তুমিও দায়ী, কারণ তুমি নীরব [এক: সংখ্যালঘু এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ]

– ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

যতই অপপ্রচার হোক, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ অতুলনীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এই সুনাম নষ্ট করার জন্য উগ্র হিন্দুরা উঠেপড়ে লাগলেও এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে দ্বিতীয়টি নেই। শত শত বছর ধরে এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান পাশাপাশি প্রতিবেশি হিসেবে বসবাস করে আসছে। আমাদের কাব্য, সাহিত্য, আচার-অনুষ্ঠানে, ভ্রাতৃত্ব বোধে এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। মুসলমানের মীলাদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় হিন্দুদের দ্বারা তৈরি মিষ্টান্ন দিয়ে, অথচ কেউ এর পবিত্রতা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তুলে না। হিন্দুরা মুসলমানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাই ও আত্মীয়ের মতো সহাবস্থান করে আসছে। ফলে এই উগ্র ইস্কন হিন্দুরা স্বয়ং হিন্দুদের কাছেও পরিত্যাজ্য।

অপরদিকে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত এবং পরিচিত হলেও সেখানেই বরং শত শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লক্ষ মানুষের প্রাণ হরণের উদাহরণ রয়েছে। অতি সম্প্রতি সেই সাম্প্রদায়িকতা নির্লজ্জ আকার ধারণ করেছে। ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে মুসলিম যুবকদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে। জয় শ্রী রাম বলাতে বাধ্য করা হচ্ছে মুসলমানদের, না বললে কিংবা কোথাও বলার পরেও পিটিয়ে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। গরুর মাংস বহনের অজুহাতে অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে। অথচ ভারত গো-মাংস রপ্তানির শীর্ষে। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সেদেশের সুশিল সমাজ প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে এসব বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখায় উলটো তাদের বিরুদ্ধেই মামলা ঠুকে দেয়া হয়েছে। যারা এগুলো করছে তারা উগ্র হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী আরএসএস এবং যাদের রাজনৈতিক পরিচয় হল বিজেবি। তাদেরই শাখা হল ইস্কন হিন্দুত্ববাদি সন্ত্রাসী ও উগ্র গোষ্ঠী যারা বাংলাদেশেও তাদের হিংস্র থাবা সফল ভাবে বিস্তার করে রেখেছে। ২০২১ সালের মধ্যে এরা বাংলাদেশকে গিলে খাবার ঘোষণা দিয়ে ওপেন মাঠেও নেমেছে। আমরা যদিও এসব তোয়াক্কা করছি না।

এ হল সাম্প্রদায়িক ভারত। বাংলাদেশে উলটো চিত্র। এখানে বরং ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে ৯ শতাংশ সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে উগ্র হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ঘৃণ্য পাঁয়তারা করে আসছে সেই অনেক বছর ধরে। যদিও মাত্র ৯ শতাংশ সংখ্যালঘু হিন্দু গুরুত্বপূর্ণ সব পদসহ সরকারি চাকুরির প্রায় ৩৩ শতাংশ দখল করে আছে। এরপরও নাকি এরা এদেশে নির্যাতিত এবং সুবিধা-বঞ্চিত। তাতেও এরা সন্তুষ্ট নয়, এবার এরা পুরো দেশের বিরুদ্ধেই উঠেপড়ে লেগেছে। বিভিন্ন ভাবে উস্কানি দিয়ে এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা এবং দাঙ্গা বাঁধানোর মতো দুরভিসন্ধি আঁটছে। বিচারবিভাগ, প্রশাসন, পুলিশসহ প্রায় সর্বক্ষেত্রে এদের এখন একচ্ছত্র আধিপত্য। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে মুসলমানেরাই বরং অসহায় এবং এদের নানাবিধ নির্যাতনের কাছে নিরুপায়।

Image result for সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা গল্প
দেশদ্রোহী প্রিয়া সাহা এবং ব্যারিস্টার সুমন

প্রিয়া সাহা বিদেশে গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছে দেশের বিরুদ্ধে নালিশ করেছে নগ্ন মিথ্যাচারের মাধ্যমে। দেশের সুনাম নষ্ট করে দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানালেও তা দেশদ্রোহিতা হয় না। এদেশের মুসলমানেরা প্রায় ৪ কোটি সংখ্যালঘুকে নাকি গুম করে ফেলেছে। তার এলাকার হিন্দুরাও তার এ মিথ্যা অভিযোগে অবাক হয়েছে এবং জোড়াল ভাষায় প্রতিবাদ করেছে। সে এবং তার আত্মীয়রা নাকি নিজের ঘরে নিজেরাই আগুন দিয়ে এলাকার হিন্দু ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানী করছে। অপরদিকে তার বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিকরা মামলা করলে উলটো তারাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলার শিকার হন। তার পক্ষে এখন ভারতের বিজেপি ও ইস্কন হিন্দুরা হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করছে। তার বিরুদ্ধে যাতে কোনও ব্যবস্থা নেয়া না হয়। গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

