দুলহা আল্লাহর ঘর থেকে, দুলহান রাসূল ﷺ-এঁর ঘর থেকে! পহেলা জিলহজ্ব তাঁদের শাদী মুবারক

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

– ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

اللّهُمّ صَلّ عَلَى سيدنا مُحَمّدٍ وَآلِ سيدنا مُحَمّدٍ وبارك وسلم 

কনে রাসূল ﷺ-এঁর ঘর থেকে হলে বর আল্লাহর ঘর থেকে হতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আর তাঁদের পবিত্র শাদী মুবারক বিশেষ ভাবে অনুষ্ঠিত হবে এটাও স্বাভাবিক। আল্লাহ্‌ পাক নিজে আসমানের ফেরেশতাদের নিয়ে যাঁদের বিয়ে ঘোষণা করেছেন, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম নিজে যাঁদের বিয়ের খুৎবা পাঠ করেছেন, আল্লাহ্‌ নিজে যাঁদের অলি হিসেবে এই বিয়ে পড়িয়েছেন, চল্লিশ হাজার ফেরেশতা যাঁদের বিয়ের সাক্ষী হয়েছেন, তাঁদের তুলনা তাঁরাই। একজনের জন্ম কা’বা ঘরে আর অন্য জনের জন্ম রাসুল ﷺ-এঁর কোলে। একজন মা খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার পর সর্বপ্রথম মুসলমান এবং জান্নাতের যুবকদ্বয়ের সম্মানিত পিতা আর অন্যজন রাসূল ﷺ-এঁর আদরের দুলালি এবং জান্নাতে মহিলাগণের সর্দার।

The 4th Caliph of Islam Hazrat Ali (AS) – Jahangir's World Times

বর রাসুল ﷺ-এঁর কাছে তেমন মর্যাদার যেমন হযরত মুসা আলাইহিস সালামের কাছে তাঁর ভাই হারুন আলাইহিস সালামের মর্যাদা। বর এমন একজন মহান পুরুষ যিনি মু’মিনগণের মওলা, জ্ঞানের দরোজা, আহলে বাইতের মধ্যমণি, যাকে ভালবাসলে মু’মিন আর ঘৃণা করলে মুনাফিক, সত্য যাঁর সাথে ঘোরে, যাঁকে ভালোবাসা ঈমান, যাঁর চেহারা দেখাও এবাদত, যাঁর জন্য অস্ত যাওয়া সূর্য ফিরে আসে, এমনি ভাবে অসংখ্য সুশোভিত মর্যাদায় যিনি অধিষ্ঠিত।

হযরত আলী (আ.) এর দৃষ্টিতে ফাতেমা | Al Shia
ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহিহার মাজার মুবারক, জান্নাতুল বাকী, মদিনা মুনাওয়ারা

আর কনে সমস্ত নারী জাতির জন্যে বিশেষ আদর্শের, দুনিয়া এবং আখেরাতে যিনি অতুলনীয় সম্মানীয়, হাশরের ময়দানে আল্লাহ্‌ পাক যাঁর বেহেশত গমনের সময় সমস্ত হাশরবাসিকে মাথা অবনত করতে নির্দেশ দিবেন, যাঁর বেহেশত গমনের সময় ৭০ হাজার হুর তাঁর রূপ ধারণ করে তাঁকে ঘিরে থাকবে যাতে কেউ বুঝতে না পারে তিনি কোন জন, যিনি রাসূল ﷺ থেকে আর রাসূল ﷺ যাঁর থেকে, যিনি বেহেশতের যুবকদের সর্দারদ্বয়ের মা, তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।

পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র একজনের জন্মই কা’বা শরীফের ভেতরে হয়েছিলো, কিয়ামত পর্যন্ত আর কারো জন্ম এই পবিত্র ঘরের ভেতরে হবার আর কোন সম্ভাবনা নেই। আর তিনি হলেন মওলা আলী আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া কাররামুল্লাহু ওয়াজহাহু। আম্মাজান ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহার সাথে তাঁর বিয়ে হবার পূর্ব পর্যন্ত কেউ এর রহস্য বের করতে পারেন নি, তাঁর জন্ম কেন কা’বা ঘরের ভেতরে হয়েছিলো। মসজিদে নববীতে রাসূল ﷺ যখন তাঁদের বিয়ের কথা ঘোষণা দিলেন, তখনোই সাহাবাগণ হযরত আলীর জন্ম রহস্য অনুধাবন করতে পারলেন।

খতীবে বাগদাদী তাঁর তারিখে বাগদাদে, ইমাম সুয়ূতী তাঁর আল-জামিউস সাগীরে, ইবনে হাতীমসহ অসংখ্য ইমাম, মুফাসসীর, মুহাদ্দিস বিভিন্ন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে মওলা আলী এবং ফাতেমাতুজ জাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমার শাদী মুবারকের ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন। আল্লামা ডঃ তাহিরুল কাদরী মাঃ জিঃ আঃও তাঁর একটি বয়ানে এই বিশেষ শাদী মুবারকের খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। সূরা আর-রাহমানের ১৯ এবং ২০ নং আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, “তিনিই প্রবাহিত করেন দুই সমুদ্র, যা পরস্পরে মিলিত হয়; এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে এক অন্তরাল, যে (স্ব স্ব) সীমা তারা অতিক্রম করতে পারে না।” কোন কোন তাফসীরকারক পাশাপাশি দুই সমুদ্রের একটি মওলা আলী এবং অন্যটি দ্বারা ফাতেমাতুজ জাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমার দিকে ইংগিত করেছেন। আর সেই অন্তরাল হলেন রাসূল ﷺ নিজে। কোন মুফাসসীর মনে করেন সে অন্তরায় হলো তাঁদের উভয়ের শান, শওকত, পবিত্রতা এবং মর্যাদা। একই সূরার ২২ নং আয়াতে আবার ঘোষিত হয়েছে, “উভয় (সমুদ্র) থেকে উৎপন্ন হয় মুক্তা (যার ঝলক সবুজ) এবং প্রবাল (যার রং লাল)।” এই দুই সমুদ্র থেকে সৃষ্ট ঝকঝকে আলোকোজ্জ্বল সবুজ আভাময় মোতি হলো বিষের অন্য রূপ যা পানে ইমাম হাসান মুজতবা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ওয়া আলিহিস সালামের শাহাদাতের প্রচ্ছন্ন ইংগিত রয়েছে। আর এই সমুদ্রদ্বয় থেকে উৎপন্ন উন্নত মানের এবং লোহিত বর্ণের প্রবাল হচ্ছে কারবালার ময়দানে ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দেহ থেকে নির্ঝরিত লোহিত রক্তকণার স্পষ্ট ইংগিত।

সূরা আর-রাহমানের সেই আয়াতগুলোর দিকে আবার দৃষ্টি দেইঃ

“তিনিই প্রবাহিত করেন দুই সমুদ্র, যা পরস্পরে মিলিত হয়;
এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে এক অন্তরাল, যে (স্ব স্ব) সীমা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
অতঃপর (হে জ্বিন ও মানব সমাজ!) তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
উভয় (সমুদ্র) থেকে উৎপন্ন হয় মুক্তা (যার ঝলক সবুজ) এবং প্রবাল (যার রং লাল)।”
[সূরা আর-রাহমান ৫৫:১৯-২২]

সত্যিই আমাদের পক্ষে আল্লাহ্‌ পাকের কোন দানকেই অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আর এই আয়াতসমুহে ইঙ্গিতবহ আহলে বাইত আতহার আলাইহিমুস সালামের কারো অবদানই আমরা অস্বীকার করতে পারবো না। কেননা, আহলে বাইত হলেন নূহ আলাইহিস সালামের কিস্তির মতো, এতে যারা অবতরণ করেছে তারা মুক্তি পেয়েছে। আর যারা তা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে তারা ধ্বংস হয়েছে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment