কাসীদায়ে শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ ভবিষ্যদ্বাণী যেভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

– ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

শাহ নি’মাতুল্লাহ অলি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির (১৩৩০-১৪৩১) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং হুঁশিয়ারিমূলক ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুসলিম রেনেসাঁর কবি আল্লামা ইকবাল রহঃও মুসলমানদের প্রতি বারবার জোর দিয়েছেন তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে সামনে এগিয়ে যেতে। “জাভেদ নামায় তিনি একটি লাইন লিখেন এভাবেঃ در نظر رو در نظر رو در نظر.

শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ’র কবিতাটি বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত “কাসিদায়ে সাওগাত” বইতে। এই ছাড়াও মদিনা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ”মুসলিম পুনঃজাগরণ প্রসঙ্গ ইমাম মাহদি” বইতেও এটি ছাপা হয়। যারা উর্দু বুঝেন তারা এই কাসীদা নিয়ে ৮ পর্বের সিরিজ আলোচনা শুনতে পারেন, পাকিস্তানী বিশেষজ্ঞ জায়েদ হামিদের (Zaid Hamid) পর্যালোচনায়। তিনি খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা সহকারে শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ’র সকল ভবিষ্যৎবাণী (ইলহাম) তুলে ধরেছেন। ইউটিউবে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে। কাসীদাটি পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ https://goo.gl/fJbhws

শাহ নি’মাতুল্লাহ অলি রহঃ’র কাসীদাঃ পাকিস্তানী বিশেষজ্ঞ জায়েদ হামিদের (Zaid Hamid) পর্যালোচনা

কাসীদাটিতে ৫৮টি প্যারা রয়েছে। বিভিন্ন অধ্যায় এবং ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমি সেগুলো থেকে কিছু কিছু অংশ নিয়ে কয়েকটি পর্ব সাজিয়েছি! প্রতিটি পর্বে প্রাসঙ্গিক কিছু পংতি উল্লেখ করেছি এবং এর উপর ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ তুলে ধরেছি। তবে আমার আলোচনা হবে ইতিহাসের আলোকে প্রায় ৮শ বছর পূর্বে বলে যাওয়া ইলহামের বাস্তব প্রতিফলনের ভিত্তিতে। আমার ব্লগে কয়েকটি পর্ব পোস্ট করেছি। খুঁজে দেখে নিন। এখানে পুরো কাসীদাটি পোস্ট করছি এবং অতি সংক্ষেপে কিছু কিছু ব্যাখ্যাও দিচ্ছি। যারা আল্লাহর অলিগণের কারামত বা ক্ষমতা মানতে পারেন না, তাদের জন্য অবশ্য এগুলো খুব কষ্টদায়ক হবে যে, উনি যা যা বলে গেছেন, তার সবগুলোই সত্যে পরিণত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌!

আল্লাহর নামে, যিনি দয়াময় ও রহমান।
(১) পশ্চাতে রেখে এই ভারতের অতীত কাহিনী যত
আগামী দিনের সংবাদ কিছু বলে যাই অবিরত

(২) দ্বিতীয় দাওরে হুকুমত হবে তুর্কী মুঘলদের
কিন্তু শাসন হইবে তাদের অবিচার যুলুমের

(৩) ভোগে ও বিলাসে আমোদে-প্রমোদে মত্ত থাকিবে তারা
হারিয়ে ফেলিবে স্বকীয় মহিমা তুর্কী স্বভাব ধারা

(৪) তাদের হারায়ে ভিন দেশী হবে শাসন দণ্ডধারী
জাকিয়া বসিবে, নিজ নামে তারা মুদ্রা করিবে জারি

উল্লেখ্য উনি দ্বিতীয় পংতিতে ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনের দ্বিতীয় দাওর বা অধ্যায়ের কথা জোর দিয়ে বলেছেন। ভারতে মুসলিম শাসনের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই, শাহবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরি রহমতুল্লাহি আলাইহির শাসনামল (১১৭৫ সাল) থেকে সুলতান ইব্রাহীম লোদীর শাসনকাল (১৫২৬ সাল) পর্যন্ত প্রথম দাওর। এবং সম্রাট বাবরের শাসনকাল (১৫২৬ সাল) থেকে ভারতে মুসলিম দ্বিতীয় দাওর বা অধ্যায় শুরু হয়। যা চালু থাকে সিপাহী বিপ্লবের সময় পর্যন্ত (১৮৫৭)।

(৫) এরপর হবে রাশিয়া-জাপানে ঘোরতর এক রণ
রুশকে হারিয়ে এ রণে বিজয়ী হইবে জাপানীগণ

(৬)
শেষে দেশ-সীমা নিবে ঠিক করে মিলিয়া উভয় দল
চুক্তিও হবে, কিন্তু তাদের অন্তরে রবে ছল

টীকা: বিশ শতকের প্রারম্ভে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। জাপান কোরিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পীত সাগর, পোট অব আর্থার ও ভলডিভস্টকে অবস্থানরাত রুশ নৌবহরগুলো আটক করার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে রাশিয়া জাপানের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

(৭) ভারতে তখন দেখা দিবে প্লেগ আকালিক দুর্যোগ
মারা যাবে তাতে বহু মুসলিম হবে মহাদুর্ভোগ

টীকা: ১৮৯৮-১৯০৮ সাল পর্যন্ত ভারতে মহামারী আকারে প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এতে প্রায় ৫ লক্ষ লোকের জীবনাবসান হয়। ১৭৭০ সালে ভারতে মহাদুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়। বংগ প্রদেশে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ থেকে উদ্ভুত মহামারিতে এ প্রদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারায়।

(৮) এরপর পরই ভয়াবহ এক ভূকম্পনের ফলে
জাপানের এক তৃতীয় অংশ যাবে হায় রসাতলে
টীকা: ১৯৪৪ সালে জাপানের টোকিও এবং ইয়াকুহামায় প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

(৯) পশ্চিমে চার সালব্যাপী ঘোরতর মহারণ
প্রতারণা বলে হারাবে এ রণে জীমকে আলিফগণ
টীকা: ১৯১৪-১৯১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরাধিকাল ধরে ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

জীম= জার্মানি, আলিফ=আমেরিকা – ইংল্যান্ড এবং তাদের মিত্ররা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪-১৯১৮
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪-১৯১৮

(১০) এ সমর হবে বহু দেশ জুড়ে অতীব ভয়ঙ্কর
নিহত হইবে এতে এক কোটি ত্রিশ লাখ নারী-নর
টীকা: ব্রিটিশ সরকারের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ি প্রথম মহাযুদ্ধে প্রায় ১ কোটি ৩১ লক্ষ লোক মারা যায়।

(১১) অতঃপর হবে রণ বন্ধের চুক্তি উভয় দেশে
কিন্তু তা হবে ক্ষণভঙ্গুর টিকিবে না অবশেষে
টীকা: ১৯১৯ সালে প্যারিসের ভার্সাই প্রাসাদে প্রথম মহাযুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে ‘ভার্সাই সন্ধি’ হয়, কিন্তু তা টিকেনি।

(১২) নিরবে চলিবে মহাসমরের প্রস্তুতি বেশুমার
‘জীম’ ও আলিফে খ- লড়াই ঘটিবে বারংবার

(১৩) চীন ও জাপানে দু’দেশ যখন লিপ্ত থাকিবে রণে
নাসারা তখন রণ প্রস্তুতি চালাবে সঙ্গোপনে
টীকা: নাসারা মানে খ্রিষ্টান

(১৪) প্রথম মহাসমরের শেষে একুশ বছর পর
শুরু হবে ফের আরো ভয়াবহ দ্বিতীয় সমর
টীকা: ১ম মহাযুদ্ধ সমাপ্তি হয় ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর, এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সূচনা হয় ১৯৩৯ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর। দুই যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় প্রায় ২১ বছর।

(১৫) হিন্দ বাসী এই সমরে যদিও সহায়তা দিয়ে যাবে
তার থেকে তারা প্রার্থিত কোন সুফল নাহিকো পাবে
টীকা: ভারতীয়রা ব্রিটিশ সরকারের প্রদত্ত যে সকল আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তাদের সহায়তা করেছিল, যুদ্ধের পর তা বাস্তবায়ন করেনি।

(১৬) বিজ্ঞানীগণ এ লড়াইকালে অতিশয় আধুনিক
করিবে তৈয়ার অতি ভয়াবহ হাতিয়ার আনবিক
টীকা: মূল কবিতায় ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে ‘আলোতে বকর’ যার শাব্দিক অর্থ বিদ্যুৎ অস্ত্র, অনুবাদক বিদ্যুৎ অস্ত্রের পরিবর্তে ‘আনবিক অস্ত্র তরজমা করেছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকা হিরোসিমা-নাগাসাকিতে আনবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এতে লাখ লাখ বেসামরিক লোক নিহত হয়। কবিতায় বিদ্যুৎ অস্ত্র বলতে মূলত আনবিক অস্ত্রই বুঝানো হয়েছে।

হিরোসিমা-নাগাসাকিতে আনবিক বোমা নিক্ষেপ

(১৭) গায়েবী ধনির যন্ত্র বানাবে নিকটে আসিবে দূর
প্রাচ্যে বসেও শুনিতে পাইবে প্রতীচীর গান-সুর
টীকা: গায়েবী ধনীর যন্ত্র রেডিও-টিভি

(১৮) মিলিত হইয়া ‘প্রথম আলিফ’ ‘দ্বিতীয় আলিফ’ দ্বয়
গড়িয়া তুলিবে রুশ-চীন সাথে আতাত সুনিশ্চয়

(১৯) ঝাপিয়ে পড়িবে ‘তৃতীয় আলিফ’ এবং দু’জীম ঘারে
ছুড়িয়া মারিবে গজবী পাহাড় আনবিক হাতিয়ারে।
টীকা: প্রথম আলিফ= ইংল্যান্ড দ্বিতীয় আলিফ=আমেরিকা তৃতীয় আলিফ= ইটালি দুই জীম=জার্মানি ও জাপান

(প্যারা: ১৯- এর শেষ)
অতি ভয়াবহ নিষ্ঠুরতম ধ্বংসযজ্ঞ শেষে
প্রতারণা বলে প্রথম পক্ষ দাড়াবে বিজয়ী বেশে

(২০) জগৎ জুড়িয়া ছয় সালব্যাপী এই রণে ভয়াবহ
হালাক হইবে অগিণত লোক ধন ও সম্পদসহ
টীকা: জাতিসংঘের হিসেব মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি লোক মারা গিয়েছিল।

(প্যারা: ২১)
মহাধ্বংসের এ মহাসমর অবসানে অবশেষে
নাসারা শাসক ভারত ছাড়িয়া চলে যাবে নিজ দেশে
কিন্তু তাহারা চিরকাল তরে এদেশবাসীর মনে
মহাক্ষতিকর বিষাক্ত বীজ বুনে যাবে সেই সনে

টীকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৫ সালে, আর ভারত উপমহাদেশ থেকে নাসারা তথা ইংরেজ খ্রিস্টানরা চলে যায় ১৯৪৭ এ। এই প্যারার দ্বিতীয় অংশের ব্যাখ্যা দুই রকম আছে।

ক) এই অঞ্চলের বিভেদ তৈরী জন্য ইংরেজ খ্রিস্টানরা কাশ্মীরকে হিন্দুদের দিয়ে প্যাচ বাধিয়ে যায়।
খ) ইংরেজরা চলে গেলেও তাদের সংস্কৃতি এমনভাবে রেখে গেছে যে এই উপমহাদেশে লোকজন এখনও সব যায়গায় ব্রিটিশ নিয়ম-কানুন-ভাষা-সংস্কৃতি অনুসরণ করে।
** অনেকে এই ক্ষতিকর বিজ বলতে লা-মাযহাবী তথা আহলে হাদীস এবং কাদিয়ানী গোষ্ঠী মন্তব্য করেছেন।

(২২) ভারত ভাঙ্গিয়া হইবে দু’ভাগ শঠতায় নেতাদের
মহাদুর্ভোগ দুর্দশা হবে দু’দেশেরি মানুষের

টীকা: দেশভাগের সময় মুসলমানরা আরো অনেক বেশি এলাকা পেত। কিন্তু সেই সময় অনেক মুসলমান নেতার গাদ্দারির কারণে অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হিন্দুদের অধীনে চলে যায়। ফলে কষ্টে পরে সাধারণ মুসলমানরা। এখনও ভারতের মুসলমানরা সেই গাদ্দারির ফল ভোগ করছে।

(২৩) মুকুটবিহীন নাদান বাদশা পাইবে শাসনভার
কানুন ও তার ফর্মান হবে আজেবাজে একছার
টীকা: এই প্যারা থেকে ভারত বিভাগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ধরা যায়। এই সময় এই অঞ্চলে মুসলমানদের ঝান্ডাবাহী কোন সরকার আসেনি।

**মুকুটবিহীন নাদান বাদশাহ বলতে অনেকে ‘গণতন্ত্র’কে বুঝিয়েছে। আব্রাহাম লিংকনের তৈরী গণতন্ত্রকে জনগণের তন্ত্র বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে জন-নিপীড়নের তন্ত্র। এই গণতন্ত্রের নিয়ম কানুন যে আজেবাজে সে সম্পর্কে শেষ লাইনে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

(২৪) দুর্নীতি ঘুষ কাজে অবহেলা নীতিহীনতার ফলে
শাহী ফর্মান হবে পয়মাল দেশ যাবে রসাতলে
টীকা: সমসাময়িক দুর্নীতি বুঝানো হয়েছে।

(২৫) হায় আফসোস করিবেন যত আলেম ও জ্ঞানীগণ
মূর্খ বেকুফ নাদান লোকেরা করিবে আস্ফালন।

(২৬) পেয়ারা নবীর উম্মতগণ ভুলিবে আপন শান
ঘোরতর পাপ পঙ্কিলতায় ডুবিবে মুসলমান

(২৭) কালের চক্রে স্নেহ-তমীজের ঘটিবে যে অবসান
লুণ্ঠিত হবে মানী লোকদের ইজ্জত সম্মান

(২৮) উঠিয়া যাইবে বাছ ও বিচার হালাল ও হারামের
লজ্জা রবে না, লুণ্ঠিত হবে ইজ্জত নারীদের

(২৯) পশুর অধম হইবে তাহারা ভাই-বোনে, মা-বেটায়
জেনা ব্যাভিচারে হইবে লিপ্ত পিতা আর কন্যায়

(৩০) নগ্নতা আল অশ্লীলতায় ভরে যাবে সব গেহ
নারীরা উপরে সেজে রবে সতী ভেতরে বেচিবে দেহ

(৩১) উপরে সাধুর লেবাস ভেতরে পাপের বেসাতি পুরা
নারী দেহ নিয়ে চালাবে ব্যবসা ইবলিস বন্ধুরা

(৩২) নামায ও রোজা, হজ্জ্ব যাকাতের কমে যাবে আগ্রহ
ধর্মের কাজ মনে হবে বোঝা দারুন দুর্বিষহ

(৩৩) কলিজার খুন পান করে বলি শোন হে বৎসগণ
খোদার ওয়াস্তে ভুলে যাও সব নাসারার আচরণ

(৩৪) পশ্চিমা ঐ অশ্লীলতা ও নগ্নতা বেহায়ামি
ডোবাবে তোদের, খোদার কঠোর গজব আসিবে নামি

(৩৫) ধ্বংস নিহত হবে মুসলিম বিধর্মীদের হাতে
হবে নাজেহাল, ছেড়ে যাবে দেশ ভাসিবে রক্তপাতে

(৩৬) মুসলমানের জান-মাল হবে খেলনা- মুল্যহত
রক্ত তাদের প্রবাহিত হবে সাগর স্রােতের মত

(৩৭) এরপর যাবে ভেগে নারকীরা পাঞ্জাব কেন্দ্রের
ধন সম্পদ আসিবে তাদের দখলে মুমিনদের
টীকা ১: এখানে পাঞ্জাব কেন্দ্রের বলতে কাশ্মীর মনে করা হয়।

টীকা ২: প্রথম মত: ১৯৪৮ সালে মুসলিম সুলতান নিজামের অধীনস্ত হায়দারাবাদ শহরটি দখল করে নেয় হিন্দুরা। সে সময় প্রায় ২ লক্ষ মুসলমানকে শহীদ করে মুশরিক হিন্দুরা, ১ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করে, হাজার হাজার মসজিদ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। শুধু নিজামের প্রাসাদ থেকে নিয়ে যায় ৪ ট্রাক সোনা গয়না।

দ্বিতীয় মত: হিন্দুস্তানের যুদ্ধের পুর্বে মুসলিমরা সর্বপ্রথম ভারতের কাছ থেকে একটি এলাকা দখল করে নেবে। এটা হচ্ছে পাকিস্তান সিমান্তলগ্ন পাঞ্জাব ও জম্মু-কাশ্মির এলাকাটা। কারণ কাশ্মিরের স্থানীয় মুজাহিদ, আইএস, আল-ক্বায়েদা, তালেবান সহ আরো অনেক জিহাদি গ্রুপ ব্যপক আকারে প্রস্তুতুতি নেওয়া শুরু করেছে জম্মু কাশ্মিরকে ভারতের দখল থেকে মুক্ত করার জন্য।

কাশ্মির ছাড়তে বাধ্য হওয়া পণ্ডিতদের ঘরে ফেরার ডাক
কাশ্মির ছাড়তে বাধ্য হওয়া পণ্ডিতদের ঘরে ফেরার ডাক

(৩৮) অনুরূপ হবে পতন একটি শহর মুমিনদের
তাহাদের ধনসম্পদ যাবে দখলে হিন্দুদের

(৩৯) হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ সেখানে চালাইবে তারা ভারি
ঘরে ঘরে হবে ঘোর কারবালা ক্রন্দন আহাজারি

টিকা: ৩৮ ও ৩৯ নং প্যারায় বলা হয়েছে, মুসলিমরা যখন কাশ্মির দখল নেবে এর পরই হিন্দুরা মুসলিমদের একটি এলাকা দখলে নেবে। এবং সেখানে ব্যাপক হত্যা ধংসযগ্য চালাবে। মুসলমানদের ধন-সম্পদ ভারত সরকার লুটপাটের মাধ্যমে নিয়ে নেবে, মুসলিমদের ঘরে ঘরে কারবালার ন্যায় রূপধারন করবে কিন্তু আপনি কি জানেন? মুসলিমদের যে দেশটা ভারত সরকার দখলে নিয়ে এ ধরণের হত্যা ধংসযগ্য চালাবে সেটা কোন দেশ? হা সেটা আপনার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। অর্থাৎ মুসলমানরা কাশ্মীর জয় করার পর হিন্দুরা বাংলাদেশ দখল করবে।

(৪০) মুসলিম নেতা-অথচ বন্ধু কাফেরের তলে তলে
মদদ করিবে অরি কে সে এক পাপ চুক্তির ছলে

টীকা: বর্তমান সময়ে এই উপমহাদেশে এ ধরনের নেতার অভাব নেই। যারা উপর দিয়ে মুসলমানদের নেতা সেজে থাকে, কিন্তু ভেতর দিয়ে কাফিরদের এক নম্বর দালাল। সমগ্র ভারতে উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে এর যথেষ্ট উদাহরণ আছে যে, নেতারা নামধারী মুসলমান হবে, কিন্তু গোপনে গোপনে হিন্দুবান্ধব হবে। মুসলিমদের ধ্বংস করার জন্য ভারত সরকাররের সাথে গোপনে পাপ চুক্তি করবে।

Image result for ভারতের সাথে গোপন চুক্তি
ভারতের সাথে গোপন চুক্তি ও ট্রানজিট প্রদান

(৪১) প্রথম অক্ষরে থাকিবে শীনে’র অবস্থান
শেষের অক্ষরে থাকিবে নূন’ ও বিরাজমান
ঘটিবে তখন এসব ঘটনা মাঝখানে দু’ঈদের
ধিক্কার দিবে বিশ্বের লোক জালিম হিন্দুদের

টীকা: ইসলাম ধ্বংসকারি এই শাসককে চিনার উপায় হল তার নামের প্রথম অক্ষর হবে (শ) এবং শেষের অক্ষর হবে (ন)। আর এসব ঘটনা ঘটবে দুই ইদের মাঝে। একটু কল্পনা করুন এদেশে যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢুকে আপনার পিতা, আপনার ভাই ও আত্নীয় স্বজনদের নির্মমভাবে হত্যা করবে আপনার মা বোনদের ধর্ষণ করবে তখন কি অবস্থা হবে? আপনি ভেবেছেন কি আপনার সাজানো সংসার আপনার চাকুরী আপনার ব্যবসার ভবিষ্যৎ কি?

(৪২) মহরম মাসে হাতিয়ার হাতে পাইবে মুমিনগণ
ঝঞ্বারবেগে করিবে তাহারা পাল্টা আক্রমণ

(৪৩) সৃষ্টি হইবে ভারত ব্যাপিয়া প্রচণ্ড আলোড়ন
‘উসমান’ এসে নিবে জেহাদের বজ্র কঠিন পণ

(৪৪) ‘সাহেবে কিরান-‘হাবীবুল্লাহ’ হাতে নিয়ে শমসের
খোদায়ী মদদে ঝাপিয়ে পড়িবে ময়দানে যুদ্ধে

টীকা: এখানে মুসলমানদের সেনাপতির কথা বলা হয়েছে। শনি ও বৃহস্পতিগ্রহ অথবা শুক্র ও বৃহস্পতি গ্রহের একই রৈখিক কোণে অবস্থানকালীন সময়ে যে যাতকের জন্ম অথবা এ সময়ে মাতৃগর্ভে যে যাতকের ভ্রুনের সঞ্চার ঘটে তাকে বলা হয় সাহেবে কিরান বা সৌভাগ্যবান। সেই মহান সেনাপতির নাম বা উপাধি হবে ‘হাবীবুল্লাহ’।

(৪৫) কাপিবে মেদিনী সীমান্ত বীর গাজীদের পদভারে
ভারতের পানে আগাইবে তারা মহারণ হুঙ্কারে
টীকা: আক্রমণকারীরা ভারত উপমহাদেশের হিন্দু দখলকৃত এলাকার বাইরে থাকবে এবং হিন্দু দখলকৃত এলাকা দখল করতে হুঙ্কার দিয়ে এগিয়ে যাবে।

(৪৬) পঙ্গপালের মত ধেয়ে এসে এসব ‘গাজীয়ে দ্বীন’
যুদ্ধে জিতিয়া বিজয় ঝাণ্ডা করিবেন উড্ডিন

(৪৭) মিলে এক সাথে দক্ষিণী ফৌজ ইরানী ও আফগান
বিজয় করিয়া কবজায় পুরা আনিবে হিন্দুস্তান
টীকা: হিন্দুস্তান সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের দখলে আসবে।

(৪৮) বরবাদ করে দেয়া হবে দ্বীন ঈমানের দুশমন
অঝোর ধারায় হবে আল্লা’র রহমাত বরিষান

(৪৯) দ্বীনের বৈরী আছিল শুরুতে ছয় হরফেতে নাম
প্রথম হরফ গাফ সে কবুল করিবে দ্বীন ইসলাম

টীকা: ছয় অক্ষর বিশিষ্ট একটি নাম যার প্রথম অক্ষরটি হবে ‘গাফ’ এমন এক প্রভাবশালী হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম পক্ষে যোগদান করবেন। তিনি কে তা এখন বুঝা যাচ্ছে না।

(৫০) আল্লা’র খাস রহমাতে হবে মুমিনেরা খোশদিল
হিন্দু রসুম-রেওয়াজ এ ভূমে থাকিবে না এক তিল
টীকা: ভারত বর্ষে হিন্দু ধর্ম তো দূরে হিন্দুদের কোন রসম রেওয়াজও থাকবে না। (সুবহানাল্লাহ)

(৫১) ভারতের মত পশ্চিমাদেরও ঘটিবে বিপর্যয়
তৃতীয় বিশ্ব সমর সেখানে ঘটাইবে মহালয়

টীকা: বর্তমান সময়ে স্পষ্ট সেই তৃতীয় সমরের প্রস্তুতি চলছে। অর্থ্যাৎ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে মুসলমাদের বিরুদ্ধে কাফিররা যুদ্ধ করছে তথা জুলুম নির্যাতন করছে। এই জুলুম নির্যাতনই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে রুপ নিয়ে একসময় তাদের ধ্বংসের কারণ হবে। এখানে বলা হচ্ছে মহালয় বা কেয়ামত শুরু হবে যাতে পশ্চিমারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

(৫২) এ রণে হবে ‘আলিফ’ এরূপ পয়মাল মিসমার
মুছে যাবে দেশ, ইতিহাসে শুধু নামটি থাকিবে তার

টীকা: এ যুদ্ধের কারণে আলিফ = আমেরিকা এরূপ ধ্বংস হবে যে ইতিহাসে শুধু তার নাম থাকবে, কিন্তু বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। বর্তমানে মুছে যাওয়ার আগাম বার্তা স্বরূপ দেশটিতে আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক মন্দা চরমভাবে দেখতে পাচ্ছি।

(৫৩) যত অপরাধ তিল তিল করে জমেছে খাতায় তার
শাস্তি উহার ভুগতেই হবে নাই নাই নিস্তার
কুদরতী হাতে কঠিন দণ্ড দেয়া হবে তাহাদের
ধরা বুকে শির তুলিয়া নাসারা দাড়াবে না কভু ফের

টীকা: এখানে স্পষ্ট যিনি এই শাস্তি দিবেন তা হবে কুদরতি হাতে। যদিও বা আল্লাহ তায়ালার ক্ষেত্রে কুদরত, নবী রাসূলের ক্ষেত্রে মুজিজা, এবং ওলী আল্লাহ গণের ক্ষেত্রে কারামত শব্দ ব্যাবহৃত হয়। এখানে কাফিরদের শাস্তি কোন ওলী আল্লাহ কারামতের মাধ্যমেই দিবেন এটাই বুঝান হয়েছে। এই শাস্তির কারণে নাসারা বা খ্রিস্টানরা আর কখনই মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না।

Image result for ইমাম মাহদী
ইমাম মাহদী আ.-এর আগমন

(৫৪) যেই বেঈমান দুনিয়া ধ্বংস করিল আপন কামে
নিপাতিত শেষকালে সে নিজেই জাহান্নামে

(৫৫) রহস্যভেদী যে রতন হার গাথিলাম আমি তা – – যে
গায়েবী মদদ লভিতে, আসিবে উস্তাদসম কাজে।

(৫৬) অতিসত্বর যদি আল্লা’র মদদ পাইতে চাও
তাহার হুকুম তালিমের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দাও

টীকাঃ বর্তমানে সমস্ত ফিতনা হতে হিফাজত হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে সমস্ত হারাম কাজ থেকে খাস তওবা করা। সেটা হারাম আমল হোক কিংবা কাফের মুশরিক প্রনিত বিভিন্ন নিয়ম কানুন হোক।

(৫৭) ‘কানা জাহুকার’ প্রকাশ ঘটার সালেই প্রতিশ্রুত
ইমাম মাহাদি দুনিয়ার বুকে হবেন আবির্ভূত

টীকাঃ ‘কানা জাহুকার’ সূরা বনী ইসরাইলের ৮১ নং আয়াতের শেষ অংশ। যার অর্থ মিথ্যার বিনাশ অনিবার্য। পূর্ব আয়াতটির অর্থ ‘সত্য সমাগত মিথ্যা বিলুপ্ত’। অর্থাৎ যখন মিথ্যার বিনাশ কাল উপস্থিত হবে তখন উপযুক্ত সময়েই আবির্ভূত হবেন ‘মাহদী’ বা ‘পথ প্রদর্শক’। উনার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে বাতিল ধ্বংস হবে।

(৫৮) চুপ হয়ে যাও ওহে নেয়ামত এগিও না মোটে আর
ফাঁস করিও না খোদার গায়বী রহস্য — আসরার
এ কাসিদা বলা করিলাম শেষ ‘কুনুত কানয’ সালে
(অদ্ভুত এই রহস্য গাঁথা ফলিতেছে কালে কালে)

টীকাঃ ‘কুনুত কানয সাল’ অর্থাৎ হিজরি সন ৫৪৮ মোতাবেক ১১৫৮ ইংরেজি সাল হচ্ছে এ কাসিদার রচনা কাল। এটা আরবি হরফের নাম অনুযায়ী সাংকেতিক হিসাব।

*************************************

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

2 thoughts on “কাসীদায়ে শাহ নি’মাতুল্লাহ রহঃ ভবিষ্যদ্বাণী যেভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে”

Leave a Comment