এই ঘটনার মাত্র কিছুদিন আগেই, চট্টগ্রামে প্রায় ৩০টি স্কুলে প্রায় ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীকে ইস্কন হিন্দুরা “হরে কৃষ্ণ হরে রাম” ঝপ করিয়ে পূজার প্রসাদ খাওয়ায়। সেখানে মুসলিম-অমুসলিম সব ধর্মের বাচ্চাই ছিল। এরপর এরাই নিজেদের ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজে ছবি ও ভিডিওসহ উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়। মুসলমানেরা এর প্রতিবাদ করতে থাকলে তারা তা অস্বীকার করতে থাকে, তারা নাকি কেবল হিন্দু বাচ্চাদের সেসব খাবার খাইয়েছে। অভিযোগ করলে হাইকোর্ট এমন কাজকে অন্যায় বলে অভিহিত করেন তবে ধর্মীয় বিষয় বলে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানান। বরং হাইকোর্ট মুসলমানদের পরামর্শ দেন বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে। অথচ শিক্ষা বিভাগসহ সমস্ত বিভাগ এদের দখলে। শত চেষ্টা, অভিযোগ এবং মানববন্ধনের পরও বিষয়টি প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগ আমলে নেয় নি। ভাবুন তো কোনও স্কুলে একজন হিন্দু ছাত্রকে মুসলমানদের ধর্মীয় কোনও সংগঠন কালেমা পড়িয়ে গরুর মাংস খাওয়ালে অবস্থা কি ঘটত? মিডিয়া, প্রশাসন, পুলিশ, দেশ-বিদেশের সুশীল সমাজ কিভাবে এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, ধর্ম অবমাননাসহ সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এনে যা করতো তা কল্পনাতীত। মুসলমানেরা কিছুই করতে পারেনি। প্রশাসন তাদের পাত্তাই দেয় নি। অথচ এদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান।

Image result for ইস্কন স্কুলে প্রসাদ বিতরণ
চট্টগ্রামের ৩০টি স্কুলে প্রায় ৩০ হাজার মুসলমান বাচ্চাকে পূজার প্রসাদ খাওয়াচ্ছে উগ্রহিন্দুত্ববাদী ইস্কন

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেটের ঘটনা। একটি মসজিদে জুমার নামাযের সময় এরা ঢোল-তবলা নিয়ে বিকট শব্দে গানবাজনা করতে থাকে। নামাযে আগত মুসলমানদের জুমার এবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি করাই ছিল উদ্দেশ্য। মুসল্লিরা এর প্রতিবাদ করায়, এরা তাৎক্ষণিক প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নেয়। পুলিশ ও প্রশাসন অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে গিয়ে মসজিদ থেকে কয়েকশ মুসল্লিকে গ্রফতার করে নিয়ে যায়। অথচ জুমার নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টির অপরাধে একজন হিন্দুর বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেয় নি। লাইভ ভিডিওতে আমরা দেখেছি কিভাবে ইস্কন হিন্দু সন্ত্রাসীরা তাদের আস্তানা থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে মুসল্লীদের উপর গুলি করছিল। অথচ প্রশাসন নীরব ছিল।

২০১৬ সালের শেষের দিকে ঘটে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনা হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। সেখানেও এরকমভাবে হিন্দুরা বিঘ্ন সৃষ্টি করলে মুসলমানেরা প্রতিবাদ করায় এরা প্রশাসনের সহায়তায় তাণ্ডব চালায়। পুলিশের ভয়ে পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে যায়। এ সুযোগে অনেক অসাধু পুলিশ গ্রামের মহিলাদের সাথে অসদাচরণ করে। লক্ষণীয়, মুসলমানেরা মামলা ও হামলার শিকার হলেও একজন হিন্দুও কোনও ভাবে কোনও হয়রানীর শিকার হয় নি।

Image result for নাসিরনগরে পুরুষশূন্য গ্রাম
উগ্র হিন্দুদের দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র

২০১৬ সালের জুনে রাজধানী ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে হিন্দুরা তাতে বাধা দেয়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের তাৎক্ষণিক তদবিরে ওসি মিজান সেখানে গিয়ে মুসল্লিদের অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখায় এবং গুলি করে। অথচ পরে জানা গেছে যে, সেখানে কখনো হিন্দু মন্দির ছিল না। হিন্দুরা দাবি করে আসছিল যে মুসলমানেরা মন্দিরের জায়গায় মসজিদ তৈরি করছিল। সেখানেও মুসলমানেরা প্রশাসনের বৈমাত্রেয় আচরণের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে।

আপনাদের মনে থাকার কথা, এর আগে ২০১৪ সালে খোদ ঢাকায় স্বামীবাগ জামে মসজিদে রমজানে তারাবীর নামায সংক্ষিপ্ত করার জন্য এই ইস্কন হিন্দুরা মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিদের তাগাদা দিতে থাকে। সেখানে তারা ৭ দিন ব্যাপী রথযাত্রা করছিল এবং তাদের বাদ্যযন্ত্রের কারণে মুসলমানদের নামাযে বিঘ্ন ঘটছিল। তাও মুসলমানেরা প্রতিবাদ করতে পারে নি। উলটো হিন্দুদের দাবি মতো রাত ১০ টার মধ্যে তারাবী নামায সমাপ্ত না করায় উশৃঙ্খল হিন্দুরা মুসল্লিদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। এতে প্রায় ১০ জন মুসল্লিই আহত হয়। মুসলমানেরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে হিন্দুরা তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশ ডেকে মসজিদ থেকে মুসল্লিদের বের করে দেয় এবং ইমামকে গ্রেফতার করে। সেদিনও মুসলমানেরা হিন্দুদের কাছে প্রশাসনিক ভাবে পরাজিত হয়।

উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইস্কনের তারাবী নামাযে বাধা

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন দেয়ার তড়িৎ রি-একশন হিসেবে পুলিশের এসপিকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। মিডিয়া সেখানে লাইভ সংবাদ প্রচার করেছিল। পরে জানা গেল স্থানিয় লীগের লোকজনের কাজ ছিল সেটা। সেই মন্দির পূর্বের চেয়ে আরো সুন্দর করে তৈরি করে দেয়া হয়। অপরদিকে মাত্র কয়েকদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি মসজিদ পোড়ানো হয়। সেখানে প্রশাসন নীরব, মিডিয়াও নীরব। একজন ইমাম ফেসবুকে ইস্কন হিন্দুদের কাজ বলে স্ট্যাটাস দেয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ এই হিন্দুরা যখন দিনের পর দিন আমাদের ধর্ম, কুরআন, আমাদের প্রিয় নবী (দরূদ) কে নিয়ে প্রতিনিয়ত কটূক্তিমূলক এবং অবমাননাকর পোস্ট ও মন্তব্য করে আসছে, সেগুলোর কয়টার বিচার হয়েছে? কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইস্কনি হিন্দু এরকম স্ট্যাটাস দিলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যদিও পুলিশ সেই ছেলেকে গ্রেফতার করে, এর ঠিক পরপরই ভারতীয় দূতাবাসের সরাসরি হস্তক্ষেপে সেই ছেলে ছাড়া পায়। উলটো যেসব মুসলমান ছেলেরা প্রতিবাদ করেছিল, তাদেরকে গোপনে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। এবার ভাবুন তো ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কোন মুসলমান নিরাপদ?

আপনি ভাবছেন, দেশে এতো সমস্যা হলেও আমি তো ভালোই আছি? মনে রাখবেন, একদিন আপনার এ ভাবনা ভুল প্রমাণিত হবে। সেদিন আর কিছুই করার থাকবে না। দেশের এ অবস্থার জন্য যারাই নীরব তারা সবাই দায়ী। পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সচেতন মহল, দেশের নাগরিক, সাধারণ এবং অসাধারণ সবাই। সবাই সচেতন হলে দেশ যেমন নিরাপদ থাকবে, দেশের মানুষ, দেশের সম্পদ ও সম্মান সবই নিরাপদে থাকবে। দেশ হায়েনার কবলে পড়লে সবাই ভুক্তভোগী হবেন। মনে রাখবেন, নগর যখন পোড়ে, দেবালয় তা থেকে রক্ষা পায় না।

[ভালো লেগে থাকলে লেখাটি কপি করে নিজ নিজ টাইমলাইনে পোষ্ট করুন। আর দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই আপনার মতামত জানাবেন।]

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *