এক সময় বাংলাদেশও একটি মুসলিম দেশ ছিল

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

– ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

আমাদের পরিচয় একটাই। আমরা সবাই মানুষ। কোন ধর্ম বা জাতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ ইসলাম সমর্থন করে না। বিশ্বের সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধানে তাই মদিনা-মুনিব ﷺ মদিনার মুসলমান, ইহুদি, খৃষ্টান এবং বিধর্মীদের সাথে নিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের রূপরেখা এঁকেছিলেন এবং তা বাস্তবায়নও করেছিলেন। সে থেকেই পরবর্তী সবগুলো মুসলিম রাষ্ট্রে মুসলমানদের পাশাপাশি অমুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিও সাম্য ও সম্প্রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। উমাইয়্যা (৯০ বছর), আব্বাসীয় (৫০০ বছর), স্পেনে উমাইয়্যা সাম্রাজ্য (৭০০ বছর), তুরস্কে উসমানীয় সাম্রাজ্য (৭০০ বছর) এবং ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য (৭০০ বছর) এর কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ভারতে যদি জোর করে হিন্দুদের মুসলমান বানানো হতো, তাহলে আজ প্রিয়া সাহা নামে কেউ থাকতো না মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার জন্য।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এখানে আমরা কেমন চিত্র দেখতে পাই? এখানে মুসলমান আছে প্রায় ৯০ শতাংশ। হিন্দু আছে প্রায় ৯ শতাংশ। অথচ হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা সরকারি চাকরিতে উচ্চপদে সমাসীন। তাদের পরিমাণ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩ ভাগ। এর মানে হচ্ছে, আপনি এখন যে কোনও মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করলে চারদিকে কেবল হিন্দু ও সংখ্যালঘু অফিসার দেখতে পাবেন। প্রতি তিনজনে একজন সংখ্যালঘু। পুলিশ ও সেনাবাহিনীতেও একই চিত্র লক্ষণীয়। যেখানে কোটি কোটি মুসলমান ছেলেমেয়ে বেকার সেখানে এতো হিন্দু অফিসার কোথা থেকে এলো? ভারত থেকে যে ১১ লক্ষ লোক বাংলাদেশে আছে এবং কাজ করছে এরা সেসব লোক নয়ত? পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্য করুন। সেখানে মুসলমান আছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অথচ সরকারি চাকরিতে তাদের পরিমাণ ২ শতাংশের কাছাকাছি। পার্থক্যটা বুঝতে পারছেন?

এবার দেখুন এর ফলে কি হচ্ছে? মাদ্রাসা শিক্ষাসহ সব ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থায় হিন্দু কর্মকর্তা। একজন অমুসলিম কি করে মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থার কল্যাণ কামনা করবে যেখানে ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিন্দুদের উগ্রপনা লক্ষ্য করি? তারা এদেশকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা করছে। এ কারণেই সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা মুসলমান কবি ও সাহিত্যিকদের লেখা বাদ দিয়ে হিন্দুদের ধর্মীয় অশ্লিল গল্প ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রশাসনে এদের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে এর ফলাফল আমরা খুব সহজেই লক্ষ্য করছি।

(১) কুরবানি বনাম পূজা

কুরবানি এলেই রাস্তাঘাটে গরুর হাঁট বন্ধের নামে মুসলমানদের জন্য কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার নামে গরু জবাইয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ। কুরবানির কারণে যদি পরিবেশ বিনষ্ট হয়, পূজার কারণে তা কি কম হয়? অপরদিকে হিন্দুদের পূজার সময় রাস্তা বন্ধ করে পূজার আয়োজন করা হয়। স্কুল-কলেজসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূজার আয়োজন করা হয়। পূজার সময়ে ঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের বিকট শব্দে শিক্ষার্থী সহ সব ধরণের মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়তে হয়। সবাই তখন বলতে থাকেন, হিন্দুদের পূজা দেখে মনে হয় এদেশে ৯০% মুসলমান নয়, ৯০% হিন্দু বসবাস করে।

(২) মসজিদে নামায বনাম পূজা

ঢাকার মতো স্থানে হিন্দুদের পূজার কারণে রমজান মাসে মসজিদে তারাবি নামাজ সংক্ষিপ্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ মানতে বিলম্ব হবার কারণে মসজিদের ইমামসহ মুসুল্লিদের গ্রেফতার করা হয়। ভাবুন তো ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে পুলিশ ও প্রশাসন এগুলো করছে। কোথাও মাইকে আজান দিতে বাধা দেয়া হয়। কোথাও নির্মাণাধীন মসজিদ হিন্দুদের মিথ্যা দাবির কারণে ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য করা হয়। মুসলমান আবেদন করলে তাতে কর্ণপাত করা হয় না। অথচ হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা প্রশাসনকে ফোন করার সাথে সাথে পুলিশ ও প্রশাসন উপস্থিত হয়ে যায়। এটা কিসের আলামত?

(৩) হামলা ও মামলা

সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনা মনে আছে? একটি মুসলিম প্রধান দেশের মুসলমান ও অমুসলিম পুলিশের ভয়ে কিভাবে পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য হয়েছিল? অপরদিকে কিভাবে সিলেটে ইস্কন হিন্দুরা পিস্তল থেকে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে গুলি করছিল? মুসলমানেরা মামলা করলেও সে মামলা আমলে নেয়া হয়নি। অপরদিকে হিন্দুরা একটি ফোন করার সাথে সাথে সমস্ত প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করেছে।

(৪) জোর করে বাচ্চাদের পূজার প্রসাদ খাওয়ানো

এই মাত্র কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের বেশ অনেকগুলো স্কুলে ইস্কনের “ফুড ফর একশন” নামে একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে মুসলিম বাচ্চাদের পূজার প্রসাদ খাইয়ে “জয় শ্রী রাম” শ্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এরপর এদের অফিসিয়াল পেজ থেকেই আবার উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়েছিল যে মুসলমানেরা দেখুক এরা কিভাবে মুসলমান বাচ্চাদের পূজার প্রসাদ খাইয়ে হিন্দু বানাচ্ছে। এরপর আমার পরিচিত কয়েকজন ওইসব স্কুলে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে এ ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়। তবে স্কুলে কর্তৃপক্ষ বলছে যে এরা জানতো না যে এগুলো পূজার প্রসাদ ছিল। তবে ভবিষ্যতে এমন করতে দেয়া হবে না। এরা নাকি আগে থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই এ কাজ করেছে। মানে ধোঁকার আশ্রয় নিয়েছে। অথচ এরাই পরবর্তীতে অপপ্রচার করছে যে এরা একটি হিন্দু স্কুলে এ কাজ করেছে। কিন্তু বাঁশের কেল্লা নামে শিবিরের পেজ থেকে নাকি এ ব্যাপারে মিথ্যাচার করা হয়েছে। এবার লক্ষ্য করুন এদের ধোঁকাবাজির ধরণ। যে কোনও ঘটনাকে জামাত শিবিরের কাজ আখ্যা দিয়ে সহজেই এরা ফায়দা নিতে অপচেষ্টা করে থাকে। সফলও হয় এতে।

(৫) হিন্দুরা অসহায় নাকি মুসলমান?

এদেশে হিন্দুরা অসহায় নাকি মুসলমানেরা? এ প্রশ্নের উত্তরে ৯৯ শতাংস মুসলমান বলবেন, বাংলাদেশের অসংখ্য ঘটনা প্রমাণ করে এদেশে মুসলমানেরা বড়ই অসহায়। এদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা সব ধরণের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা পেয়ে থাকে। যা মুসলমানেরা কল্পনাও করতে পারে না। প্রিয়া সাহা নামের এক হিন্দু মহিলার সাম্প্রতিক দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে চরম মিথ্যাচার এর একটি চমকপ্রদ উদাহরণ। এদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ হিন্দু গুম হয়ে গেছে। তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তার ৩০০ একর জমি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে ইত্যাদি। আজকেই পিরোজপুরের স্থানিয় এমপি এবং মাননীয় মন্ত্রী রেজাউল করীম খুব সুন্দর করে এর পূর্ণাংগ বিবরণ দিয়ে প্রিয়া সাহা এবং তাকে সমর্থনকারী উগ্রহিন্দুদের সমস্ত মিথ্যাচার উন্মোচন করেছেন। প্রিয়া সাহা যা করেছে তা বিনা সন্দেহে দেশদ্রোহিতা। ব্যারিস্টার সুমন প্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে সে মামলা খারিজ করে দেয়া হয়। অপরদিকে ধর্মীয় অবমাননা ও ডিজিটাল আইনে সুমনের নামে দুটি মামলা করা হয় যা আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের আদালত। অথচ কিছুদিন পূর্বে মুসলমান বাচ্চাদের পূজার প্রসাদ খাওয়ানোর কথা তুললে আমাদের দেশের হাইকোর্ট থেকে বলা হয়েছিল এটা অন্যায় হয়েছে। তবে যেহেতু এটি ধর্মীয় বিষয় তাই আদালত এতে নাক গলাবে না। এক ধর্মে বাচ্চাদের যদি অন্য ধর্মের লোকজন অপকৌশল করে পূজার প্রসাদ খাইয়ে মুখে জয় শ্রী রাম বলিয়ে থাকে তা তো ধর্মীয় সম্প্রতি বিনষ্টের চেষ্টা এবং দেশকে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীল করার একটি পাঁয়তারা। এবার বুঝুন এদেশে কাদের ইঙ্গিতে আইন ও আদালত চলে?

এভাবে অসংখ্য বিষয় রয়েছে যেগুলো নিয়ে বলা যায়। আর এভাবে চলতে থাকলে আর কয়েক দশক পর মানুষজন বলাবলি করবে, স্পেন, ভারতের মতো বাংলাদেশও একসময় মুসলমানদের ছিল। এখানে ফিলিপাইনের মতো মুসলিম শাসন ছিল। আজ তা ইতিহাস। মুসলমানেরা ঘুমিয়ে থাকুন। নিজের অধিকার নিজে না বুঝলে কেউ ইচ্ছে করে আপনাকে আপনার অধিকার ফিরিয়ে দেবে না।

[ভালো লেগে থাকলে লেখাটি কপি করে আপনাদের টাইমলাইনে পোষ্ট করতে পারেন। আর দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment