাই হল “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের” আক্বীদা। আমাদের বাপদাদারা তাই অনুসরণ করে এসছেন। আর, আলহামদুলিল্লাহ্, আমরাও তা অনুসরণ করছি। রমজানে রাসুল ﷺ ২০ রাকাত তারাবী পড়েছেন, তাঁর সাহাবা (রাঃ) ও তাই করেছেন। আমরাও তাই করছি। সাহাবা কেরামসহ সকল ইমামগণ, আল্লাহর ওলীগণ শবে বারাত পালন করে এসেছেন, আমরাও করছি। তেমনিভাবে ইসলামের সকল আক্বীদা ও আমল, কুরআন, রাসুল ﷺ এর সুন্নাহ, ইজমা আর কিয়াসের অনুসরণের আমরা নিজেদেরকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে আসছি। যারা ধর্মের মধ্যে নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা আর ফিতনা সৃষ্টি করে বিভাজন করছে, তাদের এই ফিতনাই বরং পরিত্যাজ্য।
আর এসবের মুল উতপত্তি হলো, নব্য ফিতনাবাজ আহলে হাদিসের নব-আবিষ্কার বা বিদাত। সৌদি নজদি অর্থায়নে পরিচালিত পীস টিভি হলো এই শয়তানী ফিতনা প্রচারে ও প্রসারে প্রধান মাধ্যম।
কেউ যদি নিজে নিজে অনুবাদ গ্রন্থ পড়ে মুহাদ্দীস, মুফাসসীর হতে পারতো, ইন্টারনেটে পড়ে পড়ে কেউ যদি উচ্চতর ডিগ্রী নিতে পারতো, তাহলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হতো না। যে ছেলেটি বাংলা সাহিত্যে পড়েও বাংলার এমন দুর্দশা করে ছেড়েছে (তার ভাষা উল্লেখ করার মত নয়), এরকম হলে বাংলা ভাষাভাষী কাউকেই স্কুল-কলেজে গিয়ে কষ্ট করে পড়তে হতো না। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল বাংলাভাষী মানুষ নিজেই নিজেই অনার্সসহ পিএইচডি ডিগ্রী নিতে পারতো। বাংলা ভাষা জানলেই যেমন সাহিত্যের পণ্ডিত হওয়া যায় না, আরবি ভাষা জানলে কিংবা অনুদিত কুরআন, হাদীস, ইসলামী ঘটনা পড়লেই মুহাদ্দীস, মুফাসসীর, ইসলামী পণ্ডিত হওয়া যায় না। সঠিকভাবে ইসলামকে জানা ও বোঝার জন্য প্রয়োজন হক্কানী আলেম এবং বুজুর্গানে দীনের শরণাপন্ন হওয়া। এ ছাড়া অন্য কোন শর্টকার্ট বা সহজ পথ নেই ইসলামের আক্বীদা বোঝার। আর আক্বীদা না বুঝলে ডাঃ জাকির নায়েকের মতো ইয়াজিদকে জান্নাতী মনে করে বসবে, আর সেই শঠ, প্রতারক্ লম্পট, প্রিয় নবী ﷺ এর প্রাণাধিক দৌহিত্রসহ ৭২ জন আহলে বায়েতকে শহীদকারীর নামের শেষে দরূদ পড়ে নবী ﷺ এর ভালবাসাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাবে। ঈমানের মাপকাঠি হলেন আমাদের প্রিয় নবী ﷺ এবং তাঁর আহলে বায়েতের প্রতি ভালোবাসা। যাদেরকে আমরা নামাজে সালাম দেই এবং যাদের উপর দরূদ পড়ি। যাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন,
“হে নবী, আপনি ঘোষণা করে দিন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে আহলে বায়তের প্রতি সৌহার্দ ছাড়া তোমাদের কাছে আর কোন প্রতিদান চাইনা।” (সুরা শুরা ৪২:২৩)
আল্লাহ আমাদের এই নব্য ফিতনাবাজদের প্রতারণা থেকে রক্ষা করুক! আমীন!