মসজিদে নববী (দঃ) এবং রওজা মুবারক স্থানান্তরঃ উড়ো খবরের মধ্যে যা সত্যি!

=================
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী (https://www.facebook.com/DrMiaji)
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم
সৌদি নজদি সরকার কর্তৃক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর দুই সাথী রাঃ এর পবিত্র রওজা মুবারক, উম্মুল মুমেনীনগণ এবং মা ফাতেমা রাদিউয়াল্লাহু আনহার খাস কামড়া মসজিদে রূপান্তরিত করার যে খবর গতকাল ব্রিটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তার সত্যতা মিলেছে। যদিও বিশ্ব ব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সৌদি দূতাবাস ঘেরাওয়ের হুমকি আসায় সৌদি রাজ এই খবরকে ভুয়া বলে অভিহিত করেছে।

ইতোমধ্যেই মূল গবেষণামূলক প্রস্তাবনাটি আমার হাতে এসে পৌঁছেছে, আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমি অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম দেখার জন্য যে এই গবেষণামূলক প্রস্তাবটিতে আসলে কি রয়েছে। নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল কি কি পরিবর্তন প্রত্যাশা করছেন এই পরিকল্পনার নায়ক ডঃ আলী বিন আব্দুল আজিজ।

কি কি পরিবর্তন আনা হতে পারে
————————–—–
• রওজা মুবারকের পূর্ব পাশ, উত্তর পাশের আহ্লুস সুফফা অর্থাৎ উম্মুল মুমেনীনগণের হুজরাসমূহ, মা ফাতেমা রাঃ এর হুজরা ঘিরে বাবে জিবরাইলসহ পুরো কমপ্লেক্সকে দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেয়া। যদিও ডঃ বিন আব্দুল আজিজ বলেছেন তা কাঠের দেয়াল হবে। যাতে জিয়ারতকারীরা আর রাসুল (দঃ) এর রওজা মুবারকের কাছে গিয়ে জিয়ারত করতে না পারে। তার মতে এই পরিবর্তনের ফলে মা ফাতেমা রাঃ এর হুজরা বদ্ধ কমপ্লেক্সে চলে যাবে ফলে শিয়ারা এই হুজরাকে ঘিরে ঝামেলা করতে পারবেনা। তিনি মনে করেন এর ফলে জিয়ারতকারিরা রওজা মুবারক জিয়ারতের মাধ্যমে শিরক-বিদাত থেকে বেঁচে যাবে।
• হুজরার দেয়াল এবং কলামের উপর অঙ্কিত প্রশংসাসূচক শ্লোকগুলো মুছে দেয়া। এতে নাকি শিরকের পথ বন্ধ হবে।
• রওজা মুবারকের পাশের স্তম্ভের গায়ে লেখা সাহাবা এবং বারো ইমামের নামসমূহ মুছে ফেলা। তিনি আশংকা করছেন এগুলোকে কেন্দ্র করে ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়। ??
• বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুসলিম রাজা-বাদশাহর নামাঙ্কিত মিম্বর, মূল্যবান পাথর, মুজাইক এবং রওজা মুবারকের উপর আয়াত লিখিত পর্দা ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এগুলোকে সরিয়ে দেয়া। তার মতে এগুলোর শিরকের উপাদান। নাউজবুল্লাহ!
• রওজা মুবারকের উপরে যে গম্বুজ তৈরি হয়, তাও তার মতে বড় বিদাত যা পারস্য, রোম ও চীনা শিল্পকলার প্রভাব বিদ্যমান। যদিও এই মুহূর্তে সবুজ গম্বুজ ভেঙে ফেলার কোন প্রস্তাব আসেনি। তবে এর উপর তামার প্রলেপ মুছে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এই সবুজ গম্বুজে আর কোন ধরণের কারুকাজ না করারও প্রস্তাব করা হয়।
• দেয়ালের বিভিন্ন ডিজাইন এবং কারুকার্য মুছে মসজিদকে যথা সম্ভব সাদামাটা করা। সলফে সালহীনদের আমলে যেমনটি ছিল। (তারা নিজেদেরকে সালাফী দাবি করে আসছে!)
• মসজিদে নববী (দঃ) এর দক্ষিনপাশের দেয়াল ভেঙে মসজিদকে কেবলার দিকে সম্প্রসারণ করারও প্রস্তাব করা হয়।
• ## যদিও রওজা মুবারক ভাঙার কথা সরাসরি উল্লেখ নেই। মনে হচ্ছে এই খবরটি নেয়া হয়েছে সালাফী ইমাম আলবানীর কিতাব থেকে যেখানে আলবানী রওজা মুবারককে (রাসুল দঃ এবং তাঁর দু সাথীর দেহ) তুলে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

সালাফী, ওহাবী, লা-মাজহাবী, নজদি, আহলে হাদিস, দেওবান্দি সহ সকল বাতিল ফের্কার মতানুসারে কবর জিয়ারত বিদাত ও শিরকের পথ উন্মুক্ত করে। এমন কি রাসুল (দঃ) এর রওজা জিয়ারত হলেও। যদিও কবর জিয়ারত খাস সুন্নাত। ফলে তারা মানুষকে জিয়ারত থেকে পরিপূর্ণ বিরত রাখতেই এই উদ্যোগের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে

সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানিয়ে শেষ করছি। নীচের লিংক থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেনঃ

১. ইন্ডিপেন্ডেন্টের মূল নিউজ: http://www.independent.co.uk/news/world/middle-east/saudis-risk-new-muslim-division-with-proposal-to-move-mohameds-tomb-9705120.html
২. ড. ইরফান আলাউই: http://www.theguardian.com/profile/irfan-al-alawi
৩. একটি আরবী নিউজ: http://www.almasryalyoum.com/news/details/514359

৪. ড. আলী বিন আব্দুল আযীযের “عمارة مسجد النبي عليه السلام ودخول الحجرات فيه دراسة عقدية” শীর্ষক গবেষণা: http://faculty.mu.edu.sa/download.php?fid=77545 

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *