নিশীথ সূর্যের দেশ/দ্বিপ্রহরে চন্দ্রের দেশ!

14993488_1130179320368622_2430996435985093650_n

====================
নরওয়েকে বলা হয় নিশিত সূর্যের দেশ। কেননা, পুরো গ্রীষ্মকাল ব্যাপী নরওয়ের কিছু অংশে রাতের বেলায়ও সূর্য দৃশ্যমান থাকে। নরওয়ে উত্তর মেরুর খুব কাছাকাছি অবস্থান করায়, গ্রীষ্মকালে সূর্য যখন উত্তর গোলার্ধে হেলে পড়ে, উত্তর মেরুতে সূর্য তখন সার্বক্ষণিক দৃশ্যমান থাকে। মনে হয়, নিস্তেজ সূর্য যেন দিগন্ত রেখা ঘেঁসে খুব নিচ দিয়ে অতিক্রম করছে। সূর্যের আলো তখন তীব্র ঝাঁঝালো হবার পরিবর্তে হালকা লীলাভ আকার ধারণ করে। সূর্য প্রায় ৬ মাস দিগন্ত রেখা বরাবর ঘুরতে থাকে, ফলে এই ছয় মাসে সূর্য কখনই অস্থ যায় না। আর এ কারণে নরওয়েকে বলা হয় “নিশিত সূর্যের দেশ”! পূর্ণিমার সময় এ কারণে দিনদুপুরে মাথার উপরে থাকে বিশাল চাঁদ। সূর্যের আলো ক্ষীণ, চাঁদের রশ্মিও ক্ষীণ। দুই ক্ষীণ মিলিয়ে সমানে সমান।
সুইডেন, নরওয়ে আর ফিনল্যান্ড পাশাপাশি দেশ। সুইডেনের উত্তর অংশের সাথে দেশ তিনটি একটি আরেকটির সাথে লাগানো। একেবারে উত্তরে আবার নরওয়ের সাথে ফিনল্যান্ডের সীমানা রয়েছে। এরপরই রয়েছে ব্যারেন্টস সাগর (Barents Sea), এরও উত্তরে রয়েছে সুমেরু মহাসাগর (Arctic Ocean)। আসলে এটি ঘন বরফের মহাসাগর। এই উত্তর মেরুর কাছাকাছি আবার রাশিয়া, কানাডা, গ্রীনল্যান্ড (ডেনমার্ক) – পরস্পরের সাথে সীমানা রয়েছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশের দূরত্ব খুবই সামান্য।

আমরা আছি সুইডেনে। এই সুইডেন আবার উত্তরে-দক্ষিণে প্রায় ১৬০০ কিমি লম্বা। ফলে এর উত্তরের আবহাওয়ার সাথে দক্ষিণের আবহাওয়ার বিস্তর তফাৎ। দক্ষিণে যখন ঝকঝকে গ্রীষ্মকালিন সূর্য মাথার উপরে পায়চারি করে, উত্তরাংশ তখনো ঘন শুভ্র তুষারে ঢাকা থাকে। গ্রীষ্ম এবং শীতে তাই দিনের পরিধির তারতম্য থাকে অনেক। সুইডেনের এক অংশে হয়তো দিনের দৈর্ঘ্য ১৬ ঘণ্টা, অথচ অন্য অংশে তখন দিনের দৈর্ঘ্য হয় ২২ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি!

দেখতে দেখতে গ্রীষ্ম বিদায় নিয়ে হেমন্ত কালও বিদায় নিচ্ছে। এসব দেশে আসলে দুটো ঋতু প্রাধান্য পায় – শীত ও গ্রীষ্ম। বাকি দুটো ঋতু – বসন্ত এবং হেমন্ত থাকে মাত্র অল্প কয়েকদিনের জন্য। কিছুদিন আগে থেকে হঠাৎ করেই শীত নেমে এসেছে। ফলে আমার মতো অনেকেই অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন। কিছুদিন পূর্বেও যেখানে তাপমাত্রা ছিল ১০ থেক ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৫, হিমাঙ্কের নিচে পাঁচ। চাট্টিখানি কথা নয়। সকাল বেলা গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়ে বোঝা যায় কত ঝামেলা পোহাতে হয়। গাড়ির চারপাশে সবগুলো গ্লাসে পাতলা শুকনো বরফের আস্তরণ লেগে থাকে। সারারাত শিশির বিন্দু পড়ে জমে জমে এমনটি হয়ে থাকে। পাতলা প্লাস্তিকের টুকরো দিয়ে তা স্ক্র্যাপ করতে হয়। আর তুষার পড়া শুরু হলে তো কথাই নেই। গাড়ির ছাদে এক বিঘৎ পরিমাণ তুষার জমে থাকে। সেসব পরিষ্কার করে তারপর গাড়ি চালাতে হয়। না হয় সামেন পেছনে কিছুই দেখা যায় না।

সবচে বড় সমস্যা দেখা দেয় নামাজ পড়তে গিয়ে। গত সপ্তাহ থেকে আমি কেবলমাত্র এশার নামাজ ঘরে পড়তে পারছি। ফজর আর মাগরিব পড়ি পথে, জোহর ও আসর পড়ি অফিসে। গ্রীষ্মকালে করতে হয় এর উল্টো। ফজর পড়তে হয় ভোর রাতে। সূর্য উঠার প্রায় ৩ ঘণ্টা পর অফিসে যাই। জোহর অফিসে আদায় করে নেই আর আসর পড়ি বাসায় এসে, জোহর থেকে প্রায় ৬ ঘণ্টা পরে। আজব দেশের এ এক আজব নিয়ম।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *